নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক্লান্তিবিহীন অপেক্ষা

কিছু সপ্ন, কিছু বাস্তবতা আর কিছু কল্পনা ।

বালি আহমেদ

বলার মত এমন কিছুই নেই ।

বালি আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্লান্তিবিহীন অপেক্ষা (দ্বিতীয় অংশ )

০২ রা জুন, ২০১৪ রাত ১২:৪৬

রাত ১১ টা । বাসার সবাই তখন ঘুমিয়ে পড়েছে । আমিও ঘুমানোর জন্য তৈরি হচ্ছি । সেই দিনও রুটিন মত মাথায় পানি দেওয়ার জন্য টিউবওয়েল থেকে আসছিলাম । হঠাৎ চোখ পড়ল গেটের বাহিরে । বোরকা পরে কেউ যেন দাড়িয়ে আছে । খানিকটা ভয় নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলাম । অশরীরী কেউ নয় তো ? পরক্ষনিই মন কে ঠিক করলাম, না এতো অল্প রাতে অশরীরী কেউ হতে পারেনা ।আমি আস্তে আস্তে বোরকা পরা মানুষটির দিকে এগিয়ে গেলাম । খুবই অবাক হয়ে দেখলাম আমার স্কুলের সেই মেয়েটি । আমি নিজের চোখকে প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি । ভেবেছিলাম হয়ত সারাদিন তাকে নিয়ে ভাবি তো, তাই এমন ভ্রম আমার চোখে ভাসল, আসলেই সবটা আমার মনের কল্পনা । কিন্তু না আমি যাকে দেখছি সে বাস্তবেই আমার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল । বুঝতে পেরেছি তখন যখন ও আমাকে বলল ‘মুন্না কেমন আছো’ ?

আমি নিজেকে সামলে নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললাম ‘হ্যাঁ ভালো আছি । কিন্তু মনিরা, তুমি এতো রাতে এখানে কি করছ, ? পরবর্তীতে মনিরা আমাকে যা বলল, আমি তা কখনো শুনার জন্য তৈরি ছিলাম না ।

‘মুন্না আমি একটা সমস্যায় পড়েছি ।বাড়ী থেকে রাগ করে চলে এসেছি আজকের রাত টা কি আমি তোমাদের বাসায় থাকতে পারি’ ?

আমি অবাক হয়ে বললাম ‘বল কি তুমি ? বাসা থেকে রাগ করে চলে এলে কেন । কি হয়েছে’ ?

‘দেখ মা মারা যাওয়ার এক মাস পার হলনা বাবা একজন মহিলাকে বিয়ে করে বাসায় নিয়ে এসেছে । প্রতিদিনেই তুচ্ছ কোন বিষয়ে উনি আমার সাথে রাগারাগি করেন । বাবা ও আমাকেই ধমকায়, যদিও ভুলটা ওই মহিলার। তাই বাবার সাথে রাগারাগি করে চলে এলাম । প্লিজ মুন্না, আজকের রাতটার জন্য একটা ব্যবস্থা কর।আমার কোন আত্মীয় নেই আর কাউকে আমি চিনিনা। বাড়ী থেকে বের হয়ে সারাটা বিকেল ছিলাম অবকাশে। সন্ধ্যা হবার পর আর উপায় না দেখে তোমার এখানে চলে এলাম । সকাল হতেই আমি চলে যাব । প্লিজ একটু হেল্প কর’ ।

আমি মনিরা’র তাকিয়ে দেখলাম ওর চোখ দুটি জলে টলমল করছে । রাতে জেগে থাকা অবাক জোসনার কিছু আলো এসে ওর চোখের জলের সাথে মিশে গেছে । কত সুন্দরই না লাগছে ওর চোখ গুলো । শুরু হয়ে গেল আবারও আমাদের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার খেলা । নিজের অজান্তেই মাঝে মাঝে ওর সাথে আমার এমন খেলা হয় । ও আমার দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে আমি ওর দিকে চেয়ে থাকি । দুজনের কেউ চোখ নামাতে চাইনা । তবুও এই খেলায় আমি কখনো জিততে পারিনা, সব সময় হেরে যায় কিন্তু মনিরা হার মানে না ও তাকিয়েই থাকে । আজ আমি ইচ্ছে করেই ওর আগে চোখ নামিয়ে নিলাম । কারণ ওর এমন ভেজা চোখ আমি কখনই দেখতে চাইনি ।

‘আচ্ছা চিন্তা কর না এসো, ঘরে এসো’ । আমি ও’কে আমার বোনের রুমে নিয়ে বললাম বস, বোরকা খোল তারপর হাতমুখ ধোয়ে আস আমি তোমার জন্য কিছু খাবারদাবারের ব্যবস্থা করছি, মনে হয়না স্কুল থেকে ফেরার পর তুমি কিছু খেয়েছ’ ।

তারপর ছোটবোন কে ডেকে তুললাম আর বললাম, ওর জন্য কিছু খাবার ব্যবস্থা কর । ও কিছুটা অবাক হয়ে মনিরা কে দেখছে । আমি ছোটবোনের কাছে ওর পরিচয় দিলাম তবুও ও হতভম্ব অবস্থায় মনিরার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়ত ঘুমের ভাব এখনও কাটেনি । খাবার শেষ হবার পর মনিরা কে বললাম ‘চিন্তা করোনা আমার বোনের সাথে ঘুমিয়ে পড় । সকাল হলে আমি তোমাকে বাড়ীতে দিয়ে আসবো । যা হবার হয়ে গেছে এই গুলো নিয়ে চিন্তা করোনা, সব ঠিক হয়ে যাবে । রাতে কোন কান্নাকাটি করবেনা । ছোটবোন কে বললাম ‘ যা ওকে নিয়ে শুয়ে পড় । ছোটবোন ওকে নিয়ে শুতে গেছে ।

আর আমি ? আমি আমার রুমে এসেছি কিন্তু শুতে পারছিনা । একটা ব্যথা অনুভব করছি বুকের বাম পাশে । আমার ভাললাগার মানুষটি আমার এতো কাছে এসেছে । অথচ কতদিনই না ওকে আমি আমার পাশে কল্পনা করেছি । দেখেছি ও’কে নিয়ে আমি নানান স্বপ্ন ।কিন্তু সেই স্বপ্ন কি স্বপ্ন থেকেই যাবে? মনিরা একদিন বলেছিল কোন এক বিদেশী ছেলের সাথে নাকি ওর বিয়ের কথা হয়ে আছে, ও দেশে আসার কয়েকদিন পরই নাকি বিয়ে হয়ে যাবে । আহ, সেই দিনটি আমার জন্য কতই না কষ্টকর হবে ।

আচ্ছা আজ যদি আমি আমার ভালো লাগার কথাটি ও’কে বলে দিতাম । না না এটা হয়না । ও আমার কাছে এসেছে বিপদে পড়ে এই অবস্থায় ওকে এই ধরনের কোন কিছু বললে ও হয়ত ভাববে আমি ও’র পরিস্তিতির সদ্ব্যবহার করছি । না বলা যাবেনা । কিন্তু কোনদিন ও কি বলতে পারব ? কখনো কি আসবে আমার জীবনে সেই মুধরতম সময় ? কবে আসবে সেই সময়টা ? এই রকম ভাবতে ভাবতে চোখে জল আসছে, এক সময় শুনললাম মা’র চিৎকার । দৌড় দিয়ে মা’র কাছে গিয়ে দেখি মা’ মনিরা’কে দেখে ভয়ে ভয়ে বলছে ‘এই মেয়ে তুমি কে ? এই ঘরে আসলে কিভাবে’? মা’র স্বভাব হচ্ছে মাঝরাতে একবার হলেও আমাদের ঘরে এসে উকি দেওয়া । আর ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক । মাঝ রাতে যদি কেউ দেখে তার মেয়ের সাথে অচেনা একটি মেয়ে শুয়ে আছে তাহলে ভয় পাবারই কথা।

আমি মা’কে সামলে নিয়ে বললাম ‘ও আমাদের স্কুলে পড়ে। একটা বিপদে পড়ে কিছুক্ষন আগে এসেছে, তুমি ঘুমিয়ে ছিলে বলে তোমাকে কিছু বলিনি । মা’ আমার কথা হয়ত পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছেন না আবার অবিশ্বাসও করতে পারছেন না । মা’ কিছুটা সময় নিলেন ছেলের প্রতি অগাধ বিশ্বাস ধারণ করতে । খানিকটা সময় নিয়ে অবচেতন মনেই হয়ত জিজ্ঞেস করলেন ‘মেয়েটি কিছু খেয়েছে ?’

আমি বললাম ‘হ্যাঁ খেয়েছে । তুমি চিন্তা করোনা এখন ঘুমাও । আর সকাল হলে সব কিছু বলব আর মনিরাকেও ওর বাড়ীতে দিয়ে আসবো’ ।

মনিরাও যেন কিছুটা ভয় পেয়ে গিয়েছিল । ও’কে ও দেখছি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । মা’কে শান্ত করে মনিরা কে বললাম ‘মনিরা যাও শুয়ে পড় । মা’কে সব বুঝিয়ে বলেছি চিন্তা করোনা, যাও শুয়ে পড়’ ।

রাত ৩ টা বাজে । সবাই আবার ঘুমিয়ে পড়েছে । মনিরা ও হয়ত সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে । শুধু জেগে আছি আমি, ঘুমুতে পারছিনা । মনে করে যাচ্ছি ও’র কথা । কতইনা সুন্দর কেটেছে আমাদের দিনগুলো । কম্পিউটার বিভাগে ছিলাম এক সাথে । প্রথম অবস্থায় মাউসে হাত রাখতেই ওর হাত কাঁপত । আমি ওর হাতের উপর হাত রেখে মাউস ধরা শিখিয়েছিলাম । খুব অল্প কয়দিনেই আমাদের মাঝ থেকে সঙ্কোচের দেয়াল টা ভেঙ্গে গেল । কোন রকম ভনিতা ছাড়াই, আমায় বলেছিল এই ভাবে নয়, আমার হাতের উপর তোমার হাত রাখ তারপর শিখাও, এই কথাটা মনে হলে এখনও আমি অবাক হই । কতইনা মুধুর ছিল সেই দিনগুলো ।

স্কুল শেষ করে দুজনই বাদাম খেতে খেতে স্টেশনে আসতাম । তারপর ও’কে বাসে তুলে দিয়ে আমি ফিরতাম বাসায়। ও কি তখন বুঝত, তার বাদাম খাওয়ার সুন্দর দৃশ্যটি আমি কত মুগ্ধ হয়ে দেখতাম । শুধু ওর সাথে কিছুটা পথ হাঁটার জন্য উল্টো পথে স্টেশনে যেতাম । তাকিয়ে থাকতাম ওর চোখের দিকে । ওর প্রতিটি কথার সাথে যেন ভালবাসা নেচে উঠতো। তখন মনে হত ওর মত মায়াবতী মেয়ে মনে হয় জীবনে কখনো দেখিনি । নিজের অজান্তেই ওকে ভালবেসে যেতাম । আহ; সেই ভালোবাসার কথা কি সে কখনো বুঝতে পারবে ? কখনো কি ও বুঝে নিতে পারবে আমার চোখে, তাকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন গুলো ? কিছু কিছু সময় আসে, মানুষ নিজেকে অনেক অসহায় মনে করে, আমার ও এখন নিজেকে অনেক অসহায় মনে হচ্ছে । চোখের কোণ বেয়ে নেমে আসছে মূল্যহীন অশ্রু। কিন্তু গভীর হতাশা গুলো ভিতরেই রয়ে গেছে গোপনে। এরকম ভাবতে ভাবতে শেষ রাতে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকাল বেলায় ছোটবোন ঘুম থেকে ডেকে তুলল। ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে উঠে, মা’র কাছে গেলাম সব খুলে বললাম। হাত মুখ ধুয়ে এসে দেখি মা’ মনিরা’র সাথে কথা বলছে ‘চিন্তা করোনা মা, সব ঠিক হয়ে যাবে আর যখন ইচ্ছে হবে আমাদের এখানে চলে আসবে, কোন সঙ্কোচ রাখবে না’ ।

মনিরা কে নিয়ে বাড়ী থেকে বের হলাম, আমি যাব স্কুলে আর ও’কে রিকসায় তুলে দেব । পাশাপাশি দুজন হাঁটছি কি বলব ওর সাথে কিছু মাথায় আসছেনা, মনিরাও নীরব হেঁটে যাচ্ছে । হঠাৎ মুখ থেকে একটা কথা বেড়িয়ে গেল, ‘মনিরা শুন, আর কখনও এমন করবে না, যতই রাগারাগি হোক বাসায় থাকবে । তুমি এতো রাতে আমার বাসায় এলে যদি আমি বাসায় না থাকতাম তখন তুমি কি করতে ? পরের বার আর এমন ভুল করবেনা । অনেক ফ্যামিলিতেই এমন হয়, পরে ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে’। এর বাহিরে কি বলব বুঝতে পারছিনা । কথা বলতে হয় বলে, বলে যাচ্ছি ।

আমার কথা গুলো ও কেবল শুনেই যাচ্ছে আর মাথা নাড়াচ্ছে ।

‘আজ কি স্কুলে আসবে’ ?

মনিরা মাথা নাড়িয়ে হালকা স্বরে বলল, ‘না’ ।

‘আমি কি তোমার সাথে তোমার বাসায় যাব’ ?

‘না, বাড়ীতে কি পরিবেশ তৈরি হয়ে আছে জানিনা, তবে এতুটুকু বুঝতে পারছি, সেই দৃশ্যটা তুমি দেখতে চাইবেনা । আর তোমাকে নতুন কোন ঝামেলায় ফেলতে চাইনা’।

‘ঝামেলা বলছ কেন’ ? তুমি আমার বাসায় বেড়াতে আসলে এতুটুকুই তো । আমি যদি তোমার বাড়ীতে বেড়াতে যেতাম তুমি কি না করতে’ ?

আমি ও’র দিকে তাকালাম । দেখি সে’ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে । শুরু হয়ে গেল আবারও এই সুন্দর খেলা। চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার খেলা ।

আমি আবার চোখ নামিয়ে নিয়ে বললাম, ‘বল, তুমি কি, না করতে ?’

একটু মুচকি হেসে আমার দিকে তাকাল । কত সুন্দরিই না ছিল ওর ওই হাসি । মনে মনে ভাবলাম, ও হাসলে ওর হাসির মাঝে যে একটা মায়া ফুটে উঠে সেই মায়া কখনো একটা ফুল ও ফোঁটাতে পারেনা । ইচ্ছে হচ্ছিল ওর পাশাপাশি আরও কিছুক্ষণ হাঁটি । কিন্তু পরক্ষণেই মনে হল, না ওর পাশাপাশি হাঁটার সময় এখনও আসেনি। আমি একটা রিকসা ডেকে এনে মনিরা’কে রিকসায় তুলে দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম ।

দুদিন পরের কথা । এই দুদিন মনিরা’কে আমি স্কুলে আসতে দেখিনি। ওর কোন প্রকার খোঁজ ও পাইনি । মনে মনে একটা নিঃসঙ্গতা অনুভব করে যাচ্ছিলাম এবং এক সময় ভাবলাম কোন একদিন ওর বাড়ীতে যাব ওর খোঁজ নিতে । কিন্তু আমার দেরি সয়নি, ওই দিনেই মনিরা’র বাড়ীতে চলে গেলাম । মনিরা আমাকে একদিন বলেছিল তাদের স্টেশনে গিয়ে কোন একজন কে গোলাপ বাড়ী্র কথা জিজ্ঞেস করলেই নাকি ওদের বাড়ী দেখিয়ে দিবে, আমি ঠিক সেই ভাবেই গেলাম । বাড়ী খোঁজে বের করতে বেশি সময় লাগেনি । বাড়ীতে ঢুঁকে ভালভাবে চারদিক চেয়ে দেখলাম, আশেপাশে কোন গোলাপ গাছ দেখলাম না, কিছুটা অবাক হলাম, যে বাড়ীতে একটাও গোলাপ গাছ নেই, সেই বাড়ীর নাম গোলাপ বাড়ী কিভাবে হল? উঠোনের এক কোণে দেখি একটি ছোটমেয়ে খেলা করছে, মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করতেই ও হাতের ইশারায় সামনের একটা ঘর দেখিয়ে দিল ।

ঘরের কাছে আসতেই দেখি একজন মধ্য বয়স্কা এক মহিলা বের হয়ে এসেছেন । আমাকে দেখে বললেন ‘আফনে কেডা’?

কেমন যেন রাগী রাগী একটা ভাব চেহেরায়, আমি কিছুটা বিনীত স্বরে বললাম, ‘জী, আমি মনিরা’র কাছে এসেছিলাম, ও আর আমি এক সাথেই পড়ি । কয়েকদিন ধরে ও স্কুলে যাচ্ছেনা তাই খবর নিতে আসলাম, ও কি বাসায় আছে?’

আমার কথা শুনে ঘরের ভিতর থেকে একজন বের হয়ে আসল, দেখে বুঝতে পারলাম উনি সম্ভবত মনিরা’র বাবা, রাগী চেহেরার মহিলাটির স্বামী । উনি সম্ভবত ভিতর থেকে আমার কথা শুনছিলেন । মনিরা’র মা, (সৎ’মা) আমাকে দেখিয়ে স্বামীকে বললেন ‘এই পুলা তোমার মাইয়ার হবর নিত আইছে’।

আমার কথা শুনে উনি আমাকে ভিতরের ঘরে নিয়ে বসালেন আর বললেন ‘বাবা মনিরা’র সাথে তোমার শেষ কবে দেখা হয়েছে?’

উনার কথার আগাগোঁড়া আমি কিছু বুঝতে পারলাম না, ‘উনি এই কথা জানতে চাচ্ছেন কেন ? ওর কোন সমস্যা হলনা তো ?

‘কি বাবা, কিছু বলছ না যে, মনিরার সাথে তোমার শেষ কবে দেখা হয়েছিল’?

আমি বললাম, ‘তিনদিন আগে’

‘ও বাড়ী থেকে চারদিন আগে রাগ করে চলে গিয়েছে, আজও ফিরেনি’

উনি এমন কঠিন কথা গুলো খুব স্বাভাবিক ভাবে শেষ করলেন । আমি শুনি নাই এমন একটা ভান করে বললাম, ‘কি বললেন?’

উনি ঠিক আগের মতই করে দ্বিতীয় বার কথাগুলো বললেন ।

দ্বিতীয়বার শুনার পরও যেন আমি আমার কান কে বিশ্বাস করতে পারছিনা, মনে হচ্ছে আমি কোথাও ভুল শুনছি । সামান্য একটা বিষয়ে রাগারাগি করে এতদিনের জন্য একটা মেয়ে বাড়ী ছেড়ে চলে যেতে পারেনা ।

কিন্তু আমার ধারণা ভুল করে উনি বললেন, ‘এটাই সত্য মনিরা চারদিন যাবত বাড়ী ফিরেনি’ ।

‘আমি বললাম আপনাদের সব আত্মীয় স্বজনদের বাসায় খোঁজ নিয়েছেন’?

‘হ্যাঁ সব জায়গায় খোঁজ নিয়েছি ও কোথাও যায়নি, তাছাড়া আমাদের তেমন কোন আত্মীয় নেই’।

আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা, আমি এমন একজন বাবার সামনে বসে আছি যার মেয়ে কয়েকদিন যাবত নিখোঁজ অথচ উনার মধ্যে কোন দুশ্সচিন্তার ছাপ ছিলনা ।

‘মনিরা কি প্রায় সময় এমন করত’ ?

‘না এই প্রথম, আর যাবেই বা কোথায় কয়েকদিন গেলে এমনিতেই ফিরে আসবে ।

আমি হতভম্ব অবস্থায় মনিরা’র বাড়ী থেকে বের হয়ে আসলাম । এখনও নিজে নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছিনা। মনিরা নামের মেয়েটি, যাকে গোপনে ভালবেসে যাচ্ছি, সে কোথাও হারিয়ে গেছে । হারিয়ে গেছে এই কথা বিশ্বাস করবই বা কিভাবে, মানুষ কি এতো সহজে হারিয়ে যেতে পারে ? হয়ত আমার মতই কোন এক বন্ধুর বাড়ীতে লুকিয়ে আছে ।

কেউ একজন ঠিকই বলেছিলেন হারিয়ে যাওয়া মানুষকে খুজে পাওয়া সহজ, কিন্তু যে নিজ থেকে হারিয়ে যেতে চায় তাকে খোঁজে বের করা অনেক কঠিন । মনিরাও আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে না হারাতে চাচ্ছে সেটা আজও আমি জানতে পারিনি । কখনো জানতে পারব বলেও মনে হয়না । কারণ আজও পর্যন্ত আমি মনিরা’র কোন খোঁজ পাইনি । ও’ এখনও ফিরে আসেনি । ওই দিনের পরও আমি সেই গোলাপ বাড়ীতে কয়েকদিন গিয়েছিলাম কিন্তু মনিরা’র কোন খবর পাইনি । ওর বাবা মা’র মধ্যে মনিরা’র জন্য কোন রকম পেরেশানি দেখেনি । ওনাদের ভাব-ভঙ্গি দেখে মনে হয় মনিরা নামের মেয়েটির সাথে তাদের তেমন কোন সম্পর্ক ছিলনা অথবা তাদের জীবনে মনিরা’র আর কোন প্রয়োজন পড়বেনা ।

মনিরা তুমি আজ কেমন আছো, কোথায় আছো ? তুমি জান না, তোমাকে হারিয়ে আজ আমি অনেক একা হয়ে পড়েছি, কাউকে দুঃখের কথা বলতে পারছিনা । আমি এখন কি করব কিছুই বুঝতে পারছিনা । পরে নিজের চেষ্টায় স্কুল থেকে তোমার একটা ছবি সংগ্রহ করে বিভিন্ন পত্রিকায় একটি নিখোঁজ সংবাদ ছাপালাম । বিভিন্ন এলাকার দেওয়ালে দেওয়ালে তোমার ছবি সহ পোস্টার লাগালাম । মনিরা, আজও কেউ আমাকে তোমার খবর এনে দিতে পারিনি । ‘বল মনিরা, তুমি কোথায় লুকিয়ে রেখেছ নিজেকে’ ?

আমি আজও মাঝরাতের অবাক জোসনার দিকে তাকিয়ে থাকি আর মনে মনে ভাবি কখনো হয়তবা তুমি এসে ওইদিনের মত আমাকে বলবে, ‘মুন্না আজ রাতটা কি তোমাদের বাসায় থাকতে পারি’? আর আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরে তখন বলব, শুধু আজ কেন, তুমি চাইলে আমি তোমাকে সারাজীবনের জন্য রেখে দিতে চাই । আর কখনই তোমাকে যেতে দেবনা। পূর্ণিমার রাতে নিথর চোখে একাকী আর জোসনা দেখতে চাইনা, তোমাকে পাশে রাখতে চাই। বৃষ্টিস্নাত রাতে তোমার হাতে হাত রাখতে চাই ।

প্রতিরাতে তোমায় নিয়ে এরকম ভাবতে ভাবতে চোখদুটো জলে একাকার হয়না এমন রাত কখনো আসেনি । তবু আমি জোসনার দিকে চেয়ে থাকি । চোখ ফিরিয়ে নেইনা । চোখাচোখির সেই খেলাটা আজ আমি জোসনার সাথে খেলি । এখন আমি জানি, জোসনা আমাকে এই খেলায় হারাতে পারবেনা শুধু জোসনা কেন, তুমিও আমাকে হারাতে পারবেনা । এরপর কখনো যদি চোখাচোখির এই খেলা তোমার সাথে খেলি, আমি জিতবই । কিন্তু কবে ? কবে তুমি ফিরে আসবে । আমার এই অপেক্ষা কবে শেষ হবে ? কবে তোমার দেখা পাব ? আমি অপেক্ষায় আছি তোমার জন্য । মনিরা তুমি কোথায় আছো?, ফিরে আসো, তোমার জন্য যে অপেক্ষা শুরু করেছি সেই অপেক্ষা কখনো আমি নিজ থেকে থামাতে পারবনা । এই অপেক্ষা শুধু অপেক্ষা নয় । এই অপেক্ষা ক্লান্তিবিহীন অপেক্ষা ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.