নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ৩০ বছর চাকরি করেছি; অবসর নিয়েছি কর্নেল পদবীতে ২০০৬ সালে। এরপর এযাবৎ প্রিন্সিপাল হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে; এখন অর্কিড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা-তে। ‘স্কুল সাইকোলোজি’ নিয়েও কাজ করছি।

আশরাফ আল দীন

কবি, শিক্ষাবিদ ও প্যারেন্টিং এক্সপার্ট

আশরাফ আল দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সালাতঃ আল্লাহর সাথে কথোপকথন

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:০৫

সালাতঃ আল্লাহর সাথে কথোপকথন।। আশরাফ আল দীন

প্রত্যেক সালাত আদায়কারী মুসলমানই কম-বেশি জানেন যে, সালাত হচ্ছে আল্লাহর সাথে বান্দার কথোপকথন। বিনয়ের সাথে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেখানো পন্থায় তাসবিহ এবং কেরায়াত উচ্চারণের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে কথোপকথন করে থাকেন সালাত আদায়কারী বান্দা দিনে পাঁচ বার। যে কোনো কথোপকথন সাধারণভাবে তাড়াহুড়োর মধ্যে হয় না এবং যে কোন সাক্ষাৎকার তাড়াহুড়োর মধ্যে শোভন বা গ্রহণযোগ্য হয় না। যখন কথোপকথন অথবা সাক্ষাৎকার হয় তখন এই কাজের মধ্যে স্বল্প হলেও কিছু সময় ব্যয় করতে হয় সম্পর্ক স্থাপনের জন্য এবং ঐ সময়টুকুতে তাড়াহুড়ো করাটা আদবের খেলাফ হিসেবে চিহ্নিত হয়। কিন্তু সালাত আদায় করার সময় আমরা কি এসব খেয়াল রাখি?

একটি গল্প দিয়ে জিনিসটা বোধগম্য করা যায়। গল্পটা আমি আগে কোথাও শুনেছিলাম। আবার নতুন করে আমার এক বন্ধুর বইয়ের ভূমিকায় পড়লাম।
"একবার সালাতের উপর আলোচনার জন্য একজন বিজ্ঞ আলেমকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আরব ছাত্রদের সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আলোচক মহোদয় অনুষ্ঠানে এলেন কিন্তু খুব দেরিতে এবং অনুষ্ঠান শুরুর শেষ মুহূর্তে। এসেই তিনি প্রধান মেহমান হিসেবে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে কাল বিলম্ব না করে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে তাঁর বক্তব্য দেওয়া শুরু করলেন। তিনি নামাজের গুরুত্বের উপরই কথা বললেন। কিন্তু এত দ্রুততার সাথে বক্তব্য দিলেন যে উপস্থিত শ্রোতারা কিছুই বুঝতে পারলো না। প্রত্যেকের ভেতর চরম বিরক্তিভাব প্রকাশ পেলো। মাত্র মিনিট দশেকের মধ্যে তিনি বক্তব্য শেষ করে বললেন, প্রিয় ভাইয়েরা আশা করি আমার বক্তব্য শুনে আপনারা দারুণভাবে উপকৃত হয়েছেন। আজকের মতো আমি আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি। আমার আর একটি জরুরী প্রোগ্রাম আছে, সেখানে যেতে হবে। আবার দেখা হবে। এই কথাগুলোও তিনি দ্রুততার সাথেই বলে গেলেন এবং সবাইকে সালাম জানিয়ে তিনি অনুষ্ঠানস্থল থেকে দ্রুততার সাথে বেরিয়ে গেলেন।

এ সময় একজন পিএইচডি ডিগ্রির ছাত্র প্রধান অতিথির গাড়ি পর্যন্ত ছুটে গেলেন এবং বললেন, আপনি এটা কী পাগলামি করলেন! সবাই আপনার বক্তব্য শুনে ছি ছি করছে। এটা কোনো আলোচনা হলো? আপনার ইজ্জতের সাথেও এটা অত্যন্ত বেমানান। আপনি ফিরে আসুন এবং সবার কাছে মাফ চেয়ে নিন। না হলে ব্যাপারটা অত্যন্ত খারাপ হয়ে যাচ্ছে! প্রধান অতিথি মুখে মেকি রাগ প্রকাশ তরে ফিরে আসলেন এবং স্টেজে উঠে বললেন,
: প্রিয় ভাই বোনেরা! আমি আপনাদের ডাকে সাড়া দিয়ে কি অনুষ্ঠানে আসি নাই?' সবাই বিরক্তির সাথে বললো,
: হ্যাঁ এসেছেন।
: আমি কি আপনাদের উদ্দেশ্যে আমার মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করিনি?' উপস্থিত শ্রোতারা রাগে গজগজ করতে করতে বললো,
: হ্যাঁ, খুব করেছেন!
: আমার আলোচনা কি নামাজের গুরুত্বের উপর ছিল না?' সবাই বিরক্তির সাথে বললো,
: হ্যাঁ ছিল, তবে তা ছিল রাবিশ, অর্থহীন। আপনি এত দ্রুততার সাথে বক্তব্য দিয়েছেন যে আমরা আপনার বক্তব্যের কিছুই বুঝিনি। এমন অর্থহীন এবং দ্রুত আলোচনা আমরা জীবনেও শুনিনি।

এবার বিজ্ঞ আলোচক তাঁর মেকি রাগ ঝেড়ে ফেললেন এবং হেসে উঠলেন। তারপর বললেন,
: প্রিয় ভাই বোনেরা! জীবনে এই একবার মাত্র আমি আপনাদের সামনে এসে আলোচনার নামে তাড়াহুড়ো করলাম এবং দ্রুত এসে দ্রুত চলে গেলাম। তাতেই আপনারা সবাই রাগান্বিত এবং বিরক্ত হয়ে গেছেন। অথচ এভাবেই আমরা আমাদের মহামান্য মালিকের দরবারে প্রতিদিন পাঁচবার হাজিরা দিই! আমরা শেষ মুহূর্তে মসজিদে আসি, তাড়াহুড়ো করে নামাজ শেষ করি এবং কোন রকমে সালাম ফিরিয়ে আবার দ্রুততার সাথে মসজিদ থেকে বেরিয়ে যাই! আমার দ্রুত কথায় যদি আপনারা অসন্তুষ্ট হন, বিরক্ত হন তাহলে আপনারা যত দ্রুততার সাথে নামাজ শেষ করেন, ক্ষিপ্রতার সাথে মসজিদ থেকে বেরিয়ে পড়েন, তখন কি আমাদের মহামান্য মালিক আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা অসন্তুষ্ট হন না?’

নীরব হয়ে গেলো হল ভর্তি দর্শক শ্রোতা। প্রধান অতিথি এবার আলোচনা শুরু করলেন যত্নের সাথে এবং ধীরেসুস্থে সালাত আদায়ের গুরুত্বের উপর।"

গল্পটা এখানেই শেষ। কিন্তু বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের প্রত্যেকের ভেবে দেখা দরকার। আমরা নির্দেশিত হয়েছি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে সালাত আদায় করেছেন সেভাবে সালাত আদায় করতে। তাই আমাদেরকে সহিসালামতে যথেষ্ট সময় নিয়ে মসজিদে আসতে হবে, বিনয়ের সাথে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে, যথেষ্ট সময় নিয়ে রুকু-সিজদা, কেয়াম ও বৈঠক ইত্যাদি করতে হবে। রুকু এবং সিজদাতে তো বটেই দুই সেজদার মাঝখানে বৈঠকে এবং রুকু থেকে দাঁড়িয়ে কেয়ামে অভ্যাসবশত তাড়াহুড়ো করা চলবে না। আল্লাহর কাছে কোরআনের আয়াত, তসবিহ এবং দোয়া হিসেবে যা উচ্চারণ করছি তা হৃদয়ঙ্গম করতে হবে। বুঝতে হবে। সালাতের ভিতরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেখানো দোয়া পাঠ করতে হবে। আল্লাহর কাছে সরাসরি চাইতে হবে। এভাবেই আল্লাহর সাথে কথোপকথন শেষ করে, সালাম ফিরিয়ে সালাত আদায়ের জায়গায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। সেখানে নিবিষ্ঠ মনে বসে রাসূলের (দ:) শেখানো তসবিহ ও দোয়া পড়তে হবে। নিজে নিজেই আল্লাহর কাছে চাইতে হবে এবং আদবের সাথে মসজিদ ত্যাগ করতে হবে।

আসুন না, পরিমাণে কম করে হলেও আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেখানো সালাত মসজিদে ও বাড়িতে সঠিকভাবে আদায় করি।

মিরপুর, ঢাকা।। ১০ মে ২০১৯

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: সব কাজই করা হয়। শুধু নামাজটাই পড়া হয় না।
মৃত্যুর পর আল্লাহর কাছে কি জবাব দিবো।

২| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:২৮

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: দোয়ার উত্তম সময় হোল সেজদারত অবস্থায়। এছাড়া শেষ বৈঠকে দরূদ পরার পর ও সালাম ফেরানোর আগে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.