নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খুবই সাধারন একজন মানুষ । পড়া যার নেশা । পড়ার এবং জানার আশায় ----

মোহামমদ কামরুজজামান

মোহামমদ কামরুজজামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

" ডলার " - বিশ্ব বাণিজ্য ও বিশ্ব ব্যবস্থায় এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনে ডলারের বিকল্পই বা কি ? ( ডলার নামা - ৪)।

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:২৯


ছবি - unsplash.com

তৃতীয় পর্বের লিংক - Click This Link

তৃতীয় পর্বের পর -

আন্তর্জাতিক লেনদেনে ডলারের বিকল্পই বা কি ?

পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে অনেকেই এমন একটি সম্ভাবনার কথা বলছেন বা আলোচনা চলছে , যেখানে অন্য কোনো মুদ্রা মার্কিন ডলারের পরিবর্তে বৈশ্বিক মুদ্রা হিসেবে প্রতিস্থাপিত হবে। এর মধ্যে সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে ইউরো, চীনা রেনমিনবি ও জাপানি ইয়েনের কথা বলা হচ্ছে। কেউ কেউ কাগুজে মুদ্রার পরিবর্তে ক্রিপ্টোকারেন্সিকে বৈশ্বিক মুদ্রা হিসেবে গ্রহণের প্রস্তাব করছেন। কার্যত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব অর্থনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে একাধিপত্য ছিল, এখন আর সেটি নেই। চীন ও জার্মানি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করে। যুক্তরাষ্ট্রের দুই ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও রাশিয়া ধীরে ধীরে মার্কিন ডলারের পরিবর্তে অন্য কোন মুদ্রাকে প্রতিস্থাপনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বর্তমানে রাশিয়া মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্ষেত্রে ইউরোর পরিমাণ ৩০%, যেখানে মার্কিন ডলারের পরিমাণ ২৩%। চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রাশিয়া ডলারের চেয়ে ইউরো অধিক হারে ব্যবহার করছে, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও তারা অনুরূপ ব্যবস্থা কার্যকরী করতে ইচ্ছুক। ইতোমধ্যে কিছু কিছু রাষ্ট্র চীনা রেনমিনবিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে জমা করতে শুরু করেছে।

কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন ডলারের একাধিপত্যকে অপসারণ করা এত সহজে সম্ভব হবে না। কারণ একে তো সারা দুনিয়ায় মার্কিন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব এখনো অত্যন্ত ব্যাপক, তদুপরি মার্কিন ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর যে আস্থা আছে, অন্য কোনো রাষ্ট্রের ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর তাদের এতটা আস্থা নেই। বিশেষত চীনের অর্থব্যবস্থার সচ্ছতা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান এবং চীনা রেনমিনবিকে রিজার্ভ মুদ্রায় পরিণত করে বিশ্বব্যাপী চীনা অর্থনৈতিক আধিপত্য স্বীকার করে নেয়ার ইচ্ছেও অনেক রাষ্ট্রের নেই।ইউরোপের ইউরো বা জাপানি ইয়েনকে দিয়ে মার্কিন ডলারকে প্রতিস্থাপন করার ক্ষেত্রেও নানাবিধ সমস্যা বিদ্যমান। তাছাড়া, আকস্মিকভাবে মার্কিন ডলারকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে বিশ্বে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। সেটিও এই প্রস্তাবনার একটি বড় প্রতিবন্ধক। সুতরাং, নিকট ভবিষ্যতে মার্কিন ডলারের একাধিপত্য অপসারণ সম্ভব কিনা, সেটি অনিশ্চিত এবং প্রশ্নসাপেক্ষ।

আমেরিকার ''SWIFT / সুইফট'' এর বিকল্প কি রাশিয়ার ''SPFS / এসপিএফএস'' বা চীনের ''CIPS / সিআইপিএস'' হতে যাচ্ছে?

ডলারের আধিপত্য কমাতে হলে রাশিয়া ও চীনের সামনে অবশ্যই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো পণ্য বিনিময়ে সব দেশের কাছে গ্রহণযোগ্য একক কোনো মুদ্রা বাছাই করা। এমনকি একাধিক মুদ্রার নতুন বিনিময় ব্যবস্থার কথাও ভাবছে এসব বিদ্রোহী শক্তি, যাতে আসন্ন আন্তর্জাতিক বিনিময় ব্যবস্থাটি একক কোনো দেশকে রাজনৈতিক আধিপত্যের সুযোগ করে না দেয়। পাশাপাশি ওই সব মুদ্রায় লেনদেনের জন্য নতুন আরেক বার্তা বিনিময় ব্যবস্থাও লাগবে, যা সুইফট এর বিকল্প হবে। এ রকম সবকিছুর ভিত্তি হিসেবে একটা আন্তর্জাতিক চুক্তির খসড়া তৈরির ইঙ্গিত দিয়েছেন সার্গেই গ্লাজিয়েভ ২৭ মার্চ এক সাক্ষাৎকারে। তবে সেই চুক্তির আগেই রাশিয়া ও চীন নিজেদের মধ্যে ইতিমধ্যে ‘সুইফট’ এর বিকল্প বার্তাব্যবস্থা কায়েম করে নিয়েছে এবং সেই ব্যবস্থায় আশপাশের অনেক দেশকে শামিল করতে তৎপর আছে। ভারত ইতিমধ্যে **এসপিএফএস** নামে পরিচিত রাশিয়ার ফিন্যান্সিয়াল মেসেজিং সিস্টেমে যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা করছে। ২০১৭ সাল থেকে লেনদেন চলতে থাকা এই **এসপিএফএস** দ্রুত শামিল হতে চলেছে চীনের ***সিআইপিএসের*** (ক্রস বর্ডার ইন্টারব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেম) সঙ্গে। ডলারভিত্তিক আধিপত্যের জগৎ এড়াতে রাশিয়ার সঙ্গে চীন ও ভারতের লেনদেনব্যবস্থার সমন্বয়ের চেষ্টা এখন মোটেই আর আলোচনার টেবিলে আটকে নেই বরং সেটা অনেক বাস্তব চেহারা নিচ্ছে।

**SPFS (সিস্টেম ফর ট্রান্সফার অফ ফিনান্সিয়াল মেসেজ) হল রাশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ রাশিয়ার দ্বারা তৈরি SWIFT এর মত এবং সমতুল্য আর্থিক স্থানান্তর সিস্টেমের নাম। আমেরিকা রাশিয়াকে সুইফট/SWIFT সিস্টেম থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেওয়ার পর ২০১৪ সালে লেনদেনের নতুন এক ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় দেশটি। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর প্রথম এসপিএসএফ পেমেন্ট ব্যবস্থার মাধ্যমে লেনদেন শুরু হয়। বর্তমানে ৪০০-এর বেশি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান এই ব্যবস্থায় যুক্ত রয়েছে।

**** CIPS (Cross-Border Interbank Payment System বা ক্রস-বর্ডার আন্তঃব্যাঙ্ক পেমেন্ট সিস্টেম) হল একটি পেমেন্ট সিস্টেম যা ক্রস-বর্ডার RMB পেমেন্ট এবং বাণিজ্যে অংশগ্রহণকারীদের জন্য ক্লিয়ারিং এবং সেটেলমেন্ট পরিষেবা প্রদান করে। পিপলস ব্যাংক অফ চায়না দ্বারা সমর্থিত, চীন ২০১৫ সাল থেকে চায়না মুদ্রা বা RMB ব্যবহারের আন্তর্জাতিকীকরণের জন্য CIPS চালু করেছে।

ভারত ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে রুশদের সঙ্গে ২০১৮ সালে চুক্তি হওয়া পাঁচ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নিচ্ছে রুপি-রুবল বিনিময়ব্যবস্থায়। অস্ত্র ছাড়াও সারের মতো জরুরি আমদানি পণ্যের সরবরাহ বাধামুক্ত রাখতেও রাশিয়ার সঙ্গে সুইফটের বিকল্প ব্যবস্থায় ঢুকতে হচ্ছে ভারতকে। বিশ্বজুড়ে এ রকম প্রবণতাগুলোরই মিলিত ফল হিসেবে আন্তর্জাতিক সেটেলমেন্টে (লেনদেন নিষ্পত্তিকরণ) ডলারের হিস্যা ইতিমধ্যে অনেক কমেছে বলেই তথ্য মিলছে।

এসবই নতুন এক বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রাথমিক লক্ষণ স্পষ্ট করছে। কারণ, তাতে ডলারের চাহিদা কমবে। বলা বাহুল্য, ডলারকে এড়িয়ে নতুন ধারার লেনদেনগুলোও আপাদমস্তক পুঁজিতান্ত্রিক বিনিময় এবং তা পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থারই অংশ। পার্থক্য কেবল সেখানে ওয়াশিংটনের জায়গায় আধিপত্য করবে বেইজিং, মস্কো ও নয়াদিল্লি। উদীয়মান এই কাঠামোকে বলা যায় " তৃতীয় ব্রেটন উড", যেখানে সার্ভিলেন্স একটা বড় উপাদান হিসেবে কাজ করবে। আবার এর এমন একটা পার্শ্বফলও পাওয়া যেতে পারে, তৃতীয় বিশ্বের ধনীদের পাচার করা অর্থের পুরোনো গন্তব্যস্থল পাল্টে যাবে। এখনকার মতো সেগুলো আর কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ইত্যাদি অঞ্চলে ছুটবে না হয়ত অন্য কোনো জনপদ খুঁজে নেবে।

কিন্তু একই পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বে এত অধিক তারকার সমাবেশ ওয়াশিংটনের পছন্দ হওয়ার কারণ নেই। ফলে সার্গেই গ্লাজিয়েভদের চিন্তাধারাকে রাশিয়া ও চীন যত জোরের সঙ্গে মদদ দিচ্ছে, ততই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পুতিন ক্ষমার অযোগ্য এক প্রতিপক্ষ হয়েছেন। ইউরোপ-আমেরিকার প্রচারমাধ্যমে স্পষ্টত তার প্রমান পাওয়া যাচ্ছে।


ছবি - bloomberg.com

ডলারকে সরিয়ে চীনের ইউয়ান (Renminbi) কি হতে পারবে বিশ্ব রিজার্ভ মুদ্রা ?

চীনের অর্থনীতি বর্তমানে বেশ শক্তিশালী। চীনের মোট জিডিপি প্রায় ১৮ ট্রিলিয়ন ডলার যা আমেরিকার পরেই এবং সারা বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে।এ ছাড়া আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরে চীনই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক লেনদেনকারী দেশ।তবে এখন পর্যন্ত বিশ্ব বাণিজ্যের লেনদেনের মাত্র ৩ শতাংশ চীনা মুদ্রায় হয় যেখানে ডলারে হয় মোট লেনদেনের ৮৭ শতাংশ। বিশ্বে চীনের অর্থনীতি ও রাজনীতিতে ব্যাপক ক্ষমতা থাকলেও বিশ্ব মুদ্রা বাজারে তেমন একটা সুবিধা এখনো করতে পারেনি যদিও ধীরে অবস্থার পরিবর্তন হচছে।

কোনো মুদ্রা কিভাবে রিজার্ভের মর্যাদা পায় ?

যদিও আইএমএফ কর্তৃক চীনা ইউয়ান রিজার্ভ মুদ্রা হিসাবে স্বীকৃত তবে রিজার্ভ মুদ্রার স্বীকৃতি আসলে কোন আনুষ্ঠানিক বিষয় নয়।বিশ্ব বাজারে জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত মুদ্রাই একসময় ডি-ফ্যাক্টো রিজার্ভ মুদ্রা হয়ে উঠে। আর এই জনপ্রিয়তা মুদ্রার স্থিতিশীলতা,নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ের উপর নির্ভর করে যা কোন একটি দেশের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে।কারন, যে কোন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাধারনতঃ এই মুদ্রাতেই তাদের রিজার্ভ রাখে। আর তাই বিশ্ববাজারে সবচেয়ে আধিপত্যশীল মুদ্রাই রিজার্ভ মুদ্রার মর্যাদা লাভ করে।আর তাই দেখা যায় একসময় বিশ্ববাজারে পর্তুগাল,নেদারল্যান্ড,ফ্রান্সের মুদ্রার আধিপত্য থাকলেও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উত্থানের ফলে তাদের জায়গা দখল করে নেয় ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ড স্টার্লিং। আবার আমেরিকা শক্তি-সামর্থ্যে ব্রিটেনকে ছাড়িয়ে যাবার পর ডলার দখল করে নেয় পাউন্ড স্টার্লিং এর জায়গা। যার ফলে ২০০৮ সালের পর থেকে বৈশ্বক লেন-দেনের প্রায় ৮০ শতাংশ সম্পূর্ণ হচছে ডলারে। সম্প্রতি ধীরে ধীরে ডলার বিশ্ব বাজারে কিছুটা জায়গা হারালেও এখনো অন্য কোন মুদ্রা ডলারের ধারে কাছেও আসতে পারেনি তবে ভূরাজনীতি ও অর্থনৈতিক কারনে ধীরে ধীরে কিছুটা জায়গা করে নিচছে ইউয়ান।

ইউয়ান নিয়ে চীনের পরিকল্পনা

চলতি বছর চীনের নেতার ইউয়ানকে রিজার্ভ মুদ্রার পর্যায়ে উন্নীত করতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন কারন চীনের অর্থ ও বাণিজ্য প্রবাহ এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী। তবে তা বাস্তবায়ন করার জন্য চীনকে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে রাজী করাতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় চীন ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়া-হংকং-চিলি-সিংগাপুর এ ৫ টি দেশের সাথে ১৫ বিলিয়ন ইউয়ানের চুক্তি করেছে।

এদিকে বিশ্বের নানা ঘটনা প্রবাহে চীনা ইউয়ান রাশিয়ার ডি-ফ্যাক্টো রিজার্ভ মুদ্রা হয়ে উঠেছে। বর্তমানে রাশিয়ার ১৭ শতাংশ ফরেন রিজার্ভই ইউয়ানে।তবে ঘটনা যাই হোক না কেন, খুব সহজেই যে ডলার তার প্রভাব হারাবে এমন নয় এবং ডলারকে খুব সহজেই প্রতিস্থাপন করাও সম্ভব না। আবার এটাও ঠিক যে,যে সব দেশের সাথে চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ় হচছে সেসব দেশের রিজার্ভ মুদ্রায় ইউয়ানের ব্যবহার বাড়ছে এবং এর ফলে চীন ধীরে ধীরে একসময় হয়ত ডলারের প্রভাব কমিয়ে আনতে পারে । তবে এর জন্যও হয়ত সময় লাগতে পারে আরো কয়েক দশক।


ছবি - cagle.com

ইউক্রেন যুদ্ধের নাটকীয় ফলাফল দেখা যেতে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে

ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুক্ত না হলেও প্রথম থেকে এ যুদ্ধে আমেরিকার প্রথম লক্ষ্য রাশিয়া তথা রুবলকে ঘায়েল করা। অবস্থাদৃষ্ঠে মনে হচ্ছে আমেরিকার এ চাওয়া আপাতত পূরণ হচছেনা বরং রুবলের চাহিদা রয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং রাশিয়া বিরোধী অনেক দেশে রুশ পণ্য ও সেবার জায়গায় ওয়াশিংটন তার পণ্য ও সেবার প্রবেশ বাড়াতে পেরেছে এ মুহূর্তে এটাও ঠিক। এর মাঝেও ওয়াশিংটনের জন্য হতাশার একটা দিক হলো চীন ও রাশিয়া নিজেদের মাঝে সুইফটের বাইরে অর্থনৈতিক বার্তা আদান-প্রদান করতে থাকায় তাদের বাণিজ্য-তথ্যে যুক্তরাষ্ট্র আর আগের মতো নজরদারি করতে পারছে না।চীন-রাশিয়া ডলার ব্যবহার না করলে তথা ডলারের আধিপত্য না থাকার আরেক পরোক্ষ মানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কর্তৃত্বও কিছুটা খর্ব হওয়া। আইএমএফকে ব্যবহার করে দশকের পর দশক যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে যেভাবে তার পছন্দের অর্থনৈতিক মডেল গ্রহণে বাধ্য করেছে, সেটা আগামী দিনে আর সহজে না–ও হতে পারে।

এসবই হলো বিশ্বকূটনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের এখনকার আগ্রাসী অবস্থানের বড় এক পটভূমি। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনকে মাঝখানে রেখে বিশ্বকে দুভাগ করতে চাইছে ওয়াশিংটন। এই ভাগাভাগির কেন্দ্রে তাদের বড় লক্ষ্য অবশ্যই ডলারের একচেটিয়াত্ব ধরে রাখা। যেসব দেশ রাশিয়া, চীন, ইরান বা ভেনিজুয়েলার সঙ্গে নিজ মুদ্রায় লেনদেন করতে চাইছে বা চাইবে, তারা নিশ্চিতভাবেই ব্যাপক কূটনীতিক চাপের শিকার হবে এ সময়। সেই চাপ কখনো আসবে মানবাধিকার পরিস্থিতির আদলে, কখনো রাজনৈতিক গণতন্ত্রের আকুতির আড়ালে যদিও এ দুটোও জরুরি। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে শুরু হওয়া নব পর্যায়ের এ টানাপোড়েন ইউক্রেন যুদ্ধকেও দীর্ঘায়িত করবে। এ যুদ্ধের ফলাফলে এখন আর কেবল ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব নয় বরং বৈশ্বিক পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার নেতৃত্ব কার হাতে থাকবে, তারও নিষ্পত্তি নির্ভর করছে। অনেকে মনে করছেন, এ যুদ্ধের ফয়সালা হবে সমরবিদদের হাতে নয়, অর্থনীতিবিদদের দ্বারা। কিয়েভকে ঘিরে চলতে থাকা ধ্বংসলীলা বন্ধ হলেও এ যুদ্ধের আড়ালে শুরু হওয়া বিকল্প মুদ্রাব্যবস্থা গড়ার মূল যুদ্ধ থামবে না। সার্গেই গ্লাজিয়েভ ও আলেক্সান্ডার দাগিনরা এ যুদ্ধকে ওদিকেই নিতে চেয়েছিলেন এবং ওয়াশিংটনও তাতে শামিল হয়েছে সব শক্তিতে --------

আগামী পর্বে সমাপ্য -
---------------------------
জবাবদিহীতা - এই লিখা লিখতে নিম্নে বর্ণিত তথ্যসূত্র ছাড়াও আরও অনেক জায়গা থেকে ছোট-খাট সাহায্য নিতে হয়েছে যা আমি এখানে উল্লেখ করিনি। তা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।

পূর্ববতী পোস্ট -

১। প্রথম পর্বের লিংক - Click This Link
২। দ্বিতীয় পর্বের লিংক - Click This Link
=====================================
তথ্যসূত্র -

১। উইকিপিডিয়া - SWIFT - https://bn.wikipedia.org/wiki/
২। Money - https://www.britannica.com/topic/money
৩। নিউ ইয়র্ক টাইমস - Click This Link
৪। যেভাবে মার্কিন ডলার বিশ্বজুড়ে আধিপত্য স্থাপন করেছিল - Click This Link
৫। Encyclopaedia Britannica - লিংক - https://www.britannica.com/topic/fiat-money
৬। দানা বাঁধছে ডলার বিরোধী মহাযুদ্ধ - প্রথম আলো (২০/০৯/২০২২) - https://www.prothomalo.com/world/europ
৭। What is cryptocurrency and how does it work? - Click This Link
৮। SPFS - https://en.wikipedia.org/wiki/SPFS
৯। CIPS - Click This Link
১০। Can the yuan replace the powerful dollar and become the reserve currency?-
Click This Link

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৪০

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: চীনের উপরে মানুষ আস্থা রাখতে পারবে না মনে হয়।

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৫৭

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ দস্যু ভাই , আপনার মন্তব্যের জন্য ।

চীনের উপরে মানুষ আস্থা রাখতে পারবে না মনে হয়।

- এখন পর্যন্ত তাই মনে হচছে তবে উত্থান পতন দুনিয়ার চিরাচরিত নিয়ম ।
তাই আজ যা অসম্ভব বলে মনে হচছে , আজ থেকে ২০/৩০ বছর সেই হয়ত সম্ভব হবে।
এক সময় বৃটিশ সাম্রাজ্য ছিল সারা দুনিয়া জুড়ে। আর আজ বৃটেন নিজেই নিজের দেশে চারটুকরার একটুকরা।
চীন এগুচছে তবে এত সহজে আমেরিকার বিকল্প হতে পারবেনা। তার জন্য অনেক কাঠ-খর পুড়ানোর সাথে সাথে নিজেকে অনেক দিক দিয়ে আরো পরিণত ও যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।

২| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:০৪

গেঁয়ো ভূত বলেছেন:


মার্কিনিদের সামরিক-অর্থনৈতিক ক্ষমতার মাত্রাতিরিক্ত অপব্যাবহার বিশ্ববাসীকে অতিষ্ট করে তুলেছে, মার্কিন নিয়ন্ত্রিত বিশ্ব অর্থব্যাবস্থার প্রতি বাকি বিশ্বের ক্রমহ্রাসমান আস্থার কারণে বিকল্প মুদ্রা ব্যবস্থা এখন সময়ের দাবি।

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:৫৯

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ গেঁয়ো ভূত ভাই , আপনার মন্তব্যের জন্য ।

মার্কিনিদের সামরিক-অর্থনৈতিক ক্ষমতার মাত্রাতিরিক্ত অপব্যাবহার বিশ্ববাসীকে অতিষ্ট করে তুলেছে, মার্কিন নিয়ন্ত্রিত বিশ্ব অর্থব্যাবস্থার প্রতি বাকি বিশ্বের ক্রমহ্রাসমান আস্থার কারণে বিকল্প মুদ্রা ব্যবস্থা এখন সময়ের দাবি।

- কথায় আছে, " মুকুট পরা কঠিন তবে মুকুট রক্ষা করা আরো কঠিন" - সেটা এখন আমেরিকা ধীরে ধীরে বুঝতে পারছে।

বৃটিশদেরকে হটিয়ে আমেরিকা সারা দুনিয়ায় সামরিক-অর্থনৈতিক দিক দিয়ে রাজত্ব করছে দীর্ঘদিন তবে তারা তাদের ক্ষমতা ও রাজত্ব যে উপায়ে জারি রাখছে তা কোন কোন ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম মেনে চলছেনা। আর এতে করে সারা দুনিায়তেই তাদের প্রচলিত ব্যাবস্থার প্রতি মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ছে ।

ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরন কখনো ভাল ফল বয়ে আনেনা। তা সে সরকার , রাজনীতি কিংবা অর্থনীতি যাই হোক না কেন । আর তাই বিশ্বের মুদ্রা ব্যবস্থায় এখন ডলারের বিকল্প সারা দুনিয়ারই চাওয়া।

৩| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:৪৩

কামাল৮০ বলেছেন: কোন একটা দেশের মুদ্রা বাদ দিয়ে অন্য কিছু চিন্তা করা ঠিক হবে।

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০৫

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ কামাল৮০ভাই , আপনার মন্তব্যের জন্য

কোন একটা দেশের মুদ্রা বাদ দিয়ে অন্য কিছু চিন্তা করা ঠিক হবে।

- এটা যদিও অনেকেই আলোচনা করে তবে ক্ষমতাশালী ( আমেরিকা/চীন) কেউই এতে রাজী হবে না । কারন , এতে তাদের নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষা হবেনা।

তবে যে কোন একক মুদ্রা থেকে বেরিয়ে ক্রিপ্টোকারেরেন্সি হতে পারে ডলার-ইউয়ানের বিকল্প তবে তারও অনেক সমস্যা আছে।

৪| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪৬

কামাল৮০ বলেছেন: সমস্যা থাকবেই।সমাধান নাই এমন কোন সমস্যা নাই।যার সমাধান নাই সেটা কোন সমস্যাই না।সমস্যা এবং সমাধান একটা চলমান বিষয়।সমস্যা আসবে সমাধান করতে হবে।আবার সমস্যা আসবে আবার সমাধান করতে হবে।এভাবেই চলবে অনন্ত কাল।
ডলার এখন উপকারের চেয়ে অপকার বেশী করছে।এই জন্য সমস্যা তৈরী হচ্ছে।

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:০০

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: আবারো ধন্যবাদ কামাল৮০ভাই , আপনার প্রতি-মন্তব্যের জন্য এবং দুঃখিত দেরিতে জবাবের জন্য।

সমস্যা থাকবেই।সমাধান নাই এমন কোন সমস্যা নাই।যার সমাধান নাই সেটা কোন সমস্যাই না।সমস্যা এবং সমাধান একটা চলমান বিষয়।সমস্যা আসবে সমাধান করতে হবে।আবার সমস্যা আসবে আবার সমাধান করতে হবে।এভাবেই চলবে অনন্ত কাল। ডলার এখন উপকারের চেয়ে অপকার বেশী করছে।এই জন্য সমস্যা তৈরী হচ্ছে।

- যে কোন সমস্যা তৈরীর জন্য যেমন প্রথমে সেই সমস্যার প্রেক্ষাপট তৈরী হয় এবং ধীরে সমস্যার ব্যাপকতা বাড়ে ঠিক তেমনি সমস্যার সমাধানও হুট করে হয়না । তাও ধীরে সমাধান হয় নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।

কাজেই ডলার নিয়ে যে ডলারবাজী চলছে তার সমাধানও হবে তবে তার জন্য সময়ের প্রয়োজন।

৫| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫৫

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: তথ্যবহুল চমৎকার পোস্ট পড়ে ভালো লাগলো।

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৫৭

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ মোহাম্মদ গোফরান ভাই , আপনার মন্তব্যের জন্য এবং দুঃখিত দেরিতে জবাবের জন্য।

তথ্যবহুল চমৎকার পোস্ট পড়ে ভালো লাগলো।

- আপনার নিকট ভাল লেগেছে জেনে আমারও ভাল লাগল ।
আশা করি শেষ পর্বেও সাথে পাব আপনাকে।

৬| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১০:১৮

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


ক্রিপ্টো কিভাবে ডলারের জায়গা দখল করবে? টুলটা কি?

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৫৮

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ শূন্য সারমর্ম ভাই , আপনার মন্তব্যের জন্য এবং দুঃখিত দেরিতে জবাবের জন্য।

ক্রিপ্টো কিভাবে ডলারের জায়গা দখল করবে? টুলটা কি?

- এ ব্যাপারে শেষ পর্বে বিশদ থাকবে। আশা করি শেষ পর্বে সাথে পাব আপনাকে এবং আপনার জবাবও পাবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.