![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটি মেয়ের কথা জানানো জন্যই আজকের লেখার সূত্রপাত। শ্যামলা গড়নের, বেশ ছিমছাম, চঞ্চল একটি মেয়ে সিমি। ফর্সা না হয়েও মানুষ যে এতো সুন্দর হতে পারে তা আমি তাকে দেখেই বিশ্বাস করা শুরু করি। হাসলে গালে টোল পড়লে তাকে আরো মিস্টি দেখায়।
এই মিস্টি মেয়েটির সাথে আমার পরিচয় ২০০৪ সালে রাজশাহীর একটি কোচিং সেন্টারে। সে ছিলো ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের, আর আমি সামনে ইন্টারমিডিয়েট ফাইনাল পরীক্ষা প্রিপারেশনের জন্য ভর্তি হই। মেয়েদের ব্যাপারে আমি বরাবই লাজুক। এইজন্য কোন মেয়ের সাথে আমার কোন বন্ধুত্ব গড়ে উঠেনি। তবে প্রথম আমিলজ্জার মাথা খেয়ে সিমিকে বন্ধুত্বের প্রস্তাব দিই। আমাকে অবাক করে দিয়ে সাথে সাথে সেই প্রস্তাব গ্রহন করে।
এরপর কোচিং ক্লাসের ফাকে গল্প, খুনসুটি, সুখ-দু:খ ভাগাভাগি। একটা বিষয় লক্ষ করেছিলাম তা হচ্ছে সিমি আমি ছাড়া অন্য কোন ছেলের সাথে তেমন একটা মিশতো না। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে কেনজানি খুবই ভালো লেগেছিলো। সেইসময় এখনকার মতো মোবাইল ফোনের তেমন প্রচলন ছিলনা। তাই আমাদের কোচিং সেন্টারেই দেখা হতো।
বিভিন্ন ধরনের কলম সংগ্রহ করা সিমির শখ জেনে তার জন্মদিনে আমার জমা করা টাকা দিয়ে ১০০টা বিভিন্ন ধরনের কলম তাকে গিফট করেছিলাম। কলমগুলো পেয়ে সে এতো খুশি হয়েছিলো যা আমি ধারনাই করতে পারিনি। তার খুশি যে আমাকে দিগুণ খুশি করেছিলো। কয়েকদিন পর সে আমাকে ছোট্ট একটা ডায়েরী আর তার সবচেয়ে প্রিয় একটা কলম উপহার দেয়।
যতই দিন যাচ্ছিলো ততই সিমি যেন আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যাচ্ছিলো।
একসময় আমি অনুভব করতে পারলাম সিমিকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি। তাকে ছাড়া আমার এই জীবন অপুর্ণ। এবার কেনজানি নির্লজ্জের মতো কথাটা তাকে জানাতে পারলাম না। সিমি দেখেও মনে হতো সে আমাকে যেন কিছু বলতে চায়।
আমার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হওয়াতে কোচিং সেন্টারে কিছুদিন যেতে পারিনি তাই সিমির সাথে দেখা হয়নি। সিদ্ধান্ত নিলাম পরীক্ষা শেষে যেভাবেই হোক তাকে গিয়ে বলবো......
"হে ডানা কাটা পরী,
জীবনের চেয়েও বেশি,
আমি তোমায় ভালোবাসি"
পরীক্ষা শেষে একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে সোজা কোচিং সেন্টারে যাই। গিয়ে জানতে পারি সেনাবাহিনীতে চাকুরিরত তার বাবার হটাৎ পোস্টিং হওয়াতে তারা চলে গেছে। আমার মাথায় কে যেন লোহার হাতুরি দিয়ে বাড়ি মারলো। সিমি চলে গেছে?!!!!! অনেক চেস্টার পরেও জানতে পারলাম না যে তারা কোথায় গেছে।। শেষ যেদিন কোচিং এ এসেছিল সেদিন নাকি সন্ধ্যা পর্যন্ত আমার অপেক্ষা করেছিলো এই ভেবে যে যদি আমি আসি।। সেদিন বাচ্চাদের মতো অনেক কান্নাকাটি করেছিল, কি কারনে তা কে জানতে পারেনি।
এরপর সিমিকে অনেক অনেক খুজেছি। যেখানে গিয়েছি আমার চোখ শুধু সিমিকেই খুজেছে আর মন বলতে চেয়েছে " সিমি আমি তোমাকে ভালোবাসি, তোমাকে ছাড়া আমি অপুর্ণ, তুমি ফিরে এসো"
এরপর বেশ কয়েকবছর কেটে গেছে। পড়াশোনা শেষ করে চাকুরি জীবনে প্রবেশ করলাম।। বাবা-মা বিয়ে করার জন্য চাপ দিতে শুরু করলো। নানাভাবে বিষয়টা এড়িয়ে যেতে লাগলাম। অবশেষে বাবা-মার জেদের কাছে হার মেনে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিয়ে করতে হলো।। স্ত্রী হিসেবে মিস্টি একটা মেয়েকে পেলাম। সে আমার মনে জায়গা করে নিলো। তবে সিমির জন্য মনের কোনে জায়গাটা থেকেই গেলো। দুবছর পর একটা ফুটফুটে রাজকন্যা ঘর আলো করে এলো। সিমিও হয়তো বিয়ে করেছে, তারও সন্তান হয়েছে। যাইহোক আমার মেয়ের নাম রাখার ব্যাপারে তোড়জোড় শুরু হয়েগেল। অনেকগুলো নামের সাথে সিমি নামটাও কেন জানি আমার মুখ থেকে বেড়িয়ে আসলো আর সাথে সাথে সবাই পছন্দও করে ফেললো। আমার মেয়ের নাম হয়ে গেলো সিমি। কাজটা ঠিক হলোনা। এমনিতেই সিমিকে ভুলতে পারিনা তার উপর আমার মেয়েও সেই নাম নিয়ে আমার সামনে ঘুরে বেড়াবে।।
সিমির সম্পর্কে এতোকিছু বলার কারণ হচ্ছে আজ সিমিকে আমি খুজে পেয়েছি। এতোদিনের অপেক্ষা আজ শেষ হয়েছে। কিন্তু তাকে এভাবে খুজে পাবো তা কল্পনাতেও ভাবিনি। আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন আজ। কারণ তাকে আমি খুজে পেয়েছি খবরের কাগজে। এক পলক দেখেই তাকে আমিমি চিনতে পেরেছি। সেই মিস্টি মুখটা মনে হয় অনন্তকাল পরে দেখলাম। খবরটার শিরোনাম হলো সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজন নিহত। বিস্তারিত পড়ে জানলাম নাটোরের নিকটে রাজশাহীগামী একটি কারের সাথে ট্রাকের সংঘর্ষতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরন করে একই পরিবারের তিনজন। পুলিশ জানায় নিহতরা হলো মাহমুদ হাসান, সিমি হাসান আর তাদের সন্তান আসির হাসান।
সিমির একমাত্র স্মৃতি তার দেয়া ডায়েরীটা খুব যত্ন করে রেখেছি। কখনো তা খুলে দেখিনি। আজ কেন জানি তা দেখতে ইচ্ছা হলো। ডায়েরীটার সাদা পাতাগুলো আনমনে উল্টাতে উল্টাতে হটাৎ একটা পাতায় দেখলাম কিছু লেখা রয়েছে। সেটা পড়ে লেখাগুলোর দিকে শুধুই চেয়ে রইলাম। লেখা ছিল::
প্রথম দেখাতেই তোমাকে পৃথিবীর সবচেয়ে আপন মানুষ মনে হয়েছে। যত দিন যাচ্ছে ততই তোমার প্রতি আমার মুগ্ধতা বেড়েই চলেছে।
অন্য কারো বেলায় এমনতো কখনো হয়নি!! একে যদি ভালোবাসা বলে, তাহলে আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
তোমার উত্তরের অপক্ষায় রইলাম।
সিমি
©somewhere in net ltd.