![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাভার থেকে আসলাম।আমি আর আমার দুই সিনিয়র ডাক্তার জনি ভাই আর শান্তু ভাই গেছিলাম।ভয়াবহ অবস্থা।দূর থেকেই গোটা সাভারটাকে একটা হসপিটাল মনে হচ্ছিল।সেই চিরচেনা রোগীর লোকজনের বুক ফাটানো আহাজারি,আহতদের ভোঁতা আর্তনাদ,অ্যাম্বুলেন্সের চিৎকার চেঁচামেচিতে কতক্ষণ শুধু চুপ করে দেখলাম।ধাতস্থ হতে সময় লাগল।হেঁটে হেঁটে ধ্বংসস্তুপের কাছে গেলাম।শয়ে শয়ে পুলিশ,আর্মি আর সেচ্ছাসেবীরা উদ্ধারকাজে ব্যস্ত।পাথর খুদে,মাটি খুঁড়ে মৃত,অর্ধমৃত মানুষগুলোকে টেনে হিঁচড়ে বের করা হচ্ছে।কোলেকাঁধে নিয়ে গাড়িভর্তি করে এনাম মেডিক্যালের হসপিটাল চত্বরে তাদের রেখে আবার গাড়িগুলা ফিরে ফিরে আসছে।হাজার হাজার মানুষ আবার শুধু রাস্তার পাড়ে দাঁড়িয়ে গভীর মনোযোগে এসব দেখছে,অনেকে আবার ছবিও তুলে রাখছে।আমিও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আঞ্জুমান মুফিদুল,এনাম মেডিক্যাল,গণস্বাস্থ্য মেডিক্যাল এবং আরও অনেক হাইওয়ে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের কার্যক্রম দেখলাম।তারপর হাঁটতে হাঁটতে এনাম মেডিক্যাল হসপিটালের সামনে আসলাম।
সেখানেও দাঁড়ানোর মত জায়গা নেই।ধাক্কাধাক্কি করে,পরিচয় দিয়ে কোনমতে ভিতরে ঢুকলাম।ঢুকেই প্রথমে আমি আর জনি ভাই রক্ত দিতে গেলাম।এমনিতেই দুপুরে খাইনাই,প্রেশার হয়তো একটু কম ছিল,রক্ত দিয়ে উঠার সময়ই মাথাটা ঘুরে উঠল।চোখ বন্ধ করে পরে আছি,কেমন জানি একটা ঝিমঝিমানি ভাব,কি এক ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম।ঘোরের মধ্যেই অদ্ভুত কিছু জিনিস মনে হতে লাগল।
আমার কাছে মনে হতে লাগল,আগামীকাল ঈদ।আমি গেছি গাবতলির হাটে গরু কিনতে।মানুষজনের মাঝে গরু কেনার চাপা উল্লাস।হাটে গিয়ে দেখলাম পার্শ্ববর্তী ভবন ভেঙ্গে পরে গরুছাগল সব চাপা পরে আছে।ভবনটায় নাকি গতকালকেই ফাটল দেখা গিয়েছিল,কিন্তু কর্তৃপক্ষ বিশেষ পাত্তা দেয়নাই।এরা তো আর মানুষ না,এত চিন্তা করার তো কিছু নাই।মানুষ হলে একটা কথা ছিল।লোকমুখেই শুনলাম ছাগলগুলা নাকি আজ একবার ভবনের নিচে দাঁড়ানোর সময় কান্নাকাটি করছিল,গরুগুলা নাকি প্রথমে ভিতরে ঢুকতেই চায়নাই।কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক ওগুলাকে ভিতরে ঢুকানোর ব্যবস্থা করেছে।তারা তো তাদের ব্যবসার কথাই আগে চিন্তা করবে তাইনা?আর নিতান্ত গরুছাগল নিয়ে তো এত মাথা ঘামানোর কিছু নাই।মানুষ হলে অবশ্য একটা কথা ছিল।
ভাঙ্গা বিল্ডিং পাড় হয়ে হেঁটে হেঁটে পার্শ্ববর্তী হাসপাতালের সামনে আসলাম।এসে তো আমি অবাক!পুলিশ,আর্মি,সাংবাদিক,আমজনতা এরা তো থাকবেই।কিন্তু কসাইগুলা অ্যাপ্রন পরে এখানে কি করতেছে?রক্তচোষাগুলা আবার কোলে করে অ্যাম্বুলেন্স থেকে গরুছাগলগুলাকে স্ট্রেচারে নামাচ্ছে,তারপর হাঁপাতে হাঁপাতে ইমারজেন্সির ভিতর চলে যাচ্ছে।আমার ভীষণ অস্থির লাগতে লাগল।আজ বাদে কাল ঈদ।এমনিতেই বাজারে কসাই শর্ট,এইগুলা যদি এই কাজ করে তো কাল কসাই কই পাব?তোদের কাজ হল গরু কাটা,তোদের গরুসেবা করতে কে বলছে?আর যেখানে ভবনের মালিকের মাথাব্যথা নাই,আহত এবং নিহত পশুদের বাজারদরও এর মাঝেই ঠিক হয়ে গেছে তো তোদের নাপতানি করার দরকারটা কি?
এই যখন অবস্থা কে জানি মুখে পানি মেরে দৌড় দিল।তাকিয়ে দেখি বিরাট একমুখ!!!চোখ মুছে দেখি জনি ভাই হা করে তাকায়ে আছে।উঠে বসলাম।চারপাশে মানুষ গিজগিজ করছে।ইমারজেন্সিতে ঢুকলাম।তিনজন মিলে যতখানি যা পারি সাহায্য করলাম।কোন অনুভূতিই কেন জানি কাজ করছিলনা।অবশ্য করার কথাও না।এরা তো গরুছাগল না,এরা জলজ্যান্ত মানুষ।হয়তো অনেকেরই শরীরের সবটা নাই,তবুও তো এরা মানুষ।কসাই হলেও কিছুটা অনুভূতি হয়তো থেকেই যায়,তাই নয় কি?
২৫ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:১২
সাকিব-আল-নাহিয়ান বলেছেন: আমারও...
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:০২
টানিম বলেছেন: খুব খারাপ লাগছে ভাই ।