![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নাফিসের যখন ক্যান্সার ধরা পড়ে তখন তার বয়েস মাত্র ২১। টগবগে প্রাণবন্ত তরুণ। বেশকিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের একজন অধ্যাপক জানালেন নাফিসের পায়ুপথের একটি অংশে ক্যান্সারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে খুব ভয়ের কিছু নেই, এখুনি চিকিৎসা শুরু করলে নাফিস সুস্থ হয়ে উঠবে। নাফিসের বাবা নেই তাই মামারাই অভিভাবক। মামাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করতে গেলো নাফিস আর তার মা। মামারা সিদ্ধান্ত জানালেন একমাত্র ভাগ্নের উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠাতে চান তারা। দ্রুত ভিসাও করা হলো। বিদেশের মাটিতে প্রথম যাচ্ছে নাফিস তাই কিছু কেনোকাটা করা প্রয়োজন। চট্টগ্রামের নিউমার্কেটের এক পরিচিত দোকানে গেলো নাফিস। হঠাৎ এতো কেনাকাটা দেখে দোকানী নিজ থেকেই জানতে চাইলো, ঘটনাটা কী? সবিস্তারে নিজের ক্যান্সার ধরা পড়ার কথা ও বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার কথা জানালো সে দোকানীকে। দোকানী ঘটনা শুনে বেশ কিছুক্ষন আফসোস করলো। এরপর এক চমকপ্রদ তথ্য জানালো নাফিসকে। সেই তথ্য শুনে তো নাফিসের মাথা পুরাই খারাপ। তার দোকানী তাকে জানিয়েছে, ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য দূরে কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এই চট্টগ্রামেই একজন বিখ্যাত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক রয়েছেন যিনি গ্যারান্টি সহকারে ক্যান্সারের চিকিৎসা করেন। আর তার চিকিৎসায় আজ পর্যন্ত সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছেন হাজারো রোগী। এমনকি সেই দোকানীর এক নিকট আত্মীয় সেই অব্যর্থ ওষুধের জ্বলজ্যান্ত প্রমান। উত্তেজনায় টগবগ করা নাফিস সেদিন বাসায় ফেরে একগাদা জামা্কাপড় আর ছোট একট টুকরো কাগজে সেই হোমিওপ্যাথ চিকিৎসকের ঠিকানা নিয়ে।
গল্পের শুরুর ২১ বছর বয়েসী নাফিসকে আমি চিনতাম না। তবে তার ক্যান্সার ধরা পড়ার ২ বছর পরের নাফিসের সঙ্গে আমার পরিচয় হয় দেশের বাইরের এক ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে। ২৩ বছর বয়েসী অসম্ভব রূপবান বাঙালি ছেলেটিকে দেখে আমি থমকে দাঁড়াই। হুট করে দেখে বোঝার উপায় নেই ছেলেটির ক্যান্সার। তবে কিছুক্ষন ভালো করে দেখলে বোঝা যায় চোখের নীচে কালি পড়েছে। চোখেমুখে যন্ত্রনার চিহ্ন। অল্প সময়েই সখ্যতা হয় নাফিসের চাচার সঙ্গে। ভদ্রলোক দুবাইতে থাকেন। নিজের কাজকর্ম ফেলে দেশে ছুটে এসেছেন বাপ মরা একমাত্র ভাতিজার চিকিৎসার জন্য। উপরের ঘটনা তার মুখ থেকেই শোনা এবং পরবর্তী অংশটুকুও । নাফিস সেদিন বাড়ি ফিরে সিদ্ধান্ত নেয়, দেশের মাটিতে এরকম গ্যারাণ্টেড হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ছেড়ে সে বিদেশ যাবে না। তাই সে কাউকে কিছু না জানিয়েই সেই হোমিও চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসা শুরু করে। প্রথম দিকে প্রতিটি ওষুধ খেলেই তার মনে হতো, বাহ শরীর বেশ চাঙ্গা্ হচ্ছে। তার পায়ুপথ দিয়ে রক্ত পড়াও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। তার বদ্ধমূল ধারণা হতে থাকে সে সুস্থ্য হয়ে উঠছে। কিন্তু বছর ঘুরতেই ভিন্ন চিত্র। শারীরিক সব সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে। নিজের গোয়াতুর্মির এই ফলের কথা লজ্জায় বাসার কাউকে বলতে না পারলেও একসময় ঠিকই প্রকাশ হয়ে পড়ে। তবে ততোদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
ক্যান্সার ধরা পড়ার ২ বছর নাফিসকে যখন ওই ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়, তাকে দেখার পর ওখানকার চিকিৎসকরা নাফিসের অভিভাবকের সঙ্গে খুব রাগারাগি করেন। সচরাচর চিকিৎসকরা এই ধরনের ব্যবহার কারো সঙ্গে করেন না। কিন্তু তাদের এই ক্ষোভের কারন হচ্ছে ২ বছর আগে নাফিসের ক্যান্সার একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় ছিলো। ছোট একটা অপারেশন এবং পরবর্তী চিকিৎসায় নাফিস সুস্থ্য হয়ে উঠতে পারতো। কিন্ত এখন তার ক্যান্সার সারা দেহে ছড়িয়ে গেছে। আর শারীরিক অবস্থার ভয়াবহ অবনতিও হয়েছে। অনেকটা মৃত্যুর প্রহর গোনা ছাড়া এখন তাদের আর কিছুই করার নেই।
এতো দীর্ঘ এই ঘটনাটি লেখার একটাই উদ্দেশ্য ক্যান্সার ধরা পড়ার পর মূল কাজ হচ্ছে ‘অনকোলজিস্ট’ অর্থ্যাৎ ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের শরানাপন্ন হওয়া। কোন প্রলোভনেই অথবা কারো কথাতেই বিভ্রান্ত হবেন না। ক্যান্সার ধরা পড়েছে জানার সঙ্গে সঙ্গেই একজন অনকোলজিস্টের সঙ্গে দেখা করবেন। হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদী, ইউনানী বা ভেষজ এসব চিকিৎসায় দয়া করে সময় নষ্ট করবেন না। আপনার চিকিৎসা কি পদ্ধতিতে হবে তা সেই ক্যান্সার বিশেষজ্ঞেই ঠিক করবেন। এমনকি যদি কোন সার্জারির প্রয়োজন হয় তাও তিনিই পরামর্শ দিবেন। তাই ক্যান্সার ধরা পড়ার পর অ্যালোপ্যাথির অন্য বিভাগের চিকিৎসকের কছে না ঘুরে সরাসরি অনকোলজিস্টের শরানাপন্ন হন। যদি জানাশোনা কোন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ না থাকে তাহলে কোন ক্যান্সার বিশেষায়িত হাসপাতালের সাহায্য নিন। আর তা না হলে `Life is beautiful' (ক্যান্সার আক্রান্তদের সেবায় একটি ফেইস বুক গ্রুপ উদ্যোগ) -তো আছেই।
২| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৪০
বাঁশ আর বাঁশ বলেছেন: ********
৩| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৫৪
সুমন কর বলেছেন: ভালো বলেছেন।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:০৩
পাঠক১৯৭১ বলেছেন: সঠিক