নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুন্দর শিরোনামের কিছু নাই। সুন্দর মানুষের সুন্দর শিরোনাম থাকে। আমারে আমি একটা কুকুরের থেকে বেশী কিছু ভাবি না। যেদিন মানুষ বলে ভাববো নিজেকে সেদিন বরুণাকে নিয়ে কিছু লিখবো।

ঠেলাগাড়ির পাইলট

অশ্বডিম্ব

ঠেলাগাড়ির পাইলট › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্ন

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৫৯

মতিঝিলের শাপলা চত্বরের পাশে সিএনজি’টা থামালো রাজা। রাজা নামটা শুনতে খুব রাজা রাজা মনে হলেও রাজার কাছে তার নিজের নামটা ভালো লাগে না। কারন এই নামের জন্য তাকে অনেক উপহাস শুনতে হয়েছে। রাজা যেদিন তার সিএনজি’র লাইসেন্স করাতে গেলো। সেখানে এক সাহেব জিজ্ঞেস করলো, তোর নাম কী?

রাজা বলল, আমার নাম রাজা।

সেই সাহেব তার বিশাল ভুড়ি দুলিয়ে হাসতে হাসতে বলল, রাজা চালায় সিএনজি। হে হে হে।

তখন সেই রুমে যারা ছিলো তারা সবাই তার দিকে তাকিয়ে হাসছিলো।

রাজা’র খুব কান্না পেয়েছিলো তখন। কিন্তু লোকে আরো জোড়ে হাসবে এই ভেবে আর কাদেনি।

সকলের হাসি ঠাট্টা উপহাস শেষ হলে লাইসেন্স নিয়ে যখন বের হলো রাজা তখন মনে মনে চিন্তা করলো রাজা,সুলতান এই টাইপের নামের লোকেরা বেশী গরীব হয়।

সিএনজি চালিয়ে তার দিনগুলো একেবারে খারাপ যেতো না। ধারদেনা করে কেনা এই সিএনজি । রাজার সাতকুলে কেও নেই। বাবা-মা অনেক আগেই মারা গেছে। ঘরে আছে শুধু তার স্ত্রী। প্রতিদিন রোজগার শেষে অনেক রাতে রাজা যখন বাড়ী ফিরে তখন দেখে তার বউ না খেয়ে তার জন্য অপেহ্মা করে বসে আছে। রাজার তখন অপার্থিব এক ভালোলাগা মন ছুয়ে যায়। তারপর তারা দুজনে গুটুর গুটুর করে গল্প করতে করতে খেতে থাকে।

শাপলা চত্বরের পাশে বসে এইসবই হাবিজাবি চিন্তা করছিলো রাজা।

এই সিএনজি গাবতলী যাইবেন?

বা দিকে ঘাড় কাত করলো রাজা। প্রথম দেখাতেই লোকটাকে কেমন যেনো সহজ সরল বলে মনে হলো রাজার। মাথায় তেল দিয়েছে অনেক, বা দিকে সিথি করা, ডান হাতে একটি কাগজের ফাইল। মনে হয় ঢাকাতে নতুন না এলেও বেড়াতে এসেছে।

ঐ মিয়া যাইবেন কিনা কন না কেন?

হ হ যামু।

ভাড়া কত?

পাঁচশ দিয়েন।

চারশ টাকা ভাড়াতে যাত্রীকে নিয়ে গাবতলীর উদ্দেশ্যে রওনা দিলো রাজা।



কয়েক মাস আগে রাজা রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বিছানায় শুয়েছে। তখন তার বউ এসে বলল, একটা কথা কমু?

কও

লজ্জা লাগে।

রাজা অনুমান করতে পেরে বলল, আমি কি বাপ হইতে যাইতাছি?

রাজার বউ লজ্জা পেয়ে মাথা নারলো।

সেদিন রাতে তারা কেউই ঘুমালো না। রাতভর চিন্তা করলো নতুন বাচ্চার নাম কি রাখবে?

ছেলে হবে না মেয়ে হবে?

তাদের কোন স্কুলে ভর্তি করবে?

দেখতে কার মত হবে?

হাজারো স্বপ্ন দেখা শুরু করলো দুনিয়াতে না আসা এক বাচ্চাকে নিয়ে।



ডাক্তার বলেছে কিছুদিনের মধ্যে যেকোন সময় বাচ্চা ডেলিভারি হতে পারে। তার বউয়ের সাথে সবসময় একজন লোক রাখতে। রাজার কেও নেই। তার বউয়ের বাবা-মাও মারা গেছে অনেক আগে। তার বউ মানুষ হয়েছে তার চাচা-চাচীর বাড়ীতে কাজের মেয়ের মত খাটতে খাটতে। তাই তার বউয়ের দিকের আত্বীয়ও নেই বললেই চলে। এদিকে রাজাকেও সবসময় কাজ নিয়ে ব্যাস্ত থাকতে হয়। পাশের বাসার এক বয়স্ক মহিলাকে তার বউয়ের কাছে থাকতে বলে চিন্তা নিয়ে প্রতিদিন বাসা থেকে বের হয় রাজা।



কারওয়ান বাজারে সিগন্যালে কতহ্মন আটকে থেকে রাজা তার যাত্রীকে নিয়ে ফার্মগেট পৌছালো। তখন তার যাত্রী তাকে বলল ভাই একটু থামান। রাজা সিএনজি থামালো। তার যাত্রী বলল, ভাই দুপুর হয়ে গেছে খিদা লাগছে। আসেন আশেপাশের কোন হোটেল থেকে কিছু খেয়ে নেই।

রাজা অবাক হয়ে গেলো কোন যাত্রীতো কখনই এরকম করে কিছু খাওয়ার জন্য সাধে না। রাজা খেতে চাইলো না । প্রায় জোড় করেই তাকে এক হোটেলে নিয়ে খেতে বসলো তার যাত্রী। কথায় কথায় জানতে পারলো। যাত্রীটির নাম শফিক। তার বাড়ী ফরিদপুর। মতিঝিল এসেছিলো জমির কয়েকটা কাজে। আজ নিয়ে তার দ্বিতীয়বার ঢাকায় আসা। গাবতলি থেকে আরিচা যাবে। যেখান থেকে ফরিদপুর। রাজা বুঝলো লোকটি এই জন্যেই এতো সহজ সরল। তা না হলে তাকে দুপুরে খেতে এভাবে ডাকতো না। অন্য কোন যাত্রী হলে তাকে রেখেই খেয়ে আসতো। রাজা শদিকের প্রতি একপ্রকার শ্রদ্ধাবোধ এসে গেলো। শফিক জিজ্ঞেস করলো রাজাকে, ভাই আপনার বাচ্চা কয়জন?

শফিক লজ্জা মুখে বলল,কিছুদিনের মধ্যেই বাবা হব।

মাশাআল্লাহ।



খাওয়ার মাঝেই রাজার নোকিয়া-১১০০ মডেলের মোবাইলে রিং হচ্ছে। রাজা ধরলো। তারপর কথা বলে চিন্তিত মুখে বসে রইলো।

লোকটি জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েছে ভাই?

রাজা জানালো তার বউয়ের প্রসব বেদনা উঠেছে। হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। রাজা হাসপাতালে নইয়ে যেতে বলেছে। তারপর আর খাওয়া চলে না। লোকটি বলল, ভাই আমার তো গাবতলী তাড়াতাড়ি যেতে হবে।

ফার্মগেট থেকে গাবতলী যেতে আধা ঘন্টা লাগলো। আল্লাহর রহমতে কোন জ্যাম পড়েনি।

গাবতলী পৌছে শফিক নেমে যাওয়ার আগে এক হাজার টাকার দুটো নোট রাজার দিকে বাড়িয়ে দিলো। রাজা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে দেখে শফিক বলল আপনার বউয়ের জন্য হাসপাতালের খরচের কিছু অংশ দিলাম। রাজা অবাক হয়ে হাত বাড়িয়ে নোট দুটি নিয়ে পকেটে পুরে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো।

মানুষটার প্রতি তার এতো কৃতজ্ঞ হলো যে বলার বাহিরে। হাসপাতালে গিয়ে দেখলো তার পাশের বাসার সেই বয়স্ক মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। ডাক্টার এসে বলল জরুরী সিজার করাতে হবে। একটা পেসক্রিপশন দিয়ে বলল এই ঔষুধ গুলো আনতে। রাজা দৌড়ে গেলো ফার্মেসীতে। ১৩০০ টাকা বিল হয়েছে। রাজা পকেট থেকে একটু আগে শফিকের দেয়া এক হাজার টাকার দুটো নোট দিলো ক্যাশিয়ারকে।

ক্যাশিয়ার একটু দেখে বলল ভাই নোট দুটো পালটে দিন।

রাজা অবাক হয়ে বলল কেন?

ক্যাশিয়ার বলল, নোট দুটি জাল।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৫৪

অরুদ্ধ সকাল বলেছেন:
এমন কেন হয়!
গল্পগুলো এত কষ্টের কেন হয়?

অনেক সুন্দর লিখেছেন কিন্তু শেষে কষ্ট!

২| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৫৪

অরুদ্ধ সকাল বলেছেন:
এমন কেন হয়!
গল্পগুলো এত কষ্টের কেন হয়?

অনেক সুন্দর লিখেছেন কিন্তু শেষে কষ্ট!

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৫৮

ঠেলাগাড়ির পাইলট বলেছেন: কস্ট দেখেই তো ভালো লাগলো ভাইয়া। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.