নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"তোমার জীবনের একটা বিরাট অংশ জুড়ে থাকবে তোমার কাজ, তাই জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে চমৎকার কোনো কাজ করা। আর কোনো কাজ তখনি চমৎকার হবে যখন তুমি তোমার কাজকে ভালোবাসবে। যদি এখনো তোমার ভালোবাসার কাজ খুঁজে না পাও তাহলে খুঁজতে থাকো। অন্য কোথ

সাকিব-আল-নাহিয়ান

হারিয়ে গিয়েছি এটাই শেষ খবর...

সাকিব-আল-নাহিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

জোছনাবৃষ্টি...

২৪ শে মে, ২০১৩ সকাল ৭:৫৮

কিছু বৃষ্টি আছে গায়ে পরে কি পরে না ঠিক বোঝা যায়না।শুধু মাথায় হাত দিলে কেন জানি ভেজা ভেজা লাগে।রাত ৯টার কিছু বেশি বাজে।আমি রিকশায় জিগাতলা মোড়ের জ্যামে বসে আছি।হাতে মোবাইল আর নতুন গিফট পাওয়া একটা এয়ারফোন।একটু পর পর শুধু মাথার ভেজা চুলে হাত বুলাচ্ছি।বাসা থেকে অনেকটা দূর চলে এসেছি,কিন্তু এয়ারফোনের তারের প্যাঁচ এখনও খুলতে পারিনাই।এটা অবশ্য নতুন কিছু না।ঈদের দিনের পায়জামার ফিতা আর এই গানের তারের গিট্টু আমার আজীবনের সঙ্গী।মাথাটা ঝিমঝিম করছে।পাশের গাড়িগুলো সমানে হর্ন দিয়েই যাচ্ছে।আশেপাশে কোথাও সাইড দেয়ার জায়গা নাই।তবুও তারা লাগাতার পোঁ পোঁ করেই যাচ্ছে।শব্দগুলোর মিশ্রণ শুনতে খুব খারাপ লাগছেনা।কোথায় যেন শুনেছি শুনেছি মনে হচ্ছে।সম্ভবত আইপিএলে একটু পরপরই এমন একটা শব্দ হতে থাকে।আইপিএল এর শব্দটা বিশ্রী লাগত,এটা কেন জানি বেশ ভালো লাগছে।



আমি যাচ্ছি আমার ছোট খালার বাসায়।ধানমন্ডি আট নম্বর ব্রিজ এর সাথেই তার বাসা।খালা চারদিন আগে বলেছিল উনাকে একটু দেখে যেতে,উনার নাকি শরীর খারাপ।আমি ভুলে গেছিলাম।মনে হয় কঠিন কিছুনা।নাইলে তো আবার ফোন দিত।বৃষ্টিবাদলের দিনে জ্বর টর হয়ে থাকবে হয়ত।উনার বাসা পুরোটাই এয়ার কন্ডিশন্ড।বাথরুম আর রান্নাঘর ও সম্ভবত বাকি নাই।জানালা দরজা বিশেষ খোলা হয়না।খালু অ্যামেরিকার সিটিজেন।এখন দেশেই থাকেন।উনার হাতে কোন কাজ নাই।ব্যাঙ্কে টাকা পয়সারও অসুবিধা নাই।প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার ছিলেন।এখন সিসিএস না কোন একটা ক্রিকেট ক্লাবের প্রেসিডেন্ট।উনি বাসাটায় সবসময়ই একটা অ্যামেরিকার আবহ বজায় রাখেন।কোন চ্যানেলের কোন খেলাই উনার বাদ যায়না।আমি যখনই যাই গরম কাপড় সাথে নিয়ে যাই।যারা গরম কাপড় পরেনা তারা ঠাণ্ডা জ্বরের উপরই থাকে।খালাও তার ব্যতিক্রম না।তার জ্বর ৫ দিনের কম কখনই থাকেনা।আমিও সেই আশা নিয়েই যাচ্ছি।একদিন অন্তত জ্বরের দেখা পাব।



জ্যাম পার হয়ে রিকশা হু হু করে ছুটছে।বৃষ্টির বেগ বেড়ে গেছে।আমার ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে।আমি কান থেকে তার খুলে ফেলে আশেপাশের ঝাপসা দৃশ্য দেখে বেড়াচ্ছি।কয়েক জোড়া উঠতি বয়স্ক ছেলে মেয়ে রিকশার হুড তুলে,প্ল্যাস্টিকের পর্দা কেন জানি রিকশার ছাদ পর্যন্ত তুলে দিছে।নিচের দিকে পর্দার কমতিতে তাদের জোড়া লাগানো পা গুলো একটু পরপরই ভিজে যাচ্ছে।তবু তাদের ভ্রুক্ষেপ নাই।আমি হুড তুলিনাই।এই বৃষ্টিতে হুড তুলবে শুধু উঠতি প্রেমিকেরা,নিতান্তই অপারগ মানুষেরা।বাকিদের হুড তোলার নিয়ম নাই।রিকশা ইউ ল্যাবের সামনে এসে আবার জ্যামে পরল।রাস্তার পাশের এক চা দোকান আধবোজা হয়ে তাকিয়ে আছে।রিকশাওয়ালা কে পাঁচটাকা বাড়তি দিয়ে বিদায় করে চা দোকানে নামলাম।দোকানদার বয়স্ক মানুষ,তবে রসিক কিসিমের।ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে।চা ওয়ালা ফ্লাস্ক থেকে চা ঢালতে ঢালতে একগাল হেসে আমাকে জিজ্ঞেস করল,



"বাইজান কি নয়া পিরিতে মজিছেন নি?"



ঝুমবৃষ্টিতে বেশি কথা বলা নিষেধ।আমি কোন জবাব দিলাম না।ছাউনির ভিতর ঘেঁষে একটা সিগারেট ধরালাম।সিগারেট ভিজে যাচ্ছে,চায়ের কাপে টুপটাপ বৃষ্টি পরছে।আমি রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছি।জ্যামের মাঝে আবছা করে আমার রিকশাটিকে দেখতে পেলাম।রিকশার নিচে গ্রামের রিকশার মত হারিকেন।অবাক ব্যাপার!শহরে তো এমন দেখা যায়না!!আমি কবিতা লিখিনা।কবিতা খুব বেশি পছন্দ করে পড়াও হয়না।আমার মাথায় একগাদা কবিতা ঘুর ঘুর করতে লাগলঃ



...দূরে কোথাও,বৃষ্টিভেজার নেশায়,শহুরে রিকশায় নাচে গ্রাম্য হারিকেন।

...রাতের আঁধারচেরা নিস্তেজ আলোয় বর্ষার ধোঁয়া ওঠা নির্জন অলিগলিতে,পলিথিনের চাদরে বাঁধহীন উল্লাস।



...পথের পাশের কোণভাঙ্গা কাপের চা,অসহ্য আলোর চিৎকারে হঠাৎ কেঁপে ওঠা।

...ইলেকট্রিক তারের জঞ্জাল চোঁয়ানো পানির তামাটে স্বাদ,আধভেজা তামাকের মাতাল গন্ধে দুলে উঠে চৌরাস্তার ধাতব ব্যারিকেড।



...জোছনালালিত বৃষ্টিবিলাসী নাগরিক রাতের দাপুটে হাওয়ার কাছে সকল আবেগ করি নিমিষেই সমর্পণ।...




আমার অনেক দিনের শখ জোছনা আর বৃষ্টি একসাথে দেখব।আজ জোছনাবৃষ্টি।আমি বাসার পথে হাঁটছি।আকাশের দিকে তাকানো যাচ্ছেনা।চোখ ভরে যাচ্ছে।ভিজছি আর চিন্তা করছি,কেউ যদি আমাকে বলে,



-ভাই জোছনা বেশি পছন্দ করেন নাকি বৃষ্টি?

-আমি বলব জোছনামাখা বৃষ্টি।

-কিন্তু ভাই কালো মেঘে জোছনাটা আপনি কই পাবেন?

-চাঁদবৃষ্টির রাতে চোখ বন্ধ করে হা করে জিহ্বা বের করে থাকবেন,জিহবায় টুপটাপ বৃষ্টি পড়বে...জোছনা না থাকলেও ঠিকই জোছনা জোছনা স্বাদ পাবেন.......




আমার জোছনাবৃষ্টি দেখা হল না।ফুটপাতের পাশ দিয়ে এক বখাটে বাবার বড়লোক ছেলে শাঁই করে গাড়ি টান দিয়ে চলে গেল।কাদামাখা,নোংরা পানিতে মাখামাখি হয়ে গেলাম।বৃষ্টিও কেন জানিনা হুট করেই থেমে গেল।কাকভেজা হয়ে বাড়ি ফিরলাম।ঠিক কাক না।একবার আমি এক বিড়ালের উপর নীল প্ল্যাস্টিকের মগ ভর্তি পানি মেরেছিলাম।পানি মারা খেয়ে হতভম্ব বিড়ালটাকে যে এতটা বিদঘুটে দেখাবে তা জানলে আমি হয়ত মারতাম না।প্রকৃতি ইচ্ছা বা অনিচ্ছা যেভাবেই হোক তার শোধ ঠিকই তুলে নেয়।আমি বেড়ালভেজা হয়ে বাড়ি ফিরলাম।হঠাৎ কানে জোছনাবৃষ্টির শব্দ শুনতে পেলাম।তাদের রিনঝিন হাসিতে সিঁড়িঘর বেজে উঠল।আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত লিফট বাদ দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগলাম।মুষলধারে হাসি পরছে,আমি পা টিপে টিপে উঠে যাচ্ছি।তিনতলার মোড় ঘুরতেই দেখলাম দুই উঠতি যুবতী ভিজে একদম চুপচুপে হয়ে উপর থেকে নামছে।আমাকে দেখেই তাদের জোছনাবৃষ্টি চুপ করে গেল।আমাদের মাঝে একগ্রাস নিরবতা।শুধু কয়েকটুকরো ভেজা চুড়ির টুংটাং কাঁচের শব্দ।ভেজা চোখে ভেজা চোখ দেখে যাচ্ছি।হঠাৎ কাঁচ,বৃষ্টি,জোছনা সবকিছু ছাপিয়ে তারা ঝমঝমিয়ে হেসে উঠল।হাসতে হাসতে আমাকে পাশ কাটিয়ে দৌড়ে নিচে নেমে গেল।আমি দাঁড়িয়ে থেকে অনেকক্ষণ ঝমঝমানি শুনে গেলাম।



বাসায় ঢুকলাম।আম্মা মনে হয় ভুত দেখল।বাথরুমের আয়নার সামনে দাঁড়ালাম।ঝমঝমানির উৎস খুঁজে পেলাম।বড়লোক আর বখাটে দুজনকেই পিটাতে ইচ্ছা করল।গোসল শেষে আম্মাকে জিজ্ঞেস করলাম,



-ইয়ে,মানে আম্মা,আজকে এত রাতে ছাদ তালা মারা হয়নাই যে?কেউ কি এসেছিল?



-হ্যাঁ।ওই যে সিদ্দিক সাহেবের দুই জমজ মেয়ে।কি যেন নাম!আহা...নামই তো মনে আসছেনা!



-কই আগে তো দেখিনাই!



-তুই বাসায় থাকিস কতক্ষন?



-তাও কথা।যাই হোক।খাবার দাও খিদা লাগছে।




আম্মা রান্নাঘরে।ভাত বাড়ছে।আমি টিভিতে কি জানি দেখছি।আম্মার গলা শুনতে পেলাম।টিভির সাউন্ড কমিয়ে দিলাম।স্পষ্ট শুনতে পেলাম আম্মা বলছে,



-ও হ্যাঁ।সিদ্দিক সাহেবের দুই জমজ মেয়ের কথা বললাম না?ওরা না খুব ভালোরে।দেখতে যা মিষ্টি!আর নামগুলোও কি সুন্দর।........জোছনা আর বৃষ্টি!!!.......

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মে, ২০১৩ সকাল ৮:২১

একাকী বাংলাদেশি বলেছেন: হুমায়ুন আহ্‌মেদ কি আপনার প্রিয় লেখক?

২৪ শে মে, ২০১৩ সকাল ৮:২৪

সাকিব-আল-নাহিয়ান বলেছেন: অনেক বেশি প্রিয়...

২| ২৪ শে মে, ২০১৩ সকাল ৯:১৩

এহসান সাবির বলেছেন: চমৎকার লাগলোরে ভাই।

২৪ শে মে, ২০১৩ সকাল ৯:২৫

সাকিব-আল-নাহিয়ান বলেছেন: আপনাকেও চমৎকার লাগলো...

৩| ২৪ শে মে, ২০১৩ সকাল ৯:৪৫

শামসুন বলেছেন: চাঁদবৃষ্টির রাতে চোখ বন্ধ করে হা করে জিহ্বা বের করে থাকবেন,জিহবায় টুপটাপ বৃষ্টি পড়বে...জোছনা না থাকলেও ঠিকই জোছনা জোছনা স্বাদ পাবেন...... আমার মনে হলো হুমায়ূন আহমেদ পড়ছি।পড়ে ভালো লাগলো।

২৪ শে মে, ২০১৩ সকাল ৯:৪৬

সাকিব-আল-নাহিয়ান বলেছেন: আমারও অনেক ভালো লাগল...

৪| ২৪ শে মে, ২০১৩ সকাল ১০:১৭

খেয়া ঘাট বলেছেন: গল্পটা পড়ে বেশী ভালোও লাগেনি,আবার খারাপ ও লাগেনি।
তবে একটানে পড়ে শেষ করলাম.........
আর পড়তে পড়তে কখন যে শেষ হয়ে গেলো তাও বুঝতে পারিনি।

২৫ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৪

সাকিব-আল-নাহিয়ান বলেছেন: আমিও লিখতে লিখতে বুঝিই নাই কখন শেষ হয়ে গেল...

৫| ২৪ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৪

জ্যোস্নার ফুল বলেছেন: ভালো লিখেন, তবে লেখাটা আর ইন্সপায়ারশনাল পর্যায়ে নেই। নকল ভাব স্পষ্ট। লেখায় স্বক্বীয়তা থাকলে আরো ভালো লাগবে।

২৫ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৬

সাকিব-আল-নাহিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ।আপনার কথা মনে থাকল...

৬| ২৪ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১:৪১

শব্দহীন জোছনা বলেছেন:



ভাই জোছনা বেশি পছন্দ করেন নাকি বৃষ্টি?
-আমি বলব জোছনামাখা বৃষ্টি।




+

২৫ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৭

সাকিব-আল-নাহিয়ান বলেছেন: :)

৭| ২৪ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১:৪৫

বাংলার হাসান বলেছেন: অসাধারন।

২৫ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৮

সাকিব-আল-নাহিয়ান বলেছেন: আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ...

৮| ২৬ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:৫০

মেহেরুন বলেছেন: "আমার অনেক দিনের শখ জোছনা আর বৃষ্টি একসাথে দেখব।আজ জোছনাবৃষ্টি।"

চমৎকার লাগলো বেয়াই সাহেব। অসাধারন। কেমন আছেন???

২৬ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৫:৪০

সাকিব-আল-নাহিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ বেয়াইন...আমি ভাল।আপনার খবর কি?

৯| ৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ১২:২৬

ইনকগনিটো বলেছেন: আহ! মুগ্ধতা!

১৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ১:১৬

সাকিব-আল-নাহিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ...

১০| ৩০ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৭

মায়াবতী নীলকন্ঠি বলেছেন: ভাল লাগলো

১৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ১:১৬

সাকিব-আল-নাহিয়ান বলেছেন: আমারও...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.