নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

MOHAMMAD RASEL AHAMED

MOHAMMAD RASEL AHAMED › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিঝুম দ্বীপ

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:১৬



সমুদ্র কোলে অস্তগামী সূর্য। কেওড়া বন থেকে দল বেঁধে ঘাস বনে ছুটে আসছে মায়াবী চিত্রা হরিণ। দূর বালুচরে চিকচিক খেলা করছে মিষ্টি সূর্য রশ্মি। কেওড়া, গেওড়া বনের কোলঘেঁষে বয়ে যাওয়া সরু খালের পাড়ে সবুজের আচ্ছাদিত নক্শিকাঁথার মাঠ। ওপরে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির ওড়াওড়ি। বনে পাখির কিচিরমিচির। শীতের বিকালে প্রকৃতির এমন মায়াবীরূপ উপভোগ করা যায় নিজুম দ্বীপে। বঙ্গোপসাগরের কোলে উত্তর ও পশ্চিমে মেঘনার শাখা নদী, আর দক্ষিণ এবং পূর্বে সৈকত ও সমুদ্র বালুচরবেষ্টিত ছোট সবুজ ভূখণ্ড নিঝুম দ্বীপ এখন পর্যটকদের জন্য এক আকর্ষণীয় স্থান।

নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার অর্ন্তগত নিঝুম দ্বীপ। একে ‘দ্বীপ’ বলা হলেও এটি মূলত একটি ‘চর’। নিঝুম দ্বীপের পূর্ব নাম ছিলো চর-ওসমান। ওসমান নামের একজন বাথানিয়া তার মহিষের বাথান নিয়ে প্রথম নিঝুম দ্বীপে বসত গড়েন। তখন এই নামেই এর নামকরণ হয়েছিলো। পরে হাতিয়ার সাংসদ আমিরুল ইসলাম কালাম এই নাম বদলে নিঝুম দ্বীপ নামকরণ করেন। মূলত বল্লারচর, চর ওসমান, কামলার চর এবং চুর মুরি- এই চারটি চর মিলিয়ে নিঝুম দ্বীপ।
প্রায় ১৪,০০০ একরের দ্বীপটি ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের দিকে জেগে ওঠে। মাছ ধরতে গিয়ে হাতিয়ার জেলেরা নিঝুমদ্বীপ আবিস্কার করে। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি নিঝুমদ্বীপে জনবসতি শুরু হয়। মূলত হাতিয়ার জাহাজমারা ইউনিয়ন হতে কিছু জেলে পরিবার প্রথম নিঝুমদ্বীপে আসে। নিঝুমদ্বীপ সংলগ্ন এলাকায় প্রচুর ইছা মাছ (চিংড়ি মাছ) ধরা পড়তো বিধায় জেলেরা এই দ্বীপের নাম দেয় ‘‘ইছামতির দ্বীপ’’। এই দ্বীপটিতে মাঝে মাঝে বালির ঢিবি বা টিলার মত ছিল বিধায় স্থানীয় লোকজন এই দ্বীপকে বাইল্যার ডেইল বলেও ডাকতো।

কালক্রমে ইছামতি দ্বীপ নামটি হারিয়ে গেলেও স্থানীয় লোকেরা এখনো এই দ্বীপকে বাইল্যার ডেইল বলেই সম্বোধন করে। বাংলাদেশের বনবিভাগ ৭০-এর দশকে বন বিভাগের কার্যক্রম শুরু করে। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে চার জোড়া হরিণ ছাড়ে। নিঝুম দ্বীপ এখন হরিণের অভয়ারণ্য। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের হরিণশুমারি অনুযায়ী হরিণের সংখ্যা ২২,০০০। আইলায় বেশ কিছু হরিণ মারা গেলেও ধারনা করা হয় এখন নিঝুম দ্বীপে ৪০ হাজারের বেশি হরিন আছে। নোনা পানিতে বেষ্টিত নিঝুম দ্বীপ কেওড়া গাছের অভয়ারণ্য। ম্যানগ্রোভ বনের মধ্যে সুন্দরবনের পরে নিঝুম দ্বীপকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন বলে অনেকে দাবী করেন।
নিঝুম দ্বীপে রয়েছে প্রায় ৩৫ প্রজাতির পাখি। এছাড়াও শীতের মৌসুমে অজস্র প্রজাতির অতিথির পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয় নিঝুম দ্বীপ। নিঝুম দ্বীপে বিশাল এলাকা পলিমাটির চর। জোয়ারের পানিতে ডুবে এবং ভাটা পড়লে শুঁকোয়। জোয়ারের পানিতে বয়ে আসা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এদের একমাত্র খাবার। এখানে রয়েছে মারসৃপারি নামে একধরনের মাছ যাদেরকে উভচর প্রাণী বলা হয়। ৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে এই মারসৃপার, ৬-৯ ইঞ্চি লম্বা হয়। বর্ষা মৌসুমে ইলিশের জন্য নিঝুম দ্বীপ বিখ্যাত। এই সময় ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা নিঝুম দ্বীপে মাছ কিনতে আসে।। এছাড়া শীত কিংবা শীতের পরবর্তী মৌসুমে নিঝুম দ্বীপ চেঁউয়া মাছের জন্য বিখ্যাত। জেলেরা এই মাছ ধরে শুঁটকি তৈরি করেন।
নিঝুম দ্বীপে এখন হরিণের সংখ্যা ৪০ হাজাররের মত। তারপরেও হরিণ দেখতে হলে এখানে ভ্রমণ কালীন সময়ে কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। বনে ঢুকলে নিঃশব্দে চলাচল করতে হবে। সামান্য হৈ চৈ করলে এখানে হরিণের দেখা মেলা দুস্কর। জঙ্গলে ট্রেকিং এর সময় যথা সম্ভব সবাই হালকা রঙের সুতি পোশাক পড়বেন। বন্য প্রাণীদের দৃষ্টি খুব প্রখর। অতি উজ্জ্বল পোশাকের কারণে দূর থেকেই আপনার আগমন টের পেয়ে যাবে ওরা। হরিণের দল দেখতে বা ছবি তুলতে চৌধুরী খালের শেষ মাথা ভালো, ওই দিকটায় হরিণ বেশি দেখা যায়। ভালো ছবি পেতে চাইলে গভীর জঙ্গলে ঘাপটি মেরে বেশ কিছু সময় বসে থাকতে হবে। তবে ভয় নেই বনে বন্য কুকুর ছাড়া হিংস্র কিছু নেই।

কিভাবে যাবেনঃ

ঢাকা থেকে নিঝুম দ্বীপ যাওয়ার সহজ রুটটি হলো- সদরঘাট থেকে লঞ্চে হাতিয়ার তমরুদ্দি। এ পথে দুটি লঞ্চ নিয়মিত চলাচল করে। এমভি পানামা, ফোন- ০১৯২৪০০৪৬০৮ এবং এমভি টিপু-৫, ফোন-০১৭১১৩৪৮৮১৩। ভাড়া ডাবল কেবিন ১৮০০ টাকা, সিঙ্গেল ১০০০ টাকা। ডেকে জনপ্রতি ২৫০ টাকা মত হবে। ঢাকা থেকে ছাড়ে বিকেল সাড়ে ৫ টায় আর তমরুদ্দি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়ে দুপুর সাড়ে বরোটায়। তমরুদ্দি থেকে স্কুটারে বন্দরটিলা ঘাট ভাড়া ৬০০-৬৫০ টাকা মত। যাওয়া যাবে ৩/৪জন। স্কুটার ছাড়া বাস+রিকসা করে বন্দরটিলা ঘাটে যাওয়া যায়। বাস ভাড়া ৩০-৪০ টাকা, রিকসা ভাড়া ৫০-৬০ টাকা। বন্দরটলা ঘাট থেকে ট্রলারে চ্যানেল পার হলেই নিজুম দ্বীপের বন্দরটিলা। চ্যানেল পার হতে সময় লাগবে ১৫ মিনিট। এটা নিঝুম দ্বীপের এক প্রান্ত, আসল গন্তব্য অন্য প্রান্তের নামা বাজার। বন্দরটিলা থেকে নামা বাজার যেতে হবে রিকশায়। ভাড়া ১৫০-২০০ টাকা মত। মোটর সাইকেলও নিয়ে নিতে পারেন। ক্লান্ত না হয়ে পড়লে ছবি তুলতে তুলতে হেটেও যাওয়া যায়।

এছাড়া ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত অনেকগুলো চেয়ারকোচ সরাসরি নোয়াখালীতে যাতায়ত করে। চার থেকে সাড়ে চার ঘন্টায় এগুলো সরাসরি মাইজদী সোনাপুর এসে পৌঁছে ভাড়া ৩১০ টাকা মত। সকাল সাতটায় কমলাপুর থেকে ছাড়ে উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেন । এছাড়া ঢাকা সাঈদাবাদ থেকে আধা ঘন্টা পর পর যাত্রীসেবা বাস গুলো ছাড়ে নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে।

নোয়াখালী সোনাপুর পৌঁছে সেখান থেকে যেতে হবে চেয়ারম্যান ঘাট। বাস, টেম্পু বা বেবীতে সরাসরি ৪০ কিঃমিঃ দক্ষিণে সুধারামের শেষ প্রান্তে চর মজিদ স্টিমার ঘাট। তার পরেই হাতিয়া যাবার চেয়ারম্যান ঘাট। সোনাপুর থেকে একটি বেবী রিজার্ভ নিলে ৩০০-৪০০ টাকায় যাওয়া যায়। টেম্পো, বাসে জনপ্রতি ভাড়া আরো কম। চর মজিদ ঘাট থেকে ট্রলার কিংবা সী-ট্রাকে করে হাতিয়া চ্যানেল পার হয়ে যেতে হবে হাতিয়ার নলচিরা ঘাটে। সময় লাগে প্রায় দুই ঘন্টা। । নলচিরা বাজার থেকে যেতে হবে হাতিয়ার দক্ষিণে জাহাজমারা। সময় নেবে আধা ঘন্টা। জাহাজমারা থেকে ট্রলারে সরাসরি নিঝুম দ্বীপ। সময় নেবে ৪০-৫০মিনিট। তবে দলবেঁধে গেলে ট্রলার রিজার্ভ করে সরাসরি চেয়ারম্যান ঘাট থেকে নিঝুম দ্বীপ যাওয়া যায়। ঘাট থেকে নদীপথে হাতিয়া অথবা নিঝুম দ্বীপে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে জোয়ারের জন্য।


মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৩৮

কামরুল ইসলাম রুবেল বলেছেন: মার্চ যাবো, ঢাকা-ভোলা-কুকরি মুকরি-তারুয়া বীচ-মনপুরা-নিঝুমদ্বীপ এই রুটে। আপনার তথ্যগুলো কাজে লাগবে।
++++

২| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১০

কলমের কালি শেষ বলেছেন: সুন্দর তথ্যবহুল পোষ্ট ।

৩| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:২৩

তুষার কাব্য বলেছেন: আমিও ঘুরে আসছি গত সপ্তাহে...এখনো লেখা হয়ে ওঠেনি...ভালো থাকুন...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.