নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দ্য ওয়ান্ডারার

দ্য ওয়ান্ডারার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফইন্নি

০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:১৮

অলস মানুষ হিসেবে, ব্যাংকে যাইতে আমার কখনই ভাল লাগে না । বছরখানেক আগেও আমাকে হাবিজাবি কারণে ব্যাংকে পাঠানো হইত, আর আমি ব্যাপক পিসড অফ হইতাম । এখন মোটামুটি সব অনলাইনেই করা যায়, কথায় কথায় ব্যাংকে যাওয়া লাগে না । কিন্তু অ্যাকাউন্ট তো আর অনলাইনে খোলা যায় না । আমার মত লোকজনের কথা মাথায় রেখে অদূর ভবিষ্যতে এটাও অনলাইনে হয়ে যাবে আশা করি ।
তো ব্যাংকে গেছি অ্যাকাউন্ট খুলতে । ওয়েটিং এ বসে আছি । একজন আগায়ে আসল ।

- হাও ক্যান আই হেল্প ইউ, স্যার ?
- অ্যাকাউন্ট খুলব
- চেকিং অর সেভিংস ?
- দুইটাই
- হাও মাচ ইউ আর গনা ডিপোজিট নাও ?
- আই ডোন্ট নো, ফোরটি অর ফিফটি মে বি (পকেটে পঞ্চাশ ডলারও আছে কিনা সন্দেহ)

এটা শুনে সে জলদি ভেতরে চলে গেল । ভিতর থেকে নাদুসনুদুস গোলগাল সাইজের কোট-টাই পরা একজনকে ধরে নিয়া আসল । সে এসে হ্যান্ডশেক আর “হাও ডু ইউ ডু” শেষে তার চেম্বারে নিয়ে গেল । বসতে না বসতে কফি চলে আসল । অ্যাকাউন্ট খুলে দিবে না মেয়ের সাথে বিয়ে দিবে, বুঝতে পারলাম না । জামাই আদরের মানে কি ?
- কফি খাব না ( এরা দুধ চিনি ছাড়া যে কফি খায়, তার চেয়ে ইঁদুর মারা বিষ খেয়ে মরে যাওয়া ভাল )
- ইউ প্রেফার টি ?
- না, আমি চা খাই না । ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, আমার তাড়া আছে
- আই’ল বি উইথ ইউ শর্টলি
বলে বের হয়ে গেল । আরেক বান্দা চলে আসল । সে এসে এই ব্যাংক কত ট্রাস্টয়োরদি, তাদের সিকিউরিটি, কাস্টোমার সার্ভিস এসব নিয়ে হাবিজাবি প্যাঁচাল শুরু করে দিল । যা শালা, অ্যাকাউন্ট খুলতে যখন চলেই আসছি, তখন এত আজাইরা ঢোল পেটানোর কি আছে ? মোটা আঙ্কেল ফিরে আসা পর্যন্ত ব্যাটা বকবক করে গেল । আঙ্কেল কিছুক্ষণ বাদে হাজির, হাতে একগাদা কাগজ-পত্র ।
- ইউ মেড দ্য রাইট ডিসিশন । ইউ উইল ফাইন্ড দ্য ব্যাংকিং এক্সপেরিএন্স কোয়াইট স্মুদ ।
- ইয়াহ, আই অ্যাম অলরেডি রিগ্রেটিং দ্যাট ।
- সরি ?
- আই মিন, ইটস গুড সো ফার ।

- রাইট, ব্যাংকিং এনভায়রন্মেন্ট ইজ নো লেস ইম্পরট্যান্ট দ্যান ইওর ইকোনমিকাল সিকিউরিটি । ইউ উইল অলয়েস ফিল কমফোর্টেবল অ্যান্ড ওয়েলকাম হেয়ার ।
- ওয়ানা বেট অন দ্যাট ?
- সরি ?
- আই মিন, আই অ্যাম গেটিং লেট । ক্যান উই ডু ইট এ বিট ফাস্টার
- সিওর স্যার । আর ইউ গনা ডিপজিট ক্যাশ অর চেক ?
- আই হ্যাভ ক্যাশ
- ওহ পারফেক্ট । ইটস সো ব্রেভ অফ ইউ টু ক্যারি ফিফটি গ্র্যান্ড ইন ক্যাশ ।
- হু সেজ এনিথিং অ্যাবাউট ফিফটি গ্র্যান্ড ?!?!?!
এতক্ষনের জামাই আদরের কারণ বুঝতে পেরে ভ্যাবাচেকা খায়ে গেলাম । কিন্তু আমার চেয়েও বড় ভ্যাবাচেকা মামা খেয়ে বসে আছে । তার মুখ হা হয়ে আছে, পোরসেলিনের বাঁধানো দাঁত দেখা যাচ্ছে । কোনও মতে সে জিগাইল
- হাও মাচ ইউ ওয়ানা ডিপোজিট ?
- ফিফটি বাকস, মে বি লেস দ্যান দ্যাট

পঞ্চাশ হাজার থেকে পঞ্চাশ, আইফেল টাওয়ার থেকে কমলাপুর বস্তি ! শোকে দুঃখে মামা নির্বাক হয়ে গেল । একবার সিলিং এর দিকে তাকায় একবার আমার দিকে । মনে মনে নিশ্চয়ই শখানেক গালিও দিয়ে দিছে, “শালা ফইন্নি, তোরে এই ব্যাংকের ঠিকানা দিছে কোন ফইন্নি ? ওরে আগে পিডায়া আসি, পরে তোরে দেখতেছি !” এ রকম সিচুএশনে যথেষ্ট পরিমাণে বিব্রত হয়ে মাটির সাথে মিশে যাওয়া উচিৎ । কিন্তু কোনও কারণে আমার ভয়াবহ হাসি আসতে থাকল । হেসেও ফেললাম কয়েকবার । আমার লজ্জা শরম বরাবরই কম । হাসির জবাবে মামা ক্ষোভ-হতাশা মিশানো একটা লুক দিল, “শালার ভাই, তোর পকেটে পঞ্চাশটা টাকা নাই, কি আনন্দে হাসতেছস তুই ?”
বাংলা সিনেমায় গরীব (রিক্সাচালক/চাকর/চানাচুর বিক্রেতা/হলুদ বেবি ট্যাক্সি চালক/মুদি দোকানদার/বেকার .........আর মনে আসতেছে না !!!) হিরো মায়ের সাথে গিয়া বড়লোক গারলফ্রেন্ডের বাপরে বিয়ার প্রস্তাব দেওয়া মাত্র ঘাড়ধাক্কা খাইত । ধাক্কা-টাক্কা খাওয়ার আগে কিছু উত্তপ্ত ডায়লগও দিত, “চৌধুরী, তোমার আছে পাকা বাসা, আমার আছে ভালবাসা, তোমার আছে পাকা টয়লেট, আমার আছে বনবাদাড় ..................” । চৌধুরীও “যা শালা, মুড়ি খা” বলে দারোয়ান-টারোয়ান দিয়ে গলাধাক্কা দিয়ে দিত । যখন ছোট ছিলাম তখন রোজই দিত, স্পেশালি শুক্রবার বিকালে, এখন আর দেয় কিনা জানিনা !!!
আমিও ঐরকম ছোটখাটো ঘাড়ধাক্কা খাওয়ার ভয়ে ছিলাম । কিন্তু যাবতীয় ভাবাবেগ সংবরণ করে ম্যানেজার মিয়া নিজেই অ্যাকাউন্টটা খুলে দিল । ম্যানেজার হয়ে ব্যাটাকে আমার মাইক্রো সাইজের (আসলে মাইক্রোও না, পিকো/ফেমটো সাইজ) অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে হইল, এই দুঃখে সে বিবাগী হয়ে যায় যায় অবস্থা । যাবার সময় সে অবশ্য বেশ ভাল ব্যবহার করছে (ধকল সামলে উঠছিল আর কি !) । বলল তাদের কাছে সব কায়েন্টই সমান (ইয়াহ রাইট !) ।

- ইউ হ্যাভ টু প্রমিস আস সামথিং, মিস্টার হাসান
- হোয়াট ?
- হোয়েন ইউ উইল হ্যাভ ফিফটি গ্র্যান্ড, ইউ হ্যাভ টু ডিপোজিট ইট হেয়ার
- ক্যান’ট প্রমিস দ্যাট, আই’ল প্রোবাবলি গো টু ভেগাস দেন । মে বি আফটার দ্যাট, অফ কোর্স ইফ আই হ্যাভ এনিথিং বাই দেন
- ওকে, গুড লাক ফর দ্যাট (হ্যান্ডশেক)

বাসায় এসে আয়নায় দেখে বোঝার চেষ্টা করলাম, কোন অ্যাঙ্গেল থেকে দেখলে আমারে পঞ্চাশ হাজার ডলার এর মালিক মনে হয় । এখন থেকে রাস্তা ঘাটে ওই অ্যাঙ্গেলেই হাঁটা চলা করতে হবে ।

২ অক্টোবার, ২০১৬

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৫৭

আহা রুবন বলেছেন: ভালই লাগল!

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:১৬

দ্য ওয়ান্ডারার বলেছেন: ধন্যবাদ :)

২| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:০৫

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: হা হা হা! ভালো হয়েছে লেখাটা।

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:১৭

দ্য ওয়ান্ডারার বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৩| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:১১

সিলেক্টিভলি সোশ্যাল বলেছেন: হা হ..সেইরাম হয়েছে। ইউ মেড মি লাফ (নট ফাল) :p অনধিকার আব্দার রইল- "আরও লিখা চাই"

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:১৮

দ্য ওয়ান্ডারার বলেছেন: ধন্যবাদ :)
আমি আসলে খুবই অলস । চেষ্টা করব :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.