নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দ্য ওয়ান্ডারার

দ্য ওয়ান্ডারার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইউ ক্যান সি মি

১২ ই জুন, ২০১৬ রাত ১:৫৫



রাত ১০ টা ।
পোলাপানকে ভিএলএসআই ( ভেরি লারজ স্কেল ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ) পড়ানো শেষে আমি বনানীর রাস্তায় । কালকে হরতাল, রাস্তা খালি । এমনিতেও বনানী গুলশানে ৯ টার পর রাস্তা অটো খালি হইয়া যায় । এরা মনে হয় “ আর্লি বেড আর্লি রাইজ ” পাবলিক । ঢাকা শহরের লোক ১২ টার আগে ঘুমায়, কেমনে কি ???
যাই হোক, রাত বাড়তেছে । বনানীর রাস্তা দিয়া হাঁটা শুরু । আহ্লাদ করে হাঁটতেছি না, পকেট মোটামুটি খালি ( ইন ফ্যাক্ট ৩০ টাকা আছে ), ভাড়া দেয়া যাবে না । মেইন রোড দিয়া হেঁটে মজা নাই । এর চেয়ে বনানীর অন্ধকার গলি গুলা বেশী ইন্টারেস্টিং !!! এত মালদার লোকজন থাকে এখানে, কিন্তু গলির রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা খারাপ কেন কে জানে ।
রাস্তাতেই তেমন লোক নাই, গলির মধ্যে তো আরও নাই । কিছু দূরে আলো দেখা যাচ্ছে, কন্সট্রাক্সনের কাজ চলতেছে । সিমেন্ট সুরকি দিয়ে অনেক জায়গা নিয়া মোল্ড বানানো হচ্ছে । ইটা সুরকি বানায় যেটা দিয়া ( কি নাম জানি না ) ঐটার পাশে একটু থামলাম । প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার ( বেটা সম্ভবত বাড়ির দিকে রওনা দিবে ) ঠোঁটে একটা সিগারেট নিয়া এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল । আমাকে দেখে আগায়া আসল ।

- ছোট ভাই ( কাধে ব্যাগ ঝুলতেছে, ছোট ভাই না ভাবার কোন কারণ নাই !!! ), এইখানে কারও কাছে আগুন পাইলাম না, লাইটার হবে নাকি ?
- সরি, আমি এখনও এটা শিখে উঠতে পারি নাই
- শিখেন না শিখেন না, সব শেষ কইরা দেয়

লোকটা আগায় ( মনে হয় আগুনের খোঁজে ) আমিও উল্টা দিকে আগাই । সামনে একটা টং দোকান, চুইং গাম চাবাইতে মন চাইতেছে ।

- মামা...
- ঝাঁপি বন্ধ করতেছি মামা, চা হইব না
- টেনশন নিয়েন না, আমি চা খাই না, চুইং গাম আছে নাকি ?
- না মামা লজেন্স চুইং গাম রাখি না । মাইনসে খালি টাকা ভাংতি করার জন্য এইসব কিনে, আর ৫/১০ টাকা ভাংতি দিতে দিতে আমার জান শেষ
- হুম (পয়েন্ট) !!!



ঐ যে একটা সোডিয়াম লাইট পোস্ট, সামনে বনানী পার্ক, ঢুকব নাকি ?
না, পার্ক ৮ টার পর বন্ধ থাকে, বাইরে সাইন বোর্ডে লেখা আছে । সামনে সোজা গেলে পার্কের পাশের রাস্তা অন্ধকার । এর মধ্যে যদি হাইজ্যাক হই ?? ব্যাপার না, আমাকে যে হাইজ্যাক করবে সে কঠিন হতাশ হবে ( হায়, কি ধরলাম এইটা !!!!! )।
ফ্ল্যাট গুলার আলো ছাড়া আর আলো নাই । চোখ তেমন কাজ করতেছে না, তাই নাক আর কান বেশ ভাল কাজ করতেছে ( মানুষের ইন্দ্রিয় গুলা মিউচুয়াল, এই জন্য নিজেকে নিজে মালিশ করার থেকে অন্যে মালিশ করলে বেশী আরাম পাওয়া যায় )। খুবই তীব্র একটা গন্ধ, নাক জ্বলতেছে, কোনও ফলের গন্ধ, এর আগেও পাইছি, কিন্তু এত তীব্র না । কারও কথা শোনা যাইতেছে, ফিসফিস টাইপ কথা ।

- তুমি বললে তো হবে না
- তাইলে কে বললে হবে ? তুমি ?
- হুম, আমি যখন বলব তখনই হবে

কথা গুলার মানে বের করার কোন দরকার নাই :P রাস্তার ডান দিকে এক কাপল বইসা আছে ( এত রাতে রোডসাইড পিরিতি, জয় পিরিতির জয় !!! ) ।

যত সামনে যাচ্ছি গন্ধটা বাড়তেছে, এতক্ষন বিরক্ত লাগতেছিল, এখন অসুস্থ লাগতেছে । জোরে হাঁটা শুরু করলাম, বেশ খানিকটা দূরে আসছি, কিন্তু গন্ধটা এখনও আছে । ব্যাপার কি, এখানে একটা হোটেল ( সরাইখানা আরকি ) থাকার কথা, সেটা নাই, আমি ভুল পথে আসছি । সোজা যাইতে হবে, মেইন রোড পাইলে আর প্রবলেম নাই । পার্কটা এখনও হাতের ডানে । পার্কের ভিতরটাতে হালকা ধোঁয়া । কুয়াশা না, এখনও এমন কিছু শীত পড়ে নাই । আগুন দেখতেছি না, ধোঁয়া আসে কোত্থেকে ( পচা মিথেন থেকে আলো হয়, ধোঁয়া না ) ???

মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি, রাস্তার কোণে একটা রিকশা তাতে চার চাকা, সামনের বাড়িটার একজ্যাক্ট রিফ্লেক্সন দেখতেছি রাস্তায় ( ছায়া না, পুরা বাড়িটাই রাস্তার ওপর দেখতেছি আয়নার মত, মরীচিকা টাইপ ), দুইটা গাছ রাস্তার দুই পাশে, কোনটাতে একটা পাতাও নাই, প্রতিটাতে একটা করে সাইন বোর্ড ঝুলানো “ আনঅথোরাইজড লোকের প্রবেশ নিষেধ ” !!!

কি দেখতেছি এইসব ? গন্ধের কারণে হ্যালুসিনেসন হইল নাকি ?

গন্ধটা আর সহ্য করা যাচ্ছে না, খুব তাড়াতাড়ি মেইন রোড খোঁজা দরকার । অথোরাইজেশনের নিকুচি করি, দে দৌড়, পাঁচ পাও আগাতে পারলাম না, কারও সাথে জোরে ধাক্কা খেয়ে চিতপটাং । ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাওয়া মেয়েটা সাথে সাথে ক্যাওক্যাও শুরু করে দিল ।



- চোখের মাথা খেয়ে বসে আছ নাকি ???
- আয়াম সরি, আপনার বেশি লাগছে নাকি ??
- না না একটুও লাগে নাই, যত্তসব । এত রাতে এমনে দৌড়াচ্ছ কেন ?? কি করছ, চুরি না ডাকাতি ??
- না মানে, অন্ধকারে বাজে একটা গন্ধ পাচ্ছিলাম
- কই গন্ধ ? কিসের গন্ধ ?

আসলেই এখন আর গন্ধটা নাই, মোটেও নাই, পার্কের দিকে তাকাইলাম, ধোঁয়াও আর দেখা যাচ্ছে না । মাথায় চাটি মারলাম একটা । সব ঠিক ঠাক । খোদাই জানে কি হইতেছিল এতক্ষন ।

- তুমি ড্রাগ অ্যাডিক্ট নাকি ?
- এক্সকিউজ মি, আপনি “ তুমি তুমি “ করতেছেন কেন ?
- কাঁধে ব্যাগ ঝুলানো, ব্যাগে বোতল, বোতলে পানি, “তুমি” করেই কি বলা উচিৎ না ?
ড্যাম দ্যাট বটল, তিনদিন আগে আম্মা ভরে দিছে । ব্যাগ থেকে ফালায়া দিব দিব করে দেওয়াই হচ্ছে না, কিন্তু এই আঁধারে বোতল পানি এত কিছু দেখে ফেলল ।

- আপনার চোখ বেশ শার্প, বাই দ্য ওয়ে, আপনি আমাকে আপনি করে বলতে পারেন, আমি একেবারেই বাচ্চাছেলে না ।
- আপনি বলাটা আমার জন্য মুস্কিল, আমি তেমন কাউকে আপনি বলি না
- আচ্ছা বাদ দেন ( তোমার সাথে আমার কথাই আর কতক্ষণ )
- ভাল হয় তুমিও আমাকে যদি তুমি করে বল
- ওকে ( এই বলাবলি শেষ হয় না ক্যান ? ), রাত বেশি হয়ে গেছে, বাসায় যাওয়া দরকার, আচ্ছা বাই
- কই বাড়ি তোমার ?
- বসুন্ধরা
- তাইলে এদিকে কি কর ?
- বনানী থেকে বাড়ি যাচ্ছিলাম, ভাবলাম ভেতরের রাস্তা দিয়ে যাই
- হোয়াই ?
- সেটা এক্সপ্লেইন করা আসলে মুস্কিল, বাদ দেন। সরি, বাদ দাও, তোমার বাড়ি কই ?
- গুলশান
- ও, তা এখানে কি ?
- স্লিপ ওয়াকিং
- স্লিপ ওয়াকিং ?!?
- হুম আমার স্লিপ ওয়াক করতে ভাল লাগে
- আমি যতদূর জানি, টিনএজ এর ওপরে কেউ স্লিপ ওয়াক করে না
- ওকে, আয়াম ডুইং ইট নাও, কিপ রেকর্ড
- বাহ, দুনিয়াতে এমন লোকও আছে যার হবি হচ্ছে স্লিপ ওয়াক
- ট্রলিং ?
- ডোন্ট মাইন্ড , আই ডু দ্যাট এ লট
- আসলে বাসায় আব্বা আম্মার ক্যাচাল হচ্ছে, ইউ নো হাই ক্লাস পিওপল ডিলেমা
- আ...ম, ইউ ক্যান চেঞ্জ দ্য টপিক
- ইউ আর নট ইন্টারেস্টেড ?
- সরি টু সে, বাট নো
- স্ট্রেঞ্জ, এভরিওয়ান ওয়াজ । ওয়েল, টেল মি অ্যাবাউট ইউ
- ( অহ গড, শালার মেইন রোড মরছে নাকি ?!? ) আসলে কোন দিক দিয়ে গেলে মেইন রোড তাড়াতাড়ি পাওয়া যাবে এটা বললে খুব উপকার হয়
- মেইন রোড তো উল্টা দিকে
- শিট...... থ্যাংকস...... বাই
- দাঁড়াও, আমিও ঐদিকেই যাব
- ( হোয়াট দ্য ফ্রেশ হেল ?!? )
- বাই দ্য ওয়ে, আমি সারাহ
- ( ভদ্রতা করে নাম বলতে হয়, বললাম )
- কি কর তুমি ?
- পড়ি আর পড়াই
- মানে ?
- কোন মানে নাই ( গড, এই প্যাঁচালটা আর কতক্ষণ চলবে ?!? )
- পড়াশোনা খুব বোরিং
- দ্যাট ডিপেন্ডস
- অন হোয়াট ?
- তুমি কি পড়তেছ তার ওপর
- কি জানি, আমার তো সব পড়াই বোরিং মনে হইত
- হইত ? তোমার পড়াশোনা শেষ ?
- হুম, আমিই শেষ করে দিলাম । তোমার রাতের খাওয়া হইছে ?
- না, ক্যান ?
- লেটস হ্যাভ ডিনার
- ( ৩০ টাকায় ??? টং দোকান থেকে রুটি ??? ) না থাক
- থাকবে কেন, অনেক রেস্টুরেন্ট ১২ টা পর্যন্ত খোলা থাকে, চল যাই
- ( হুম কাছেই ওয়েস্টিন, চল ৩০ টাকা দিয়া বুফে খাইয়া আসি !!! ) না, আমার ক্ষুধা নাই
- ঘটনা কি ? পকেট খালি নাকি ?? হি হি হি হি
- অনেকটা ঐরকমই
- আচ্ছা থাক, আমার সাথেও কার্ড নাই এখন । আর এখানের মোটামুটি সব রেস্টুরেন্টেই আমি খাইছি
- ওয়াও, এখন আর খাওয়া দাওয়ার গপ্প না করলেই ভাল হয়
- ওকে, আচ্ছা তুমি কখনও ভূত দেখছ ?
- ( হুম এখনই দেখতেছি !!! ) ভূত ?
- হ্যাঁ, ভূত
- না দেখি নাই, তুমি দেখছ নাকি ?
- হ্যাঁ প্রায়ই দেখতাম
- মানে এখন আর দেখ না ?
- নাহ, এখন দেখা আর না দেখা সেম ।
- বুঝলাম না, আগে ভূতের দেখা পাইতা, এখন পাওনা, ভুতের সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেছে মনে হয় :P
- তুমি ভূতে বিশ্বাস কর না, তাই না ?
- এক্সপেরিমেন্ট করে যদি ভূতের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পার বা মিনিমাম ভূতের কিছু প্রপার্টি বের করতে পার তাইলে অবশ্যই বিশ্বাস করব
- যেমন ?
- যেমন ধর লাইট দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করলা, ওখানে দেখাইলা যে ভূত লাইট রিফ্লেক্ট বা রিফ্র্যাক্ট করতে পারে, আরও ভাল হয় যদি লাইটের সার্টেইন কয়েকটা ওয়েভলেংথ অ্যাবসর্ব করে এটা দেখাইতে পার, বা স্পেকট্রাম দেখায়া দিলা :D :D
- আমি তোমার কথার আগামাথা কিছুই বুঝি নাই । বাদ দাও, তুমি ঈশ্বরে বিশ্বাস কর ?
- করি
- ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পার ?
- দেখ, এই তর্ক মানুষ আদি কাল থেকেই করে আসতেছে, এটা কোন দিন শেষ হবার না, অন্তত আজকে রাতের মধ্যে তো অবশ্যই না, আমি আমার কথা যদি বলি তাইলে বলব, ঈশ্বরে বিশ্বাস করার কিছু সার্টেইন লজিক আছে । তুমি ঈশ্বর, ভূত, জীন পরী রাক্ষস দানব কিসে বিশ্বাস করবা সেটা অবশ্যই তোমার ব্যাপার ।
- তুমি দেখ নাই বলে ভূত বলে কিছু নাই, এটা বলাটা প্যাথেটিক
- ওকে ফাইন, ( ভাল পেইন তো ) আয়াম সরি, কিন্তু এত সিরিয়াস হবার কিছু নাই
- আমি দেখতে পাইতাম, আমার চারপাশে ওদের অনেকেই ঘুরে বেড়াইত
- আরে, ওয়াও, ইউ আর ব্লেসড
- ইউ আর স্টিল নট সিরিয়াস
- সরি, আসলে আমি সাইন্স পড়ি, সাইন্স পড়াই, আমার জন্য ভূত সংক্রান্ত আলাপ আলোচনা ট্রল ছাড়া চালানো মুস্কিল । কিন্তু তুমি কোন ভূত সংক্রান্ত কাহিনী বললে আমি সেটার ব্যাখ্যা দেবার ট্রাই করতে পারি
- ওয়েল, একদিন গভীর রাতে স্বপ্নে দেখলাম যে, আমার মনের অবস্থা ভয়াবহ, আমার আর বাঁচতে ইচ্ছা করতেছে না । ডিসিশন নিয়ে ফেলছি যে সুইসাইড করব
- স্প্লেন্ডিড ডিসিশন
- ওফ গড
- সরি, শর্ট এর মধ্যে বলে ফেল
- তো দুইটা ওড়না ম্যানেজ করা হল ফাঁস দেবার জন্য
- ফার্স্ট চয়েছ কিন্তু বিষ হবার কথা
- উফ, স্টপ বিইং অ্যান ......
- নো আয়াম সিরিয়াস, একটা মেয়ে নিজে মরুক আর অন্যকে মারুক ৯০% ক্ষেত্রে তাদের ফার্স্ট চয়েজ পয়জন । আমি বেশ কয়েকটা কেস পড়ছি । নিজে মরলে ম্যাক্সিমাম পসিবিলিটি ঘুমের বড়ি, তারপর কীটনাশক বা ইঁদুর মারা বিষ, এরা অনেকেই সালফাইড, কিন্তু আদতে ওইসবে মানুষের মরার চান্স বেশ কম । যখন বিষ অ্যাভেইলেবল না, এই দেশে যেমন, তখন অন্য রাস্তা ফাঁস দাও, শিরা-ধমনী কাটো .........
- আমি কি কাহিনীটা শেষ করব ?
- ওহ হ্যাঁ হ্যাঁ ( গলায় ফাঁস দেয়া মোটেও ইন্টারেস্টিং না )
- একটা ওড়না দিয়ে ফাঁস তৈরি হল, অন্য ওড়নাটা নীল রং এর, ঐটা লাগল না, ঐটা টেবিলের ওপর রাখা ছিল, ফাঁসে ঝুলে পড়ার আগে আমি ফিস্ফিস করে বললাম “ ইউ ক্যান সি মি ”, তারপর...
- বাকীটুকু বলা লাগবে না, ফাঁস দিয়ে কেমনে মরতে হয় আমি জানি, গপ্প শেষ না আশা করি
- না, আসলটুকুই বলি নাই এখনও
- অ্যাজ এক্সপেকটেড
- সকালে উঠে প্রথমেই যেটা চোখে পড়ল সেটা আমার এক্সারসাইজ খাতা, সেটার ওপর বাচ্চা ছেলের হাতের লেখার মত ধ্যাবড়া করে লেখা “ ইউ ক্যান সি মি ”
- ওয়াও
- ডু ইউ হ্যাভ এনি এক্সপ্লানেসন ?
- সো ফার, ফোর এক্সপ্লানেসনস
- ফোর ?
- হুম
- ইউ ও’ন্ট হ্যাভ ওয়ান হোয়েন আই উইল ফিনিশ
- গপ্প শেষ হয় নাই ?
- না, সকালের মধ্যেই খবর পাওয়া গেল, গুলশান-২ এ এক মেয়ে সুইসাইড করছে । ওড়নাতে ফাঁস দিয়ে
- ফাঁস দিয়ে মরার ঘটনা মোটেও রেয়ার না এই দেশে, ছ্যাঁক খাওয়া তো আছেই, কবে যেন পড়ছিলাম বিজ্ঞান বিভাগ পায় নাই বলে গলায় ফাঁস ......
- আর নীল ওড়নাটা ?
- নীল ওড়নাটা কি ?
- সেই মেয়েটার রুমেও একটা নীল ওড়না পাওয়া গেছে টেবিলের ওপর ।



এতক্ষন মেয়েটার দিকে তেমন তাকাই নাই, এইবার তাকালাম, মেয়েটাও তাকায়ে আছে । শি ওয়ান্টস অ্যান এক্সপ্লানেসন ।

- কবেকার ঘটনা এটা ?
- ৫/৬ বছর
- তুমি বা তোমার ফ্যামিলি মেয়েটাকে কিভাবে চেনে ?
- আমি একবারও বলি নাই আমরা ওকে চিনি
- কিন্তু আমি জানি তোমরা চেন
- হাও ?
- না হলে নীল ওড়নার খবর তোমার জানার কথা না, এতখানি ক্রাইম সিন ডিটেইল পত্রিকায় আসে না
- ও, হুম ওরা আমাদের ফ্যামিলি ফ্রেন্ডস
- সুইসাইডের কারণ ?
- কিছু বের করতে পারে নাই কেউ
- এবং তুমি কারণটা জানো
- হুম, কিন্তু আমি সেটা বলতে পারব না
- আমি সেটা শুন্তেও চাই না, একটা উত্তর দাও, ধর তুমি সুইসাইড করবা, কোন উপায়ে করবা ?
- মানে কি ?
- জাস্ট আ থট
- গলায় ফাঁস
- সো, তুমি ধরেই নিছিলা শি ইজ গনা ডু ইট, মানুষ স্বপ্নে তাই দেখে যা সে ভাবে বা ভাবতে চায়
- কিন্তু ঐরাতেই দেখলাম ?
- তুমি অন্য রাতেও দেখছ নিশ্চয়ই, মানুষ এক ঘুমে বেশ কয়েকটা স্বপ্ন দেখে, কেউ একটা মনে রাখতে পারে, কেউ দুইটা, কেউ একটাও না
- আমার খাতার ওপরে লিখল কে ?
- তুমি আসলেই স্লিপ ওয়াক করতা ?
- ধর করতাম, তো ?
- দেন ইউ আর আ প্রাইম সাস্পেক্ট ফর দ্যাট রাইটিং
- হাতের লেখাটা মোটেও আমার ছিল না
- তুমি স্লিপ ওয়াকের মধ্যে লিখলে তোমার লেখা বাচ্চা ছেলের মতই ধ্যাবড়া গোছের হবে
- আর নীল ওড়না ?
- ফার্স্ট এক্সপ্লানেসন, শিয়ার কো-ইন্সিডেন্স
- অ্যান্ড ?
- সেকেন্ড এক্সপ্লানেসন, ঐটা মোটেও নীল ছিল না, বা আদৌ কোন ওড়না ছিল না, ঘটনা শোনার পর ইউ মেড ইট আপ
- অ্যাবসার্ড, এইটা কি জোড়াতালি দেওয়া থিওরি ??
- ওয়েল, আমি মনস্তত্ত্ব জানি না, এতক্ষন যা বলছি তা কমন কিছু ফ্যাক্ট মাত্র, বাট দুনিয়ার কিছু মানুষের সাইকিক কানেকশন থাকে বলে জানি, যার কোন এক্সপ্লানেসন এখনও নাই । এই যেমন মানুষের মুখ দেখে কেমনে মরবে বলে দিল । হিন্দুদের জাতিস্মর বলে একটা ফ্যাক্ট আছে, যারা আগের জন্মের কথা মনে করতে পারে । ইউএস মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সে কিছু লোক ছিল যারা ডিসট্যান্ট লোকেশনে ক্রাইম হলে বলতে পারত, ভিকটিম কে দেখতে পাইত ক্রিমিনালের চোখ দিয়ে, এদের রিমোট ভিউয়ার বলা হইত, বাট এরা এত কিছু দেখত যে প্রচুর স্ট্রেস হইত, এদের কেউ কেউ সুইসাইড ও করছে, এসবের সাইন্সকে প্যারাসাইকোলজি বলে
- হুম, আমি অনেককে দেখতে পাইতাম, আমারও খুব কষ্ট হইত
- তুমি আরও জানতে চাইলে প্যারাসাইকোলজি লিখে গুগল করতে পার, যতদূর জানি প্যারাসাইকলজির ওপর অনেক কাজ হয় এখন
- আর এসব জেনে কি হবে ?
- কি হবে মানে ? তোমার যদি আসলেই এই ক্ষমতা থেকে থাকে তাহলে কত সুইসাইড আটকানো সম্ভব ভাইবা দেখ
- আমার আর ঐ ক্ষমতা নাই

গুলশান-২ দেখা যাচ্ছে, ওয়েস্টিন এর মাথা দেখা যাচ্ছে, সামনে আগায়ে রিক্সা নিলে ৩০ টাকাতে বসুন্ধরার গেটে যাওয়া যাবে । মেয়েটাকে এইবার ছুটানো দরকার ।

- গুলশান-২ চলে আসলাম তো, তোমার বাড়ি কই ?
- ঐযে ঐটা, থার্ড ফ্লোর

ভদ্রতা করে আগায়ে দিয়া আসতে হইল, গেটের কাছে গেলাম না খানিক দূরেই থামলাম, থার্ড ফ্লোরের দিকে তাকাইলাম, বাসার সব আলো জ্বলতেছে, ছায়ার নড়াচড়া দেখে মনে হইল কেউ ছুটাছুটি করতেছে, খানিকটা চেঁচামেচিও হচ্ছে, আর একটু দেখার ইচ্ছা ছিল, মেয়েটার সামনেই তার বাসার দিকে উঁকি মারা মোটেই শোভন না

- তোমার বাসায় কিছু একটা হচ্ছে, সম্ভবত তোমাকে খোঁজাখুঁজি চলতেছে
- আমাকে খুঁজে আর লাভ নাই
- মানে কি ?
- মানে আমি তো এইখানে
- ও, ওকে বাই, সারাহ
- আমাদের বোধ হয় আর দেখা হবে না
- হইতেও পারে, যদি আবার বনানীতে “স্লিপ ওয়াক” কর !!!
- থ্যাংকস
- ফর হোয়াট ?
- ইউ ক্যান সি মি, ইউ হ্যাভ সিন মি, থ্যাংকস ফর এভ্রিথিং
- ও, বাই
- গুড বাই



রাত ১১:২০ । গুলশান-২ দিয়ে রিক্সা যাচ্ছে । ঐ বিরক্তিকর গন্ধটা আবার ফেরত আসছে, অত তীব্র না, তবু বিরক্ত লাগতেছে, কি ফল কে জানে, এইটার ফ্লেভার দিয়াই তো বিষ বানানো সম্ভব মনে হয় । ইউনাইটেড হাসপাতাল দেখা গেল, হাসপাতাল দেখলেই পেইন লাগে, কিন্তু এটা দেখলে কেন জানে লাগে না, অন্ধকার ভাবটা আস্তে আস্তে কেটে যাচ্ছে । গুলশান-২ আর বসুন্ধরার মাঝে একটা ছোট এলাকা আছে, নাম কালাচানপুর । আমার মনে হয় এই এলাকাটা কিছুদিন আগেও কোন গ্রাম ছিল, বাড়ি ঘরের স্পেস দেখে অন্তত তাই মনে হয় । হোটেলে পুড়ি ভাজা হচ্ছে, এত রাতে পুড়ি কে খায়, কে জানে ??

সকাল ৯:১০ । আম্মা চেঁচামেচি করে ঘুমটার সর্বনাশ করে দিল । “ তোর মত একটা ছেলে ৯ টা ১০ টা পর্যন্ত কেন ঘুমাবে ? ” বাংলা নাটক আর হিন্দি সিনেমার মত ( খুবই অপছন্দের দুইটা জিনিস ) একই ডায়লগ রোজ রোজ, লাস্ট কবে এইসব গায়ে লাগত তাও ভুলে গেছি । আরে ভাই, ঘুমাইই ৩ টার দিকে, কয়টায় উঠবো তাইলে ভোর ৫ টায় ???

পেপারে খেলা ছাড়া আর প্রায় কিছুই পড়ি না, সরকারি দল কি কি উন্নয়ন করলেন আর বিরোধী দল কোন কোন বাড়া ভাতে ছাই দিচ্ছেন, বোমা হামলায় কোথায় কতজন মারা গেল, ইউএসএ কোন দেশের কোন্দলে লাঠিসোটা সাপ্লাই দিচ্ছে, চৌগাছিপুরে কে খামার করে কয় কোটি টাকা ইনকাম করল............ এসব পড়ে কোন মজাই পাই না, অপ্রয়োজনীয় ইনফরমেশন । অবশ্য পুরা ২০ পেজ একবার উল্টানো হয়, তাতে কিছু মিস গেলে যাক, আমার সাধারণ জ্ঞান অসাধারণ লেভেলের খারাপ, যেটুকু আছে ওইটুকুও সাফ হয়ে গেলে ভাল হয়, ( এই যেমন প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি এনাদের নাম ) কিছু মূল্যবান নিউরন পাওয়া যাবে ।

২০ পাতায় কোণায় ছোট্ট একটা খবর । “ গুলশানে তরুণীর আত্মহত্যা ”, টাইটেল পড়ে ফার্স্টেই মনে হল, সারাহ মেয়েটার সাথে যোগাযোগ করা যায় না , মেয়েটার যদি আসলেই সাইকিক পাওয়ার থাকে তাহলে কি এই মেয়েটাকে সে দেখে নাই গতকাল রাতে ? ফোন নং তো নাই সাথে, নম্বরটা রাখলে হইত, শিট । যাই হোক বাদ দেই, আমার কেস ইনভেস্টিগেট করার কি ঠেকা পড়ছে । খবরটা পড়ি “ গুলশান-২ এলাকায় গত রাতে আত্মহত্যা করেছে সারাহ তাসনিম নামে এক তরুণী । রাত আনুমানিক ৮ টা থেকে ৯ টার মধ্যে এই ঘটনা ঘটে । সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে......... ”

পেপারটা ছুড়ে মারলাম । অনেকদিন টেবিল পরিষ্কার করি না, কাচের ওপরে প্রচুর ধুলা জমছে, কাচের ডানদিকে ধুলার মধ্যে ধ্যাবড়া করে লেখা
“ ইউ ক্যান সি মি ”

*
**
***
****
*****
******
*******
********
*********
**********


ভূত মেয়েটার সাথে দেখা হবার আগ পর্যন্ত সমস্ত ঘটনা সত্যি
এর পরের সব ঘটনা কাল্পনিক ( বলাই বাহুল্য ) !!!!!

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ
ভূত বলে কিছু নাই, কখনও ছিল না, আশা করি ভবিষ্যতেও থাকবে না !!!!


নভেম্বর ১৯, ২০১৩

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.