![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শনিবার দিনটা আমার ডে-অফ। প্রায় প্রতি সপ্তাহতেই আমার প্রিয় ঢাকার সৌন্দর্য খুঁজে বেড়ানোই আমার কাছে এ দিনের মাহাত্ম। এই কাজে আমার একমাত্র সঙ্গী ছোট ভাই রাকিব। বিছানায় চোখ বন্ধ করে ভাবছি কই ঢুঁ মারবো এমন সময় রাকিব ঢুকে রুমে। স্বভাবজাতভাবে পুরো ঘরে চক্কর মারে আর বলে, জানো তো ‘বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক নাউ ওপেন ফর অল’।
মাথায় বিদ্যুৎ খেলে। মনে পড়ে জামাত-শিবিরের হুঙ্কার, ৫৫ হাজার বর্গমাইল জ্বালিয়ে দেয়া হবে। আহারে ৫৫ হাজারে আগুন লাগালে তো আমিও নাই, সাফারি পার্কও নাই, যেই বেটা আগুন লাগাইলো সেও নাই। চোখে হালকা পানি জমে। আমি চোখ মেলে তাকাই, রাকিবও তাকায়।
১৫ মিনিট পরে আমার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের পথে। আরো দেড়ঘন্টা পরে বাঘের বাজার হয়ে সাফারি পার্কের গেটে। গেট থেকেই বাস্তব জীবনের শিক্ষা শুরু। আসলে জ্ঞানীরা ঠিকই বলেন, জ্ঞান অর্জনের জন্য ভ্রমনের বিকল্প নাই। তাই গতকাল ভ্রমনের শিক্ষাটুকুই আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করি-
শিক্ষা নম্বর ১ : বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের পাকিং লট আমার জানা মতে পৃথিবীর সবচেয়ে এক্সপেনসিভ স্থান। এখানে গাড়ি রাখতে হলে ১০০ টাকা লাগে। ঢুকতে লাগে জনপ্রতি ৫০ টাকা। আর টিকিট কাউন্টার গেট থেকে কোয়ার্টার মাইল দূরে পাকিংলটের মাঝখানে ( কোন গাড়লের প্ল্যান আল্লাহই জানে)।
শিক্ষা নম্বর ২ (জীবনের সবচেয়ে বড়ো শিক্ষা) : সাফারি পার্কে ঢুকতেই হাতের বাঁ পাশে শৌচাগারের পাশেই একটা মৃত প্রাণী সংরক্ষানাগার আছে। শৌচাগার এবং সংরক্ষানাগার দুটোর সাইজই খুপড়ি ঘর। কর্তৃপক্ষ বোধহয় ধরেই নয়েছেন এসব জায়গায় কোন দর্শনার্থী আসবেন না।
মৃত সংরক্ষনাগারের সামনে একটা আর্মির জীপ দাঁড়িয়ে। দরজা ঠেলে ভিতরে উঁকি দিলাম। বুঝলাম কোন আর্মির অফিসার ও তার পরিবার ঘুরতে এসেছেন। হরিষেই বিষাদ। ভেতর থেকে কেউ একজন বললেন, এ্যাই ভেতরে ঢুকবেন না। আফিসার আর তার পরিবার সব ধীরে সুস্থে দেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমরা ঠায় বাইরে দাঁড়িয়ে রইলাম। ভেতরের প্রবেশ নিষেধকারীকে এইবার দেখতে পেলাম। ২৪-২৫ বছরের এক যুবক। তিনি বাইরে এসে দরজায় তালা লাগিয়ে দিলেন, আমি করুণ গলায় বললাম ভাই আমরাও দেখতে চাই ভেতরটা।
এবার বেশ কড়া গলায় জবাব দিলেন তিনি, ভেতরটা শুধু আর্মি অফিসার আর সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা দেখতে পারেন। আপনাদের জন্য না।
আমি একটু গোবেচারা আমার ছোটটা আরো গোবেচারা। সে চলে যেতে চায়। আমি আবার তার কাছে জানতে চাই, ভাই কেন আমরা দেখতে পারবো না?
এইবার একটু নরম সুরে বলেন, আসলে এটা এখনো উদ্বোধন হয় নাই তাই শুধু উচ্চপদস্থরাই এটা দেখতে পারবেন। আপনারা না। আমার সামনে ততোক্ষনে অনেক মানুষ জমে গেছে। সবই নিম্নপদস্থ, আম জনতা। যারা গাঁটের ৫০ টাকা খরচ করে টিকিট কেটেছে। কিন্তু তাদের এসব দেখার অধিকার নেই। রাগে দুঃখে আমার কান্না পায়।
সবাই ততেোক্ষনে অন্যদিকে পা বাড়িয়েছে নিয়তিকে মেনে নিয়ে। আমি যুবকের কাছে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার নাম ও নাম্বার চাই। সে দিবে না, সাফ জানিয়ে দেয়। শুধু তার নামটা বলে, ‘আতিক’। ভাবখানা এমন পারলে....ফালাইয়েন।
এবার আমি নিজেই এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করি অত্যন্ত একজন দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়। তখনই আমি জীবনের সবচেয়ে বড়ো শিক্ষাটা জেনে যাই, সবাই আজ ব্যস্ত তাদের উচ্চপদস্থদের মনোরঞ্জনে।
সাধারন মানুষ পায়ে হেঁটে সাফারি পার্ক ঘুরবেন। আর উচ্চপদস্থ এবং আর্মি অফিসাররা তাদের বিশাল বিশাল গাড়ি নিয়ে সাফারি পার্ক ঘুরতে পারবেন। আমাদের দশনার্থী ফি লাগবে তাদের কিছুই লাগবে না। এমনকি ভিতরে তৈরি বার্ড স্যাংচুয়ারিও ফ্রি তাদের জন্য। তবে আমাদের জন্য ১০ টাকা করে ফি। ভ্রমন শেষে শিক্ষা পেলাম, উচ্চপদস্থ বা আর্মি অফিসারের আত্মীয় স্বজন না হলে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে নিা যাওয়াই ভালো।
তুমি ঠিকই বলেছিলে কালী দা, উনারা সবাই মা-বাপ আর আমরা সবাই শুওরের বাচ্চা...
©somewhere in net ltd.