![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কোরআন শিখা এবং শিখানোর প্রতি উৎসাহ প্রদান
(১)সায়াদ বিন উবাইদা তিনি আবু আবদুর রহমান থেকে তিনি হযরত উসমান ইবনে আফ্ফান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যাক্তি যিনি কুরআন শরীফ শিক্ষা করেন এবং অন্যকে শিক্ষা দেন । আবু আবদুর রহমান, উসমান(রাঃ)র শাসন কাল থেকে হাজ্জাজের যুগ পর্যন্ত (কুরআন) শিক্ষা দেন ।তিনি (আবু আবদুর রহমান)বলেন উক্ত হাদীস আমাকে (কুরআন শিক্ষা দেয়ার)এই আসনে বসিয়েছে ।
(সহীহ বুখারীঃহাদীস নং ৫০২৭, সুনানে আবু দাউদঃ হাদীস নং ১৪৫২, সুনানে তিরমিযীঃ হাদীস নং ২৯০৭, সুনানে কুবরা নাসায়ীরঃ হাদীস নং ৮০৩৭,মুসনাদে আহমাদঃ হাদীস নং )
(২)আনাস বিন মালেক (রাঃ)বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যাক্তি সর্বোত্তম যে কুরআন শিখে এবং অন্যকে শিখায় ।
(৪) সাহল ইবনে সায়াদ আস সায়েদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা জনৈকা মহিলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললঃহে আল্লাহর রাসুল ! আমি আমার জীবনকে আপনার জন্য দান করতে এসেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকিয়ে আপাদমস্তক অবলোকন করে মাথা নিচু করলেন মহিলাটি যখন দেখল যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন ফয়সালা দিচ্ছেন না তখন সে বসে পড়ল। এমতাবস্থায়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের একজন বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! যদি আপনার কোন প্রয়োজন না থাকে, তবে এ মহিলাটির সাথে আমার শাদী দিয়ে দিন । তিনি বললেন, তোমার কাছে কি কিছু আছে? সে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আল্লাহর কসম কিছুই নেই । তিনি বললেন, তুমি তোমার পরিবার-পরিজনদের কাছে ফিরে যাও এবং দেখ কিছু পাও কি-না! এরপর সাহাবী চলে গেলেন এবং ফিরে এসে বললেন, আল্লাহর কসম, আমি কিছুই পেলাম না । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দেখ একটি লোহার আংটি হলেও! তারপর তিনি চলে গেলেন এবং ফিরে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কসম, একটি লোহার আংটিও পেলাম না কিন্তু এই যে আমার তহবন্দ(লুঙ্গী) আছে (হযরত সাহাল (রাঃ) বলেন, তার কোন চাঁদর ছিল না) আমার তহবন্দের অর্ধেক তাকে দিতে পারি । এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ তহবন্দ দিয়ে কি হবে? যদি তুমি পরিধান কর, তাহলে মহিলাটির কোন আচ্ছাদন থাকবে না ।আর যদি সে পরিধান করে, তোমার কোন আবরণ থাকবে না ।সাহাবী বসে পড়লেন, অবশেষে যখন মজলিশ দীর্ঘায়িত হল তিনি উঠে দাঁড়ালেন ।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ফিরে যেতে দেখে ডেকে আনালেন । যখন তিনি ফিরে আসলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার কুরআনের কতটুকু মুখস্থ আছে? তিনি বললেন, অমুক অমুক সূরা মুখস্থ আছে । (সূরার সংখ্যা উল্লেখ করতে থাকলেন) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এ সকল সূরা মুখস্থ তেলাওয়াত করতে পার? তিনি উত্তরে হ্যাঁ বললেন ! তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যাও তুমি যে পরিমান কুরআন মুখস্থ রেখেছ, উহার বিনিময়ে এ মহিলাটিকে তোমার সঙ্গে বিবাহ দিলাম।
অন্য রেওয়ায়তে আছেঃ যাও এ মহিলাটিকে তোমার সঙ্গে বিবাহ দিলাম,সুতরাং তাঁকে কুরআন শিক্ষা দাও !
(সহীহ বুখারীঃহাদীস নং৫০৩০, ৫১২১, সহীহ মুসলিমঃহাদীস নং১৪২৫, সুনানে আবু দাউদঃ হাদীস নং২১১১ ।
(৫)আবু হুরাইরাহ (রাঃ)থেকে অনুরূপ ঘটনা বর্নিত আছে কিন্তূ তিনি তহবন্দ ও আংটির কথা উল্লেখ করেননি । তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কুরআনের কতটুকু মুখস্থ আছে? সাহাবী বললেন , সূরা বাকারা অথবা তার পরবর্তিটি ,তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যাও এ মহিলা তোমার স্ত্রী, তাকে কুড়িটি আয়াত শিক্ষা দিবে ।
(সুনানে আবু দাউদঃ হাদীস নং ২১১২, সুনানে কুবরা নাসায়ীরঃ হাদীস নং৫৫০৬)
মসজিদে কোরআন শরীফ পড়ার ফজিলত
ওকবা ইবনে আমের (রাঃ)থেকে বর্নিতঃ তিনি বলেন , আমরা সূফফাতে (মসজিদে নববী সংলগ্ন ছায়াঘেরা স্থান)অবস্থান কালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে বললেন,তোমাদের কার পছন্দ দৈনিক প্রত্যূষে বাতহান অথবা আকীকে গিয়ে উঁচু কূঁজ বিশিষ্ট দুইটি উট নিয়ে আসবে কোন পাপ ও সম্পর্ক ছেদ করা ব্যতীত ?আমরা বললাম হে আল্লাহর রাসুল আমরা সবাই তা পছন্দ করি । তিনি বললেন তোমাদের কেউ সকালে মসজিদে গমন করবে আল্লাহর কিতাবের দুটি আয়াত শিক্ষা দেওয়া অথবা পড়ার উদ্দেশ্যে ইহা তার জন্য উপরোক্ত দুটি উট থেকে উত্তম , আর তিনটি আয়াত তিনটি উট থেকে , চারটি আয়াত চারটি উট থেকে উত্তম ,আয়াতের সংখ্যা অনুপাতে উটের সংখ্যা হবে ।
(সহীহ মুসলিমঃহাদীস নং৮০৩ , তবারানীঃ আল মূজামুল কাবীর হাদিস নং ৭৯৯ )
(৭) আবু হুরাইরা (রাঃ)বলেন ,রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন কোরআন শিক্ষা কর, ( তাহাজ্জুদে )পড় এবং ঘূমাও । কেননা কোরআন যে ব্যক্তি শিখে এবং কিয়ামুল-লাইলে (তাহাজ্জুদে)তেলাওয়াত করে তার উদাহরণ ঐ সুগন্ধি ভর্তি(খোলা) থলির ন্যায় যার খুশবু সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে, আর যে ব্যক্তি তা শিক্ষা করে অন্তরে রেখে ঘুমিয়ে থাকে তার উদাহরণ হল মুখ বন্ধ থলির ন্যায় যার ভিতরে সুগন্ধি ।
আহলে কোরআনগণ আল্লাহর প্রিয় ও বিশেষ ব্যক্তি
(১০)আনাছ বিন মালেক (রাঃ)বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষের মধ্যে কিছুলোক আল্লাহর আহাল অর্থাৎ অনেক প্রিয়, সাহাবারা (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন হে আল্লার রাসুল!তারা কারা? তিনি বলেন, আহলে কোরআনগণ (যারা কোরআন শিক্ষা করে এবং সে অনুযায়ী আমল করে )আল্লাহর আহাল এবং বিশেষ ব্যক্তি ।
সাহেবে কোরআনের প্রতি ঈর্ষা করা
(১১) বিন আব্দুল্লাহ উমর (রাঃ)বলেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি , দুই ব্যক্তির ক্ষেত্রেই ঈর্ষা করা যায় ,(এক)আল্লাহ যাকে কিতাবের (কোরআনের) ইলম দিয়েছেন এবং সে তা নিয়ে রাত্রিকালে দণ্ডায়মান থাকে অর্থাৎ কিয়ামুল-লাইল করে। (দুই) আল্লাহ যাকে সম্পদ দিয়েছেন সে তা রাতে ও দিনে দান করে ।
(১২) আবু হুরাইরা (রাঃ)বলেন ,রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন দুই ব্যক্তির ক্ষেত্রেই ঈর্ষা করা যায় , (এক)আল্লাহ যাকে কোরআন শিক্ষার তওফিক দিয়েছেন সে তা রাত-দিন তেলাওয়াত করে ।তার প্রতিবেশী শুনে বলে, হায় !যদি তার মত আমাকে উহা দেয়া হইতো তাহলে সে যে রূপ আমল করে আমিও তদ্রূপ করতাম।
(দুই) আল্লাহ যাকে সম্পদ দিয়েছেন সে তা হক পথে ব্যায় করে , কোন ব্যক্তি তা (দেখে) বলে হায় !যদি তার মত আমাকে উহা দেয়া হইতো তাহলে সে যে রূপ করে আমিও তদ্রূপ করতাম।
কোরআন পড়ার সওয়াব
(১৩) আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ(রাঃ)বলেন ,রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের (কোরআনের)একটি অক্ষর পড়বে তার জন্য একটি নেকী রয়েছে আর এক নেকী দশ নেকীর সমতুল্য ,আমি বলবোনা যে ,আলিফ-লাম-মিম ,এক অক্ষর,বরং আলিফ একটি অক্ষর,লাম একটি অক্ষর , মিম একটি অক্ষর ।
(১৪) আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ(রাঃ)বলেন, তোমরা কোরআন শিক্ষা কর, এবং উহা তেলাওয়াত কর ,নিশ্চয়ই তোমরা উহার প্রতি অক্ষরে দশ নেকী পাবে, আমি বলবোনা যে,আলিফ লাম মীম (এক সাথে)বরং আলিফ এবং লাম এবং মীম (আলাদা-আলাদা) ।
অন্য রেওয়ায়তে আছেঃ তিনি বলেছেনঃ আলিফ এবং লাম এবং মীম ত্রিশ নেকী ।
(১৬) আব্দুল্লাহ বিন আব্বাছ(রাঃ)বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,যার কলবে কোরআনের কোন অংশ নাই ,সে যেন বিরান ঘরের মত ।
(১৭) আবু সাঈদ খুদরী(রাঃ)বলেন ,রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,আল্লাহ তায়ালা বলেন , যাকে কোরআন এবং আমার জিকির আমার কাছে চাওয়া থেকে বিরত রাখে আমি তাকে প্রার্থনা কারীদের যা দেওয়া হয় তার থেকে বেশী বা উত্তম দান করব,আর আল্লাহর বানীর মর্যাদা অন্যসব কথার উপর এমন , আল্লাহর মর্যাদা সমস্ত সৃষ্টি জীবের উপর যেমন ।
(১৮) আবু মুসা আসয়ারী(রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ,রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কোরআনের হেফাজত কর অর্থাৎ বেশী বেশী পড় , যার হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ; উট যেমন দড়ি-ছাড়া হতে চায় তার থেকেও বেশী (অন্তর)থেকে তা বের হয়ে যায় ।
(১৯) বিন আব্দুল্লাহ উমর (রাঃ)থেকে বর্নিত , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোরআন হেফজ কারী ,দড়ি-বাঁধা উটের মালিকের মত যদি তার হেফাজত করে তাহলে আটকে রাখতে পারে, আর যদি ছেড়ে দেয় পালিয়ে যায় ।(মুসলিম শরীফের রেওয়ায়াতে আরো যোগ করা হয়েছে ,যদি কোরআন হেফজ কারী রাত-দিন তা পড়ে তাহলে স্মরণ রাখতে পারবে ।আর যদি তা না করে ভুলে যাবে ।
(২০) উকবা বিন আমের(রাঃ)বলেন , আমরা মসজিদে বসে কোরআন পড়তে ছিলাম এ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম দিয়ে প্রবেশ করলেন , আমরা সালামের জবাব দিলাম। অতঃপর আমাদের কে বললেন আল্লাহর কিতাব শিক্ষা কর এবং অন্য কিছুকে তার উপর প্রাধান্য দিওনা ।
©somewhere in net ltd.