নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যমুনা পাড়ের বাসিন্দা

যমুনা পাড়ের বাসিন্দা › বিস্তারিত পোস্টঃ

সময় পেরিয়েছে, রয়ে গেছে স্মৃতি

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:২৮



সময় এক বছর। ৩৬৫ দিন। কিন্তু দুঃসহ স্মৃতি আজও ফুরায়নি রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকদের। নিহতদের স্বজনেরাও ভুলতে পারেননি কাছের মানুষটির শেষ বেলার কথাগুলো।



চোখের সামনে একে একে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়তে দেখেন রানা প্লাজার ৫ম তলার পোশাক কারখানার সুপারভাইজার আশা বেগম। ২৬ ঘণ্টা ধ্বংসস্তুপে দেখেছেন ধীরে ধীরে সহকর্মীদের জীবন প্রদীপ ফুরিয়ে যাওয়ার দৃশ্য। শেষ সময়ে সাইদুলের কথা আজও কানে ভাসে তার। বলেছিলেন, আপা আমারে বাঁচান। কিন্তু আশা বেগম সেদিন বাঁচাতে পারেননি সাইদুলকে।



২৬ ঘণ্টায় প্রতি মুহূর্তেই মনে হয়েছে কিছুক্ষণ পরেই মারা যাবেন। সাইদুলের সঙ্গে সঙ্গে আনিস, শাহনাজসহ অন্যান্যদের স্মৃতিও চোখের সামনে ভাসে বলেও জানান আশা বেগম।



উদ্ধারের কিছু সময় আগে আমরা মাত্র সাত আটজন বেঁচেছিলাম, বলছিলেন আশা। বলেন, তখন আমাদের কারোরই আর বিন্দুমাত্র শক্তি নেই। আমি পিলার ধরে বসে আছি। একটু নড়ারও উপায় নেই। পানির পিপাসায় বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো। খালি মায়ের মুখটা সামনে ভাসছিলো। পরে ছাদের ফুটো দিয়ে ওপর থেকে ঝিরিঝিরি পানি আসতে থাকে। সেই পানিই কিছুটা মুখে পড়ায় বেঁচে যাই। আমি যেখানে আটকে ছিলাম সেখানকার আর কেউ বেঁচে নেই।



রানা প্লাজা ধসে পড়ার প্রায় ২২ ঘণ্টা পর উদ্ধার হন রানা প্লাজার অন্য এক কর্মী এমাদুল ইসলাম। আজও সে স্মৃতি তাড়া করে ফেরে তাকে। এখনো কোথাও কাজ করতে পারেন না এমাদুল ইসলাম। মানসিকভাবে অসুস্থ। কোনো ছাদের নিচে গেলেই দৌড়ে বের হয়ে আসেন। বলেন, কোনো বিল্ডিংয়ের নিচে গেলেই মনে হয়, ছাদটা ভেঙে পড়বে। সেদিন আমার পাশে যারা ছিলেন, প্রায় প্রত্যেকেই মারা গেছেন পানির তেষ্টায়। আমরা সেদিন কাজ করতে চাইনি। মালিকপক্ষ জোর করে আমাদের ভেতরে ঢুকিয়েছিলেন।



আজ এতিম রেহাম। মা রেহানা ও বাবা মনসুর কাজ করতেন রানা প্লাজার পোশাক কারখানা ফ্যানটম এপারেলসে। মা-বাবাকে হারিয়ে আজ তার শেষ আশ্রয় নানা হাছেন। রেহানের বয়স এক বছর। মেয়ের শেষ চিহ্ন নিয়ে বেঁচে আছেন হতদরিদ্র বৃদ্ধ হাছেন।

এক পায়ের ওপর পিলারের ভার নিয় ধ্বংস্তুপে ছিলেন নীলুফা। বলেন, ‘সব সময় মনে হইতাছিলো এই বুঝি আজরাইল আইসা আমার জানটা লইয়া যাইবা। খালি পোলাডার মুখটা সামনে আইতাছিলো। কিন্তু এহন মনে হয়, তহন মইরা গেলেই ভালো আছিলো। একটা পা গেছে। একজনের টাহায় সংসার চলে না’।



মায়ের শেষ কথা এখনো মনে পড়ে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার নিহত রোজিনার ছোট ছেলে রবিনের। মা শেষবারে বলেছিলেন, ‘বাবা এইবার আসার সময় কমলা নিয়া আসুম’। মা ফেরেননি। কমলা খাওয়া হয় না রবিনের। দরিদ্র নানী সুফিয়ার কাছেই এখন মানুষ হচ্ছে রবিন।



আশা, নীলুফা, এমাদুল, রবিনের মতো এমন হাজারো মানুষকে একদিনের স্মৃতি তাড়া করে ফিরছে। অ্যাকশন এইডের তথ্য অনুযায়ী, এখনো রানা প্লাজা থেকে উদ্ধারকৃত শ্রমিকদের ৭৩ শতাংশ শ্রমিক এখনো কাজে ফিরতে পারেননি। পারেননি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে।

গত বছর ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে পড়ে। এ সময় পাঁচটি কারখানায় প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক নিহত হন। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ২ হাজার ৪৩৮ জনকে। বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনকৃত ২০৬ জন শ্রমিকের লাশের ডিএনএ টেস্ট মেলানো হয়। এখনো ১০৫ জন শ্রমিকের লাশ এর ডিএনএ স্যাম্পল মেলানো সম্ভব হয়নি। তাদেরকে নিখোঁজ ও অশনাক্ত বলে দেখানো হচ্ছে।



নিহত ৯৬২ জন শ্রমিকের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। অঙ্গহানি হয়েছে এমন আরো ৩৬ জন শ্রমিককে ১০ লাখ টাকা থেকে ১৫ লাখ টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.