![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণ রসায়ন/ জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার নয়ন। [email protected]
রবীন্দ্রনাথ। ঋষি। ঋষি ও কবি। রবীন্দ্রনাথ ঋষিকবি। তো ঋষিরা তো প্রায় একরকম সমাজবিচ্ছিন্নই থাকেন। সে কারণেই প্রশ্ন ওঠে- রাষ্ট্র সম্পর্কে ঋষিদের কোনও মতামত গ্রাহ্য হবে কি না? বা একজন কবি তার গীতিকবিতায় রাষ্ট্রদর্শন উপস্থাপন করতে পারেন কি না। অন্যদের বেলায় যা হয় হোক। রবীন্দ্রনাথের বেলায় সে রকম কিছু ঘটলে আমাদের কৌতূহলী হতেই হয়। কেননা, তাঁর মত তো উপেক্ষা সম্ভব না। এবং এই একুশ শতকেও! রবীন্দ্রনাথের একটা গানে তাঁর রাষ্ট্রদর্শন প্রকাশ পেয়েছে। সে বিস্ময়কর বিপুল জনপ্রিয় গানটিতে রবীন্দ্রনাথ জানিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রের শাসক ও শাসিতের সর্ম্পক কেমন হওয়া উচিত। কেমন হওয়া উচিত নাগরিকের কার্যবিধি ও প্রশাসকের ক্ষমতার প্রকৃত সরূপ। গানটিতে আমরা রবীন্দ্রনাথের কল্যাণরাষ্ট্রের ধারনা পেয়ে যাই। রবীন্দ্রনাথের যে কটি গান প্রতিটি বাঙালির চেতনা ধারন করা উচিৎ - আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে -এই গানটি তেমনই একটি গান।
গান:
আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে
নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে?।
আমরা যা খুশি তাই করি, তবু তাঁর খুশিতেই চরি,
আমরা নই বাঁধা নই দাসের রাজার ত্রাসের দাসত্বে
নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে?।
রাজা সবারে দেন মান, সে মান আপনি ফিরে পান,
মোদের খাটো ক’রে রাখে নি কেউ কোনো অসত্যে
নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে?
আমরা চলব আপন মতে, শেষে মিলব তাঁরি পথে,
মোরা মরব না কেউ বিফলতার বিষম আবর্তে
নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে?।
বয়ান:
মানুষের পক্ষে রাষ্ট্র না গড়ে উপায় ছিল না! মানুষ প্রথমে গড়ে গোত্র বা ট্রাইব। পরে সমাজবিকাশের অনিবার্য নিয়মে সে গোত্র ভেঙ্গে গড়ে ওঠে রাষ্ট্র। সেই সঙ্গে সেই রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য দরকার হয় একজন যোগ্য রাষ্ট্রপরিচালকের । এই রাষ্ট্রপরিচালকের নামই রাজা কি সম্রাট। যেই হোক- রাষ্ট্র কি রাজ্য হয়ে যায় তার। রাজাই হয়ে ওঠে রাষ্ট্রের কর্ণধার। সেই রাজ্যে তৈরি হয় দূরত্ব বিরোধ ও সংঘাত।
মানুষের ইতিহাস এই সাক্ষী দেয়।
কিন্তু, রবীন্দ্রনাথের কল্পিতরাজ্যে সবাই রাজা।
আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে
নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে?।
লক্ষ্য করুন, শর্ত না স্বত্ব। শব্দ দুটোয় দুস্তর পার্থক্য। শর্ত হচ্ছে নিছক ব্যবসায়িক টার্ম। এই এই করতে হবে নইলে ...। আর, স্বত্ব ? স্বত্ব যেন আপন অধিকারের মত। জিনিসটা আমার- এই রকম একটা বোধ। রাষ্ট্রের ওপর সে রকম স্বত্ব আরোপ হলেই কেবল গানটির প্রথম চরণটি সার্থকতা পায়। নইলে নয়।
আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে
আমরা সবাই রাজা -এই কথাটি বলা কিন্তু সহজ না। কেননা, রাজার রাজত্বে বাস করে নানা রঙের নানা ধর্মের নানা জাতের লোক। নানা জাতের লোক -কিন্তু সবাই অভিন্ন, মানে ভিন্ন না। ‘আমরা সবাই রাজা’-এই ঘোষনায় রবীন্দ্রনাথের সমতার প্রতি গভীর আগ্রহ আমরা টের পাই। ঋষিকবির ওপর আমাদের শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস বাড়ে।
সে যা হোক।
রবীন্দ্রনাথ এরপর তাঁর কল্পরাজ্যের নাগরিকের অধিকার-কর্তব্য ও কল্যাণরাষ্ট্রের সরুপ কেমন হওয়া উচিত সেই বর্ননাই দিয়েছেন।
আমরা যা খুশি তাই করি, তবু তাঁর খুশিতেই চরি,
আমরা নই বাঁধা নই দাসের রাজার ত্রাসের দাসত্বে
নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে?।
আমরা যা খুশি তাই করি-এই কথায় ঘোষিত হয়েছে ব্যাক্তিমানুষের স্বাধীনতা, তবে সে স্বাধীনতা কখনোই বলগাহীন নয়। কেননা, রাজার খুশি বা ইচ্ছেও আমাদের কাজকর্মে প্রতিফলিত হতে হবে। রবীন্দ্রনাথের রাজা আসলে উদার ও মানবিক ঋষিরাজা-প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক প্লেটো যে ঋষিরাজার ধারনা দিয়েছিলেন। ঋষিরাজার খুশিতে বা ইচ্ছেয় ‘চরা’ যায়। কেননা, ঋষিরাজা কল্যাণকামী। তবে, স্বাধীনতার গুরুত্বও অবহেলিত হল না। আমরা যা খুশি তাই করি, তবু তাঁর খুশিতেই চরি,- এই কথায় ব্যাক্তি আদর্শ ও রাষ্টীয় আদর্শের যথার্থ ভারসাম্য প্রতিফলিত হয়েছে।
আমরা নই বাঁধা নই দাসের রাজার ত্রাসের দাসত্বে
নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে?।
আমরা নই বাঁধা নই দাসের রাজার ত্রাসের দাসত্বে ...এই কথায় যেন সবই বলে দেওয়া হল। রাজা ঋষিরাজা বলেই দাসের রাজা নন-তিনি ত্রাসের রাজত্ব ও কায়েম করবেন না। সে কারণেই-
রাজা সবারে দেন মান, সে মান আপনি ফিরে পান,
রাজা, সবাইকে সম্মান করেন। বিনিময়ে তিনিও সম্মানিত হন। অথবা, কথাটা এভাবেও বলা যায়। রাজা তাঁর রাজ্যের প্রজাদের জীবনযাত্রার মান বাড়াতে থাকেন সদাসচেষ্ট-বিনিময়ে তারও সম্মান ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পায়। রাজা জ্ঞানী ও উদার বলেই সম্মান তার প্রাপ্য।
মোদের খাটো ক’রে রাখে নি কেউ কোনো অসত্যে
নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে?
অসত্য হল দূরত্ব। রাজা ও প্রজার দূরত্ব। যা বঞ্চনার সৃষ্টি করে। অসত্য হল দাসতন্ত্র, ত্রাসের রাজত্ব। এইরকম অসত্য আরও আছে। যেমন, দারিদ্র। রবীন্দ্রনাথ এসকল অসত্যের বিরুদ্ধে। এসব অসত্য দূর করতেই রবীন্দ্রনাথ উচ্চারণ করেছেন-
আমরা চলব আপন মতে, শেষে মিলব তাঁরি পথে,
মোরা মরব না কেউ বিফলতার বিষম আবর্তে
নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে?।
আমরা চলব আপন মতে, শেষে মিলব তাঁরি পথে,
এ চরণটি আগের একটি চরণকে মনে করিয়ে দেয়।
আমরা যা খুশি তাই করি, তবু তাঁর খুশিতেই চরি,
বিফলতার বিষম আবর্তে পড়ে ধ্বংসের মুখোমুখি না হতেই ব্যাক্তি আদর্শ ও রাষ্ট্রীয় আদর্শের এই রকম ভারসাম্য জরুরি। যে রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য সমতার ও সম্মান।
প্রথমেই আমি বলেছিলাম। রবীন্দ্রনাথ। ঋষি। ঋষি ও কবি। রবীন্দ্রনাথ ঋষিকবি। তো ঋষিরা তো প্রায় একরকম সমাজবিচ্ছিন্নই থাকেন। সে কারণেই প্রশ্ন ওঠে- রাষ্ট্র সম্পর্কে ঋষিদের কোনও মতামত গ্রাহ্য হবে কি না?
অবশ্যই হবে।
গানটির অডিও লিঙ্ক ...
Click This Link
২৪ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ৯:৩০
ইমন জুবায়ের বলেছেন: অবশ্যই দোয়া করি।
২| ২৪ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ৯:২৬
শূন্য আরণ্যক বলেছেন: দারুন বিশ্লেষন ইমন ভাই ।
অনেক অনুষ্ঠান গেয়েছি । তবে এটা নিয়ে এত চিন্তা করিনি ।
এখন মনে পড়ছে পিচ্চি কন্ঠের কোরাস ।
২৪ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ৯:৩২
ইমন জুবায়ের বলেছেন: অনেক অনুষ্ঠান গেয়েছি । তবে এটা নিয়ে এত চিন্তা করিনি ।
আসলে এমনই হয়।
রবীন্দ্রনাথ !
৩| ২৪ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ৯:২৮
অপ্সরা বলেছেন: Click This Link
এটা দেখো একটু।
গেলাম এখন।
২৪ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ৯:৩৪
ইমন জুবায়ের বলেছেন: দেখছি।
৪| ২৪ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ৯:৩১
আকাশ_পাগলা বলেছেন: ভাল লাগল । নতুন গল্প কবে পাব?
২৪ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ৯:৩৩
ইমন জুবায়ের বলেছেন: দেখি।
৫| ২৪ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ৯:৪২
নতুনের পথে অনন্ত যাত্রা বলেছেন:
গানটি কল্পিত কোন কিছু নয়। রবীন্দ্রনাথ রাশিয়া থেকে ফিরে সেখান কার অভিজ্ঞতা খেকেই গানটি লিখে ছিলেন।
২৪ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ৯:৪৬
ইমন জুবায়ের বলেছেন: কল্পিত শব্দটা লেখার জন্যই লেখা। লিখতে লিখতে চলে আসে আর কি।
ধন্যবাদ।
৬| ২৪ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ১১:১৯
মেহবুবা বলেছেন: আপনার পোষ্টগুলো সা.ইনকে সমৃদ্ধশালী করছে ।
আপনার ধৈর্য্য এবং প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই ।
২৪ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ১১:৩৫
ইমন জুবায়ের বলেছেন: প্রাণদীপ্ত মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ।
৭| ২৪ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ১১:৪৫
শেরজা তপন বলেছেন: আপনার বর্ননা সত্যিই সাবলীল ও সুন্দর.ধন্যবাদ
২৪ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ১১:৪৮
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
৮| ২৪ শে জুলাই, ২০০৯ দুপুর ১২:১৪
সুলতানা শিরীন সাজি বলেছেন:
ইমন আপনাকে আগেও বলেছিলাম........।
আপনার নানান রকম লেখা..........নানান বিষয়ে..মুগ্ধ করে।
আর আজকে যাকে নিয়ে লিখেছেন.......।
সেই তাঁকে জীবনের সবখানে পলে পলে অনুভব করি।
সকল কাজে।
সকাল সাঁঝে।
তিনি আসলেই ঋষি।
অনেক ধন্যবাদ এতসুন্দর করে ঋষি তাঁকে উপস্হাপন এর জন্য।
ভালো থাকবেন।
সবসময়।
শুভেচ্ছা
২৪ শে জুলাই, ২০০৯ দুপুর ১২:২২
ইমন জুবায়ের বলেছেন: শুভেচ্ছা
৯| ২৪ শে জুলাই, ২০০৯ দুপুর ২:৫১
দীপান্বিতা বলেছেন: খুব সুন্দর বিশ্লেষণ করেছেন......খুব ভাল লাগল ....
২৪ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৪:৩০
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
১০| ২৪ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৪:৫০
চাঙ্কু বলেছেন: ইমন ভাই @ আপনার চমৎকার বিশ্লেষনী ক্ষমতা আমি বারে বারে কোটিবার আফসুস খাই । আফসুস ।
রবিদা লোকটার চিন্তা-ভাবনা ব্যাপক বিশ্বজনীন ছিল যার গানের কথাগুলা মানুষকে সুতার মত সত্যের বন্ধনে বেঁধে ফেলে আর সুরগুলা মানুষকে মোহনীয় সুরাচ্ছন্নে অসত্যের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেয় । সুরেরও যে একটা শক্তি আছে এইটা রবিদার লেখা না পড়লে বুঝতাম না ।
লোকটার প্রেমে ডেইলি কয়েকবার করে বার বার পড়ি কিন্তু উঠতে পারি না । আফসুস
২৪ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৫:১৬
ইমন জুবায়ের বলেছেন: আফসুস না আনন্দ?
১১| ২৪ শে জুলাই, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৪৭
আকাশ অম্বর বলেছেন:
রবীন্দ্র-গাঁথা এক ধর্মীয় কাঠামো, এতই তার ব্যাপ্তি।
অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ, ইমন ভাই।
২৪ শে জুলাই, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৫৬
ইমন জুবায়ের বলেছেন: রবীন্দ্রনাথের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হোক।
১২| ২৪ শে জুলাই, ২০০৯ রাত ৯:০০
আকাশ অম্বর বলেছেন: ইমন ভাই, গল্পের অপেক্ষায় আছি।
২৪ শে জুলাই, ২০০৯ রাত ৯:০৪
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ওকে।
১৩| ২৫ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ১০:৩১
জইন বলেছেন: অসাধারণ........রবীন্দ্রনাথও তো এমনই শাসক ছিলেন
২৫ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ১১:৩৩
ইমন জুবায়ের বলেছেন: হ্যাঁ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ৯:২৬
অপ্সরা বলেছেন: রাজা সবারে দেন মান

সে মান আপনি ফিরে পান
ইমন দোয়া করো আমার জন্য, এক খানে যাচ্ছি যেন সফল হই গুরু।