নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"তোমার জীবনের একটা বিরাট অংশ জুড়ে থাকবে তোমার কাজ, তাই জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে চমৎকার কোনো কাজ করা। আর কোনো কাজ তখনি চমৎকার হবে যখন তুমি তোমার কাজকে ভালোবাসবে। যদি এখনো তোমার ভালোবাসার কাজ খুঁজে না পাও তাহলে খুঁজতে থাকো। অন্য কোথ

সাকিব-আল-নাহিয়ান

হারিয়ে গিয়েছি এটাই শেষ খবর...

সাকিব-আল-নাহিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বড়

০৭ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৪

সময় ১৯৯৮ সাল। সবে ক্লাস এইটে উঠেছি। এই বয়সী ছেলে মেয়েরা হঠাৎ করেই বড় হয়। বড়রা তাদেরকে বড় মনে করেনা। তারা অবশ্য ততদিনে বড়দেরকে অবুঝ এবং নিজেদেরকে সবচাইতে বুঝ হিসেবে ভাবা শুরু করে দেয়।



এলাকায় আমার সমবয়সী কোন বন্ধু ছিলনা। যারা ছিল সবাই আমার থেকে দুই ক্লাস সিনিয়র। সমবয়েসীদের সাথে তাই আমার কখনই জমত না। রাতারাতি তাই তথাকথিত বড়দের মাঝের বড় হয়ে উঠতে আমার বেশি সময়ও লাগল না।



কিছুদিন পরের কথা। ৯৮'এর সর্বগ্রাসী বন্যা তখন চারপাশ ভাসিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু আমার মনে তখন একটাই চিন্তা,



"হায় হায়, আমিতো বিশাল বড় হইয়া গেছি !!! এখন বড় হওয়ার প্রমান দিতে হইবেক।"



প্রমাণস্বরূপ বাসা থেকে অনেকখানি দূরে সেই শিকদার মেডিক্যালের সামনে নৌকায় বসে বন্ধুরা মিলে সিগারেট টানা শুরু করলাম। মেডিক্যালের নিচতলা তখন পানির নিচে ছিল। কি ভয়ানক অথচ চেয়ে দেখার মত একটা দৃশ্য! নৌকায় শুয়ে সুখটান দিতে দিতে আমরা ভেসে বেড়াতাম। উপরে আকাশ, নিচে পানি, মাঝখানে আমরা এবং আমাদের সেইসব বড় বড় স্বপ্ন ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় পাক দিয়ে উড়ে বেড়াত। যাই হোক, বড় হওয়ার কিছুদিনের মাঝেই মার কাছে ধরা খেলাম এবং আগের চাইতে আরও ছোট হয়ে গেলাম। ঝামেলা এড়াতে সিগারেট টানার পর 'পোলো' খাওয়া শুরু করলাম এবং মার মৃদু ভৎর্সনার হাত থেকে রেহাই পেলাম।



এক শুক্রবারের কথা। জুম্মার নামাজের পর পর বড় হয়ে বাসায় ফিরতেছি। গলির মুখে এসে পকেটে হাত দিয়ে দেখি একটাও 'পোলো' নাই। নাই তো নাইই। আশে পাশের একটা দোকানও খোলা নাই। কি করি? নগদে পাশের বাসার দেয়ালে উঠলাম। লেবু গাছের পাতা ছিঁড়লাম। পাতা চটকায়ে হাতে মুখে মেখে বাসায় ফিরলাম। সারা গায়ে তখন আমার কি রোমান্টিক লেবু লেবু গন্ধ!



আম্মা আসলো। চুল ধরলো। অতঃপর চিল্লাইলো,



"সাকিবের আব্বা !!!

দেইখা যাও !!!

তোমার ছেলে সিগারেট বাদ দিয়া স্পিরিট (অ্যালকোহল) ধরসেএএএএএ !!!"





সেদিন তুমুল ভৎর্সনার সম্মুক্ষীন হয়েছিলাম। :(



তারপরের বছর দুই একদম ছোট হয়ে গেলাম। আমার তখন সবকিছুতেই অগাধ বিশ্বাস। মনিষীদের বিভিন্ন বাণী এই যেমন,



"মাইরের উপর ঔষধ নাই।"



এই বাণীটির ব্যাপারে আমার তখন চরম ভক্তি। ভক্তি থাকতে থাকতেই ক্লাসে টেন শেষ হয়ে গেল। অতঃপর যা হওয়ার তাই হল। /:)



২০০১ সাল। এস.এস.সি পাশ করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়েছি। কেমিস্ট্রি প্রাইভেট পড়ি গাজী আহসানুল কবীর স্যারের কাছে। যে ব্যাচে পড়তাম সেটা ছিল একটা অসাধারণ ব্যাচ। :D ভিকারুন্নিসার মেয়েই ছিল বেশি। বাকি কয়েকজন হলিক্রস এর। ছেলেদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন ঢাকা কলেজের। বাকিরা নটরডেম এর।



স্যার ক্লাস নিত সকাল ৬ টায়। সকাল ৬ টা মানে সকাল ৬টাই । ৫ মিনিট দেরি তো সব শেষ। এ ব্যাপারে স্যারের খুব পছন্দের একটা বাণী ছিলঃ



"সাকিব !!! ইউ হ্যাভ বিন ড্রপড ।"



আমার নাম বললাম কারণ আমারে স্যার তিনবার বের করে দিছিল। সাধারণত স্যার একবার বের করে দিলে মরে গেলেও আর নিতনা। আমারে প্রতিবারই কেন ফেরত নিত কে জানে। সেইজন্যই হয়ত ত্রিশজনের ব্যাচের শেষপর্যন্ত টিকে যাওয়া কয়েকজনের মধ্যে আমি ছিলাম একজন!



আজকে আর স্যারের প্রসঙ্গে যাবনা। স্যারের কাহিনী লিখতে গেলে একমাস টানা লেখা যাবে। আমার কাহিনীটা বলেই আজ শেষ করব।



কবীর স্যার ছাড়াও ফিজিক্স পড়তাম রানা চৌধুরী স্যারের কাছে, আর ম্যাথ পড়তাম এইমস কোচিং এর এহসান স্যারের কাছে। এই তিনজন স্যারের সম্মানীই ছিল ৭০০ টাকা করে। বাসা থেকে মাসের শুরুতেই টাকা পেয়ে যেতাম। তিন স্যারকে ২১০০ দিয়ে আমার পকেটে থাকত ৯০০ টাকা!



বয়সটাই আসলে ছিল ওইরকম। তেজী ম্যান। বান্ধবী না থাকলে কেমনে হয়? আমারও ছিল। কিন্তু বান্ধবী বাবদ আলাদা পকেট খরচ দেয়ার ইচ্ছা আমার বাবা মার ছিলনা। সবদিকে শান্তি বজায় রাখা উত্তম। শান্তিচুক্তি বাবদ স্যারদের বেতন বাসায় বলা হয়েছিল একহাজার করে। মাস শেষে পকেটে কড়কড়া ৯০০ টাকা! সেই আমলে দুই তিনটা ডেইট সুন্দর মত চলে যেত।



ইডেন কলেজে চাকরীর সুবাদে কবীর স্যার আর আমার মা ছিল কলিগ। তো একদিন ক্লাস শেষ। রুম থেকে বের হচ্ছি, তাকায়ে দেখি আম্মা আসছে। সবাই যাওয়ার পর আম্মা আর স্যার কথা বলা শুরু করল। বেশিরভাগ আমার পড়ালেখা সংক্রান্ত কথাবার্তা। মাসের সেদিন দুই তারিখ। হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আম্মা ব্যাগ খুলে স্যারকে বেতনের একহাজার টাকা দিল। স্যারও একগাল হেসে ৩০০ টাকা ফেরত দিল। আম্মা চুপ। আমি তো প্রথম থেকেই চুপ। চুপচাপ অবস্থায় বাসায় ফিরলাম।



বাসায় এসেই শুরু হইল গালি,



" এই বয়সে বাটপারি শিখে গেছস ? আইজকা তোর একদিন কি আমার একদিন । দাঁড়া তোর আব্বা আইসা নেক আজকে !"



আমি আর কি বলব। বলে দিলাম,



"আসলে হইসে কি আম্মা, আমি না স্যারকে বরাবরই খামের মধ্যে টাকা দিতাম । স্যার তো খাম না খুলেই পকেটে ঢুকায়ে রাখত । আমি তো এর কিছু জানিই না !



-হায় হায় ! কি বলস ? তার চাইতে তুই নিলেও তো ভাল লাগত !!



-আরে আমিই তো নিচ্ছি ।



-মানে ?



-মানে ঘটনার সকল দায়ভার আমিই নিচ্ছি !



-ঠিক আছে, ঠিক আছে, এখন যা । নাস্তা খেয়ে কলেজে যা।



সুদীর্ঘ একবছর ভয়ে ছিলাম যে আম্মা না আবার বাকি দুই স্যারের কাছেও যায়। কি জানি কেন যেন আম্মা আর তাদের কাছে যায়নাই। হয়ত অভাবী ছেলের বিবাগী দুঃখের কথাটা বুঝতে পেরেছিল। ধুপ করে গরীব হয়ে গেছিলাম। রাস্তায় দাঁড়ায়ে ধূলামাখা ফুচকা খেতাম। কিন্তু জীবনটা আসলেই বেশ ছিল! B-)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:৫৭

এহসান সাবির বলেছেন: ঈদের শুভেচ্ছা রইল।

২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:১১

সাকিব-আল-নাহিয়ান বলেছেন: আপনাকেও...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.