![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শোন মর্তের জীব, অন্যরে যত করিবে পীড়ন নিজে হবে তত ক্লীব।
আমার আরেকটি অ-খাদ্য,০২/১৩ (আজকের কালের কন্ঠের ঘোড়ার ডিম ০৬/০১/১৩)
খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে হলো টনির। আজ তার অনেক কাজ। কাল রাতে ঘুমানোর সময় নোট করতে গিয়ে মাথা নষ্ট হওয়ার জোগাড় হয়েছিল, তাই এখন আর কষ্ট করে ভাবতে চায় না টনি। এত ভেবেভুবে কী হবে? আজ করণীয় কাজগুলো পর্যায়ক্রমে করতে হবে। যখন যেটা হয়ে যাবে, নোট থেকে সেটা কেটে দেবে টনি। নাশতার টেবিলে গিয়ে মন ভালো হয়ে গেল পেপার দেখে। আগে যেখানে দুর্নীতিতে বাংলাদেশ এক নম্বরে থাকত, এখন তা ১৩-১৪ নম্বরে চলে গেছে। প্রিয় দেশটা কালনাগের ফণা থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসছে- এটা খুব ভালো সংবাদ। যেহেতু সকালটা শুরু হলো গুড নিউজ দিয়ে, আজ যে টনির পুরো দিনটা ভালো যাবে, এ ব্যাপারে লাখ টাকা বাজি ধরতে রাজি সে।
নাশতা সেরে জামাকাপড় পরতে গিয়ে মনটা আরো ভালো হয়ে গেল। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় দেখা যায় জামা ধোয়া নেই, ধোয়া থাকলেও ইস্ত্রি করা নেই। আজ এর ব্যতিক্রম। সব কিছু কেমন সহজভাবে হয়ে যাচ্ছে। আজ রাশিফলটা দেখে নিতে পারলে ভালো হতো। পকেটে হাত ঢুকিয়ে কাজের লিস্টটা বের করে টনি। প্রথমে তাকে একটা শিক্ষা বোর্ডে যেতে হবে। তার ডিপ্লোমার মার্কশিট আর প্রভিশনাল সার্টিফিকেট তুলতে হবে। সিএনজিওয়ালা অতিরিক্ত ভাড়া না চেয়ে তাকে অবাক করার চেষ্টা করল। কিন্তু টনি জানত আজ তার সব কিছুই সুন্দরভাবে ঝামেলা ছাড়াই হয়ে যাচ্ছে, সো, সিএনজি ভাড়া বেশি চাইবে না। কাঙ্ক্ষিত অফিসে পৌঁছাতে জ্যামের কবলেও খুব একটা পড়তে হলো না। অফিস মোটামুটি ফাঁকাই বলা চলে। ধীর পায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে গিয়ে নম্রভাবে টনি বলল, সে কেন এসেছে। মার্কশিট আর সার্টিফিকেট তার কেন দরকার। তিনি টনির হাতে একটা ফরম ধরিয়ে দিলেন। আরো প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে দিলেন অত্যন্ত সুন্দরভাবে। টনি নিজ হাতে দরখাস্ত লিখে এর সঙ্গে দরকারি কাগজপত্র যোগ করে জমা দিল। এখন অপেক্ষা তার কাঙ্ক্ষিত কাগজপত্র হাতে পাওয়ার। ওয়েটিং রুমে বসে টনি পরের কাজটা নিয়ে ভাববে কি না এটা যখন ভাবছিল, তখন তার ভাবনায় ছেদ পড়ল সেই কর্মকর্তার ডাকে। লোকটা অফিসার না কেরানি তা বুঝতে পারছে না টনি। তাই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যতক্ষণ না নিশ্চিত হওয়া যায় ততক্ষণ লোকটাকে অফিসার ধরে নিয়েই অত্যন্ত মর্যাদা দিয়ে স্যার স্যার করবে। স্যার বললেন, তোমার মার্কশিট নিতে এসেছো, তা ডিপ্লোমা তিন বছরের প্রবেশপত্র এনেছো?
দিনের প্রথম ধাক্কা খেল টনি। ফার্স্ট ইয়ার পরীক্ষা দিয়েছিল সেই তিন বছর আগে। এত দিনের প্রেমপত্রও সংগ্রহে রাখে না সে, আর তো প্রবেশপত্র। টনি আমতা আমতা করে বলল, না স্যার, সে তো অনেক আগের মামলা, আমি সব হারিয়ে ফেলেছি।
- তাহলে তো হবে না বাছা, মার্কশিট বের করতে হলে সব প্রবেশপত্র লাগবে।
- তাহলে স্যার আমার কী হবে, মার্কশিট যে খুবই দরকার।
- থানায় গিয়ে প্রবেশপত্র হারিয়েছে মর্মে একটা জিডি করে জিডি কপি জমা দাও।
তাঁকে সালাম জানিয়ে দ্রুত নিকটস্থ থানায় গেল টনি। সেখানকার ডিউটি অফিসার বিরস মুখে জানালেন যে থানার আন্ডারে পড়াশোনা করেছে সে থানায় গিয়ে জিডি করতে। টনি দৌড় লাগাল ওর ইনস্টিটিউটের পাশের থানায়। সেখানকার ডিউটি অফিসার আধা ঘণ্টা বসিয়ে রেখে ত্যানর-ব্যানর নানা প্যাঁচাল পেরে বললেন যে থানায় হারিয়েছে সেই থানায় গিয়ে জিডি করেন। হারানো এলাকার থানার দারোগা বাবু আবার যেই থানার আন্ডারে বসবাস করে সেই থানায় যেতে বললেন। বসবাসরত মডেল থানার ডিউটি অফিসারকে দেখেই বোঝা গেল, তিনি কাজের মুডে নেই। গভীর মনোযোগ দিয়ে পেপার পড়ছেন। পেপার পড়ছেন বললে ভুল হবে, তিনি মালালার ছবির দিকে এক মনে তাকিয়ে আছেন। বসে বসে বিরক্ত হওয়া দেখে হাবিলদার গোছের একজনের দয়া হলো। তিনি টনিকে বুঝিয়ে দিলেন, কী করলে অফিসার কাজের মুডে ফিরে আসবেন। ২০০ টাকা স্থানান্তর হওয়ায় থানায় জিডি করা হয়ে গেল টনির। আবার বোর্ডে হাজির টনি। হাতে জিডির কপি, মুখে বিজয়ীর হাসি। কিন্তু জিডির কপি দেখে স্যারের হাসি মিলিয়ে গেল। বসে বসে দাঁড়ি, কমা, মাত্রার ভুল ধরা শুরু হলো। জিডির কপি বাইশ-তেইশ জায়গায় লাল কালিতে গোল মার্ক করে বললেন, ভুল সংশোধন করে আনতে। টনির তো মাথায় হাত। স্যারের সামনে গিয়ে মোলায়েম কণ্ঠে বলল, স্যার জিডিটা করতে আমার অনেক ঝামেলা গেছে, দয়া করে কাগজগুলো দিয়ে দিন। স্যার বললেন, দরখাস্ত রেখে যাও, এক মাস পরে এসো। টনি স্যারের পায়ে পড়ে অবস্থা, কারণ তত দিনে বিএসসিতে ভর্তির সুযোগ থাকবে না। ব্যাপারটা স্যারকে বোঝানোর চেষ্টা করায় তিনি ১৫ দিন বাড়িয়ে দেড় মাস পরে আসতে বললেন। টনি এবার বুঝতে পারল, কেন তার দিনটা এত সুন্দরভাবে শুরু হয়েছিল। আসলে মাসখানেক হয়েছে টনির যে দিনের শুরুটা হয় দুর্দান্তভাবে, সে দিনটা শেষ হয় নিকৃষ্টভাবে। সকালে ব্যাপারটা ভুলেই গিয়েছিল। আল্লাহ জানেন আর কী কী ওর কপালে আছে।
- স্যার আপনে বাবার মতো, আপনে একটু নজর না দিলে আমার একটা বছর জলে ভেসে যাবে।
এবার সত্যিই স্যারের দয়া হলো। তিনি পরম মমতায় টনিকে কাছে টেনে নিলেন।
- বাবা থানায় জিডি করতে গিয়ে কিছু শিখেছো?
মাথা চুলকায় টনি
- কই, না তো?
- আরে বোকা, শিখেছো। একটু ভালো করে চিন্তা করো, অঙ্ক মিলে যাবে।
ভাবনায় পড়ে গেল টনি। অঙ্কে সব সময় এ প্লাস পাওয়া টনির হিসাব মেলাতে কষ্ট হয় না। এক বুক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এগিয়ে যায় স্যারের দিকে।
দিনের বাকি কাজগুলো করার সময় নেই, সময় থাকলেও আজ কোনো কাজে হাত দেওয়ার ইচ্ছাও নেই টনির। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দেয় সে-
'আজ সার্টিফিকেট তুলতে গিয়ে চারটা থানা চেনা হয়ে গেল। ২০০ টাকা দিয়ে জিডি করে অতঃপর এক হাজার ৫০০ টাকা স্যারকে দিয়ে পাইলাম, আমি ইহাকে পাইলাম।
©somewhere in net ltd.