![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কলকাতায় গেলে সচরাচর যে হোটেলটায় আমার থাকা হয় ঠিক তার গেটের সামনেই সবসময় একটা জীপ গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতো...থাকতো বলছি কারন গেলো বছর অবধি গাড়িটিকে ওখানেই দেখিছি...কালো কাঁচে ঘেরা সাদা রংয়ের জীপ গাড়িটায় গায়ে লেখা ভ্রাম্যমান পশু হাসপাতাল (সৌজন্যে : কলকাতার পশুপ্রেমী সমাজ)...
গাড়িটিকে আমি নিজ চোখে কখনো চলতে দেখিনি...তবে দুপুর গড়ালেই গাড়িটি কোথাও উধাও হয়ে যেতো...আবার রাত বা সন্ধ্যায় ফিরে আসতো...তাই দুপুরে হোটেল থেকে বের হলেই দেখতাম গাড়িটি নেই আবার সন্ধ্যায় যথারীতি ওখানে দাঁড়িয়ে...এমনও হয়েছে সারা দুপুর আমি হোটেলের গেটের সামনে দাঁডিয়ে অায়েসী কায়দায় ধোঁয়া উড়িয়েছি আর স্বল্পবসনা দিদিদের আসা যাওয়া দেখিছি কিন্তু সেদিন গাড়িটি যথাস্থানেই দাঁড়িয়ে রয়েছে...যেই না আমি ঘন্টাখানেকের জন্য হোটেলে ঢুুুকেছি বা এদিক সেদিক হয়েছি এসে দেখি গাড়িটি নেই...বেশ রহস্যময় আচরণই বলতে হয়...আর এই রহস্যময় আচরণের কারণেই অামার গাড়িটি নিয়ে এক ধরনের শিশুসুলভ ফ্যান্টাসী ছিলো...
আমি কল্পনা করতাম গাড়িটি চালায় কোন সানগ্লাস পরা কুকুর...অার গাড়িটির চিকিৎসা সেবাদানকারীরাও অবলা পশু...যেমন ডাক্তার হচ্ছে বাঁদর আর নার্স হচ্ছে কোন মুরগী...দেঁতো শুয়োের হচ্ছে গাড়িটির হেলপার...এগুলো ভাবতে খুব মজা লাগতো...
এ বার যেয়ে গাড়িটি খুঁজে পেলাম না...গাড়িটির সন্ধানে এপাশ ওপাশের রাস্তায় চক্কর দিলাম তাও নেই...মনটা একটু খারাপ হলো...সামনের এক দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ভাই এখানে একটা গাড়ি....’; আমার কথা শুনে কি বুঝলো ব্যাটা আল্লাহই জানে, আধা বাংলা আধা হিন্দিতে চট করে জবাব দিলো, ‘এর চেয়ে ভালো গাড়ি আপনাকে দিবো, এসিও আছে। কই যাবেন বলুন...’ আমি আর কথা বাড়ালাম না...
গাড়িটি না থাকলেও ওই রাস্তায় যে পাঁচটি কালো কুকুর ছিলো তারা আছে...সঙ্গে সাদা একটি কুকুরও যোগ দিয়েছে...তবে বেচারার সারা গায়ে বেশ কিছু ক্ষত রয়েছে...কোন হারামী মনে হয় গরম পানিটানি ছুঁড়ে মেরেছিলো...
সেদিন দুপুরে হোটেলে ফিরছি হঠাৎ একটা দৃশ্য দেখে আমি হাঁটার গতি কমিয়ে দেই...চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, চেক শার্ট আর খাকি ফুলপ্যান্ট পরা মাঝবয়েসী একজন লোক রাস্তার একপাশে বসে রয়েছেন...তার পাশে একটি বাজারের ব্যাগ...তিনি সেই ব্যাগ থেকে মুরগীর রক্তমাখা হাড়গোড় বের করে দিচ্ছেন...আর তা চরম আনন্দের তার সামনেই থাবা মেলে শুয়ে চিবুচ্ছে সাদা কুকুরটা...কুকুরটা পাশে একটা প্লাস্টিকের বাটিতে পরিস্কার পানিও রাখা আছে...কুকুরটা হাড় চিবুচ্ছে আর ভদ্রলোক খুব মমতা নিয়ে রাস্তার নোংরা কুকুরটার মাথায় হাত বুলাচ্ছে...যেন সন্তানকে পরম মমতায় খাবার খাওয়াচ্ছেন পিতা...ভদ্রলোকের দিকে তাকালেই বোঝা যায় তার আর্থিক অবস্থা মোটেও ভালো না...কোন অফিসে হয়তো কেরানীর চাকরি করেন..রোববার ছুটির দিন...তাই হয়তো সদরস্ট্রিটের মাংস ভাজার দোকানগুলো থেকে চেয়েচিন্তে ফেলে দেয়া হাড়গোড় নিয়ে এসছেন অবলাদের খাওয়ানোর জন্য....
আমি অড়চোখে সুন্দর এই দৃশ্যটা কিছুক্ষন দেখে হোটেলের পথে আবার দ্রুত হাঁটা ধরি...নিজেকে খুব ছোট মনে হতে থাকে...বারবার মনে হতে থাকে ইস আমিও যদি ওই মানুষটার মতো বড়ো মনের মানুষ হতাম...
©somewhere in net ltd.