নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চাঁদের ক্রূর হাসি .....

আমি নগণ্য এক মানুষ

চাঁদপুরের চাঁদ

আমি রাঘব বোয়াল নই, চুনোপুটি।

চাঁদপুরের চাঁদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কন্যা সন্তান জন্মের দায় মায়ের নয়

২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৩:৫৮

মৌ বাবা-মায়ের দ্বিতীয় সন্তান। ওর মায়ের নাম সানু আর বাবার নাম মানিক। মৌ আমাদের আজকের গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র।

----------------------------------------------------------------

সানু উচ্চবংশীয় পরিবারের এক মেয়ে। সানুরা ১০ ভাই-বোন। ক্লাস সেভেনে পড়ার পর বিয়ে হয় পাশের গ্রামের মানিকের সঙ্গে। বিএ পাস মানিক বাংলাদেশ সেনা বাহিনীতে চাকরি করত। দুই পরিবারের অনুমতিতে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের মাত্র ৩ মাস পর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মেহেদী হাতে পরা সানুকে ঘরে রেখে মানিক যুদ্ধে যায়। তার সোনার বাংলা আর জন্মভূমির মানচিত্রকে নিজের করে পাবার জন্য। রক্তজবা আর শ্যামল সবুজের পতাকাকে অর্জন করার জন্য। হাজার হাজার যোদ্ধার সঙ্গে মানিক ছুটে যায়। কিশোরী সানু বসে বসে হাতের মেহেদী দেখছে । ৯ মাস পর মানিক ফিরে আসে তার মা বাবা জন্য একটি স্বাধীন দেশ নিয়ে। আর নববধূ সানুকে দেয় বন্দুকের ভেতরের বুলেটের খোসাটা । পায়ে বুলেটের ঘা এখনও থকথক করছে । সবাই মানিককে ফিরে পেয়ে আনন্দিত , আনন্দের ধারা বইতে থাকে তাদের ঘরে । সানু প্রথম মা হবে, প্রথম সন্তান যাই হোক কোন আফসোস নেই। সানুর প্রথম সন্তান মেয়ে, নীলা । মানিক শিক্ষিত এক সরকারী কর্মচারী। জীবনের ভাল-মন্দ সব বোঝে। ছেলে এবং মেয়ের তফাত বুঝে। আবার মা হবে সানু, সবার আশা মেয়ের পর ছেলে হবে।এবার বংশরক্ষাকারী একটা ছেলের জন্ম দিবে সানু । ভেতরে ভেতরে সানু ভাবে যদি এবারও তার মেয়ে হয় তাহলে কি হবে। দিন যায় মাস যায় সময় কারও জন্য বসে থাকে না। দিন ফুরিয়ে আসছে, সানুর ভাবনা জোরালো হচ্ছে। সৃষ্টি কর্তার হুকুমে সানু আবার মা হলো। সবার উৎকণ্ঠা কি হল, কি হল! যাহ, সানু আবার এক কন্যাসন্তানের মা হয়েছে। এই কন্যা সন্তানের নাম মৌ। মৌ-এর জন্ম দিনের দিন তাদের পরিবারের মনোভাবের সামান্য ধারণা- মানিক সন্তান হবার পুর্বাভাস পেয়ে আগের দিন এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যায়। কারণ ছিল যদি মেয়ে হয় তাহলে সে সহ্য করতে পারবে না। মানিকের বাবা ছিলেন স্কুলশিক্ষক। বৌ অসুস্থ হবার খবর পেয়ে বাড়ির সামনে গাছের নিচে বসে বসে একটা নাতির মুখ দেখার স্বপ্ন দেখছে। নাতনির জন্মখবর শুনে মুখ দেখার জন্য ছুটে আসেনি। তবে পরে তিনি এই নাতনিকেই সব চেয়ে বেশি ভাল বেসেছিলেন। মানিকের মাও যা-ই হয়েছে তা-ই মেনে নিয়ে সেবা করেছে। আর শোনা মতে, সানুর মেয়ে মৌ-এর জন্মের পর ৩ দিন সানুর মুখে হাসি ছিল না। অর্থাৎ পুরো পরিবারের কেউই মৌ-এর জন্মটাকে ভালভাবে মেনে নিতে পারেনি।



সানু একটু স্বাভাবিক ছিল কিন্তু পরি বারের সবার আচরণে সেও কেমন জানি হয়ে যায়। সব কিছুর মাঝে তার পরও কেউ যেন কারও জন্য অপেক্ষা করে না। মানিক বাড়ি আসে কিন্তু স্বাভাবিক নয়। হায়রে জন্মদাতা সন্তানের জন্মে তুমি থাকবে তার পাশে , যাকে তুমিই করেছ তোমার সন্তানের গর্ভধারিণী । মৌ-এর জন্মটাই হয়ত তাকে ঠিকভাবে চলতে শেখাবে। মানিক গ্রাম ছেড়ে শহরে কর্মস্থলে আসে। মনের ভেতর মৌ-এর জন্মটা তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।শিক্ষিত মানিকের মাথায় একটা শিক্ষিত পোকা আসলো। সানু কখনও ছেলেসন্তান জন্ম দিতে পারবে না।কিন্তু মানিকের একটা ছেলে প্রয়োজন। ক্রমে মানিক বদলে যেতে থাকে। ওদের পরিবারে একটা কালো ছায়া নামতে শুরু করে। মা-বাবা ঠিকভাবে মানিককে কাছে পায় না। সানু তার স্বামীর আদর আর আবেগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নীলা তার বাবার সোহাগ থেকে দূরে আছে। শুধু মৌ-এর জন্মের পর থেকে পরিবারের সবাই তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সবার মনে একটাই প্রশ্ন মানিক বদলে যাচ্ছে। মৌ-এর বয়স ১ বছর হতে না হতেই অপ্রিয় একটা সত্য কথা প্রকাশ পেল। সবাই জানে শিক্ষিত মানিক আবার বিয়ে করেছে। পুত্রসন্তানের আশায় মানিক আবার শাদী করেছে। মৌ-এর পরিবারটি বদলে গেল। এখন আর আগের মতো সবাই সবাইকে নিয়ে ভাবে না। মৌ ছোট, সে কিছুই বোঝে না। সানুর বাবার বাড়ির লোকেরা সানুকে নিয়ে যেতে চায় কিন্তু সানু যায় না, দুই মেয়েকে বুকে নিয়ে স্বামীর সংসারে পড়ে থাকে। সানু সবই বোঝে কিন্তু কিছুই করতে পারে না। একটা মেয়ে সন্তানের জন্ম পাল্টে দিল একটা সংসার। যে সংসারে শিক্ষার কোন মূল্য নেই, আছে শুধু একটা ছেলে সন্তানের মূল্য। এর মাঝে কেটে যায় ১৫টি বছর। মৌ-এর মায়ের কোলে পর পর দু'টি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। আর মানিকের ২য় স্ত্রীর কোলে ৪টি সন্তানের হয়। সব মিলিয়ে মানিক ৬ কন্যাসন্তানের আর ২ পুত্র সন্তানের জন্মদাতা হন। একদিন মৌ ঘুমিয়ে আছে পাশে ওর বাবা আর অন্য এক আত্মীয় কথা বলছে।হঠাৎ ওর ঘুম ভেঙ্গে শুনতে পায় ওর বাবা বলছে, মৌ-টা যদি ছেলে হতো তাহলে তো আরেকটা বিয়ে করতাম না, ওর জন্মটাই তো আমাকে বিয়ে করতে বাধ্য করল। আমাদের সমাজের এক শিক্ষিত বাবা এভাবেই বলছে তার ভুলগুলোর কথা। মৌ কথাটা শোনার পর থেকে কেমন জানি হতে লাগল। মৌ ভাবে একটা সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে-এটা কার ওপর নির্ভর করে। তখন থেকে সে তার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে যাচ্ছে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী হয়েও মৌ নীলার বিজ্ঞান বই থেকে ছেলে-মেয়ের জন্মের ব্যাপারে X ও Y-ক্রোমোসোমের কথা জানতে পারে। মৌ জানতে পারে একটা সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে-এটা বাবার ওপর নির্ভর করে। অতঃপর, সেই ১৫ বছর বয়স থেকে আজ পর্যন্ত মৌ তার জন্ম দিন পালন করে না। যখনি প্রতিটা বছর এই অভিশপ্ত দিনটা আসে তখন মৌ স্তব্ধ হয়ে যায়। এই দিনটাকে সে শুভ দিন হিসাবে নিতে পারে না। খুব ভয়ে ভয়ে থাকে, কেউ যেন ওই অভিশপ্ত দিনে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে না পারে। আর দিনটা যখনি পার হয়ে যায় তখন মৌ ভাবে নিজেকে একজন প্রস্ফুটিত মানুষ। আজ মৌ-এর ঘরে সন্তান আছে। ও বোঝে একটা সন্তান হবার ক্ষেত্রে মায়ের কোন হাত থাকে না। সবই সৃষ্টিকর্তার হুকুমে হয়। প্রতিদিনের পত্রিকায় যখন দেখতে পায় কন্যা সন্তান জন্ম দেবার জন্য মাকে তালাক দেয়া হয়েছে। মাকে 'একঘরে' করে রাখা হয়েছে। কন্যা সন্তানকে মেরে ফেলছে। আবার বিয়ে করছে। তখন বুক ফাটা কান্না আসে মৌ-এর চোখে। মৌ-এর ভাবনা আর কত শত বর্ষ পালন করলে একজন মা তার সন্তান মেয়ে হবার দোষে দোষী হবে না। একটা সন্তান তার প্রিয় জন্মদিনটাকে অভিশপ্ত মনে করবে না। নিজেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা থেকে বঞ্চিত করে ঘরে বন্দী করবে না।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মার্চ, ২০১৩ ভোর ৫:৪৭

চাঁদপুরের চাঁদ বলেছেন: যে জাতি তার বাচ্চাদের বিড়ালের ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়ায়, তারা সিংহেরসাথে লড়াই করা কিভাবে শিখবে?
যারা পানিতে ডুবে যাওয়ার ভয়ে তার সন্তানকে ডোবাতে নামতে দেয় না, কিভাবে সে সন্তান আটলান্টিক পাড়িদিবে?
---শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.