নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বোকা জাদুকর

বোকা জাদুকর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভয়

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:০৭

আমি যখন খুব বেশি সুখী হই কিম্বা খুব বেশি কষ্ট পাই তখন আমি ঘুমাতে পারিনা। আমার বয়স যখন সাত কি আট তখন আমাদের পাশের বাসার সাদা বিড়ালটা হারিয়ে যায়। আমি কখনো ভয়ে ওকে ছুঁঁতে পারিনি কিন্তু ও হারিয়ে যাবার পর আবিষ্কার করলাম আমার ছোট্ট অবুঝ মনে ঐ সাদা জিনিসটার জন্য বেশ বড় ধরনের মায়া ছিলো। আমি সারারাত উপুড় হয়ে শুয়ে কাঁদছিলাম আর কান পেতে ছিলাম যদি হঠাত শোনা যায়, 'মিয়াও! মিইইইয়াও'। কক্ষনো শুনিনি আর।

এখন রাত দুটো । আমি ঘুমাতে পারছিনা।

কারণ আজ আমি পৃথিবীর শ্রেষ্টতম সুখী মানুষগুলোর একজন। আমার সমস্ত শরীর আর মন অদম্য সুখের শিহরণে টগবগ করছে। আগে কক্ষণো এমনটা হয়নি। কক্ষণো না। কারণ এতোটা সুখী আমি কখনো ছিলাম না।

যখন আমার তোলা দশটা ছবি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে যায় কিম্বা আমার বানানো ছবি জাতীয় পুরস্কার পায় এমনকি যেদিন আমি উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী শিল্পীর খেতাব পাই সেদিন ও এমন অদ্ভুত-অদম্য সুখের কানাকড়িও অনুভব করিনি।
আজ এত তীব্র সুখের অনুভব উপেক্ষা করে আমি দু চোখের পাতা এক করতেই পারছিনা। ঘরের হালকা সবুজ ডিমলাইটটার দিকে তাকিয়ে টানা তিনটা ঘন্টা পার করে দিয়েছি।

আমার পাশে অঘোরে ঘুমাচ্ছে আমার সুখের কারণ 'নন্দিনী'।
সাতটা বছর লুকোচুরির পর অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, অনেকের সাথে লড়াই করে আজ আমি নন্দিনীর পাশে।
একটা কাগজে মাত্র দুটো সই'য়ের জন্য এতো কিছু। কি অদ্ভুত নিয়ম। এখানে মানুষ খুন করতে কারো অনুমতি নেবার প্রয়োজন নেই, কিন্তু কাউকে ভালোবাসতে হলে সবার অনুমতি নিয়ে একটা সীমারেখার মধ্যে দমবন্ধ হয়ে মরতে মরতে ভালবাসার চেষ্টা করতে হবে।

নন্দিনীর ফর্সা গোল মুখটা যেনো ঘুমের মধ্যেও হাসছে।
আচ্ছা ওকে একটু ছুঁয়ে দেখি!
আমি যখন ইচ্ছে তখন ওকে ছুঁতে পারি।
যখন ইচ্ছে ওর চুল নিয়ে খেলতে পারি।
ইচ্ছে করলেই টুক করে ওর কপালে চুমু খেতে পারি।
যখন ইচ্ছে ওর পাশে ঘুমাতে পারি।

আমি চাইলেই ওকে এক্ষুণি আলতো করে ছুঁতে পারি। ও আমার এতো কাছে!
ওর শরীরের উষ্ণতা আমি অনুভব করছি।
ওর গায়ের মিষ্টি ঘ্রাণ আমার নাকে সুড়সুড়ি দিচ্ছে।
ওর নিঃশ্বাসের ছন্দ আমার চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে।
আমি ওর এতটা কাছে!

এতো বছর পর শেষমেষ আমার রাণী আমার রাজ্যে, আমি বুঝি ওকে একটু ছুঁয়েও দেখবো না!
পৃথিবীর সমস্ত ক্ষমতা, সমস্ত সুখ আর সমস্ত টাকার বিনিময়ে হলেও ওকে আমি ছুঁবো। এক্ষুণি।

কিন্তু আমার ভেতরের একাকী মানুষটা হঠাত খিদে পেয়ে জেগে ওঠা শিশুর মত কেঁদে উঠলো।
কারণ, আমি যে ওকে একবারও ছুঁতে পারবো না।

বোধহয়,
সেদিন বাচ্চা ছেলেটাও এত কাঁদেনি যখন সমস্ত খেলনা সমেত তার ব্যাগটা চলন্ত রেলগাড়ির জানালা দিয়ে পড়ে যায়।
ছোট্ট মেয়েটা এত ভয় পেতোনা যখন ওর মা-বাবা সারাদিনের জন্য তালাবদ্ধ ঘরে ওকে একা রেখে কাজে চলে যেতো।
পাশের বাসার মাঝবয়সী মহিলাটাও এতোটা অবাক হয়নি যখন তার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন সাদা বিড়ালটা হঠাত গায়েব হয়ে যায়।
বয়স্ক লোকটা যে তার সুন্দর জীবনের সমস্ত স্মৃতি অ্যাালঝেইমারের কাছে হারিয়েছিলো সেও সম্ভবত এতোটা অসহায় অনুভব করেনি।

আমি খুব ভীতু, অসহায় আর অনিশ্চিত।
ওকে ছুতে গেলে যদি দেখি ও নেই! যদি দেখি বিছানার ওপাশটা আগের মতই খালি। যদি দেখি এটা একটা স্বপ্ন।
যদি হাত বাড়িয়ে কাউকে না পাই।
আমি আবারো একা হয়ে যাবো।

আর, তখন তো এই লম্বা রাতটা একটা দমবন্ধ হয়ে আসা অনুভূতি নিয়ে আমাকে পার করতে হবে।
পেটের মধ্যে হাজারটা প্রজাপতির ডানা ঝাপটানো সহ্য করতে হবে।
আমার মেরুদন্ড বেয়ে একটু পর পর কি যেনো গড়িয়ে পড়বে।
আমার বালিশটা বুকের সাথে জোরে চেপে ধরে মুখ গুঁজে একটা ছোট্ট ভ্রূণের মত গুটিশুটি মেরে ঘুমোবার যুদ্ধ করতে হবে।
কিন্তু যখন সমস্ত শুকনো বালিশ শেষ হয়ে যাবে তখন আমি কি করবো?

না।
আমি তোমাকে আগের মতই না ছুঁয়ে ভালোবাসবো।
না ছুঁয়েই তোমাকে আমার করে রাখবো।
ঘিরে রাখবো আমার ভালোবাসার নিরবিচ্ছিন্ন দেয়াল দিয়ে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.