নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রিপন ইমরান

রিপন ইমরান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আহারে সেই বনভোজন :(

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:১৯

ছোটবেলায় টিউব লাইটের সাদা আলোয় ভোররাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া মানে আজ বিশেষ দিন...আজ পড়াশুনা নেই কারন বাবার অফিস থেকে দলবেঁধে পিকনিকে যাওয়া হবে...এ কারনেই শােবার ঘরের বাতি জ্বালিয়ে আলমারি খুলে বের করা হচ্ছে ধোপধুরস্ত পােশাক (সেকালে মধ্যবিত্ত বাঙালি কোন অদ্ভুত কারণে তার হাতেগোনা ভালো পােশাকগুলো স্টিলের আলমারিতে তুলে রাখতো। বছরে দুই একবারের বেশি ন্যাপথলিনের গন্ধমাখা পােশাকগুলো পরাও হতো না)।

ফি বছর শুধু এ দিনটিতেই সাহেবসুবোদের মতো দু-পিস্ পাউরুটি আর সেদ্ধ ডিম দিয়ে সকালের নাস্তা করবার সুযোগ মিলত...পিকনিক পার্টির সকালের নাস্তার মেন্যু এটাই ছিল...তখন দেশি মুরগিগুলোও ব্যাপক পঁচা ডিম পাড়তো (ওদেরই বা দোষ কী...ওরা তো ফার্মের মুরগির মতো স্মার্ট না।)...তাই কারো কারো ভাগ্যে...পানিটা কিন্তু নিজেদের ফ্লাস্ক থেকেই খেতে হতো...বোতলের পানির কথা বােধহয় তখন কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি...

ঠিক সাড়ে সাতটায় রওনা দেয়ার কথা থাকলেও বাঙালি হিসেবে সকাল ৭.০০ টার গাড়ি কখনো ৮.০০টার আগে ছেড়েছে বলে মনে পড়ে না...মহাখালী পেরুতেই রাস্তার দুধারে গাছের সংখ্যা বাড়তে থাকে...বনানীতেই ঢাকা শেষ...

জয়দেবপুর চৌরাস্তা পেরুেত না পেরুতেই দুপাশে শাল বাগানের সারি...পিকনিক স্পট গাজীপুর ন্যাশনাল পার্কে পৌঁছানোর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সময়টা ভীষন ভাললাগার...শুধু গাড়ির জানলার কাঁচে নাক ঠেকিয়ে দুপাশের দৃশ্য দেখা...এইতো দেখা গেলাে ফাঁকা ধানখেত...তারপরই রাস্তার পাশের বাজার...রাস্তার পাশের ঝুপড়ি হোটেলের গরম তাওয়ায় ডিম ভাজার দৃশ্য কোন কিছুই বাদ পড়তো না সেই দেখার তালিকায়...

পিকনিক স্পটে নামলেই শুরু হতো নানা যন্ত্রণা...ছোটদের জন্য নানারকম আনন্দমূলক খেলার নামে শিশু নির্যাতন...চকলেট দৌড়, ককফাইট আরো কতো কি...আবার এসব খেলায় ফার্স্ট হওয়ার জন্য বাবামায়ের তরফ থেকে মৃদু চােখ রাঙানি...কারন এখানেও আছে আমার সন্তান সেরা প্রমাণ করবার মধ্য দিয়ে গৌরব অর্জণের চিরায়িত বাঙালি স্বভাব...

মূর্তিমান আতঙ্ক ভীষন ব্যস্ত বাবাকেও দেখিছি এদিন খুব স্পােটিং মুডে...বড়দের খেলার প্রতি তীব্র আগ্রহ দেখে মনে হতো 'স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল' এ চিরায়ত বাণী সত্য প্রমানের আজই শেষ দিন...আমার এসব কিছুই ভাল লাগতো না...

আমি চাইতাম একা একা একটু ঘুরে বেড়াতে...স্বপ্ন দেখতাম বনের মাঝে ঘুরতে ঘুরতে খুঁজে পাব চিতা বাঘ অথবা খরগোশ ছানা...হায় সে স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যতো তার আগেই দুপুরের খাবারের ডাক...সবাই যখন মজা করে পোলাও রোস্ট সাঁটাচ্ছে আমি তখন ব্যস্ত পােলাোয়ের মাঝ থেকে মটরশুঁটি দানা খুঁজতে...আমি মটরশুঁটি একদম ভালবাসতাম না...

দুপুরের পর সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান...এ যন্ত্রণার কথা না হয় নাইবা মনে করলাম...আরেক দলের কথা না বললেই নয় নানা সাইজের বেত বিক্রেতারা...মাবুদে এলাহী জানেন, এতো এতো সাইজের এতো ধরণের বেত কোথা থেকে তারা নিয়ে আসতো...

নিজেই বায়না ধরতাম একটা বেত কেনার জন্য (বলার অপেক্ষা রাখে না, বাসায় ফেরার পর পুরো বছর ধরে এ বেতের সদগতি আমাদের পিঠেই হতো। তবু শুধু ওই দিনটিতে ভুলে যেতাম এ তথ্য। বেহায়া আর কাকে বলে)...পয়সা নষ্ট হবে বলে কখনো মৃতপ্রায় ঘোড়াগুলোর পিঠে চড়া হয়নি...

পিকনিক থেকে ফেরার সময়টা ভীষন মন খারপের...মন চাইতো ওখানটায় থেকে যেতে...কিন্তু বাসটা ঢাকার দিকে ছুটে আসতাে রকেট গতিতে...

বি:দ্র: এ বছর একটা পিকনিক পার্টিও এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি আমার...যারা বাসের সামনে ব্যানার লাগিয়ে মাইক বাজাতে বাজাতে পিকনিকে যায়, তারা বোধহয় বিলুপ্ত হয়ে গেছে...এখন বনভোজন হয় না...দুই একর জায়গা নিয়ে গড়ে তােলা রিসোর্টে 'ফ্যামিলি ডে' পালন হয়...তাই আমাদের শৈশবটা সেকেলে বনভোজনেই আটেক রয়...

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:২৮

হানিফঢাকা বলেছেন: এখনও যায়। ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে মনে হয়। এখন সব রেডিমেড। কেউ গিয়ে রান্না বান্নার ঝামেলা করতে চায় না।
লেখা পড়ে ভাল লাগল। ধন্যবাদ।

২| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:২৫

অভ্রনীল_৫০ বলেছেন: ২১ ডিসেম্বর পিকনিক যাব ভাইয়া স্কুল থেকে। ঠিক এভাবেই বাসের ছাদে মাইক বাজিয়ে। :-)

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩০

রিপন ইমরান বলেছেন: যান...আপনি সৌভাগ্যবানদের তালিকায় পড়েন...:-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.