নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাসেল আহমেদ

একজন গাঙ্গচিল

লেখলেখি করি একটু আধটু যদিও লেখার হাত ভালো না। অবশ্য লেখালেখির চেয়ে বড় পরিচয় আমি একজন বড় পাঠক। মুক্তিযুদ্ধ আমার সবচেয়ে বড় অহংকার। সবসময় স্বপ্ন দেখি একটা সুন্দর বাংলাদেশের। ইমেইল[email protected]

একজন গাঙ্গচিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বোনের চশমা ।।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৭

ফোন ধরে বসে আছি, কখন ১২ টা বাজবে আর তখনি ফোন দেবো। এই মুহূর্তটার জন্যই ৩ দিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলাম। মাঝে মাঝে একটু দূরত্ব রাখা ভালো।



তাতে সৌন্দর্য কমেনা বরং বাড়ে। ঘড়ির কাটায় যখন ঠিক ১২ টা বাজতে এক মিনিট বাকী তখনি ফোন দিয়ে বললাম “শুভ জন্মদিন”। ধন্যবাদ দিয়েই উচ্চারণ করলো তুমি ৩ দিন আমার সাথে কথা বলোনি, কোনো যোগাযোগই করনি ক্যানো? খুব রাগ হচ্ছিলো আমার।

আমার বোন নীলু, বড় বোন। ভাইবোন একসাথে থাকা হয়না। দুজন দুজনা থেকে দূরে থাকি। তবে প্রতিদিন নিয়মিত কথা হয় আমাদের। শুধু কথা না ফেসবুকে ঝগড়া, রাগারাগি ভালোবাসা, খুনসুটি সবই হয়। একদিন কথা না বলে থাকিনা, অথচ তার জন্মদিনের ৩ দিন আগে থেকেই কথা বলা বন্ধ করে রেখেছি তাই ব্যাপারটা নীলু আপুও ঠিক ধরতে পারেনি যে কি কারনে আমি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।

একটু চুপ থেকে বললাম ইচ্ছে করেই কথা বলিনি, কিন্ত ঠিকই তো প্রথম উইশ করলাম (আসলে ২য়)।

আমি ৩ দিন না বলেই উধাও হয়েছি, ফেসবুক, হোয়াটসওয়্যাপ অফ। মোবাইল ধরিনা। আপু তো রেগেই শেষ। মনে মনে হয়তো অনেক গালীও দিয়েছে আমায়। হয়তো আশাও করেনি যে আমিই প্রথম উইশ করবো।

বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে একেবারে শেষে বললাম তোমার ফেসবুকে একটা ভিডিওর লিংক দিয়েছি, এখুনি দেখো ওটা।
আচ্ছা বলে ফোন রেখে দিলো।

ভিডিও টা আমি নিজেই বানিয়েছি আমার বোনের জন্য। গত তিন দিনে বসে বসে বানিয়েছি। নীল প্রিয় বলে নীল ড্রেসের সব ছবি দিয়ে ভিডিও তে ভরপুর। ৬ মিনিটের ভিডিও তে সব স্মৃতি গুলো ধরে রেখেছি। দূরে থাকি বলে মন খারাপ, অন্তত এই দিনে পরিবারের কেও দূরে থাকলে ভালো লাগেনা। পরিবারের সবাইকে নিয়েই তো আনন্দ করতে চাই সবসময়। ভালোলাগার মুহূর্তগুলো একসাথে কাটাতে চাই। কিন্ত ব্যাস্ততা ও বাস্তবতার জন্য হয়ে সুযোগ সুবিধা হয়ে উঠেনা

কিছুক্ষণ পর ফেসবুকে মেসেজে বল্লো ভাইয়া, লিংক তো ওপেন হচ্ছে না।
আমি বললাম দাঁড়াও আমি দেখে জানাচ্ছি।

আমি ভিডিও টা আবার দেখলাম। সবই তো ঠিক আছে, তাহলে আপু দেখতে পারছে না ক্যানো। আবার ঠিকঠাক করে বললাম দেখো আপু। এবার আমার মন একটু একটু খারাপ হয়ে যাচ্ছে। জানি এখন ক্লিক করলেই ভিডিওটা দেখতে পাবে। এবং ভিডিও টা দেখলে আমার বোনের মন ভালো হয়ে যাবে, আপ্লুত হবে অথচ বোনের সেই ভালো লাগাটা ভাই হয়ে নিজ চোখে দেখতে পারছিনা। সত্যি এবার আমার মন টা খারাপ হয়ে গেলো, কান্না পাচ্ছে। দূরত্বের জন্য আজ এই বিশেষ দিনে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আমি আমার বোনের কাছে যেতে পারছিনা। দূরত্ব শব্দটাকে আমার এখন ঘৃণা হচ্ছে। পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য শব্দ সম্ভবত দূরত্ব।

একটু বাদেই আবার আপু জানালো ভাইয়া দেখা যাচ্ছে না, মন খারাপ হয়ে গ্যালো। আমার এদিকে আবার নেট এর খুব ঝামেলা হচ্ছে, কাল দেখবো।

ঠিক ১২ টার সময় ভিডিও টা আপু দেখবে অথচ সেটা কাল দেখবে। জানি দূরে থাকলেও অনেক কিছু চাইলেই সম্ভব হয়না তবুও অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাই বললাম আচ্ছা কাল দেখিও, তবে কাল কিন্ত একবার দেখা দিও। ভিডিও কল দিও।

কথা শেষ করেই বিছানা গোছাতে যাবো এমন সময় দেখি আমার বোন ফোন দিয়েছে।
বললাম আপু।
ওপাশ থেকে চশমা পরে থাকা বোন বল্লো ভাইয়া।

অনেক্ষন কথা বলে বললাম আপু তুমি তো ভিডিও টা দেখতে পারলে না, দাঁড়াও আমি দেখাচ্ছি তোমায় বলেই ভিডিওটা প্লে করলাম। প্লে করার কিছুক্ষণ পর বাজতে শুরু করলো শাফিন আহমেদ এর “আজকের আকাশে অনেক তারা, দিন ছিলো সূর্যে ভরা...............” গানটা। আর আমার মোবাইল টা ধরলাম আমার মনিটরের সামনে। ওপাশে আপু খুব মনযোগ সহকারে দেখছে ভিডিও টা। এপাশে আমি। মোবাইলের স্ক্রিনে আমি আপুকে ঠিকই দেখতে পারছি। আর আপু তো আমায় দেখতে পারছে না, ভিডিও দেখচে মনোযোগ দিয়ে।

ভিডিও টা আমি এত যত্ন নিয়ে, এতগুলো সুন্দর সুন্দর স্মৃতি একসাথে করে বানিয়েছি যে ভিডিও টা দেখতে দেখতে মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে আপু পাশে নেই বলে। এই ভিডিও টা একসাথে দেখার ইচ্ছে ছিলো অথচ দেখতে হচ্ছে দুজন দুই জায়গা থেকে। ধীরে ধীরে মিনিট পার হচ্ছে আর আমি মোবাইলটা মনিটরের সামনে ধরে আছি। আর এদিকে টপটপ করে চোখের পানিতে কিবোর্ড ভিজে যাচ্ছে। হাত থেকে মোবাইলটা কেঁপে কেঁপে উঠছে। বার কয়েক মোবাইলটা ঠিক করে নিলাম। ৬ মিনিট খুব কষ্টে পার করে এসে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালাম। চোখদুটো মুছে বিছানায় বসলাম। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না, আটকে যাছে। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম কেমন হয়েছে আপু ভিডিও টা। ওপাশ থেকে আপু কোনো কথা বলছে না। দেখি ঠোঁটে ঠোঁট চেপে রেখে আছে, কোনো কথা নেই। আমি বললাম ও আপু। তবুও কোনো কথা নেই। শুধু দেখছি ঠোঁট চেপে বসে আছে।

কিছুক্ষণ পর দেখি চশমা খুলে আপু চোখ মুছতেছে। চশমার জন্য এতক্ষণ আমি বুঝিনাই যে আপু কাঁদতেছে। দেখলাম আপুও কথা বলতে পারতেছে না, আটকে যাচ্ছে। শুধু ভারি কন্ঠে একবার উচ্চারণ করলো সত্যিই ভাইয়া তোমায় অনেক ভালোবাসি। এরপর আবার কান্না, এদিকে আবার আমিও চোখ মুছতেছি। দুজন দুজন কে দেখতেছে, কারো কাছে যেন কারো কিছুই লুকোনোর নেই।

এখন রাত প্রায় একটা বাজে। সবাই ঘুমিয়ে গেছে। কিছুক্ষণ আগে আমার ঘরে আর সেই সূদুরে আপুর ঘরে স্বর্গ নেমে এসেছিলো, ভালোবাসার স্বর্গ। অথচ পৃথিবীর কেও তা টের পেলো না স্বর্গের উপস্থিতি। শুধু দুই প্রান্তের ২ জন প্রানীই আজ টের পেলো কান্নার মাঝে যে এত সুখ এত ভালবাসা। আর কেঁউই জানলো না কিছুক্ষণ আগে কি হয়ে গেলো ধরণীতে।

শর্তহীন ভালবাসাগুলো হয়তো এমনি হয়। বারবার কাঁদায়। কান্না গুলো ভেতোরে দিয়ে ছুঁয়ে যায়। বুঝিয়ে যায় একজন সত্যিকার মানুষের অস্তিত্ব ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৫০

সিলেক্টিভলি সোশ্যাল বলেছেন: এত বেশি পবিত্র আবেগঘন লিখা লিখতে নেই। পাঠকেরও যে চোখ ঝাপসা হয়ে আসতে পারে সেদিকটায় এক্টু খেয়াল রাখা উচিৎ :/
আমরা একভাই একবোন। এখনও কারো আলাদা সংসার হয়নি বলে বা দেশের ভিতরেই থাকছি বলে হয়ত এই বেদনাটা সেভাবে অনুভব করতে হচ্ছেনা। আপনার লিখাটা পড়তে গিয়ে খনিকের জন্য ভবিষ্যতের একটা শঙ্কা উঁকি দিয়ে গেলো মনে। কাছে থাকুক, ভালো থাকুক সকল ভাইবোন।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:০৬

একজন গাঙ্গচিল বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। আপনাদের ভাইবোনের জন্যেও দোয়া রইলো।

২| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৫৪

আহমেদ জী এস বলেছেন: একজন গাঙ্গচিল ,




হৃদয় মুচড়ে দেয়া লেখা । শর্তহীন ভালবাসাগুলো এমনিই হয় ----নিখাদ ।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:০৭

একজন গাঙ্গচিল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.