নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রিপন ইমরান

রিপন ইমরান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গাড়ি চাপা পড়া মানুষটি অথবা হাজী ইয়াছমিনের বাঁচার চেষ্টা

১১ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:১০

বুঝলেনতো গাড়িটা হুট করেই ডান থেকে বামপাশে নিলো...বাঁ ‍পাশেই লোকটা দাঁড়িয়ে ছিলো...প্রথম ধাক্কাতেই লোকটা রাস্তায় পড়ে গেলো...রব উঠলো ধর ধর...

এইবার গাড়ি নিয়ে পালানোর চেষ্টা ড্রাইভারের...গাড়ি পাগলের মতন ছোটানোর চেষ্টা...কিন্তু ততোক্ষণে দুইচাকার নিচে চলে গেছে দেহটা...ওই অবস্থাতেই কালো পিচে ঘষটে ঘষটে এগিয়ে গেলো গাড়িটা কিছুদূর...

লোকটার মৃত্যু নিশ্চিত হলো...ড্রাইভারের পালানোর চেষ্টা হলো ব্যর্থ...উত্তেজিত জনতার ধরমারকাট চিৎকার...এরই মাঝে মধ্যবয়সী এক নারী গাড়ির পেছনের বাম্পার ধরে গাড়িটাকে উঁচু করার চেষ্টা করছেন কারের নিচে আটকে পড়া মানুষ না লাশটাকে টেনে বের করবেন বলে...তার সঙ্গে হাত লাগিয়েছেন আরো বেশ কয়েকজন... কে জানে এরা হয়তো মৃত লোকটির স্বজন অথবা কেউ না...

পুরো ঘটনা বড়োজোর দুই মিনিটের...কিন্ত কান্নাটা...হয়তো গাড়ির নীচে চাপা পড়া মানুষটি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি অথবা পরিবারের অনেক আশা ভরসার একমাত্র বড় ছেলে...

আর ওই যে দোষী ড্রাইভারটি...তার বাসায় হয়তো ছোট্ট একটা বাচ্চা অপেক্ষা করছে সারাদিন পর বাবা আসবে পকেটে একটা চকলেট নিয়ে...অথবা অসুস্থ মা বসে আছেন ছেলে বাড়ি ফেরার সময় মোড়ের ফোর্মেসী থেকে তার জন্য ইনহেলার নিয়ে আসবে...এই শ্বাসকষ্ট যে আর সহ্য হয় না...

আমার খুব খারাপ লাগতে লাগলো ‌ওই দুটি র্দুভাগা মানুষ আর তাদের পরিবারের কথা ভেবে...

ঘটনাটা গতকাল রাতের বনানীতে...আজ সকালে নিজেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছি হাসপাতালে যাবার জন্য...ফেরার সময় সেক্টরের ভেতরের রাস্তায় এক নারী হুট করে হাত তুললেন গাড়ি থামার ইশারা দিয়ে...স্পিডে তাকে পেরিয়ে গিয়েছিলাম কিন্ত লুকিং গ্লাসে তার ইশারা দেখেই ব্রেক কষলাম...

পেছনের সীটে বসা আম্মা চিৎকার করে উঠলেন...আরে উনি তোমার ম্যাডাম...ছোটবেলায় যে নবারুণ স্কুলে পড়তে সেই স্কুলে উনি পড়াতেন...আমি আর আম্মা দুজনেই গাড়ি থেকে নামলাম...আমি চমৎকৃত...এত্তোগুলো বছর পরেও ম্যাডাম আমাকে এক দেখাতেই চিনতে পারলেন আর আমি সেই গাধাই রয়ে গেলাম...আপার সঙ্গে কথা হলো...

আম্মা এর ওর খবর নিচ্ছেন...হঠাৎ করেই ম্যাডাম বললেন জানেন আপা ইয়াছমিন ম্যাডাম এবার হজ্বে গিয়ে পায়ের নীচে চাপা পড়ে মারা গেছেন...শুধু উনি না উনার বোন, বোনের জামাইসহ চারজন গিয়েছিলেন...একই পরিবারের চারজনই শেষ...

ইয়াছমিন ম্যাডামের মুখটা মনে করতে পারলাম না...তবে মনে পড়লো এই আপার কথা আম্মার মুখে শুনেছি...স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হওয়ার পর তিনি ওই স্কুলের চাকরিটা নিয়েছিলেন...এরপর শুধু সংগ্রাম আর সংগ্রাম...যখন লক্ষ মানুষের পায়ের নীচে ইয়াছমিন আপা পড়ে গেলেন তখনো নিশ্চয়ই শেষবারের মতো মাথা তোলার চেষ্টা করেছিলেন...একটু বাঁচার আশায়...

আচ্ছা এই হজে যারা পায়ের নিচে পড়ে মারা গেলেন তাদের মৃত্যু কি শুধুই দুর্ঘটনা??? কিন্তু দুর্ঘটনারতো কারণ থাকে...আর সেই কারণে দায়ী ব্যক্তিরও নূন্যতম শাস্তি হয়...এই যেমন গতকালের ড্রাইভারের হবে...তাহলে সৌদি আরবের তেনারা কেন পার পেয়ে যাচ্ছেন!!!

বি: দ্র: যেসব পুরুষ হজে যান তাদের অনেকের নামের আগে হাজী শব্দটি দেখি কিন্ত কোন নারীকে দেখিনি কখনো লিখতে। এ ব্যাপারে কি ধর্মীয় কোন অনুশাসন আছে?

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৩৭

ঢাকাবাসী বলেছেন: এদেশের ড্রাইভারদের প্রতি কোন দরদ নেই আমার। পৃথিবীতে সবচাইতে অসভ্য অশিক্ষিত অদক্ষ বেপরোয়া নিষ্ঠুর কান্ডজ্ঞানহীন জিরো আইকিউর ড্রাইভার হল বাংলাদেশের অধিকাংশ ড্রাইভার। আপনার বর্ণনাতেই বললেন লোকটা পড়ে যাবার পরও তার উপর দিয়ে ঐ ড্রাইভার গাড়ী চালিয়ে দিল। আর এই অপরাধের জন্য অর্ধেক দায়ী হল জনৈক শ্রমিকনেতা কাম মন্ত্রী। এদেশেই ড্রাইভাররা মানুষ খুন করলে কোন শাস্তি হয়না! আর সেটা নিশ্চিত করেন ঐ মন্ত্রী।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.