নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একটা পাখির জীবন চেয়েছিলাম

ডাক্তার নামের একটি প্রানী হওয়ার চেষ্টায় আছি।

অ তে অয়ন

অন্তরের খুব গভীরে যখন কারও জন্য টান অনুভব করি, খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমি অবাক হই, আকাশে তার প্রতিবিম্ব দেখা যায়।

অ তে অয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

টুকরো স্মৃতিঃ HSC পরীক্ষা

৩১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৫৯

কাল থেকে HSC পরীক্ষা শুরু হচ্ছে । নস্টালজিক হয়ে পড়লাম । এই তো কয়েক বছর আগের এই দিনটা তো আমিও পার করে আসলাম । নটরডেমে চান্স পেয়েও কেন শাহীন কলেজে গেলাম এর ব্যাখ্যা দিতে দিতে আমি ততদিনে ক্লান্ত। HSCপরীক্ষা শুরু হয়ে গেল । সারা কলেজ লাইফ ফাকিবাজি করে আসছি । SSC তে golden. HSC তে না পাইলে NDC এর ঝাল সহ সব ঝাল আম্মা মনের সুখে মিটাবে । এখন যেন অথৌ সাগরে পড়লাম ।পুড়া র্টামগুলাতো স্যার ম্যাডামদের সাজেশন দিয়েই চালিয়েছি । এখন কে আমাকে উদ্ধার করবে ? দূরুদূরু বুকে গেলাম প্রথম পরীক্ষা দিতে । তেজগাঁও কলেজে সিট পরেছে । হায়রে র্ফামগেটের জাম । ও পরীক্ষা উপলক্ষ্যে চাচা মামা ফুপু সব হাজির । তাদের দোয়ার অনবরত ফুঁ তে প্রায় উড়ে যাওয়ার জোগাড় । জামের সাথে যুদ্ধ করে কলেজে হাজির হলাম । বাপরে ক্যান্ডিডেট এক হাজার হলে গার্জিয়ান হবে দশ হাজার । শুরুতেই আমি টাসকি খেয়ে গেলাম হলিক্রসের মেয়েগুলাকে দেখে । মাসআল্লাহ । পুরা বইয়ের গাট্টি নিয়া হাজির আর এমন ভাবে পড়তেছিল যেন জীবনেও পড়ে নাই । হুড়াহুড়ি করে ঢুকলাম । আম্মা আব্বা সবাইকে এমন ভাবে বিদায় জানালাম যেন জীবনে আর হয়ত দেখা হবে না যদি জীবিত ফিরে আসতে না পারি । হল খুজঁতে খুজঁতে আমি শেষ । হলে আমার সিট ছিল মাঝের রো তে । যাক বাবা । আরও খুশি হলাম হলির মেয়েগুলা আমার হলে পড়ে নাই । আমি আবার গরম সহ্য করতে পারি না । আরও খুশি হলাম আমার চারপাশের নেটওয়ার্ক দেখে । বাহ সামনে সাহরি পেছনে তানজিলা ডাইনে মিজান । রবিন আবার নেটওয়ার্কের বাইরে চলে গেছে । যাক যা আছে তাতেই আমি খুশি । কাঁপা হাতে গোল্লা ভরাট করলাম । দুই একটা কচি মেয়ে ভুল গোল্লা ভরাট করে ভ্যাক ভ্যাক করতেছিল । যথাসময়ে পরীক্ষা আরম্ভ হলো । স্যার ম্যাডামরা প্রচুর ভয় দেখাইছিল যে ঘাড় সামান্য বাকা করলেই বহিস্কার । ভয় পাইনাইক্কা কারন আমার ঘাড় তো জন্ম থেকেই ব্যাঁকা । আলহামদুলিল্লাহ আশে পাশের নেটওয়ার্কের সাহায্য সহযোগীতায় পরীক্ষা সেরকম দিলাম । এভাবেই প্রতিটা পরীক্ষায় চাঁদাবাজি আর নিজের অসীম জ্ঞানের প্রতিফলন সাদা খাতায় ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলাম । ঝামেলা বাধল বায়োকেমিষ্ট্রি থুক্কু কেমিষ্ট্রি পরীক্ষার সময় । সারা জীবন তো মানষী মায়া ঘোষ প্রতিমাসে দুইহাজার রুপির বিনিময়ে তার মূল্যবান সাজেশন দিয়ে আমাকে উদ্ধার করেছেন । মানে প্রাইভেট পড়তাম আর ১০০% কন সাজেশন নিতাম। এখন তো মাইনকা চিপা । বিক্রিয়া যোজনীর বহর দেখে আমার হৃদক্রিয়া বন্ধ হওয়ার জোগাড় । উপায় না দেখে রাত দুইটা বাজে ফোন করলাম মানষী ম্যাডামকে । ম্যাডাম ঘুম জড়ানো কন্ঠে হ্যালো বলতেই আমি শুরু করি আন্টি আমি শেষ । হাজারী নাগ কিছুই বুঝতেছি না । আন্টি বাঁচান । ম্যাডাম বলল হারামজাদা আমারে আন্টি কছ । তোরে আমি ...... আমি টাসকি খাইলাম । খাইছে আমারে । ম্যাডাম আওলাইয়া গেছি । সাজেশন দেন । বহুত কষ্টে ম্যাডামকে ঠান্ডা করলাম । ম্যাডাম কিছুক্ষন বকাবাজি করে ঐ রাতেই আমারে পড়া বুঝানো শুরু করল । আমি দেখি ঘটনা খারাপ । আমি ঘুমানোর কথা বলে ফোন রেখে দেই । কি আর করা । আম্মা কিছুক্ষন পর আমাকে জোর করে ঘুমাতে পাঠায় । সে রাতে ভয়াবহ স্বপ্ন দেখলাম । পরের দিন সকালে ব্রেকফার্ষ্ট করতে গিয়ে মাথা আউট হয়ে গেল । ডিম দিয়েছে । আল্লাহই জানে কপালে কি আছে । আম্মার সাথে ঝগড়াও করতে পারতেছিনা । বরাবরই আমি ভীষন কুসংস্কারচ্ছন্ন ছেলে । ডিম খিলাইলে পরীক্ষায় সিওর ডিম পাব । যাক গেলাম পরীক্ষা দিতে । এক্সটারনাল এসেই শুরু করে দিল তামাশা । সবার সিট চেঞ্জ করে দিতে লাগল । আমাকে যখন সবার সামনের বেঞ্চে পাঠিয়ে দিল আমার অবস্থা জাষ্ট ফ্রিজে রাখা রুই মাছ । কোশ্চেন দেখে আমি আমার চোখের জৌত্যি শক্তি হারিয়ে ফেললাম । সব অন্ধকার । কি করি কি করি । দুই ঘন্টা কেটে গেল আমার কলম সেই যে জামে পড়ছে আর ছুটে না । টয়লেটে গেলাম জাম ছুটানোর জন্য । ইশতিয়াক ও দেখি জাম ছুটানোর জন্য আসছে । ওর থেকে কিছু ভিক্ষা নিলাম । হলে এসেই ইশতি কি বলেছিল সব ভুলে গেলাম । কি করি । ডু অর ডাই । মেসেজ পাঠালাম তিন বেঞ্চ দূরের অনন্যার কাছে । মেয়েটা কলেজ এক্সামগুলাতে বহুত হেল্প করেছিল । অনন্যা আমার মেসেজ এর রিপ্লাই সাথেসাথেই দিল কিন্তু পথিমধ্যে তা মাননীয় স্যারের কাছে ডাইভার্ট হয়েগেল । আর যাই কই । খাতাটা আমার টেবিল থেকে স্যারের টেবিলে আবিস্কার করলাম । মর জ্বালা । খাতার অর্ধেকও তো লেখি নাই । স্যাররে বহু অনুনয় করলাম ।কে শুনে কার কথা । ঐদিকে টাইম পাগলা ঘোড়ার মত ছুটছে । ঠিক দশ মিনিট বাকি থাকতে স্যার দয়াপরবশ হয়ে খাতাটা দিল এবং আমি সাথে সাথে খাতার উপর যুদ্ধ চালালাম দশ মিনিট । যা থাকে কপালে । কি যে আগা মাথা লেখলাম কিছুই খেয়াল নাই শুধু মনে আছে টাইম শেষ হয়ে গিয়েছিল আর স্যার আর আমার খাতা টানাটানির মাঝে আমার খাতার একটা পেজ ছিড়ে গিয়েছিল । যা হোক সেই দিন থেকে আমার হার্ট এবনর্মাল বিট দিতে শুরু করে যা রেজাল্ট দেওয়ার দিন পর্যন্ত আমি টের পেতাম । মুখ আমসি করে ঘরে ফিরলাম । সিওর আমি ফেল । স্যারের পনের গুষ্টি উদ্ধার করছি আর মনে মনে ভাবছি ইশ যদি নটর ডেমে ভর্তি হতাম তাইলে বোধহয় এই অবস্থা হতো না । কারন তাইলে শাহীনের মত ফাকি দিতে পারতাম না আর এক্সামে সব পারতাম । আমার মুখ দেখে আম্মা যা বোঝার বুঝে নিল । শুরু হলো আম্মার বকাবাজি । তোরে খালি খাওয়াইলামই । কিন্তু কোন লাভ হল না । তোরে পড়ালেখা না করাইয়া না করাইয়া রাস্তার একটা ছেলেরে পড়াইলেও ও আমার মুখ রাখত। আরও কত হাবিজাবি। জিদ চেপে গেল । ভাবলাম বাকি পরীক্ষাগুলা ভাল করে দিব । করলাম নাহয় মিস একটাতে । তো বাকি পরীক্ষাগুলা ফাটাইয়া দিলাম । কিন্তু মাঝে মাঝেই হার্ট এবনরমাল বিট মারত । একসময় পরীক্ষা শেষ হলো । সবাই কি খুশি । শুধু আমার মুখে হাসি নাই । রেজাল্টের জন্য সবাই অপেক্ষা করে আর আমি দোয়া করি জীবনেও যাতে রেজাল্ট না দেয় । কেমিষ্ট্রিতে ফেল করলে বাকী সাবজেক্ট গুলাতে এ প্লাস পাইলেও লাভ নাই।কিন্তু আল্লাহ আমার কথা না শুনে অতি উতসাহীদের কথা শুনল । রেজাল্টের দিন চলে আসল । দিনরাত আমি শুধু ক্যালকুলেশন করি কিভাবে এ প্লাস পাওয়া সম্ভব,আচ্ছা এটা এটা ওতা যোগ সেটা,হুম হইতে পারে,ফার্ষ্ট পার্টে যদি এত পাই সেকেন্ড পার্টে এত উঠাইতেই হবে। । বাট যে এক্সাম দিছি,রিভিশন দেই নাই,কয়টা আনসার লিখি নাই সেটাও ভুলে গেছি।কেমিষ্ট্রিতে কি আদৌ পাশ সম্ভব? রেজাল্টের আগের দিন ফ্রেন্ডদের ঘনঘন ফোন যে কার বাপ কারে গাড়ি গিফট করবে কে কই বেড়াতে যাবে এ প্লাস পাইলে । আমার স্বপ্ন তখন ঘুরেফিরে পাশ । ভয়ে আমার জ্বর চলে আসল । রেজাল্টের দিন ভীষন জ্বর । দুপুরের দিকে আম্মা চাটি মেড়ে বলল যাও আমলনামা নিয়ে আস । আর ঢং দেখাইও না । মুখ তিতা করে আম্মা এগুলা বলছিল । কলেজ যেতে যেতে আমি চিন্তা করছিলাম কিভাবে অল্প ব্যাথায় সুইসাইড করা যায় । কলেজে গিয়েই দেখি লোকে লোকারন্য । তখনো রেজাল্ট আউট হয় নাই । আমি তরুদ্যানের এক চিপায় গিয়ে বসি । কিছুক্ষন পরেই কলেজ বিল্ডিং থেকে চিতকার শুনতে পাই । কান্না চলে আসছিল । কি করলাম জীবনে । এ প্লাস ই যদি না পাই । আর পড়ালেখা করে কি হবে । কিছুক্ষন পরেই দেখি একটা মিছিল আসছে । কই পালাই । ফরহাদ আমাকে দেখে ফেলে । বলে দোস্ত তোর কি প্লাস । আমি বলি নারে মামা । ফরহাদ আমাকে স্বান্তনা দিয়ে চলে যায় । পরে দেখি মিজান । ও আবার আমার রোল নম্বর জানত । এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে । বলে মামা আমরা পেলাচ । মামা আমরা পেলাচ । আমি কিছু বুঝে ঊঠতে পারি না । বলি কি কছ আমি কেমি তে গেসিলাম । স্যার খাতা নিয়া গেল,কিছুই লেকতে পারি নাই।ও বলে মামা তুমি আমার তিন রোল পরের নাম্বার না । আমি হতাশ হই । নারে মামা তুমি আরেকজনের রোল দেখছ। আমি তোর পাঁচ রোল পেছনে । &ঁ%%৳৳ এত নাম্বার।মিজান আবার চিল্লায় আরে মামা আমার পেছনের আট রোল পর্যন্ত সব এ পেলাচ । আমার বুকটা আনন্দে লাফিয়ে উঠল । সিওর হওয়ার জন্য নিজেই যাই । ততক্ষনে সবার রেজাল্ট দেখা শেষ । নিজের রোল নাম্বার টা খুঁজে বার করি । পাশে লেখা জিপিএ ফাইভ । অহ খোদা । চিতল মাছের মত দুইটা লাফ মারি । অই আমি পেলাচ পাইসিরে । । । আনন্দে আমি তখন বাঁধনহারা । পৃথিবীটা খুব সুন্দর মনে হয় । একটু আগের মিছিলটাকে মনে হয় জীবনের আহবান । সবাইকে জড়িয়ে ধরি । জুনিয়র পোলাপাইন আমাদের পাগলা নাচ দেখে আমাদের সাথে যোগ দেয় । আহ কি সুখ । কি সুখ । আমিও পেলাচ । বাসায় আসি । আমার রেজাল্ট বলতেই আব্বা আমাকে জড়িয়ে ধরে । আর আম্মার কথা আর কি বলব । কিছুক্ষন পর শুনি আম্মা কাকে যেন ফোনে বলতেসে আর বইল না । ছেলেটা যা কষ্ট করছে । দিনরাত গাধার মত খাটসে । এ প্লাস পাইল । মা বলে কথা ।

ততক্ষনে আমার ভাব এভারেষ্টে উঠে গেছে । নাকটা উচু করে সব দেখতেসি । আম্মাকে বললাম খুব তো বলসিলা । এখন দেখস । এখন বল কি দিবা আমারে । আম্মা আমার হাতে দুইশ টাকা দিয়ে বলে যাও বার্গার খাইয়া আস । মক্কা বহু দূর । আগে একটা ভার্সিটি তে চান্স পাও । আমি বলি তাইলে এত কষ্ট করে যে পেলাচ পাইলাম । আম্মার মুখ ঝামটি সে তো সবাই পায়। আমি হা করে থাকলাম । আম্মা ততক্ষনে আর একজনের সাথে ফোনে আর বইলেননা ভাবী । এ প্লাস পাইসে । এত কষ্ট করছে ছেলেটা । আমি শুনতে থাকি আর অতি দুখে ও আমার মুখে ফুটে উঠে একটুকরো হাসি । আম্মারা তো এমনই । । ।

বি দ্র : HSC পরীক্ষার্থী ছোট ভাই বোনেরা।তোমরা ভয় পেয় না।ভালো করে পরীক্ষা দাও।ইনসাআল্লাহ সবার এক্সাম ভালো হবে।জীবনে অনেক পরীক্ষা আসবে যাবে,সবই আমাদের পেরুতে হবে জীবনে বড় হওয়ার জন্য।মনে রেখ চেষ্টাটাই আসল।একদিন না একদিন সাফল্যতো আসবেই।সবাইকে শুভকামনা।



মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৩৬

স্বপ্নখুঁজি বলেছেন: আমার মতে এস এস সির চেয়ে এইচ এস সিতে প্লাস পাওয়াটা সহজ।আর আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।

০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:০৪

অ তে অয়ন বলেছেন: আমার তা মনে হয় নাই,এস এস সি তে অবজেক্টিভ অনেক কাভার করে,আর তুলনামূলক সোজা লেখার চেয়ে।আর আমি এস এস সি তে গোল্ডেন পেয়েছিলাম তাই হয়ত সোজা লাগতে পারে।ইন্টারে মিস হয়েছিল।ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।

২| ৩১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৫৯

ইমাম হাসান রনি বলেছেন: পুরোটা পড়লাম ।অনেক ভাল লাগল । +++++++

০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:০৪

অ তে অয়ন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ রনি ভাই :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.