নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসসালামু আলাইকুম। আমার ব্লগ পেজে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।

আতোভাইলু

হিসাব-নিকাশ জানি না, ওজনে কম দিলে টের পাই

আতোভাইলু › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি

১১ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১:২৪

স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি
লিখেছেনঃ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান
প্রকাশিত হয়ঃ দৈনিক দেশ পত্রিকায়, ১৯৮১ সালে
সংগ্রহঃ ডঃ শওকত আলী




সবাই আমরা যুদ্ধ করেছি, সৈনিক, জনগণ সবাই। আর সেই ঝুঁকির কথা? জাতির চরম সংকটের মুহুর্তে কাউকে না কাউকে সামনে এগিয়ে আসতে হবে। নিতে হয় দায়িত্ব। আমি কেবল সে দায়িত্ব পালন করেছি। নেতারা যখন উধাও হয়ে গেল— সিদ্ধান্ত নেওয়ার মত কেউ যখন থাকল না, তখন জাতির পক্ষ থেকে সব থেকে বড় সিদ্ধান্ত আমাকে ঘোষণা করতে হল। কারণ জাতিকে তো আর অসহায় নিরস্ত্র অবস্থায় একটা সর্বাত্বক ধ্বংসের মুখে ফেলে রাখা যায় না। এবং আমি জানতাম যুদ্ধের জন্য জাতি প্রস্তুত হয়ে রয়েছে। শুধু বাকি ছিল সেই যুদ্ধের জন্য একটি সঠিক সময় বেছে নেয়া। ছাব্বিশে মার্চ রাতের প্রথম প্রহরে সেই সময়টি এলো। যার জন্য গোটা মাস আমরা রুদ্ধশ্বাস হয়ে প্রতিজ্ঞা করছিলাম। এবং সময় আসোবার সঙ্গে সঙ্গে আমি সে ঘোষণা অষ্টম ব্যাটেলিয়ানের আমার যোদ্ধাদের জানিয়ে দিলাম। মুহুর্তের মধ্যে তাঁরা প্রস্তুত হল এবং যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লো। পরদিন চট্টগ্রাম রেডিও থেকে জাতিকে আমি সেই সিদ্ধান্তের কথা জানালাম। জাতি স্বমস্বরে সাড়া দিল সেই ডাকে। বেতার তরঙ্গের সেই সন্ধ্যার ঘোষণা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি রেডিও তে ধরা পড়ল। আর বিশ্ববাসী সেই প্রথম শুনলঃ বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের ঘোষণা নিয়ে যুদ্ধে নেমেছে দখলদার পাকিস্তানী বাহিনীর সঙ্গে। বেতার থেকে বেতারে সেই ঘোষণা প্রতিধ্বনিত হল ২৭শে মার্চ সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে ইথারে ঘোষণাটি উচ্চারিত হবার পড় মহুর্তেই বিশ্ব মানচিত্রে অংকিত হয়ে গেলো “স্বাধীন বাংলাদেশ” কথাটি। সে ছিল সত্যি এক অলৌকিক ব্যাপার। মাত্র কয়েক কিলোওয়াট শক্তিসম্পন্ন একটি বেতারের ঘোষণা কেমন করে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়লো তা ভাবতে আজও আমার অবাক লাগে। নিশ্চয় এর মধ্যে ছিল বিশ্বস্রষ্ঠার কল্যাণময় সংকেত। পয়লা মার্চ থেকেই বাংলাদেশ হামলার পাকাপাকি প্রস্তুতি নিতে শুরু করছিল পাকিস্তানী শাসক চক্র। বিমানে এবং জাহাজে করে প্রচুর সমরাস্ত্র তাঁরা পাঠালো, প্রতিদিন আসতে লাগল নতুন নতুন সেনাদল।

চট্টগ্রামের ষোল শহর ছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর সদল দপ্তর। নতুন একটি ব্যাটেলিয়ান গড়ে তুলবার কাজ চলছিল কিছু কাল আগে থেকে। এটি অষ্টম ব্যাটেলিয়ান। নতুন এই ব্যাটালিয়ানের দু’শ জনের একটি দলকে আগেই পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল পাকিস্তানের খারিয়ান অঞ্চলে । এদিকে বেশির ভাগ জোয়ানই ছিল ছুটিতে। মাত্র দু’শ কুড়ি জন ছিল ডিউটিতে। অস্ত্রও ছিল সামান্য। অস্ত্র বলতে ছিল ৩০৩ মডেলের কিছু রাইফেল, চারটি এল-এম-জি, দু’টি মর্টার, সার্ভিস কেবল দু’টি আর সামান্য গোলাবারুদ। কোন এন্টিট্যাঙ্ক বা ভারি মেশিনগান ছিল না।

চট্টগ্রামে ১লা মার্চ থেকে ২০তম বেলুচ রেজিমেন্টের রহস্যজনক গতিবিধি থেকে আমরা সুস্পষ্ট আঁচ করতে পারছিলাম- কি ঘটতে যাচ্ছে। রাতের অন্ধকারে তারা শহরের মহলায় গিয়ে নিধনযজ্ঞে মেতে উঠত। আমাদের জোয়ানকে গোপনে মোতায়েন করলাম তাদের দিকে নজর রাখার জন্য। আমি তখন ব্যাটালিয়নের দ্বিতীয় কমান্ডিং অফিসার। পাকিস্তানী অফিসার লেঃ কর্ণেল জানজুয়া ছিলেন ব্যাটালিয়ান প্রধান। তিনি প্রথম থেকেই আমাকে সন্দেহের চোখে দেখছিলেন। আমার বাসার কাছে ঘোরাঘুরি করছিল তার নিয়োজিত গোয়েন্দারা। এদিকে ক্রমেই ওদের পরিকল্পনার নীলনকশা স্পষ্ট হয়ে উঠতে লাগল আমাদের কাছে। দেশের নানা জায়গায় ওদের নৃশংস বর্বরতা ও লুটতরাজের খবরও পৌঁছাতে লাগল। খবর পাওয়া গেল ব্যাটালিয়নদের নিরস্ত্র করা হবে। ব্যাটালিয়ানের তরুণ অফিসার দল এবং প্রধান জুনিয়র কমিশন্ড অফিসারদের মধ্যে তখন এক চরম উত্তেজনা। তারা আমাদের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত জানার জন্য প্রতীক্ষা করছিলেন। ব্যাটালিয়নের কোয়াটার মাস্টার ছিলেন ওয়ালী আহমদ। শমসের মবীন ও খালিকুজ্জামান তখন ক্যাপ্টেন। তারা ওয়ালী আহমদ ( ওলী আহমদ) ও মেজর শওকত এর মাধ্যমে আমাকে বলে পাঠালেন, আমি যদি স্বাধীনতা যুদ্ধ ঘোষণা করি তারা সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্র হাতে তুলে নেবেন। এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য সবাই জীবন উৎসর্গ করবেন। জেসিও এবং এনসিও গণও আমার বাসায় আসতে লাগলেন। তারা বললেন - একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। তা না হলে বাংলাদেশের জনগণকে চিরকালের জন্য ক্রীতদাসে পরিণত করা হবে। বোধকরি তারিখটা ছিল ৪ঠা মার্চ। কোয়াটার মাস্টার কর্নেল ওলীকে ডেকে পাঠালাম। ষোল শহর মার্কেটের ছাদের উপর আমরা বসলাম। এটি আমাদের প্রথম বৈঠক। আমি আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম। কী সিদ্ধান্ত আমাদের নিতে হবে। সোজাসুজি তাঁকে বলামঃ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দ্রুত ঘনিয়ে আসছে। আমাদের এখন থেকে সর্বক্ষণ প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে হবে।

পরবর্তি বৈঠকে ক্যাপ্টেন ওলী আহমদ মেজর আমিন চৌধুরী ও লেঃ কঃ এম আর চৌধুরীও যোগ দিলেন। প্রথম বৈঠকে একটি একশান পান এর রূপরেখা তৈরি করা হল। তার ভিত্তিতে রোজ একই জায়গায় আমরা বৈঠকে মিলিত হচ্ছিলাম। নিঃশব্দে একইভাবে চলল আমাদের চূড়ান্ত প্রস্তুতির কাজ।

১৩ই মার্চ নেতাদের সাথে ইয়াহিয়া খানের গোলটেবিল বৈঠক শুরু হল। এর মধ্যেই পাকিস্তানী জেনারেলরা একের পড় এক বিমানে করে আসতে লাগল। সব গ্যারিসন অফিসে শুরু হল তাদের আনাগোনা। এ ছিল সর্বাত্মক হামলার এক ভীতিকর পূর্বাভাস। নৌবাহিনীর শক্তি বাড়ানো হল চট্টগ্রামে। রণতরী, পিএনএস “বাবর" এর সঙ্গে এলো অনেকগুলো ডেস্ট্রয়ার, ফ্রিগেট, আর গানশিপ।

২১শে মার্চ জেনারেল হামিদ এলেন চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে। এই জেনারেলই পাকিস্তানের সামরিক হামলার পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন। চট্টগ্রামে তখন জনগণের তীব্র প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল। রাস্তায় রাস্তায় ছিল ব্যারিকেড। “সোয়াত” জাহাজের অস্ত্র খালাস করার জন্য পাকিস্তানী সৈন্যরা ২৪শে মার্চ ব্যারিকেড সরিয়ে কোনমতে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছল। পথে জনগণ তাদের বাধা দিয়েছিল। খন্ড যুদ্ধে প্রাণ হারালেন বহুলোক। এটি ছিল চরম মূহুর্তের সংকেত। আমরা প্রস্তুত হয়ে থাকলাম সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অপেক্ষায়।

দ্রুত কহনীয়ে এলো ছাব্বিশের সেই রাত। রাত তখন ১১টা। চট্টগ্রাম বন্দরে জেনারেল আনসারীর কাছে রিপোর্ট করার জন্য ব্যাটালিয়ানের কমান্ডিং অফিসার আমার কাছে নির্দেশ পাঠালেন। নৌবাহিনীর একটি ট্রাক পাঠানো হলো আমাকে এসকর্ট করে নিয়ে যাওয়ার জন্য । দু জঙ পাকিস্তানী অফিসারকে আমার সাথে দেওয়া হল। ট্রাকের চালক ছিলেন একজন পাঞ্জাবী। আমার সাথে ছিল আমার ব্যাটালিয়ানের মাত্র তিনজন জোয়ান। এতো রাতে কেন তারা আমাকে বন্দরে রিপোর্ট করতে পাঠাচ্ছে? একটা সংশয় আমার মনে দানা বেধে উঠছিল। আসলে তারা আগেই টের পেয়েছিল। আমি চরম একটা পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি। সুতরাং তারা চাইছিল আমাকে শেষ করে ফেলতে। তাই সে রাতেই রাঁড়া ষড়যন্ত্র এটে রেখেছিল।

আগ্রাবাদের একটি বড় ব্যারিকেডের সামনে ট্রাক থেমে গেলো। আমি নেমে পায়চারি করছিলাম রাস্তায়। ভাবছিলাম কখন সবাইকে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেব? ঠিক সে সময়ে মেজর খালিকুজ্জামান সেখানে আমার সঙ্গে দেখা করলেন। অনুচ্চস্বরে বললেন, ওরা ক্যান্টনমেন্টে হামলা শুরু করেছে। শহরেও অভিযান চালিয়েছে। হতাহত হয়েছে শহরের বহু নিরীহ মানুষ।

বুঝতে পারলাম যে সময়ের জন্য অপেক্ষা করছিলাম সে সময় এসে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলাম “ উই রিভোল্ট” নির্দেশ দিলাম। ষোল শহরে ছুটে যাও। পাকিস্তানী অফিসারদের আটক করো। যুদ্ধের জন্য তৈরি করে রাখো ব্যাটালিয়ানদের সবাইকে। ট্রাকে উঠে পাঞ্জাবী ড্রাইভারকে নির্দেশ দিলাম ট্রাক ফিরিয়ে নিয়ে চলো ব্যাটালিয়ান হেড কোয়াটারের দিকে। সৌভাগ্য বলতে হবে। সে নিঃশব্দে আমার নির্দেশ পালন করলো।

ষোল শহরে এসে দ্রুত নেমে পড়লাম ট্রাক থেকে। নৌবাহিনীর আটজন এসকর্ট ছিল আমার সঙ্গে। মুহুর্তে একটি রাইফেল কেড়ে নিলাম তাদের একজন কাছ থেকে। সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানী নেভাল অফিসারটির দিকে রাইফেল তাক করে বললাম, “হ্যান্ডস আপ”। তোমাকে গ্রেফতার করা হল। ঘটনার আকস্মিকতায় সে হচকে গিয়ে আত্মসমর্থন করলো। অন্যদের দিকে রাইফেল উঁচিয়ে বলতেই তারা সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে অস্ত্র নামিয়ে রাখল। ব্যাটালিয়ান কমান্ডারকে ঘুম থেকে তুলে এনে পাকড়াও করা হল। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টারে এলাম। লেঃ কর্ণেল চৌধুরী এবং ক্যাপ্টেন রফিকের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম। সিভিল টেলিফোন সার্ভিসের একজন অপেরেটরকে টেলিফোনে পেলাম। তাঁকে বললামঃ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অষ্টম ব্যাটালিয়ান স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা করেছে। এ সংবাদটি যেন চট্টগ্রামের ডিসি, কমিশনার, পুলিশের ডিআইজি আর রাজনৈতিক নেতাদের জানিয়ে দেয়। কারণ টেলিফোনে আমি তাদের কাউকে পাচ্ছিলাম না। টেলিফোন অপারেটর দারুণ আনন্দ প্রকাশ করল আমার কথায়। এবং ঐ গভীর রাতেই সবার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করল সে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:০৫

বিজন রয় বলেছেন: ভাল লিখেছেন। ভাল লাগল।

১১ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:০৮

আতোভাইলু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.