![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সিমকো মাকো রাকোই কুহুই কুহুই ক্যা, ডেগো বিটি দুলোরিয় ডেগো ফিরিত মেয়...
ফুলেরা জানতো যদি
মুলঃ হেনরিক হাইনে
ফুলেরা জানতো যদি আমার হৃদয়
ক্ষতবিক্ষত কতোখানি,
অঝোরে ঝরতো তাদের চোখের জল
আমার কষ্ট আপন কষ্ট মানি ।
নাইটিংগেল আর শ্যামারা জানতো যদি
আমার কষ্ট কতোখানি-কতোদুর,
তাহলে তাদের গলায় উঠতো বেজে
আরো ব হু বেশী আনন্দদায়ক সুর ।
সোনালী তারারা দেখতো কখনো যদি
আমার কষ্টের অশ্রুজলের দাগ,
তাহলে তাদের স্থান থেকে নেমে এসে
জানাতো আমাকে সান্ত্বনা ও অনুরাগ ।
তবে তারা কেউ বুঝতে পারেনা তা-
একজন,শুধু একজন,জানে আমার কষ্ট কতো;
আমার হৃদয় ছিনিয়ে নিয়েছে যে
ভাংগার জন্য-বারবার অবিরত ।
ভালো থেকো
ভালো থেকো ফুল, মিষ্টি বকুল, ভালো থেকো।
ভালো থেকো ধান, ভাটিয়ালি গান, ভালো থেকো।
ভালো থেকো মেঘ, মিটিমিটি তারা।
ভালো থেকো পাখি, সবুজ পাতারা।
ভালো থেকো।
ভালো থেকো চর, ছোট কুড়ে ঘর, ভালো থেকো।
ভালো থেকো চিল, আকাশের নীল, ভালো থেকো।
ভালো থেকো পাতা, নিশির শিশির।
ভালো থেকো জল, নদীটির তীর।
ভালো থেকো গাছ, পুকুরের মাছ, ভালো থেকো।
ভালো থেকো কাক, কুহুকের ডাক, ভালো থেকো।
ভালো থেকো মাঠ, রাখালের বাশিঁ।
ভালো থেকো লাউ, কুমড়োর হাসি।
ভালো থেকো আম, ছায়া ঢাকা গ্রাম, ভালো থেকো।
ভালো থেকো ঘাস, ভোরের বাতাস, ভালো থেকো।
ভালো থেকো রোদ, মাঘের কোকিল,
ভালো থেকো বক, আড়িয়ল বিল,
ভালো থেকো নাও, মধুমতি গাও,ভালো থেকো।
ভালো থেকো মেলা, লাল ছেলেবেলা, ভালো থেকো।
ভালো থেকো, ভালো থেকো, ভালো থেকো।
আমার কুঁড়েঘরে
আমার কুঁড়েঘরে নেমেছে শীতকাল
তুষার জ’মে আছে ঘরের মেঝে জুড়ে বরফ প’ড়ে আছে
গভীর ঘন হয়ে পাশের নদী ভ’রে
বরফ ঠেলে আর তুষার ভেঙে আর দু-ঠোঁটে রোদ নিয়ে
আমার কুঁড়েঘরে এ-ঘন শীতে কেউ আসুক
আমার গ্রহ জুড়ে বিশাল মরুভূমি
সবুজ পাতা নেই সোনালি লতা নেই শিশির কণা নেই
ঘাসের শিখা নেই জলের রেখা নেই
আমার মরুভূর গোপন কোনো কোণে একটু নীল হয়ে
বাতাসে কেঁপে কেঁপে একটি শীষ আজ উঠুক
আমার গাছে গাছে আজ একটি কুঁড়ি নেই
একটি পাতা নেই শুকনো ডালে ডালে বায়ুর ঘষা লেগে
আগুন জ্ব’লে ওঠে তীব্র লেলিহান
বাকল ছিঁড়েফেড়ে দুপুর ভেঙেচুরে আকাশ লাল ক’রে
আমার গাছে আজ একটা ছোট ফুল ফুটুক
আমার এ-আকাশ ছড়িয়ে আছে ওই
পাতটিনের মতো ধাতুর চোখ জ্বলে প্রখর জ্বালাময়
সে-তাপে গ’লে পড়ে আমার দশদিক
জল ও বায়ুহীন আমার আকাশের অদেখা দূর কোণে
বৃষ্টিসকাতর একটু মেঘ আজ জমুক
আমার কুঁড়েঘরে নেমেছে শীতকাল
তুষার জ’মে আছে ঘরের মেঝে জুড়ে বরফ প’ড়ে আছে
গভীর ঘন হয়ে পাশের নদী ভ’রে
বরফ ঠেলে আর তুষার ভেঙে আজ দু-ঠোঁটে রোদ নিয়ে
আমার কুঁড়েঘরে এ-ঘন শীতে কেউ আসুক।
ব্যাধিকে রূপান্তরিত করছি মুক্তোয়
একপাশে শূন্যতার খোলা, অন্যপাশে মৃত্যুর ঢাকনা,
প’ড়ে আছে কালো জলে নিরর্থক ঝিনুক।
অন্ধ ঝিনুকের মধ্যে অনিচ্ছায় ঢুকে গেছি রক্তমাংসময়
আপাদমস্তক বন্দী ব্যাধিবীজ। তাৎপর্য নেই কোন দিকে-
না জলে না দেয়ালে-তাৎপর্যহীন অভ্যন্তরে ক্রমশ উঠছি বেড়ে
শোণিতপ্লাবিত ব্যাধি। কখনো হল্লা ক’রে হাঙ্গরকুমীরসহ
ঠেলে আসে হলদে পুঁজ, ছুটে আসে মরা রক্তের তুফান।
আকষ্মিক অগ্নি ঢেলে ধেয়ে আসে কালো বজ্রপাত।
যেহেতু কিছুই নেই করণীয় ব্যাধিরূপে বেড়ে ওঠা ছাড়া,
নিজেকে-ব্যাধিকে-যাদুরসায়নে রূপান্তরিত করছি শিল্পে-
একরত্তি নিটোল মুক্তোয়!
এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়
এ লাশ আমরা রাখবো কোথায় ?
তেমন যোগ্য সমাধি কই ?
মৃত্তিকা বলো, পর্বত বলো
অথবা সুনীল-সাগর-জল-
সব কিছু ছেঁদো, তুচ্ছ শুধুই !
তাইতো রাখি না এ লাশ আজ
মাটিতে পাহাড়ে কিম্বা সাগরে,
হৃদয়ে হৃদয়ে দিয়েছি ঠাঁই।
“সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে “
আমি জানি সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে।
নষ্টদের দানবমুঠোতে ধরা পড়বে মানবিক
সব সংঘ-পরিষদ;— চ’লে যাবে, অত্যন্ত উল্লাসে
চ’লে যাবে এই সমাজ সভ্যতা— সমস্ত দলিল—
নষ্টদের অধিকারে ধুয়েমুছে, যে-রকম রাষ্ট্র
আর রাষ্ট্রযন্ত্র দিকে দিকে চ’লে গেছে নষ্টদের
অধিকারে। চ’লে যাবে শহর বন্দর ধানক্ষেত
কালো মেঘ লাল শাড়ি শাদা চাঁদ পাখির পালক
মন্দির মসজিদ গির্জা সিনেগগ নির্জন প্যাগোডা।
অস্ত্র আর গণতন্ত্র চ’লে গেছে, জনতাও যাবে;
চাষার সমস্ত স্বপ্ন আস্তাকুড়ে ছুঁড়ে একদিন
সাধের সমাজতন্ত্রও নষ্টদের অধিকারে যাবে।
আমি জানি সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে।
কড়কড়ে রৌদ্র আর গোলগাল পূর্ণিমার চাঁদ
নদীরে পাগল করা ভাটিয়ালি খড়ের গম্বুজ
শ্রাবণের সব বৃষ্টি নষ্টদের অধিকারে যাবে।
রবীন্দ্রনাথের সব জ্যোৎস্না আর রবিশংকরের
সমস্ত আলাপ হৃদয়স্পন্দন গাথা ঠোঁটের আঙুল
ঘাইহরিণীর মাংসের চিৎকার মাঠের রাখাল
কাশবন একদিন নষ্টদের অধিকারে যাবে।
চ’লে যাবে সেই সব উপকথা : সৌন্দর্য-প্রতিভা—
মেধা;— এমনকি উন্মাদ ও নির্বোধদের প্রিয় অমরতা
নির্বাধ আর উন্মাদদের ভয়ানক কষ্ট দিয়ে
অত্যন্ত উল্লাসভরে নষ্টদের অধিকারে যাবে।
আমি জানি সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে।
সবচে সুন্দর মেয়ে দুইহাতে টেনে সারারাত
চুষবে নষ্টের লিঙ্গ; লম্পটের অশ্লীল উরুতে
গাঁথা থাকবে অপার্থিব সৌন্দর্যের দেবী। চ’লে যাবে,
কিশোরীরা চ’লে যাবে, আমাদের তীব্র প্রেমিকারা
ওষ্ঠ আর আলিঙ্গন ঘৃণা ক’রে চ’লে যাবে, নষ্টদের
উপপত্নী হবে। এই সব গ্রন্থ শ্লোক মুদ্রাযন্ত্র
শিশির বেহালা ধান রাজনীতি দোয়েলের ঠোঁট
গদ্যপদ্য আমার সমস্ত ছাত্রী মার্কস-লেনিন,
আর বাঙলার বনের মতো আমার শ্যামল কন্যা-
রাহুগ্রস্থ সভ্যতার অবশিষ্ট সামান্য আলোক—
আমি জানি তারা সব নষ্টদের অধিকারে যাবে।
২| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৬
এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন:
তবে তারা কেউ বুঝতে পারেনা তা-
একজন,শুধু একজন,জানে আমার কষ্ট কতো;
আমার হৃদয় ছিনিয়ে নিয়েছে যে
ভাংগার জন্য-বারবার অবিরত ।
৩| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:২৩
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সবকিছু নষ্টের অধিকারে যাবে ।
৪| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:০৬
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
তোমার দিকে আসছি - হুমায়ুন আজাদ
_____________________________
অজস্র জন্ম ধ'রে আমি তোমার দিকে আসছি; কিন্তু পৌছোতে পারছি না।
তোমার দিকে আসতে আসতে আমার এক-একটি দীর্ঘ জীবন
ক্ষয় হয়ে যায় পাঁচ পয়সার মোমবাতির মতো।
আমার প্রথম জন্মটা কেটে গিয়েছিলো শুধু তোমার স্বপ্ন দেখে দেখে।
এক জন্ম আমি শুধু তোমার স্বপ্ন দেখেছি।
আমার দুঃক্ষ তোমার স্বপ্ন দেখার জন্যে আমি মাত্র একটি জন্ম পেয়েছিলাম।
আরেক জন্মে আমি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম তোমার উদ্দেশে।
পথে বেরিয়েই আমি পলিমাটির ওপর আঁকা দেখি তোমার পায়ের দাগ।
তার প্রতিটি রেখা আমাকে পাগল ক'রে তোলে।
ওই আলতার দাগ আমার চোখ আর বুক আর স্বপ্নকে এতো লাল ক'রে তোলে
যে আমি তোমাকে সম্পূর্ণ ভুলে যাই। ওই রঙিন পায়ের দাগ
প্রদক্ষিণ করতে করতে আমার ওই জন্মটা কেটে যায়।
আমার দুঃক্ষ মাত্র একটি জন্ম পেয়েছিলাম সুন্দরকে প্রদক্ষিণ করার।
আরেক জন্মে তোমার কথা ভাবতেই আমার বুকের ভেতর থেকে
সবচেয়ে দীর্ঘ আর কোমল আর ঠান্ডা নদীর মতো কী যেনো প্রবাহিত হ'তে
শুরু করে। সেই দীর্ঘশ্বাসে তুমি কেঁপে উঠতে পারো ভেবে আমি
একটা মর্মান্তিক দীর্ঘশ্বাস বুকে চেপে কাটিয়ে দিই সম্পূর্ণ জন্মটা।
আমার দুঃক্ষ আমার কোমলতম দীর্ঘশ্বাসটি ছিলো মাত্র এক জন্মের সমানদীর্ঘ।
আমার ষোড়শ জন্মে একটি গোলাপ আমার পথরোধ করে।
আমি গোলাপের সিঁড়ি বেয়ে তোমার দিকে উঠতে থাকি-উচুতে-উচুতে,
আরো উঁচুতে-; আর এক সময় ঝ'রে যাই চৈত্রের বাতাসে।
আমার দুঃক্ষ মাত্র একটি জন্ম আমি গোলাপের পাপড়ি হয়ে তোমার উদ্দেশে
ছড়িয়ে পড়তে পেরেছিলাম।
এখন আমার সমস্ত পথ জুড়ে টলমল করছে একটি অশ্রুবিন্দু।
ওই অশ্রুবিন্দু পেরিয়ে এ-জন্মে হয়তো আমি তোমার কাছে পৌছোতে পারবো না।
কেনো পৌছোবো? তাহলে আগামী জন্মগুলো আমি কার দিকে আসবো?
৫| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:০৮
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
আমাদের মা - হুমায়ুন আজাদ
_________________________________________
আমাদের মাকে আমরা বলতাম তুমি, বাবাকে আপনি।
আমাদের মা গরিব প্রজার মত দাঁড়াতো বাবার সামনে,
কথা বলতে গিয়ে কখনোই কথা শেষ ক’রে উঠতে পারতোনা।
আমাদের মাকে বাবার সামনে এমন তুচ্ছ দেখাতো যে
মাকে আপনি বলার কথা আমাদের কোনোদিন মনেই হয়নি।
আমাদের মা আমাদের থেকে বড় ছিলো, কিন্তু ছিলো আমাদের সমান।
আমাদের মা ছিলো আমাদের শ্রেনীর, আমাদের বর্ণের, আমাদের গোত্রের।
বাবা ছিলেন অনেকটা আল্লার মতো, তার জ্যোতি দেখলে আমরা সেজদা দিতাম
বাবা ছিলেন অনেকটা সিংহের মতো, তার গর্জনে আমরা কাঁপতে থাকতাম
বাবা ছিলেন অনেকটা আড়িয়াল বিলের প্রচন্ড চিলের মতো, তার ছায়া দেখলেই
মুরগির বাচ্চার মতো আমরা মায়ের ডানার নিচে লুকিয়ে পড়তাম।
ছায়া সরে গেলে আবার বের হয়ে আকাশ দেখতাম।
আমাদের মা ছিলো অশ্রুবিন্দু-দিনরাত টলমল করতো
আমাদের মা ছিলো বনফুলের পাপড়ি;-সারাদিন ঝরে ঝরে পড়তো,
আমাদের মা ছিলো ধানখেত-সোনা হয়ে দিকে দিকে বিছিয়ে থাকতো।
আমাদের মা ছিলো দুধভাত-তিন বেলা আমাদের পাতে ঘন হয়ে থাকতো।
আমাদের মা ছিলো ছোট্ট পুকুর-আমরা তাতে দিনরাত সাঁতার কাটতাম।
আমাদের মার কোনো ব্যক্তিগত জীবন ছিলো কিনা আমরা জানি না।
আমাদের মাকে আমি কখনো বাবার বাহুতে দেখি নি।
আমি জানি না মাকে জড়িয়ে ধরে বাবা কখনো চুমু খেয়েছেন কি না
চুমু খেলে মার ঠোঁট ওরকম শুকনো থাকতো না।
আমরা ছোট ছিলাম, কিন্তু বছর বছর আমরা বড় হতে থাকি,
আমাদের মা বড় ছিলো, কিন্তু বছর বছর মা ছোটো হতে থাকে।
ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ার সময়ও আমি ভয় পেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরতাম।
সপ্তম শ্রেনীতে ওঠার পর ভয় পেয়ে মা একদিন আমাকে জড়িয়ে ধরে।
আমাদের মা দিন দিন ছোটো হতে থাকে
আমাদের মা দিন দিন ভয় পেতে থাকে।
আমাদের মা আর বনফুলের পাপড়ি নয়, সারাদিন ঝরে ঝরে পড়েনা
আমাদের মা আর ধানখেত নয়, সোনা হয়ে বিছিয়ে থাকে না
আমাদের মা আর দুধভাত নয়, আমরা আর দুধভাত পছন্দ করিনা
আমাদের মা আর ছোট্ট পুকুর নয়, পুকুরে সাঁতার কাটতে আমরা কবে ভুলে গেছি।
কিন্তু আমাদের মা আজো অশ্রুবিন্দু, গ্রাম থেকে নগর পর্যন্ত
আমাদের মা আজো টলমল করে।
৬| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:১০
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
কখনো আমি - হুমায়ুন আজাদ
______________________
কখনো আমি স্বপ্ন দেখি যদি
স্বপ্ন দেখবো একটি বিশাল নদী।
নদীর ওপর আকাশ ঘন নীল
নীলের ভেতর উড়ছে গাঙচিল।
আকাশ ছুঁয়ে উঠছে কেবল ঢেউ
আমি ছাড়া চারদিকে নেই কেউ।
কখনো আমি কাউকে যদি ডাকি
ডাকবো একটি কোমল সুদূর পাখি।
পাখির ডানায় আঁকা বনের ছবি
চোখের তারায় জ্বলে ভোরের রবি।
আকাশ কাঁপে পাখির গলার সুরে
বৃষ্টি নামে সব পৃথিবী জুড়ে।
৭| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:১১
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পর - হুমায়ুন আজাদ
______________________________________________
আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পর শুনেছি তুমি খুব কষ্টে আছো।
তোমার খবরের জন্য যে আমি খুব ব্যাকুল,
তা নয়। তবে ঢাকা খুবই ছোট্ট শহর। কারো কষ্টের
কথা এখানে চাপা থাকে না। শুনেছি আমাকে
ছেড়ে যাওয়ার পর তুমি খুবই কষ্টে আছো।
প্রত্যেক রাতে সেই ঘটনার পর নাকি আমাকে মনে পড়ে
তোমার। পড়বেই তো, পৃথিবীতে সেই ঘটনা
তুমি-আমি মিলেই তো প্রথম সৃষ্টি করেছিলাম।
যে-গাধাটার হাত ধরে তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে সে নাকি এখনো
তোমার একটি ভয়ংকর তিলেরই খবর পায় নি।
ওই ভিসুভিয়াস থেকে কতটা লাভা ওঠে তা তো আমিই প্রথম
আবিষ্কার করেছিলাম। তুমি কি জানো না গাধারা কখনো
অগ্নিগিরিতে চড়ে না?
তোমার কানের লতিতে কতটা বিদ্যূৎ আছে, তা কি তুমি জানতে?
আমিই তো প্রথম জানিয়েছিলাম ওই বিদ্যূতে
দপ ক'রে জ্বলে উঠতে পারে মধ্যরাত।
তুমি কি জানো না গাধারা বিদ্যূৎ সম্পর্কে কোনো
খবরই রাখে না?
আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পর শুনেছি তুমি খুব কষ্টে আছো।
যে-গাধাটার সাথে তুমি আমাকে ছেড়ে চ'লে গেলে সে নাকি ভাবে
শীতাতপনিয়ন্ত্রিত শয্যাকক্ষে কোনো শারীরিক তাপের
দরকার পড়ে না। আমি জানি তোমার কতোটা দরকার
শারীরিক তাপ। গাধারা জানে না।
আমিই তো খুঁজে বের করেছিলাম তোমার দুই বাহুমূলে
লুকিয়ে আছে দু'টি ভয়ংকর ত্রিভুজ। সে-খবর
পায় নি গাধাটা। গাধারা চিরকালই শারীরিক ও সব রকম
জ্যামিতিতে খুবই মূর্খ হয়ে থাকে।
তোমার গাধাটা আবার একটু রাবীন্দ্রিক। তুমি যেখানে
নিজের জমিতে চাষার অক্লান্ত নিড়ানো, চাষ, মই পছন্দ করো,
সে নাকি আধ মিনিটের বেশি চষতে পারে না। গাধাটা জানে না
চাষ আর গীতবিতানের মধ্যে দুস্তর পার্থক্য!
তুমি কেনো আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলে? ভেবেছিলে গাড়ি, আর
পাঁচতলা ভবন থাকলেই ওষ্ঠ থাকে, আলিঙ্গনের জন্য বাহু থাকে,
আর রাত্রিকে মুখর করার জন্য থাকে সেই
অনবদ্য অর্গান?
শুনেছি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পর তুমি খুবই কষ্টে আছো।
আমি কিন্ত কষ্টে নেই; শুধু তোমার মুখের ছায়া
কেঁপে উঠলে বুক জুড়ে রাতটা জেগেই কাটাই, বেশ লাগে,
সম্ভবত বিশটির মতো সিগারেট বেশি খাই।
৮| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:১২
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
সুযোগে ফ্লাডিং করে গেলুম
০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:৩২
বৃষ্টিধারা বলেছেন: দুর্জয় ভাই, থাকলে আরো দেন । অনেকে ই দেখতে পাবে ।
আমার কালেকশান আপনার মত বিশাল না ।
৯| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:৩৬
একজন ঘূণপোকা বলেছেন:
প্রথম কবিতাটা অনেক ভালো লেগেছে
১০| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:৩৮
মামুন রশিদ বলেছেন: দূর্জয়ের কমেন্টে দেয়া কবিতা সহ আরো কয়েকটি কবিতা যোগ করে দিয়েন ।
সোজা প্রিয়তে ।
১১| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:৩৮
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
আত্মহত্যার অস্ত্রাবলি
—হুমায়ুন আজাদ
______________________
রয়েছে ধারালো ছোরা স্লিপিং টেবলেট
... কালো রিভলবার
মধ্যরাতে ছাদ
ভোরবেলাকার রেলগাড়ি
সারিসারি বৈদ্যুতিক তার।
স্লিপিং টেবলেট
খেয়ে অনায়াসে ম'রে যেতে পারি
বক্ষে ঢোকানো যায় ঝকঝকে উজ্জ্বল
তরবারি
কপাল লক্ষ্য ক'রে টানা যায় অব্যর্থ
ট্রিগার
ছুঁয়ে ফেলা যায় প্রাণবাণ বৈদ্যুতিক
তার
ছাদ থেকে লাফ দেয়া যায়
ধরা যায় ভোরবেলাকার রেলগাড়ি
অজস্র অস্ত্র আছে
যে-
কোনো একটি দিয়ে আত্মহত্যা ক'রে যেতে পারি!
এবং রয়েছো তুমি
সবচেয়ে বিষাক্ত অস্ত্র প্রিয়তমা মৃত্যুর
ভগিনী
তোমাকে ছুঁলে
দেখলে এমনকি তোমার নাম শুনলে
আমার ভেতরে লক্ষ লক্ষ
আমি আত্মহত্যা করি।
১২| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:৪১
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
ভিখারি - হুমায়ুন আজাদ
_________________
আমি বাঙালি, বড়োই গরিব। পূর্বপুরুষেরা- পিতা, পিতামহ
ভিক্ষাই করেছে; শতাব্দী, বর্ষ, মাস, সপ্তাহ, প্রত্যহ।
এমন সৌন্দর্য নেই- তুমি সব কিছু ফেলে
ছুটে আসবে আমার উদ্দেশে দুই বাহু মেলে।
এত শৌর্যবীর্য নেই যে সদম্ভে ফেলবো চরণ
আর দিনদুপুরে সকলের চোখের সামনে তোমাকে করবো হরণ।
হে সৌন্দর্য হে স্বপ্ন হে ক্ষুধা হে তৃষ্ণার বারি,
আমি শুধু দুই হাত মেলে দিয়ে ভিক্ষা চাইতে পারি।
তুমি শুধু দেখবে দিনরাত,
সব কিছু পেরিয়ে তোমার সামনে মেলে আছি এক জোড়া ভিক্ষুকের হাত।
বই খুলতে গেলে
দেখবে তুমি বই হয়ে আছি আমি দুই হাত মেলে।
প্লেয়ারে রেকর্ড চাপিয়ে যদি গান শুনতে চাও,
চমকে উঠে শুনবে তুমি সব রেকর্ডে বাজে একই গান- 'আমাকে ভিক্ষা দাও।'
ফুল তুলতে গিয়ে বাগানের কাছে
দেখবে আমার ভিক্ষুক হাত গোলাপ চামেলি হয়ে ফুটে আছে।
অন্ধকার নেমে এলে ঘুমে গাঢ় হ'লে রাত
স্বপ্নে দেখবে তুমি দশ দিগন্ত ঢেকে দিয়ে মেলে আছি ভিখারির হাত।
হে স্বপ্ন হে সৌন্দর্য হে ক্ষুধা হে আমার নারী,
তোমাকেই ঘিরে আছি আমি- বাঙালি, বড়োই গরিব, আর একান্ত ভিখারি।
১৩| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:৪১
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
সাহস - হুমায়ুন আজাদ
_____________________________________________
এখন, বিশশতকের দ্বিতীয়াংশে, সব কিছুই সাহসের পরিচায়ক।
কথা বলা সাহস, চুপ ক'রে থাকাও সাহস।
দলে থাকা সাহস, দলে না থাকাও সাহস।
এখন, এ-দুর্দশাগ্রস্ত গ্রহে, সব কিছুই সাহসের পরিচায়ক।
তোমাকে ভালোবাসি বলা সাহস।
তোমাকে ভালোবাসি না বলাও সাহস।
এখন, বিশশতকের দ্বিতীয়াংশে, সব কিছুই সাহসের পরিচায়ক।
ঘরে একলা থাকাটা সাহস।
আবার রাস্তায় অনেকের সঙ্গে বেরিয়ে পড়াও সাহস।
এখন, এ-দুর্দশাগ্রস্ত গ্রহে, সব কিছুই সাহসের পরিচায়ক।
ঝলমলে গোলাপের দিকে তাকানোটা সাহস।
তার থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়াও সাহস।
এখন, বিশশতকের দ্বিতীয়াংশে, সব কিছুই সাহসের পরিচায়ক।
আমি কিছু চাই বলাটা সাহস।
আবার আমি কিছুই চাই না বলাও সাহস।
এখন, এ-দুর্দশাগ্রস্ত গ্রহে, বেঁচে থাকাটাই প্রকান্ড দুঃসাহস।
১৪| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:৪৩
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
আমাকে ভালোবাসার পর – হুমায়ুন আজাদ
______________________________________
আমাকে ভালবাসার পর আর কিছুই আগের মত থাকবে না তোমার,
যেমন হিরোশিমার পর আর কিছুই আগের মতো নেই
উত্তর থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত।
যে কলিংবেল বাজে নি তাকেই মুর্হুমুহু শুনবে বজ্রের মত বেজে উঠতে
এবং থরথর ক’রে উঠবে দরোজাজানালা আর তোমার হৃৎপিন্ড।
পরমুহূর্তেই তোমার ঝনঝন-ক’রে ওঠা এলোমেলো রক্ত
ঠান্ডা হ’য়ে যাবে যেমন একাত্তরে দরোজায় বুটের অদ্ভুদ শব্দে
নিথর স্তব্ধ হ’য়ে যেত ঢাকা শহরের জনগণ।
আমাকে ভালবাসার পর আর কিছুই আগের মত থাকবে না তোমার।
রাস্তায় নেমেই দেখবে বিপরীত দিক থেকে আসা প্রতিটি রিকশায়
ছুটে আসছি আমি আর তোমাকে পেরিয়ে চ’লে যাচ্ছি
এদিকে-সেদিকে। তখন তোমার রক্ত আর কালো চশমায় এত অন্ধকার
যেনো তুমি ওই চোখে কোন কিছুই দ্যাখো নি।
আমাকে ভালবাসার পর তুমি ভুলে যাবে বাস্তব আর অবাস্তব,
বস্তু আর স্বপ্নের পার্থক্য। সিঁড়ি ভেবে পা রাখবে স্বপ্নের চূড়োতে,
ঘাস ভেবে দু-পা ছড়িয়ে বসবে অবাস্তবে,
লাল টুকটুকে ফুল ভেবে খোঁপায় গুঁজবে গুচ্ছ গুচ্ছ স্বপ্ন।
না-খোলা শাওয়ারের নিচে বারোই ডিসেম্বর থেকে তুমি অনন্তকাল দাঁড়িয়ে
থাকবে এই ভেবে যে তোমার চুলে ত্বকে ওষ্ঠে গ্রীবায় অজস্র ধারায়
ঝরছে বোদলেয়ারের আশ্চর্য মেঘদল।
তোমার যে ঠোঁটে চুমো খেয়েছিলো উদ্যমপরায়ণ এক প্রাক্তন প্রেমিক,
আমাকে ভালবাসার পর সেই নষ্ট ঠোঁট খঁসে প’ড়ে
সেখানে ফুটবে এক অনিন্দ্য গোলাপ।
আমাকে ভালবাসার পর আর কিছুই আগের মত থাকবে না তোমার।
নিজেকে দুরারোগ্য ব্যাধিগ্রস্ত মনে হবে যেনো তুমি শতাব্দীর পর শতাব্দী
শুয়ে আছো হাসপাতালে। পরমুহূর্তেই মনে হবে
মানুষের ইতিহাসে একমাত্র তুমিই সুস্থ, অন্যরা ভীষণ অসুস্থ।
শহর আর সভ্যতার ময়লা স্রোত ভেঙে তুমি যখন চৌরাস্তায় এসে
ধরবে আমার হাত, তখন তোমার মনে হবে এ-শহর আর বিংশ শতাব্দীর
জীবন ও সভ্যতার নোংরা পানিতে একটি নীলিমা-ছোঁয়া মৃণালের শীর্ষে
তুমি ফুটে আছো এক নিষ্পাপ বিশুদ্ধ পদ্ম-
পবিত্র অজর।
১৫| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:৪৪
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: কবি দূরজয়কে ধন্যবাদ।অসাধারণ সব কবিতা এড করার জন্য।
১৬| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:০১
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
ব্লাডব্যাংক - হুমায়ুন আজাদ
________________________
বাঙলার মাটিতে কেমন রক্তপাত হচ্ছে প্রতিদিন
প্রতিটি পথিক কিছু রক্ত রেখে যায় ব্লাডব্যাংকেঃ বাঙলার মাটিতে
জমা রাখে ভবিষ্যৎ ভেবে
প্রতিটি শ্রমিক তার চলার কূটিল পথে রক্তসূর্যবীজ
ইস্কুলের শিশুছাত্র যুবতীযুবক
গ্রামবাসী চাষী রিকশঅলা নড়োবড়ো বৃদ্ধ ক্যানভাসর
বুড়ো মাঝি পদ্মার চিরকাল দন্ডিত ধীবর
সবাই রক্ত রাখে ব্লাডব্যাংকেঃ বাঙলার মাটিতে
বাঙলার সব রক্ত তীব্রভাবে মাটি অভিমুখি
শুকোতে পারেও পদ্মা উবে যেতে পারেও সাগর
বাঙলার নিসর্গমালা একদিন ঝ'রে যেতে পারে
তবু এই রক্ত থেকে একদিন
পাবোই নতুন পদ্মা নিসর্গমালা উঠে-যাওয়া সেই গ্রামটারে
কে আর রক্ত রাখে ব্লাডব্যাংকে হাসপাতালে
সেইখানে লাল রক্ত গোলা হয়ে যায়
কাঁচশিশি ওষুধের বিষাক্ত ছোঁয়ায়
বাঙলার মাটির মতো ব্লাডব্যাংক আর নেই
একবিন্দু লাল রক্ত
দশবিন্দু হয়ে যায় সেই ব্যাংকে রাখার সাথেই
তাই আর যায় না কেউ ব্লাডব্যাংকে হাসপাতালে
বাঙলার সব রক্ত তীব্রভাবে মাটি অভিমুখি
১৭| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:১০
সকাল রয় বলেছেন: আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে
হুমায়ুন আজাদ
আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে।
আমার খাদ্যে ছিল অন্যদের আঙুলের দাগ,
আমার পানীয়তে ছিল অন্যদের জীবাণু,
আমার বিশ্বাসে ছিল অন্যদের ব্যাপক দূষণ।
আমি জন্মেছিলাম আমি বেড়ে উঠেছিলাম
আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে।
আমি দাঁড়াতে শিখেছিলাম অন্যদের মতো,
আমি হাঁটতে শিখেছিলাম অন্যদের মতো,
আমি পোশাক পরতে শিখেছিলাম অন্যদের মতো ক’রে,
আমি চুল আঁচড়াতে শিখেছিলাম অন্যদের মতো ক’রে,
আমি কথা বলতে শিখেছিলাম অন্যদের মতো।
তারা আমাকে তাদের মতো করে দাঁড়াতে শিখিয়েছিলো,
তারা আমাকে তাদের মতো করে হাঁটার আদেশ দিয়েছিলো,
তারা আমাকে তাদের মতো করে পোশাক পরার নির্দেশ দিয়েছিলো,
তারা আমাকে বাধ্য করেছিলো তাদের মতো করে চুল আঁচড়াতে,
তারা আমার মুখে গুজে দিয়েছিলো তাদের দূষিত কথামালা।
তারা আমাকে বাধ্য করেছিল তাদের মতো করে বাঁচতে।
আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে।
আমি আমার নিজস্ব ভঙ্গিতে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম,
আমি পোশাক পরতে চেয়েছিলাম একান্ত আপন রীতিতে,
আমি চুল আঁচড়াতে চেয়েছিলাম নিজের রীতিতে,
আমি উচ্চারন করতে চেয়েছিলাম আন্তর মৌলিক মাতৃভাষা।
আমি নিতে চেয়েছিলাম নিজের নিশ্বাস।
আমি আহার করতে চেয়েছিলাম আমার একান্ত মৌলিক খাদ্য,
আমি পান করতে চেয়েছিলাম আমার মৌলিক পানীয়।
আমি ভুল সময়ে জন্মেছিলাম। আমার সময় তখনো আসে নি।
আমি ভুল বৃক্ষে ফুটেছিলাম। আমার বৃক্ষ তখনো অঙ্কুরিত হয় নি।
আমি ভুল নদীতে স্রোত হয়ে বয়েছিলাম। আমার মেঘ তখনো আকাশে জমে নি।
আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে।
আমি গান গাইতে চেয়েছিলাম আপন সুরে,
ওরা আমার কন্ঠে পুরে দিতে চেয়েছিলো ওদের শ্যাওলা-পড়া সুর।
আমি আমার মতো স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিলাম,
ওরা আমাকে বাধ্য করেছিলো ওদের মতো ময়লা-ধরা স্বপ্ন দেখতে।
আমি আমার মতো দাঁড়াতে চেয়েছিলাম,
ওরা আমাকে নির্দেশ দিয়েছিলো ওদের মতো মাথা নিচু করে দাঁড়াতে।
আমি আমার মতো কথা বলতে চেয়েছিলাম,
ওরা আমার মুখে ঢুকিয়ে দিতে চেয়েছিলো ওদের শব্দ ও বাক্যের আবর্জনা।
আমি খুব ভেতরে ঢুকতে চেয়েছিলাম,
ওরা আমাকে ওদের মতো করেই দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছিলো বাইরে।
ওরা মুখে এক টুকরো বাসি মাংস পাওয়াকে বলতো সাফল্য,
ওরা নতজানু হওয়াকে ভাবত গৌরব,
ওরা পিঠের কুঁজকে মনে করতো পদক,
ওরা গলার শেকলকে মনে করতো অমূল্য অলংকার।
আমি মাংসের টুকরা থেকে দূরে ছিলাম। এটা ওদের সহ্য হয় নি।
আমি নতজানু হওয়ার বদলে নিগ্রহকে বরণ করেছিলাম। এটা ওদের সহ্য হয় নি।
আমি পিঠ কুঁজের বদলে বুকে ছুরিকাকে সাদর করেছিলাম। এটা ওদের সহ্য হয় নি।
আমি গলার বদলে হাতেপায়ে শেকল পড়েছিলাম। এটা ওদের সহ্য হয় নি।
আমি অন্যদের সময়ে বেঁচে ছিলাম। আমার সময় তখনো আসেনি।
ওদের পুকুরে প্রথাগত মাছের কোনো অভাব ছিলো না,
ওদের জমিতে অভাব ছিলো না প্রথাগত শস্য ও শব্জির,
ওদের উদ্যানে ছিলো প্রথাগত পুষ্পের উল্লাস।
আমি ওদের সময়ে আমার মতো দিঘি খুঁড়েছিলাম ব’লে
আমার দিঘিতে পানি ওঠে নি।
আমি ওদের সময়ে আমার মতো চাষ করেছিলাম ব’লে
আমার জমিতে শস্য জন্মে নি।
আমি ওদের সময়ে আমার মতো বাগান করতে চেয়েছিলাম ব’লে
আমার ভবিষ্যতের বাগানে একটিও ফুল ফোটে নি।
তখনো আমার দিঘির জন্য পানি উৎসারণের সময় আসে নি।
তখনো আমার জমির জন্য নতুন ফসলের সময় আসে নি।
তখনো আমার বাগানের জন্যে অভিনব ফুলের মরশুম আসে নি।
আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে।
আমার সবকিছু পর্যবসিত হয়েছে ভবিষ্যতের মতো ব্যর্থতায়,
ওরা ভ’রে উঠেছে বর্তমানের মতো সাফল্যে।
ওরা যে-ফুল তুলতে চেয়েছে, তা তুলে এনেছে নখ দিয়ে ছিঁড়েফেড়ে।
আমি শুধু স্বপ্নে দেখেছি আশ্চর্য ফুল।
ওরা যে-তরুণীকে জরিয়ে ধরতে চেয়েছে তাকে ধরেছে দস্যুর মতো।
আমার তরুণীকে আমি জরিয়ে ধরেছি শুধু স্বপ্নে।
ওরা যে-নারীকে কামনা করেছে, তাকে ওরা বধ করেছে বাহুতে চেপে।
আমার নারীকে আমি পেয়েছি শুধু স্বপ্নে।
চুম্বনে ওরা ব্যবহার করেছে নেকড়ের মতো দাঁত।
আমি শুধু স্বপ্নে বাড়িয়েছি ওষ্ঠ।
আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে।
আমার চোখ যা দেখতে চেয়েছিলো, তা দেখতে পায় নি।
তখনো আমার সময় আসে নি।
আমার পা যে-পথে চলতে চেয়েছিলো, সে পথে চলতে পারে নি।
তখনো আমার সময় আসে নি।
আমার হৃদয় যা নিবেদন করতে চেয়েছিলো, তা নিবেদন করতে পারে নি।
তখনো আমার সময় আসে নি।
আমার কর্ণকুহর যে-সুর শুনতে চেয়েছিলো, তা শুনতে পায় নি।
তখনো আমার সময় আসে নি।
আমার ত্বক যার ছোঁয়া পেতে চেয়েছিলো, তার ছোঁয়া পায় নি।
তখনো আমার সময় আসে নি।
আমি যে পৃথিবীকে চেয়েছিলাম, তাকে আমি পাই নি।
তখনো আমার সময় আসে নি। তখনো আমার সময় আসে নি।
আমি বেঁচে ছিলাম
অন্যদের সময়ে।
১৮| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:১১
সকাল রয় বলেছেন: বাঙলাদেশের কথা (আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম)
-হুমায়ুন আজাদ
যখন আমরা বসি মুখোমুখি, আমাদের দশটি আঙুল হৃৎপিন্ডের মতো কাঁপতে থাকে
দশটি আঙুলে, আমাদের ঠোঁটের গোলাপ ভিজে ওঠে আরক্ত শিশিরে,
যখন আমরা আশ্চর্য আঙুলে জ্বলি, যখন আমরাই পরষ্পরের স্বাধীন স্বদেশ,
তখন ভুলেও কখনো আমাকে তুমি বাঙলাদেশের কথা জিজ্ঞেস করো না;
আমি তা মূহূর্তেও সহ্য করতে পারি না, -তার অনেক কারণ রয়েছে।
তোমাকে মিনতি করি কখনো আমাকে তুমি বাঙলাদেশের কথা তুলে কষ্ট দিয়ো না।
জানতে চেয়ো না তুমি নষ্টভ্রষ্ট ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইলের কথা, তার রাজনীতি,
অর্থনীতি, ধর্ম, পাপ, মিথ্যাচার, পালে পালে মনুষ্যমন্ডলি, জীবনযাপন, হত্যা, ধর্ষণ,
মধ্যযুগের দিকে অন্ধের মতোন যাত্রা সম্পর্কে প্রশ্ন ক’রে আমাকে পীড়ন কোরো না;
আমি তা মুহূর্তেও সহ্য করতে পারি না, – তার অনেক কারণ রয়েছে ।
তোমাকে মিনতি করি কখনো আমাকে তুমি বাঙলাদেশের কথা তুলে কষ্ট দিয়ো না।
জানতে চেয়ো না তুমি নষ্ট ভ্রষ্ট ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ
মাইলের কথা: তার রাজনীতি
অর্থনীতি, ধর্ম, পাপ, মিথ্যাচার, পালে পালে মনুষ্যম-লী
জীবনযাপন, হত্যা, ধর্ষণ
মধ্যযুগের দিকে অন্ধের মতোন যাত্রা সম্পর্কে প্রশ্ন
করে আমাকে পীড়ন কোরো না
তার ধানক্ষেত এখনো সবুজ, নারীরা এখনো রমনীয়, গাভীরা এখনো দুগ্ধবতী,
কিন্তু প্রিয়তমা, বাঙলাদেশের কথা তুমি কখনো আমার কাছে জানতে চেয়ো না;
আমি তা মুহূর্তেও সহ্য করতে পারি না, তার অনেক কারণ রয়েছে।
১৯| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:১২
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
আমার কাছে হুমায়ুন আজাদের শ্রেষ্ঠ কবিতার বইটা আছে। এখানে দেখি তার মধ্যে থেকেও বাছাই হইসে।
২০| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:১২
সকাল রয় বলেছেন: আমার কুঁড়েঘরে
-হুমায়ুন আজাদ
আমার কুঁড়েঘরে নেমেছে শীতকাল
তুষার জ’মে আছে ঘরের মেঝে জুড়ে বরফ প’ড়ে আছে
গভীর ঘন হয়ে পাশের নদী ভ’রে
বরফ ঠেলে আর তুষার ভেঙে আর দু-ঠোঁটে রোদ নিয়ে
আমার কুঁড়েঘরে এ-ঘন শীতে কেউ আসুক
আমার গ্রহ জুড়ে বিশাল মরুভূমি
সবুজ পাতা নেই সোনালি লতা নেই শিশির কণা নেই
ঘাসের শিখা নেই জলের রেখা নেই
আমার মরুভূর গোপন কোনো কোণে একটু নীল হয়ে
বাতাসে কেঁপে কেঁপে একটি শীষ আজ উঠুক
আমার গাছে গাছে আজ একটি কুঁড়ি নেই
একটি পাতা নেই শুকনো ডালে ডালে বায়ুর ঘষা লেগে
আগুন জ্ব’লে ওঠে তীব্র লেলিহান
বাকল ছিঁড়েফেড়ে দুপুর ভেঙেচুরে আকাশ লাল ক’রে
আমার গাছে আজ একটা ছোট ফুল ফুটুক
আমার এ-আকাশ ছড়িয়ে আছে ওই
পাতটিনের মতো ধাতুর চোখ জ্বলে প্রখর জ্বালাময়
সে-তাপে গ’লে পড়ে আমার দশদিক
জল ও বায়ুহীন আমার আকাশের অদেখা দূর কোণে
বৃষ্টিসকাতর একটু মেঘ আজ জমুক
আমার কুঁড়েঘরে নেমেছে শীতকাল
তুষার জ’মে আছে ঘরের মেঝে জুড়ে বরফ প’ড়ে আছে
গভীর ঘন হয়ে পাশের নদী ভ’রে
বরফ ঠেলে আর তুষার ভেঙে আজ দু-ঠোঁটে রোদ নিয়ে
আমার কুঁড়েঘরে এ-ঘন শীতে কেউ আসুক
২১| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:১৩
রাইসুল নয়ন বলেছেন:
ভর্তা পোস্ট দেয়ার কথা ছিল, এসে দেখি কবিতা উৎসব ।।
এতো কবিতা একসাথে দেখে ভালোলাগছে ।।
কবিতা আমার দেখতেই ভালোলাগে,পড়তে ইচ্ছা করেনা কিংবা পড়ার জন্য যে জ্ঞান দরকার তা আসলেই আমার নেই ।।
কবিতার মতো থাকুন ।।
০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:১৫
বৃষ্টিধারা বলেছেন: ভর্তা পোষ্ট ও দিয়েছি,চেক করেন ।
২২| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:৪৯
হাতীর ডিম বলেছেন: সবগুলো কবিতাই ভাল লাগলো। তবে "সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে" আমার খুব প্রিয়। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
২৩| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:২৯
সুমন কর বলেছেন: সবাই কি কবিতা টাইপ করেছি, নাকি কোন সাইট থেকে পেস্ট করেছে !!!
২৪| ০৬ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:১৬
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
@সুমন কর,
আমার দেয়াগুলো নিয়ে বলি।
সব কটা নিজে টাইপ করা। নিজে ফেসবুকে একটা গ্রুপে কবিতা শেয়ার করি। সেখানে হুমায়ুন আজাদের শেয়ার করা কবিতার কয়েকটা এখানে দেয়া।
২৫| ০৬ ই মার্চ, ২০১৪ ভোর ৫:৩২
রাসেলহাসান বলেছেন: সব গুলোই ভালো লাগলো।
২৬| ০৬ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:২৯
অদৃশ্য বলেছেন:
খুব সুন্দর লিখাগুলো...
বৃষ্টিধারার জন্য
শুভকামনা...
২৭| ০৬ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৯
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন: সবাই দিল তাই আমিও একটা দিলাম।
মানুষের সঙ্গ ছাড়া
হুমায়ুন আজাদ
মানুষের সঙ্গ ছাড়া আর সব কিছু ভাল লাগে; আমের শাখায়
কালোকাক, বারান্দায় ছোট্র চড়ুই, শালিকের ঝাক,
আফ্রিকার অদ্ভুদ গন্ডার, নেকড়ে, হায়েনা, রাস্তার কোনায়
মলপরিতৃপ্ত নোংরা কুকুর, বহু দূরে ডাহুকের ডাক
সুখী করে, এই সব সুখ আছে ব'লে আজো বেচে আছি, এবং এখনো
বাচতে ইচ্ছে করে, তাই হয়তো আত্মহত্যায় যাবো না কখনো।
মানুষ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে চাই না; শুধু ভাবি
এতো কুতসিত কি করে হলো এই জন্তুগুলো? প্রতেকের মুখে
কি ক'রে জমলো এতো আবর্জনা? কি ক'রে সবাই এতো অস্বভাবী
হয়ে উঠলো? আজ তারা প্রত্যেকের সংঘ, প্রত্যেকের চোখে
হিংসা, প্রত্যেকেই আগ্নয়াস্ত্র; প্রত্যেকেই এক একটি তীব্র মতবাদ,
গ্রীবা চেপে উপভোগ করতে চায় জীবনের মনোরম স্বাদ।
মানুষের সঙ্গ ছাড়া সব ভালো লাগে; অতিশয় দূরে বেচে আছি,
পথের কুকুর দেখে মুগ্ধ হই, দেখি দূরে আজো উড়ে মুখর মৌমাছি।
২৮| ০৬ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:২৬
এহসান সাবির বলেছেন: ভালো থেকো, ভালো থেকো, ভালো থেকো।
আমার প্রিয় একটি কবিতা।
অনেক ধন্যবাদ শেয়ার করবার জন্য।
২৯| ০৯ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:৪২
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
অসাধারণ.... কবিতা।
‘ভালো থেকো’ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে এখনও
প্রিয় লেখক।
৩০| ০৯ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:০৫
আদ্রিজা বলেছেন: ভালো থেকো ফুল, মিষ্টি বকুল, ভালো থেকো।
ভালো থেকো ধান, ভাটিয়ালি গান, ভালো থেকো।
ভালো থেকো মেঘ, মিটিমিটি তারা।
ভালো থেকো পাখি, সবুজ পাতারা।
ভালো থেকো
..কবিতার নাম "শুভেচ্ছা"
ভালো লাগলো।
শুভকামনা রইল।
৩১| ১৫ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৫৮
জোৎস্নাআলো বলেছেন: ভালো লাগলো।
শুভকামনা রইল।
৩২| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
রাত্রি - হুমায়ুন আজাদ
___________________
আসে রাত্রি জল্লাদের মতো, আমি ভয় পাই
যেমন ভয় পায় দন্ডিত লোকেরা।
রাত্রি এলেই ঘুমোতে হয় শরীর রাখতে হয় খাটে
চোখ বন্ধ করতে হয়
রাত্রি এলে চিরকাল প্রাসাদ বস্তি সব ঘুমোতে যায়
ঘুমোতে হবে ভাবতেই আমি ভয় পাই
আমার সমস্ত নিদ্রা গোপনে হরণ ক'রে আজ
একজন নিবিড় ঘুমোচ্ছে বগুড়ায়।
রাত বারোটায় ঘুমোতে যাই।
মাথা রাখি বালিশে কাৎ হই
বাঁ হাত ছড়িয়ে দিই একদিকে
আমি মুঠো ভ'রে ভ'রে ধরবো নিদ্রাকে।
১২:৩০-এ আমার শরীর গলে যায়।
১২:৪৫-এ আবার শক্ত হয়।
১:১৫-তে আমার শরীর বাষ্পের মতো উবতে থাকে।
১:৩০-এ আমার শরীর বরফের মতো জ'মে যায়।
২:১০-এ আমার শরীর আবার গলতে থাকে।
তারপর শক্ত হয়।
আবার বাষ্পের মতো উবতে থাকে।
আবার বরফের মতো জ'মে যায়।
রাত্রি এলেই আমি ভয় পাই
আমার সমস্ত ঘুম চুপিসারে চুরি ক'রে আজ
একজন নিবিড় ঘুমোচ্ছে বগুড়ায়।
৩৩| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৮
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
হরোস্কোপ - হুমায়ুন আজাদ
_______________________
আমি বেরুলেই সূর্য নেভে
বৃষ্টি নামে কাঁটাতারের মতোন
নষ্ট হয় রাজপথ শহর বন্দর গ্রাম
সারা বাঙলা বন্যায় ভেসে যায়
আমি উঠলেই ট্যাক্সির টায়ার ফাটে
চৌরাস্তার নষ্ট লালবাতি
চারদিক চমকে দিয়ে আচমকা জ্ব'লে ওঠে
ভীষণ বিব্রত হয় রিকশা ইস্কুটার বাস জনসাধারণ
আমার অভিসার দিনে হঠাৎ ঘোষিত হয় পূর্ণ হরতাল
যানবাহন
উদ্যান
পার্ক
সব কিছুতে প্রবেশ নিষেধ
কস্তুরীর সঙ্গে যে-দিন কলাভবনের তেতলার
পশ্চিম কোণায় দেখা করতে যাবো
হঠাৎ মহররম উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়
বা স্ট্যাবড হয় ছাত্রনেতা
চারদিকে ছড়ায় সন্ত্রাস
যে-দিন আমি প্রেমনিবেদন করবো ব'লে ভাবি
বিনামেঘে বজ্রপাতের মতো
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হার্টফেল ক'রে মারা যায়
আমাদের আর কোনো দিন দেখাই হয় না।
৩৪| ০৬ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:২৭
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
কথা দিয়েছিলাম তোমাকে - হুমায়ুন আজাদ
______________________________
কথা দিয়েছিলাম তোমাকে রেখে যাবো
পুষ্ট ধান মাখনের মতো পলিমাটি পূর্ণচাঁদ ভাটিয়ালি
গান উড্ডীন উজ্জ্বল মেঘ দুধেল ওলান মধুর চাকের মতো গ্রাম
জলের অনন্ত বেগ রুইমাছ পথপাশে শাদা ফুল অবনত গাছ
আমের হলদে বউল জলপদ্ম দোয়েল মৌমাছি
তোমার জন্যে রেখে যাচ্ছি নষ্ট ফুলে দুষ্ট কীট
ধানের ভেতরে পুঁজ টায়ারের পোড়া গন্ধ পঙ্কিল তরমুজ
দুঃস্বপ্নআক্রান্ত রাত আলকাতরার ঘ্রাণ ভাঙা জলযান অধঃপাত
সড়কে ময়লা রক্ত পরিত্যক্ত ভ্রুণ পথনারী বিবস্ত্র ভিখারি
শুকনো নদী হন্তারক বিষ আবর্জনা পরাক্রান্ত সিফিলিস
কথা দিয়েছিলাম তোমাকে রেখে যাবো
নিকোনো শহর গলি লোকোত্তর পদাবলি রঙের প্রতিভা
মানবিক গূঢ় সোনা অসম্ভব সূত্রে বোনা স্বাধীনতা শুভ্র স্বাধিকার
অন্তরঙ্গ অক্ষরবৃত্ত দ্যুতিময় মিল লয় জীবনের আনন্দনিখিল
গাঢ় আলিঙ্গন সুবাতাস সময়ের অমল নিশ্বাস
তোমার জন্যে রেখে যাচ্ছি নোংরা বস্তি সৈন্যাবাস
বর্বর চিৎকার বুট রাষ্ট্রধর্ম তেলাপোকা মধ্যযুগ অন্ধ শিরস্ত্রাণ
মৌলবাদ রেখে যাচ্ছি মারণাস্ত্র আততায়ীর উল্লাস পোড়া ঘাস সন্ত্রাস
মরচে-পড়া মাংস রেখে যাচ্ছি কালরাত্রি সান্ধ্য আইন অনধিকার
সমূহ পতন খাদ তোমার জন্যে রেখে যাচ্ছি অসংখ্য জল্লাদ
৩৫| ১৯ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:৪৯
জসীম অসীম বলেছেন: পৃথিবীর সবচেয়ে দরের লেখক ভাই।কী প্রতিভা------------। ধন্যবাদ।
৩৬| ০৭ ই মে, ২০১৬ সকাল ৮:১০
রুদ্র জাহেদ বলেছেন: অসাধারন পোস্ট।অনেকগুলো প্রিয় কবিতা একসাথে।অবশ্য কাব্যসমগ্র থেকে বেশি পড়ি
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:২০
স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: বাহ ! বেশ লাগলো, প্রথম দুটা পড়লাম খুব ভালো লাগলো !
শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ!