নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রিপন ইমরান

রিপন ইমরান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বন্ধু কাজল ভ্রমরা রে...

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:২৫

ভােরের আলাে সবে ফুটতে শুরু করেছে...এই ভোর হবার সময়টুকু আমার দারুণ লাগে...কেমন যেনো একটা ঘোর লাগা মূহুর্ত ...বাসের জানালা দিয়ে ভোরের টাটকা বাতাস একেবারে চালান হয়ে যাচ্ছে পেটের ভেতর...ধুয়ে মুছে দিচ্ছে নিকোটন আর শহুরে ধোঁয়ায় কুচকুচে কালো ফুসফুসের অলিগলি...অহেতুক লম্বা একটা হর্ণ দিয়ে কুড়িগ্রাম শহরে ঢুুকলো বাসটা...

অফিসের এক কলিগের বিয়ের দাওয়াতে এসেছি...তবে বিয়ে কুড়িগ্রাম শহরে না...শহর ছাড়িয়ে বেশ দূরে (গ্রামটার নাম এই মূহুর্তে মনে পড়ছে না। তবে কনের বাড়ির কথা দিব্যি মনে আছে। দিনাজপুরের চিরির বন্দর। সে আরেক কাহিনী)...কুড়িগ্রাম শহরের এক বাড়িতে সকালেরে নাস্তা সেরে দুটি জায়গায় চা বিরতি দিয়ে যখন আমাদের ক‍াঙ্খিত ঠিকানায় পৌঁছেছি তখন ঠিক দুপুর...গনগনে সূর্যের তাপ শরীর পুড়িয়ে দিচ্ছে...অ‍াগে থেকেই আমাদের জানানো হয়েছে, বিয়ে উপলক্ষে অনেক নিকট আত্মীয়ের আনাগোনা তাই আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে অন্যত্র...

আমাদের সেই অস্থায়ী নিবাসে পা দিয়েই টের পেলাম এঁরা সাধারণ মানুষ নন...বেশ অবস্থাপন্ন হিন্দু বাড়ি...পুরো বাড়ি জুড়ে রুচির ছাপ...ধর্মীয় কুসংস্কার যে এদের কাছ থেকে শতহস্ত দূরে তা বলার অপেক্ষা রাখে না...তা না হলে অপিরিচিত এতোগুলাে মুসলমান অতিথিকে বাড়ির অন্দরমহলে এভাবে অবাধে প্রবেশ‍াধিকার শহরে স্বভাবিক হলেও এ রকম পাড়াগাঁয়ে একটু মুশকিলই বটে...বাড়ির কর্তা গোটা জেলার সর্বজন শ্রদ্ধেয় মানুষ...অভ্যর্থনা আলাপেই মুগ্ধ করে দিলেন আমাদের...প্রস্তাব করলেন দারুন গরমে আরাম পেতে গোসল করে নিতে...জানালেন বাড়ির পুকুর ছাড়া কাছেই ছোট নদী আছে সেখানেও ঝাঁপ দেয়া যেতে পারে...

প্রস্তাব শুনে আমার সঙ্গীরা হৈ হৈ করে ছুটলো নদীতে নাইতে...কিন্তু সারারাত জেগে খুব ক্লান্ত আমি তাই ওদের সঙ্গে গেলাম না...বাড়ির বৈঠকখানায় বসে হালকা ঝিমানোটাই সবচেয়ে আরামের মনে হলো...সবাই চলে গেছে... হাত পা ছড়িয়ে দিয়ে বসে রয়েছি...হঠাৎ সিগারেটের তীব্র পিপাসা পেলো...পকেট হাত দিয়ে সিগারেটের প্যাকেটের অস্তিত্ব টের পেলাম ঠিকই তবে আগুনের নাম নিশানা নেই...ধুর এর চেয়ে ওদের সঙ্গে যাওয়াটা ঢের ভালো ছিলো...সিগারেট প্যাকেট হাতে নিয়ে বসে রয়েছি বিরক্তমুখে...

‘সবাই গোসল করতে গেলো, আপনি গেলেন না’?...রিনরিনে কন্ঠ শুনেই তাকালাম...ভীষন সুন্দরী ঝকঝকে চেহারার এক তরুণী দাঁড়িয়ে আছে বৈঠকখানার দরজায়...ছোটবেলা থেকেই আমি সুন্দরী নারীদের প্রসঙ্গে যথেষ্ট তরল জাতীয় পদার্থ...এক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি...অতিরিক্ত তরলতার দরুণ প্রথমে গলা দিয়ে স্বর বেরুেচ্ছিলোনা...তাই প্রথমে একটু বোকা বোকা হাসি এরপর কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম, ‍লাগেনা। আমার নদীতে গোসল করতে একটুও ভালো লাগে না...খুব বেশি তরল হয়ে যাচ্ছি ভেবে গলা খাঁকরি দিয়ে কথা ঘোরাতেই হয়তো তাড়াহুড়ো করে বললাম, আমাকে একটা ম্যাচ দিতে পারেন।...

তরুণী একটু বিরক্তি নিয়েই জবাব দিলেন, তা দিতে পারি। তবে সিগারেট খাওয়াটা মোটেই ভালো নয়...আবারো আমার সেই দেঁতো হাসি...আর মাথা নেড়ে তার জবাবের সঙ্গে একাত্মতা...এর কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যেই আমার হাতে ম্যাচ আর তরুণীর প্রস্থান...

নাটক সিনেমায় এসব ঘটনা অনেকদূর গড়ায়...তবে আমার বেলায় বরাবরই জায়গারটা জায়গায় ব্রেক...উল্টো গোসল ফেরত আমাদের বন্ধু কাম কলিগকে দেখলাম সেই তরুণীর সঙ্গে বেশ খাতির জমিয়ে ফেললাে...তার খাতির জমানোর চেষ্টা দেখে আমি নিজেই মানসম্মান নিয়ে পিঠটান দিলাম...

মাত্র দুদিনই তো থাকা এরপর আবার ঢাকা ফেরত...ঢাকায় ফিরেও দেখলাম সেই তরুণ পুরো পরিবারটির সঙ্গে যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের কসরত চালিয়ে যাচ্ছে...এবং পুরো চেষ্টায়ই আমাকে বাদ দিয়ে...তবে হাবভাবে আগেই বুঝতে পারছিলাম, তার সেই চেস্টা সেই সুন্দরীকে আদৌ স্পর্শ করবে না...:-)

ঘটনাটা ২০০৪ সালের...গতরাত ৩ টার দিকে হঠাৎ ছোট ভাইয়ের বাউল গানের লিঙ্কের সূত্র ধরে পুরো ঘটনাটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো...আমার সঙ্গীকে ঘটনাটা বলতেই সে হেসে কুটিকুটি...একচোট হেসে নিয়ে আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করলো, পুরনো ভালোলাগা হঠাৎ উতরে উঠলো বুঝি??? আমি বললাম, না। এগুলো সুখস্মৃতি। সময় খুব দ্রুত চলে যাচ্ছে....

বি:দ্র: সঙ্গত কারনেই কারো নাম লিখলাম না। শুধু আমার সেই সফরের একদল সঙ্গীর মাঝ থেকে ঘটনাটা দুজনের সঙ্গে ট্যাগ মারলাম। পুরনো কথা তো তাই ভাবলাম অন্য কারো যদি আরো কিছু মনে পড়ে...:-)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.