![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ একটা ভালবাসার গল্প করা যাক...ভারতের কেরালা রাজ্যের একটি ছোট শহরের গির্জার যাজক সেবি সেবাস্তান...২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৩ তারিখ সকালে তিনি বাসে চেপে বসেছেন কাচ্চি যাবেন বলে...
বাস কিছুদূর এগুতেই তার পাশের সীটে বসলো এক যুবক...ফাদার কৌতুহলবশত যুবককে কিছুক্ষন পর্যবেক্ষন করলেন...তারে কাছে মনে হলো তার সহযাত্রী কোন বিষয় নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন...তিনি ওই অচেনা যুবককে জিজ্ঞেস করলেন, ভাই তোমার মুখ অমন শুকনো দেখাচ্ছে কেন? অামার কাছে বলতে পার...আমি হয়ত তোমার সমস্যার সমাধান করতে পারব না...তবে অন্তত একটা উপায় হয়তো বের করতে পারি...
যুবক কিছুক্ষন সন্দেহর চোখে দেখলো ফাদারকে...এরপর এ কথায় ও কথায় পুরো ঘটনাই তাকে খুলে বললো...
যুবকের নাম রশীদ মোহাম্মদ...রশীদ একসময় ওমানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো...বছর দুয়েক আগে তার কর্মস্থল মাসকাটের চিকিৎসকরা জানান তার দুটো কিডনিই প্রায় ৮০ ভাগ কাজ করছে না...দ্রুত কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করা প্রয়োজন...এ তথ্য জানার পর রশীদ দেশে ফিরে আসেন...
এরপর শুরু হয় তার আসল যুদ্ধ...রশীদের নিকটাত্মীয়ের কারোরই কিডনি তার সঙ্গে ম্যাচ করলো না...রশীদ হন্যে হয়ে একজন ডোনার খুঁজছিল...এ সময় রশীদ দেখা পায় এমন এক ব্যক্তির যে তাকে ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে একটি কিডনির ব্যবস্থা করে দেবে...
দরিদ্র শ্রমিক রশীদের কাছে ৪ লাখ টাকা অনেক টাকা...তবুও রশীদ তার এক খালার সহায়তায় বহুকষ্টে ধারদেনা করে অগ্রিম আড়াই লাখ টাকা তার হাতে দেয় বাঁচার আশায়...ওই লোক টাকা হাতে পাওয়ার পর পুরো হাওয়ায় মিলিয়ে যায়...
কয়েকমাস বাদে অনেক খোঁজাখুজির পর জানা যায়, মানব অঙ্গ পাচারের অভিযােগে পুলিশ তাকে জেলে পুরেছে...তার মানে রশীদের সব আশাই শেষ...এই যে এতো ঘটনা এর মাঝেও রশীদকে প্রতি সপ্তাহে ৩ বার ডায়ালাইসিস করাতে হয়...যা তার জন্য অত্যন্ত খরুচে ব্যাপার...
আজও রশীদ ডায়ালাইসিস করাতেই হাসপাতালে যাচ্ছে...তবে এখন সে নিঃস্ব...বাঁচার আশাও ছেড়ে দিয়েছে...শুধু শরীরের কষ্ট কমাতেই এই ডায়ালাইসিস করা...
ফাদার রশীদের মুখে সব কথা শুনলেন...তারপর তাকে অবাক করে দিয়ে বললেন, যদি ম্যাচ করে আমি তোমাকে আমার একটি কিডনি দান করতে রাজী আছি...তবে আজ আমি পারবো না...তবে তুমি তোমার ফোন নম্বরটা দাও...
রশীদ ভাবলো, লােকটা নিশ্চয়ই পাগল না হয় ঠগ...তবুও ডুবন্ত মানুষ যেমন খড়কুটো ধরে বাঁচতে চায় তেমনি রশীদও তার ফোন নাম্বার দিলাে...ফাদার বাস থেকে নেমে গেলেন..রশীদ গেলো হাসপাতালে...
বাড়ি ফিরে রশীদ ভাবলো ওই পাদ্রী নিশ্চয়ই তাকে সান্ত্বনা দিতেই এই কথাগুলো বলেছে...তবুও মনে ক্ষীন আশা কিন্তু ছিলই...যদি এমন হয়...
আসলেই এমন যদি হতো সত্যি হলো...রশীদকে কদিন পর ঠিকই ফোন করেছিলেন ফাদার সেবি সেবাইস্তান...তার কিডনিও ম্যাচ করেছিলাে...এখানেই শেষ নয় কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের অপারেশনের পুরো খরচ ছিল আটলাখ রূপি...এই টাকাও গির্জায় আগত ভক্তদের সহায়তায় জোগাড় করেছিলেন ওই ধর্ম যাজক...
কিডনি স্থানান্তরে অনুমতি নেয়ার সময় কেরালার আর্চ বিশপ জিজ্ঞেস করেছিলেন সেবি-কে, আপনি কেনো আগ্রহী হলেন রশীদকে কিডনি দানে??? তখন সেবি জানান বছর দুয়েক আগে তার ধর্মগুরু ফাদার গোমেজ (গোমেজের আগে পরে কিছু আছে এ মুহুূর্তে মনে পড়ছে না) একইভাবে রবি নামের এক নিম্ন বর্ণের হিন্দু ব্যক্তির জীবন বাঁচিয়েছিলেন কিডনি দান করে...সেদিন থেকেই তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন এমন সুযােগ পেলে তিনিও...
'যে জন জীবে করে দয়া, সে জন সেবিছে ঈশ্বর'...পৃথিবীর সব ধর্মের মূলমন্ত্র এই একটাই...আল্লাহ বলেন, ঈশ্বর বলেন, ভগবান বলেন অথবা প্রকৃতি সবাইকেই খুঁজে পাবেন ভালবাসায়...
তাই ভালবাসা দিবসে ভালবাসতে থাকুন অফুরাণ (তবে একটু সমঝে...বাসায় যেন না জানে )
©somewhere in net ltd.