নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঠাহর

ঠাহর › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুভুতি এবং আমরা

৩১ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮

প্রশ্ন হচ্ছে সভ্য দেশ বা সভ্য জাতি বলতে আমরা কি বুঝি। সভ্যতা কি? সভ্য সমাজ কি শুধু কতগুলো নির্দিষ্ট বৈশিস্ট্যের দ্বারা আমরা সংজ্ঞায়িত করব, নাকি যুগের পরিবর্তনের সাথে এই সংজ্ঞাও পরিবর্তন হবে?
আপনার উত্তর যদি হয়, আপনার ধর্মগ্রন্থ যেমন স্থির বা অপরিবর্তনশীল, সভ্যতাও সেরকম অপরিবর্তনশীল। কারন, আপনার কাছে নৈতিকতা বা সভ্যতার ভিত্তি হচ্ছে আপনার ধর্মীয় বিধান। তাহলে তো কথাই নেই! আপনার ধর্ম যখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, আপনাকে সেই সময়েই আটকে থাকতে হবে। সমস্যাটা হবে তখনি, যখন আপনি আধুনিক বিশ্বের সুযোগ সুবিধাগুলো ভোগ করতে চাইবেন, বিজ্ঞানের নতুন প্রযুক্তিগুলো যখন আপনার জীবন যাপনের সাথে গভীরভাবে মিশে যাবে। কারন, এগুলো আপনার জীবনে নানা রকম জটিলতা নিয়ে আসবে। প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যাবে, এগুলোর ব্যবহার বা এগুলো আপনার ধর্মীয় বিধানের সাথে সাংঘরষিক হচ্ছে। যত দিন যাবে, এই সংঘর্ষ বাড়তেই থাকবে। কারন, প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে, বিশ্ব তত দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, আমাদের সমাজে মানুষও বাড়ছে। সমাজে নতুন নতুন সমস্যা, নতুন নতুন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। ধর্মগুরুরা তাদের ধর্মের আলোকে বিষয়গুলো সমাধানের চেষ্টা করছেন, কিন্তু কতগুলোর সমাধান করতে পারছেন তারা? পারার কথাও না। কারন, হাজার বছর আগের সমাজ ব্যবস্থা যদি আপনি আকড়ে থাকতে চান, আপনার অস্তিত্ত সংকটে পড়বেই। পৃথিবীতে মানুষ বাড়ছে, প্রযুক্তি উন্নততর হচ্ছে, মানুষ জানতে পারছে সারা পৃথিবীতে কি হচ্ছে, কোন কোন জাতি কি কি সুবিধা-অসুবিধা ভোগ করছে। প্রতিটা মানুষের চিন্তা-ভাবনার ধরন আলাদা। মানুষ আগে যেসব প্রশ্ন মনে মনে করতেও ভয় পেত, সেগুলো এখন সবার সাথে শেয়ার করছে। মানুষের চিন্তাজগতের যে আলোড়ন, তা আর কখনো থামানো যাবে না। ব্লাসফেমি আইন করে কোন রাষ্ট্র বা খুন-জখম করে কোন গোষ্ঠী যদি মানুষের চিন্তাকে থামাতে চায়, তাহলে সেই সমাজের মানুষগুলো তো আধুনিক বিশ্বের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেই, জাতি হিসেবেও পিছিয়ে পড়বে। সেই অক্ষম পিছিয়ে পড়া জাতিকে প্রকৃতির সেই অবধারিত পরিনতি বরন করতে হবে, তা হল “বিলুপ্তি”।
এখন যদি বলেন, গলা কাটা বা কোপাকুপি ঠিক না, কিন্তু অনুভুতিতে আঘাত করাও ঠিক না। তার মানে আপনি দুইটাকেই অপরাধ হিসেবে দেখছেন আর একই পাল্লায় মাপছেন। ভেবে দেখুন একটা অনুভুতি আর একটা জীবন! একটা জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকে আরও কতগুলো জীবন, আরও কতগুলো অনুভুতি! সবচেয়ে বেশি হাসি পায় যখন দেখি, কেউ কেউ এসব প্রথাবিরোধী লেখকদেরকেই উগ্রপন্থী সন্ত্রাসীদের উত্থানের কারন হিসেবে চিহ্নিত করে। তারা ভাবে এসব অসভ্য উগ্রবাদীরা আমাদের সমাজেরই অংশ, এরা থাকুক এদের মতো। এদের ক্ষেপানোর দরকার কি! তারা চিন্তাই করতে পারে না, এসব অসভ্য উগ্রবাদী ছাড়াও একটা সমাজ হতে পারে। এদেরকে যদি দমন না করা হয়, তাহলে এদের সংখ্যা তো বাড়বেই, তখন বাকি সবার অস্তিত্বও সংকটে পড়বে।
আমাদের আরেকটি প্রবনতা হলো অপরকে দোষারোপ করা। দোষারোপ করার সময় শেষ হয়ে গেছে। এখন সময় রুখে দাঁড়ানোর। আওয়ামিলীগ এই করেছে, বিএনপি সেই করেছে, আমরা তাহলে কার কাছে যাব, এটা ভাবার সময় নেই। যে যেভাবে পারি প্রতিহত করতে হবে। আমাদের সমস্যা আমাদেরই সমাধান করতে হবে। জামাত, শিবির, মাদ্রাসার ছাত্র এরা আমাদের দেশেরই মানুষ। তাদেরকে আমরা আমাদের বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় পরিজনের মাঝেই দেখতে পাই। তাদেরকে বোঝাতে হবে, আজ প্রথাবিরোধীরা কেন ধর্মকে আঘাত করছে। কারন, এই ধর্মকে পূঁজি করে যুগ যুগ ধরে সব শ্রেনী-পেশার মানুষকে বিভিন্নভাবে শোষণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এজন্যই ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রগুলো অসফল রাষ্ট্রে পরিনত হচ্ছে। যেসব রাষ্ট্র ধর্মীয় বিধানের আলোকে পরিচালিত হচ্ছে, সেগুলো কিভাবে দুর্বল হয়ে গৃহযুদ্ধের সূচনা করছে, তাদের দেখাতে হবে। সভ্য অসভ্যের পার্থক্য চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে হবে। পশ্চিমা বিশ্ব আর আমাদের আজ কেন এতো পার্থক্য? কারন, তারা প্রতিটা মানুষের মতামতকে অনেক গুরুত্ব দেয়। এটা তাদের সামাজিক বা পারিবারিক আচড়ন। কেউ একজন মেয়ে বা কালো চামড়া বলে তাকে তারা আর অবহেলা করে না, তারা মেধাকে অনেক বেশী গুরুত্ব দেয়, কেউ ভিন্ন মতালম্বী হলেই তারা গলা চেপে ধরার চেষ্টা করে না। তাই বলে আমি বলছি না পশ্চিমাদের সমাজে কোন অসঙ্গতি নেই, কিন্তু তারা তো আমাদের চেয়ে বেশি সামাজিক সুবিধা ভোগ করছে। আমাদের জীবনধারণের পদ্ধতিকে যদি আমরা সমালোচনা না করি, তাহলে কিভাবে এটাকে আমরা উন্নত করব!
অনুভূতিতে আঘাত, অনুভূতিতে আঘাত বলে চোখ বন্ধ করে থাকার কোন মানে হয় না। কেউ যদি ধর্মের কোন বিষয়কে চ্যালেঞ্জ করে বা বিদ্রুপ করে, রেফারেন্সসহ জবাব দিন, যদি আপনার অনুভুতি সেরকম স্পর্শকাতর হয়! এটা আপনার দায়িত্ব। যদি জবাব না দিতে পারেন, আপনাকে মেনে নিতে হবে। কারও মুখ বন্ধ করে বাস্তবতা বা ইতিহাস কোনটাই আপনি বদলাতে পারবেন না। ইন্টারনেট এখন সবার হাতের নাগালে। যেকোনো তথ্য একাধিক সোর্স থেকে পাওয়া এখন সহজ।
আমাদের দেশ বা সমাজের পরিনতি নির্ভর করছে আমাদের প্রতিক্রিয়ার উপর। আমরা কি একনায়ক শাসিত উগ্রধর্মীয় মৌলবাদী সমাজ ব্যবস্থা চাই, নাকি নিজেদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য অক্ষুন্ন রেখে স্বাধীন মত প্রকাশের উপযোগী অগ্রসরমান সমাজ ব্যবস্থা চাই?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.