![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজেকে ভালোবাসি, ভালোবাসি আমার কন্যা মনস্বিতা মেধাকে, ভালোবাসি কবিতা, গান, আর মানুষ, সকালের শিশির, সব চেয়ে বেশি ভালোবাসি আমার বাংলাদেশকে।
এই সময়ের টিভি স্ক্রল দেখে যে কেউ বলবে জামায়াত শিবিরের বীরত্ব গাঁথার প্রচার চলছে, তারা একের পর এক তাদের সফল অভিযান পরিচালনা করছে আর সাধারণ মানুষ হাতপা বাঁধা অপ্রস্তুত, নিরস্ত্র, অসহায় পুড়ছে মরছে, তারা দেশটাকে ধ্বংস, নি:শ্চিহ্ন করে দেবার পরিকল্পনা একের পর এক বাস্তবায়ন করে চলেছে। যে এলাকায় থাকি এমনিতেই নির্জন, কাদের মোল্লার ফাঁসির পর থেকে যেনো এখানে নেমে এসেছে পিনপতন নীরবতা, কাদের মোল্লার ফাঁসি হয়ে যাওয়ার পর একটা ছোট্ট মিছিল পর্যন্ত হয়নি আশে পাশে, খুব অপেক্ষায় ছিলাম একটা আনন্দ মিছিলের, হয়নি। আচ্ছা ছাত্রলীগ কি বিলুপ্ত লীগ হয়ে গেছে? কিংবা এটি কি বাংলাদেশের বাইরের কোনো এলাকা যে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের কোনো সংগঠন গড়ে উঠেনি এখানে? যারা ছোট হলেও একটা আনন্দ মিছিল করবে। আমার উল্টো পাশের বাড়িটি একটু পুরোনো ধাঁচের, একটু নড়বড়ে মতো। সামনে দেখি সারাক্ষণ ঝুলে থাকে এক জন মুক্তিযোদ্ধার নাম সম্বলিত মালিকানা টাইপ বোর্ড। কান পেতে থাকি যদি একটু শুনতে পাই কোনো দেশের গান! কিংবা সেই রকম কিছু। সে বাড়ির বড় বড় সব ছেলেমেয়েদের বেরুতে ঢুকতে দেখি সেরকম কিছু দেখি না, তাই সেই মুক্তিযোদ্ধার নামটি চোখে বড্ড পীড়া দেয়।
একটা এলাকায় থাকতে থাকতে সেই এলাকার চরিত্র ভাব বোঝা হয়ে যায়, গতকাল সন্ধ্যায় মেয়ে খেলছিলো মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ খেলা, হাশেম হলো রাজাকার আর সে নিজে হয় সব সময়ের মুক্তিযোদ্ধা -শাহবাগে গিয়ে গিয়ে শ্লোগানও শিখেছে সেই রকম লাকির মতো, খেলায় চলছিলো সেই শ্লোগান পর্ব -জামাতশিবির রাজাকার এই মূহুর্তে বাংলা ছাড়, হাশেম রাজাকার হলেও তাকে এই সময় মেধার সাথে শ্লোগান ধরতে হয়। ক-তে কাদের মোল্লা -তুই রাজাকার তুই রাজাকার। জানি জানি সবাই জানি জামাত মানে পাকিস্তানী। এই সময় রাস্তায় কে যেন হাঁচি দিলো, মনে হলো আমার কানের কাছেই। হঠাৎ আমি উঠে মেধার মুখে হাত চেপে ধরলাম, আমার মনে হলো একজন রাজাকারের ফাঁসি হওয়ার পরও যেখানে একটা আনন্দ মিছিল হয় না, কিশোর-তরুণরা সব মোড়ে মোড়ে আড্ডা দেয়, সে আড্ডাতেও কান পাতার চেষ্টা করে হতাশ হয়েছি। তাই মেয়েকে বললাম
-মা থাক আর শ্লোগান দিতে হবে না
-কেনো? ওর চোখে বিপন্ন বিস্ময়, ও গলা চেপে ফিসফিস করে বলে
-কেনো কি হয়েছে মামণি, কেনো শ্লোগান দেবো না?
-অন্য খেলা খেলো
-না আমার মুক্তিযুদ্ধ খেলতে ভালো লাগছে, কি হয়েছে খেললে, মেয়েটা জানি কেমন তর্কবাজ, রাগ উঠে যায়, একটু রেগেই বলি
-যাও পড়তে বসো
-এখন তো আমার পড়ায় ব্রেক চলছে। বলো না কেনো তুমি আমার মুখ চেপে ধরলে? কেউ শুনে ফেলবে তাই
-হ্যাঁ
-শুনলে কি হয়? কাদের মোল্লারতো ফাঁসি হয়ে গেছে, ওকি আর শুনতে পাবে?
-হ্যাঁ পাবে, কাদের মোল্লার ভুতগুলোরতো এখনো ফাঁসি হয়নি, দেখছো না টিভিতে ওরা সব কেমন আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছে? তুমি আর এতো জোরে শ্লোগান দেবে না, বাইরের অনেকেই এই সব পছন্দ নাও করতে পারে, ও এবার গল্পের গন্ধ পায়
-ভুত রাজাকার কি এখানেও আসতে পারে?
-হ্যাঁ
-ওরা আগুন কোথায় পায় মামণি?
-পায়, ওদের কাছে থাকে
-ওরা কি পেটের ভেতর আগুন রাখে?
-হুম, এটা ও মহররমের সময় দেখেছে মুখ থেকে কেরোসিন বের করে আগুন জ্বালাতে
-ওদের পেট কেনো পুড়ে যায় না আগুনে? মনে এসে গিয়েছিলো বলি -আগুন আগুনকে পোড়ায় না পোড়ায় ফাগুনকে, নিজেকে সতর্ক করে ফেলি কারণ এর পর ও বলবে
-ফাগুন কি মানমণি? এভাবেই ওর প্রশ্নের লক্ষকোটি ডালপালা গজিয়ে যাবে। বুদ্ধি এঁটে ফেলি মনে মনে
-আচ্ছা মেধা তুমি কি কাদের মোল্লার ফাঁসি দেয়ার কোনো ছবি এঁকেছো? যাও রাজাকারের ফাঁসি হচ্ছে এমন একটা ছবি এঁকে ফেলো, ছবি এঁকেও কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ করা যায়, এবার যাও
-কিন্তু আমিতো রাজাকারের ফাঁসি দেখিনি
-দেখেছোতো, শাহবাগে দেখেছো না? ও খুশি হয়ে যায়, হাশেমকে ডেকে বলে
-হাশেম আমার ওয়াটার কালার দাও, আমি কাদের মোল্লার ফাঁসি দেবো। আমি ওকে উস্কে দিতে বলি
-কাদের মোল্লারতো ফাসি হয়ে গেছে তুমি এবার সাঈদীর ফাঁসি দাও, এটা ওর পছন্দ হয়, ও এবার হাশেমকে ডিরেকশন দিতে দিতে বলে
-বুঝছো হাশেম ভাইয়া শ্লোগান আর দেয়া যাবে না, মা বলেছে যদি কি রাজাকাররা শুনে ফেলে ওরা এখানেও একটা ককটেল থ্রো করতে পারে। চলো আমি এখন ছবি এঁকে সাঈদীর ফাঁসি দেবো, ও ব্যাস্ত হয়ে উঠে।
ওর কথা শুনে আমার ভেতরের আশঙ্কাটা জেগে উঠে, দেশে তো এখন যুদ্ধই চলছে, যার কারণে আমার মেয়ের মুখে হাত চাপা দিতে হচ্ছে। একাত্তরে যেমন সবাই ফিসফিস করে কথা বলতো, লো ভল্যুয়ামে কানের কাছে রেডিও শুনতো। মুখে হম্বিতম্বি করি, বড় বড় কথা বলি, শাহবাগে গিয়ে শ্লোগান ধরি, ঘরের ভেতর আমি আসলে একটা ভিতুর ডিম। সত্যি বাইরে বের হলে আমার আর কোনো ভয় থাকে না। আমি আসলে ঘরের ভেতরে দমবন্ধ হয়ে মরতে চাই না। মৃত্যু যদি হয় হোক কোনো খোলা প্রান্তরে, রাজপথে অথবা সম্মুখ সমরে। অপ্রস্তুত অবস্থায় আগুনে পুড়ে প্রতিরোধহীন মৃত্যুকে আমার আসলেই বড়ো ভয়!
জয় বাংলা
১৪/১২/২০১৩
২| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:৫৮
পাঠক১৯৭১ বলেছেন: ডামী, মুক্তিযুদ্ধের সামনে ২য়/৩য় বা কোন বালছাল যেন যোগ করা না হয়; আমাদের একটা মুক্তিযুদ্ধ।
৩| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:১৯
খেয়া ঘাট বলেছেন: আমৃত্যুর দু:খের তপস্যা এ জীবন-
খুব সত্য একটা কথা।
৪| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৩৪
হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
ঘরের ভেতরে দমবন্ধ হয়ে মরতে চাই না।
মৃত্যু যদি হয় হোক কোনো খোলা প্রান্তরে, রাজপথে অথবা সম্মুখ সমরে।
সাহসি মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
৫| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:০২
দূষ্ট বালক বলেছেন: হিংস্র হায়েনাদের থেকে দেশকে মুক্ত করা ৭১ এর হিংস্র হায়েনাদের থেকে দেশকে মুক্ত করার মতই
৬| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৫
ইখতামিন বলেছেন:
যদি মরতেই হয় খোলা প্রান্তরে মরতে চাই। রাজপথে অথবা সম্মুখ সমরে। ৭১ এর হায়েনাদের ভুতের কবলে পড়ে অপ্রস্তুত অবস্থায় মরতে চাইনা আমি।
অসাধারণ হয়েছে ++
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:৪১
সামস উদ দোহা বলেছেন: খুব অপেক্ষায় ছিলাম একটা আনন্দ মিছিলের, হয়নি। আচ্ছা ছাত্রলীগ কি বিলুপ্ত লীগ হয়ে গেছে
ভাই আপনি বের করেন না কেন মিছিল? ব্লগে বসে বসে আর কতো স্বাধীনতার ডাক দিবেন? কারো দিকে আঙ্গুল তোলার আগে নিজে করে দেখান।
আর মেয়েকে রাজাকার সম্পর্কে ধারনা দিচ্ছেন ভালো লাগ্ল।কিন্তু ফাঁসী ব্যাপারটা বুঝার বয়স হয়েছে কি তার? এটা ভেবেছেন? আবেগের বসে শিশুর মাথায় ফাঁসী ব্যাপারটা না ঢুকানোই ভালো। এমনি চারপাশে অস্থিরতা দেখে বাচ্চারা ভীত।