![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হিসাব-নিকাশ জানি না, ওজনে কম দিলে টের পাই
‘কেন দ্বিধা বেদুঈন?
তুমি কি রাখাল নও?
লুণ্ঠন লঙ্ঘন ছাড়া পুরুষের
বাঁচে কি গৌরব?
অথচ তুমি সুন্দর’।
রাখালের লুণ্ঠন সংক্রান্ত পংক্তিটি লিখেছেন প্রখ্যাত কবি আল মাহমুদ তাঁর ‘প্রহরান্তের পথফেরা’ কাব্যগ্রন্থের ‘ জুলেখার আহবান’ কবিতায়। আমার চিন্তা অবশ্য একটু ভিন্ন ধাঁচের। রাখালদের তো অনেক ভালো গুণও আছে। বাংলা শব্দ ‘রাখাল’ এর অর্থ করা যায় এভাবে যে, যখন মনিব উপস্থিত থাকে না, তখন মনিবের ধন-সম্পদ, গরু, বাছুর, মহিষ ও ছাগল এসবই সে রক্ষণাবেক্ষণ করবে, কিন্তু নিজে খাবে না। গ্রামে অন্তত সেটাই নিয়ম। অবসরে সে বাঁশি বাজায়, মাথায় লম্বা চুল রাখে। রাখালিয়া বাঁশির সুর আর প্রেম কাহিনী না থাকলে বাংলা নাটক-সিনেমাই নাকি জমে না। গ্রামের রাখালও একদিন অনেক বড় হতে পারে। রাখাল রাজাও হতে পারে।
ঘটনাটা খুলে বলাই ভালো। আমাদের আলোচ্য রাখালের নাম ডঃ আতিউর রহমান। তার নিজ জবানীতেই তিনি লিখেছেন যে জীবনের ঊষালগ্নে তিনি নাকি একজন ‘রাখাল’ ছিলেন। আমাদের এ রাখাল বাঁশি না বাজালেও তার বড় গুণ হলো রবীন্দ্র সংগীত রবীন্দ্র কাব্য চর্চা তার জীবনের ব্রত। তার বড় পছন্দের।
যদিও অর্থমন্ত্রী মুহিত এ সবকে ‘রাবিশ' বলেছেন। তিনি আবার পেশায় অর্থনীতিবিদ। অর্থাৎ একই অঙ্গে বহুরূপ। কিছু দিন আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর। লুটপাট কেলেঙ্কারির সময় তিনি শান্তি নিকেতন ঘুরে ভারত সফর শেষে সোজা শেখ হাসিনার দরবারে হাজির। উদ্দেশ্য চাকুরী রক্ষা। কিন্তু বললেন, পদত্যাগ করার জন্য এসেছি। প্রধানমন্ত্রী তাকে চিনতে কখনই ভুল করেননি। তিনি বললেন, একজন রাখাল থেকে গভর্ণর হয়ে দেশকে যেভাবে খেদমত করলে তার জন্য তোমার মনিব তোমাকে অনেক দিন মনে রাখবে। আসলে তুমি রাখাল নও, একজন বীর। কবির ভাষায় ‘অথচ তুমি সুন্দর’।
ইত্তেফাকের সিরাজউদ্দিন হোসেন চাচা আজ নেই। আইয়ুব আমলে এক বিডি মেম্বরকে এক ষাঁড় শিং দিয়ে গুঁতিয়ে আহত করলে তিনি সেই খবরের শিরোনাম করেছিলেন ‘চিনিল কেমনে’? তিনি বেঁচে থাকলে প্রধানমন্ত্রীর এই বীরকে চেনার খবরে হয়তো আরও একবার এমনই ধরণের শিরোনাম করতে পারতেন। এই মহাবীর পরের দিন সংবাদ পত্রের মাধ্যমে জানান দিলেন যে দেশ আজ রাখাল শূন্য হতে পারে তবে বীরের কোন অভাব নেই। তিনি বললেন যে তিনি ‘ভয়ও’ পেয়েছেন। বীরের আবার ভয়! অবাক কাণ্ড! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেবেন সেটা বলতেও তার বাধল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের চোর শিক্ষক। দুনিয়াতে বোধ হয় এটাই প্রথম।
লেখার শুরুতে আমি রবি ঠাকুরের “চোর” কবিতা দিয়েই শুরু করতে পারতাম। তা করিনি কেননা সেখানে রাখালের ভাণ্ডার লুণ্ঠন ক্রিয়া নজরে তেমন পড়ে না। তাই আল মাহমুদকেই ব্যবহার করলাম।
যাক সে কথা, একটু পিছিয়ে দেখা যাক। এ রাখালের সুখ্যাতি এবং কাব্য-সঙ্গীতের প্রতি আসক্তি শেখ হাসিনার দরবার পর্যন্ত গড়ালো। এ ধরণের বীর শেখ হাসিনার নজরকে সব সময় ঝাঁকুনি দিয়ে থাকে। তিনি তাকে বানালেন বাংলাদেশের রাজকোষ-রাজভাণ্ডার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর, অর্থাৎ উর্ধ্বতন ‘রাখাল’। তিনি হয়ে গেলেন মনিবের আজ্ঞাবাহী রাজভাণ্ডারের প্রধান ‘রাখাল’।
চলছিল সেভাবেই। ভাণ্ডার রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণের কিছু দিনের মধ্যে মনিব রাখালকে নির্দেশ দিল ডঃ ইউনুসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে হটাও এবং তা দখল কর। সেটাও লুট করতে হবে। যেমন অর্ডার তেমন কাজ। সারা বিশ্বের গরিবদের জন্য বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংক একটি মডেল এবং নোবেল লরেট ডঃ ইউনুস দুনিয়াজোড়া একটি অতি সুপরিচিত নাম। আতিউর নিজেই এই ব্যাংকের উপর কমপক্ষে ৪টি পুস্তক রচনা করে বলেছেন গরীবদের সেবা কাজে ডঃ ইউনুস এর নেতৃত্বে এই ব্যাংকটি সারা বিশ্ব ছড়িয়ে পড়ুক সেটাই তিনি চান। অথচ মনিবের নির্দেশে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের গৌরব ডঃ ইউনুসের পদচ্যুতির সনদটি তিনিই জারী করলেন। সেদিন তিনি ছিলেন বড়ই সুবিধাবাদী। এই পদচ্যুতি সনদ জারীর আগে হাসিনার কাছে তিনি তার নিজের পদত্যাগের কথাও বলতে পারতেন। তাতে তার মনিব ক্ষুব্ধ হলেও মনিবেরও মনিব-জনগণের কাছে তিনি বীর হয়ে থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেবাদাস হিসেবেই থাকতে চাইলেন। শুরু হল অর্থনিতিকে ধ্বংসের প্রক্রিয়া।
দিন চলতে থাকল। বাংলাদেশের ব্যাংক, বীমা, শিল্প, কর্পোরেশন গুলিতে চলতে থাকলো অর্থ পাচার ও লুটপাট। রাখাল গভর্ণরের সেই দিকে খেয়াল নেই। প্রথমে শুরু হলো আওয়ামী-বাকশালী কায়দায় শেয়ার মার্কেট লুটপাট। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই প্রথমে লুট করে শেয়ার মার্কেট। মানুষ সর্বস্বান্ত হলো। কমপক্ষে ৫০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুট হলো। ইবরাহীম খালেদ তদন্ত করে লুটপাটকারীদের নামও ঘোষণা করলেন। আতিউর সে সব ধামাচাপা দিল। অথচ শেয়ার মার্কেটের সুষ্ঠু পরিচালনা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার ক্ষেত্রে সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রয়েছে প্রধান দায়িত্বে।
তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ২৫ বিলিয়ন ডলারের ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ পরিচালনার দায়িত্ব দিলেন কতিপয় কুচক্রী ও ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে। যারা সোনা চুরি ও অর্থ পাচারের সাথে সরাসরি জড়িত। এরা বিদেশী দালাল। আতিউরের তা অজানা থাকার কথা নয়। তাকে রিমান্ডে নিলে হয়তো এ সব কিছু পরিষ্কার হতো। কিন্তু তিনি তো মহাবীর। ধরাছোঁয়ার বাইরে।
পর পরই এলো বেসিক ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক মিলে প্রায় প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা লুটের ঘটনা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী চক্র হয়ে উঠলো বেপোরোয়া। ক্ষমতাসীনরা ৬ বছরে ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করলো। অর্থাৎ ১ বছরের বাজেট সমতুল্য অর্থ। ‘কুইক রেন্টাল’ করে ৪০ হাজার কোটি টাকা লুট করলো। তিতাস গ্যাসের ১৩০ কোটি টাকা লোকসানের নামে তারা আত্মসাৎ করলো। আগের আওয়ামী-বাকশালী আমলে রাষ্টায়াত্ব করা প্রতিষ্ঠানগুলি এখন প্রতি বছর ১৪ হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিচ্ছে রাজনৈতিক কারণে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ২০ হাজার কোটি টাকার ‘পদ্মা সেতুর’ উদ্বোধনের এক সপ্তাহের মাথায় কলমের এক খোঁচায় নতুন বাজেট করলেন ৩০ হাজার কোটি টাকার। বলেছেন পদ্মা সেতুর ব্যয় আরও বাড়তে পারে।
আওয়ামী অর্থনৈতিক ধস যখন সারা দেশে চেপে বসেছে তখন আতিউর নিজে আর বাদ থাকবেন কেন? তিনি প্রধানমন্ত্রীর ‘আইটি' উপদেষ্টার নির্দেশে ভারতের আইটি বিশেষজ্ঞ রাকেজা আনথেনাকে মৌখিকভাবে নিয়োগ দিলেন। যা ছিল সংবিধান পরিপন্থী। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রযুক্তি পরিবর্তনের নামে তার হাতে চাবিটি তুলে দিলেন। কত কোটি টাকার বিনিময়ে কার গোপন মৌখিক নির্দেশে বিদেশির হাতে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রযুক্তি পরিবর্তনের নামে চাবিটি তিনি তুলে দিলেন জাতী আজও তা জানে না। কিছুদিনের ভেতর বাংলাদেশ ব্যাংকের ১ মিলিয়ন ডলার বেহাত হয়ে গেলো। লুট করার কথা ছিল ১ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে তা সম্ভব হয়নি। আসলে বাংলাদেশ এখন সোনা পাচার, মাদক দ্রব্য ও অর্থ পাচারের এক নম্বর আন্তর্জাতিক রুট। সেখানে এখন ক্যাসিনো খোলারও চেষ্টা হচ্ছে। ‘রাখাল' আতিউর নাকি গড়িবের বন্ধু। অথচ বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর তার সময়েই এতো বড় অর্থনৈতিক লুটপাট হয়েছে। অথচ তিনি এই সব বন্ধের কোন একটি পদক্ষেপও গ্রহণ করেননি। লুটপাট ঠেকানোর চেয়ে এই বীর রবীন্দ্র সংগীত এবং কাব্য চর্চাতেই নিবেদিত ছিলেন সর্বক্ষণ। যে কারণে ব্যাংক লুটের এক মাস পর আতিউর যখন সে কথা স্বীকার করলেন তখন বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ ওয়েব সাইটে আতিউরের উদ্দেশ্যে রবিঠাকুরের একটি কবিতা প্রকাশ করা হয়।
সারা দুনিয়াতে এ আতিউররা সরাসরি বিচারের সম্মুখীন হয়। ডেনিশ হাস্ট্রাট ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের প্রভাবশালী রিপাবলিকান স্পীকার। শত শত আইন পাস হয়েছে তার হাতে। ২৫ বছর আগে তহবিল তসরূপের দায়ে গত বছর তার জেল হয়েছে। তিনি এখন কারাবন্দী। চীনে তহবিল তসরূপ করলে তাকে ‘ফায়ারিং স্কোয়াডে’ পাঠানো হয়। প্রতি বছর কয়েক ডজন মানুষকে এভাবে ফায়ারিং স্কোয়াডে যেতে হয়। ভারতে ব্যাংক লুটের দায়ে ম্যানেজারেরা জেল খাটে।
বাংলাদেশে ‘ফাইন্যানসিয়াল ট্রাইবুন্যাল’ গঠন করে দেশের বড় বড় রাখালদের বিচারের ব্যবস্থা করা এখনই প্রয়োজন। অবাক কাণ্ড আতিউর এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় ফিরেছেন। পৃথিবীর কোথাও কোন দুর্নীতি-পরায়ণ ব্যক্তির বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার কোন নজীর নেই। অনেক দেশে এমনকি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও এদের জায়গা হয় না। হয় শুধু বাংলাদেশে। কেননা এরা যে ‘রাখাল রাজা’ । কবির ভাষায়, ‘ অথচ তুমি সুন্দর’। আল মাহমুদ তার একই কবিতায় জবাব দিয়েছেন এভাবে,
‘কনিষ্ঠ গোলাম তুমি বোঝনি কি নিজের গৌরব?
দ্যাখনি কুয়োর সুস্থির জলে ও চাঁদবদন?’
লেখক,
ডঃ শওকত আলী
অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ
নিউ ইয়র্ক
ওয়েব সাইটঃ ভিজিট করুন
ফেসবুক: ভিজিট করুন
টুইটারঃ ভিজিট করুন
২| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৫৪
ঢাকাবাসী বলেছেন: এত টাকা চুরি করে কেউ? ছিঃ। মনে হয় ভাগিদার আরো আছিল।
৩| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:১৫
কথিত লেখক বলেছেন: আমার ভাগের ৫০ টাকা আমি ফেরত চাই
৪| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:১০
বিদ্রোহী সিপাহী বলেছেন: চোরা "না বলে" ধর্মের কাহিনী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কি পড়াবে ওই রাখাল রাজা?
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:০৫
চাকমা বলেছেন: তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান, আসলেই দু:খজনক!