নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুন্দর শিরোনামের কিছু নাই। সুন্দর মানুষের সুন্দর শিরোনাম থাকে। আমারে আমি একটা কুকুরের থেকে বেশী কিছু ভাবি না। যেদিন মানুষ বলে ভাববো নিজেকে সেদিন বরুণাকে নিয়ে কিছু লিখবো।

ঠেলাগাড়ির পাইলট

অশ্বডিম্ব

ঠেলাগাড়ির পাইলট › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাউল সম্রাটকে নিয়ে এক কিশোরের আবেগ

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩৩

১২সেপ্টেম্বর ২০০৯ রোজ শনিবার ,সকাল ০৮:০৫।

ঘুম থেকে উঠে আব্বুর সাথে খবর দেখছিলাম। হঠাত করেই টিভি স্ক্রিনের নীচের দিকে চোখ গেলো। দেখলাম লেখা “সকাল ০৭:৫৮তে সিলেটের একটি হাসপাতালে মারা গেছে বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম”।

খবরটা পড়ে থমকে গেলাম। আব্বু অস্ফুস্ট স্বরে একটা শব্দ বলল “আহারে”।

সকালের খাবার খেলাম না রাগে। রাগ একটাই যা শুনলে মানুষ হাসবে। রাগের কারন হলো। “উনি এতো তারাতারি মারা গেলো কেনো?”।

তখন আমার বয়স ১৪। বছর খানেক আগে নতুন মোবাইল পেয়েছি । মোবাইল ভরা শাহ আব্দুল করিমের গান। যখন আমার বয়সী ছেলে মেয়েদের মোবাইলে হিন্দি গান ভরা থাকতো আমার মোবাইলে তখন বাজতো শাহ আব্দুল করিমের গান। বন্ধুরা যখন আমাকে জিজ্ঞেস করতো প্রিয় শিল্পী কে? আমি বলতাম শাহ আব্দুল করিম। বন্ধুরা হাসতো,টিটকারী করতো। আমি ওদের অজ্ঞতা দেখে মনে মনে হাসতাম। ওনার গানে এতোটাই মজে গেলাম যে ওনাকে নিয়ে পারলে গবেষণা শুরু করে দেই। তার প্রত্যেকটা গান প্রতিদিন ১০বারের বেশী করে শুনতাম। তখন শপথ নিয়েছিলাম জীবনে একবার হলেও ওনাকে দেখতে যাবো। কিন্তু তা আর হলো কই?

ওনার গান এতোটাই শুনেছি যে কয়েকটা বিষয় খেয়াল করলাম ওনার গানে । তার মধ্যে দুটো হলো,

১= ওনার গানে আব্দুল করিম বা শুধু করিম এই শব্দটা থাকবেই।

২= ওনার সব গান চার কলির। প্রতি কলিতে চারটি করে লাইন।



এই দুটোর ব্যাতিক্রম হয়েছে, ওনার এমন কোন গান আমি শুনিনি।



ওনাকে পুজি করে অনেক শিল্পী বা ব্যান্ড বড় হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, হাবিব এবং দলছুট।

হাবিবের ক্যারিয়ারের প্রথম দুটো এ্যালবাম হলো, কৃষ্ণ এবং মায়া।

মায়া এ্যালবামে হাবিব শাহ আব্দুল করিমের আসি বলে গেলো বন্ধু এবং বন্ধে মায়া লাগাইছে গান দুটো ব্যাবহার করেছিলো।

আর

কৃষ্ণ এ্যালবামে ব্যাবহার করেছিলো, কেমনে ভুলিবো আমি, গান গাই আমার মনরে বুঝাই এবং আমি কুল হারা কলঙ্কিনী গানগুলো।



আর বাপ্পা মজুমদার এবং সঞ্জীব চৌধুরীর দলছুট ব্যান্ডে গাওয়া শাহ আব্দুল করিমের গানটি হচ্ছে, “গাড়ী চলে না চলে নারে”।



হাবিব , শাহ আবুল করিমের গান গেয়ে এতোটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো যে শহরের আধুনিক মানুষেরা গান পাঁচটিকে হাবিবের গান বলে মনে করতো। যার জন্য আমার হ্মোভ ছিলো হাবিবের উপর। এই হ্মোভ এখনও বর্তমান।

২০০৯ এ তার মৃত্যুর আগে শাকুর মজিদ তার এক সাহ্মাতকার নিয়েছিলো যেখানে তার কয়েকটা কথা আমার মনে দাগ কেটেছে তা নিচে দিলামঃ



শাকুর মজিদঃ আপনার গান গেয়ে আজ অনেকেই সুপারস্টার। তারা যে আপনার গান গায় এর জন্যে কি তারা আপনার অনুমুতি নিয়েছিলো।

শাহ আব্দুল করিমঃ না নেয়নি।

শাকুর মজিদঃ আপনার গান নিয়ে যে তারা ব্যাবসা করে এটা আপনি কিভাবে দেখেন?

শাহ আব্দুল করিমঃ আমার মৃত্যুর পর আমার হাড্ডি নিয়েও ব্যাবসা হবে আরতো গান।



কথা গুলো শুনে খুব খারাপ লাগছিলো যে এই মহান মানুষটির প্রাপ্য সম্মান উনি পেলেন না।





এখনও অনেকেই শাহ আব্দুল করিমের বিখ্যাত গানগুলোকে অন্যান্য শিল্পীর বলে মনে করে থাকেন যা আমাদের জন্য লজ্জার।



শাহ আবদুল করিমের বিখ্যাত কিছু গান

*বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে

*আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম

*গাড়ি চলে না

*আমি কূলহারা কলঙ্কিনী

*কেমনে ভুলিবো আমি বাঁচি না তারে ছাড়া

*কোন মেস্তরি নাও বানাইছে

*কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু

*বসন্ত বাতাসে সইগো

*আইলায় না আইলায় নারে বন্ধু

*মহাজনে বানাইয়াছে ময়ুরপংখী নাও

*আমি তোমার কলের গাড়ি

*সখী কুঞ্জ সাজাও গো

*জিজ্ঞাস করি তোমার কাছে

*মানুষ হয়ে তালাশ করলে

*আমি বাংলা মায়ের ছেলে

*রঙ এর দুনিয়া তরে চায় না

*গান গাই আমার মনরে বুঝাই



*প্রেমের নেশায় বন্ধুর আশায়





উনি ১৫০০এর অধিক গান লিখেছেন।

আজ ওনার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী।

আমার সবচেয়ে প্রিয় শিল্পীকে অনুভব করলাম মন থেকে।

বিদায় হে কিংবদন্তী বাঊলসম্রাট। আমার মত অনেক মানুষ আপনাকে চিরজীবন মন থেকে সম্মান করবে এবং মনে রাখবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.