![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!
সন্ধ্যার মুখে আমি বাসা থেকে বেরিয়েছি। আমার হাতে অনেকগুলো গল্পের বই। আমি চিত্রাদের বাসায় যাব। চিত্রার হাতে গল্প বই গুলো দিয়ে রাতের গাড়িতে ঢাকা। আজকে আমি দরকার হলে খুন হব, মাটির সাথে মিশে যাব, আমার সবকিছু বিসর্জন দেব। কিন্তু আজকে আমি পরাজিত হব না। আজকে আমি চিত্রাকে জানিয়ে দেব- চিত্রা তোমাকে ভালবাসি।
‘স্টেলা’ দেব সবার শেষে। স্টেলা চিত্রা’র হাতে দেবার পর চিত্রা কে বলব- চিত্রা, স্টেলা খুব সুন্দর উপন্যাস। চাঁদের আলোর মত কোমল এবং নক্ষত্রের মত সুন্দরী স্টেলা গল্পের শেষে নায়ক অ্যালান কোয়াটারমেইন কে অশেষ দুঃখের মধ্যে ডুবিয়ে দিয়ে মারা যায়। স্টেলা শব্দের অর্থ জান?
এই কথাগুলো বলার সময় চিত্রা তীক্ষ্ণ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে এবং মাঝে মাঝে ই তার দুর্বোধ্য হাসির ছুরিতে আমার মনের আশা আকাঙ্খা গুলো কে কুটি কুটি করে কাটতে থাকবে। কিন্তু চিত্রার উপেক্ষা কে আজকে আমি উপেক্ষা করব। চিত্রা কিছু জিজ্ঞেস না করলেও আমি বলব- স্টেলা মানে তারা!
আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে চাই চিত্রা স্টেলা পড়ুক। স্টেলা পড়ে ও বুঝুক চিত্রার ভালোবাসা পাবার জন্য আমি কতটা মরিয়া হয়ে উঠেছি। ও খানিক টা ভয় পাক! অন্তত বুঝুক, আমি এখন আর নির্বিষ মাছি নই যে হাত নেড়ে তাড়িয়ে দেবে! দীর্ঘ দিনের ক্রমাগত প্রত্যাখ্যান আমাকে এয়ার গানের গুলি খাওয়া কুকুরের মত মরিয়া করে তুলেছে!
স্টেলা পড়ে চিত্রা বুঝতে পারবে ‘শুকনা হাড্ডি-মলিন জিন্স-আর পুরান শার্ট’ সর্বস্ব আমি সেই সব ‘মাসল ফোলানো-গলায় চকচকে সোনার চেইন ঝোলানো’ মাকাল ফল দের তুলনায় কত বেশি জিনিয়াস! স্টেলা পড়ে চিত্রার মনে কিছু একটা হবেই!
স্টেলা তে আমি খুব পরিষ্কার ভাষায় চিত্রা কে জানিয়ে দিয়েছি চিত্রা কে আমি কত টা ভালোবাসি। বইয়ের প্রথম পাতার একটা ‘চি’ তে লাল কালি দিয়ে গোল দাগ দিয়েছি। তার পরের পাতার ‘ত্রা’ তে, তার পরের পাতার ‘কে’, তারপরের পাতায় ‘ভা’, এই ভাবে আমি পরিস্কার ভাবে আমার ভালোবাসার কথা জানিয়ে দিয়েছি! পুরা ব্যাপার টা যখন চিত্রা বুঝতে পারবে তখন তার মধ্যে ‘কিছু একটা’ হবেই! কারন এটা বুঝার পর আমি যে চিত্রা কে ভালোবাসি সে সেটা শুধু জানবে না, সে আবিস্কার করবে যে আমি তাকে ভালোবাসি!
এবার আমার নজরুল ইসলাম হলে ফিরে যাবার পর আমার রুমমেট সরোদের মুখে ‘তার শিউলি’র কথা শুনে আমি আর হতাশায় তলিয়ে যাবনা। আমিও সেশনাল ফাঁকি দেয়া নির্জন দুপুরে বালিশে মাথা রেখে সরোদ কে বলব- চিত্রা টা না খুব অবুঝ! দু’দিন পর পরীক্ষা, তাকে ‘একটিবার দেখার জন্য’ এখন বাড়ি যাওয়া কি আমার পক্ষে সম্ভব?
হলের নুরু ভাই কে একগাদা হলুদ খামের চিঠি নিয়ে রুমে রুমে ঢুকতে দেখে এখন আর আমার বুকে ‘বিষ মাখানো তীরের বৃষ্টি’ হবেনা। কারন আমি জানব যে আমার জন্য ও হলুদ খাম এসেছে! সেই হলুদ খাম আমি সাথে সাথেই খুলে পড়ব না। নুরু ভাই যখন খাম হাতে দেবে ভাব ধরব যেন চিঠি লিখে কেউ আমাকে বিরক্ত করছে! হলের কারো চোখে পড়লে বলব- আমার বন্ধু কলিমের চিঠি! সরোদ এবং জামিল টিউশনি তে চলে গেলে রুমে যখন পুরা একা হব তখন রুম বন্ধ করে হলুদ খাম টাকে অনেক্ষন বুকে জড়িয়ে ধরে রাখব। কল্পনায় দেখব- গভীর রাতে বাসার সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়েছে তখন পাশে শুয়ে থাকা বড় বোন টের না পায় মত আস্তে আস্তে মশারী আলগা করে খাট থেকে নেমে এসেছে চিত্রা! ঘুম ঘুম চোখে নিঃশব্দে খাতার পাতা ছিঁড়ে কাঁপা কাঁপা হাতে কলম দিয়ে লিখেছে- প্রিয় সোহাগ!
পুরা দৃশ্য টা কল্পনা করার পর আমি চিত্রার সাথে কাল্পনিক অভিমান করব! সপ্তাহে মাত্র একটা চিঠি, তাও মাত্র দু’পাতার!
চিঠি পড়া শেষ করে চিঠি টাতে অনেক গুলো চুমো খাব। চিঠি টা বুকে জড়িয়ে ধরে খামোকাই কিছুক্ষন কাঁদব। কাঁদতে কাঁদতে হাসব। আবার হাসতে হাসতে কাঁদব! তারপর চিঠি টা আমার খাটের নিচের ট্রাঙ্কে তালা বদ্ধ করে রাখব।
নুরু ভাই কে হঠাৎ একদিন বলব- নুরু ভাই চলেন ত আমার সাথে!
হাফ শার্টের ভেতর কিছুটা কুঁজো হয়ে থাকা খোঁচা খোঁচা দাড়ির এবং অত্যুজ্জল চোখের নুরু ভাই জিজ্ঞেস করবে- কোথায়?
আমি নুরু ভাইয়ের হাত ধরে টেনে বলব- চলেন চলেন আজকে আপনাকে নিরবে খাওয়াব!
নুরু ভাই কেমনে কেমনে যেন সব বুঝতে পারবে! আমার চোখে চোখে তাকিয়ে তেরছা হাসি হেসে বলবে- আজকে সকালে যে চিঠি দিলাম অইটা তে বিবি সাব আপনারে বিয়া করতে রাজি হইছে! না?
আমি লজ্জা পেয়ে দ্রুত হাটতে থাকব।
পেছন পেছন দ্রুত হাটার চেষ্টা করতে করতে নুরু ভাই নিঃশব্দে আপন মনে হাসতে থাকবে!
©somewhere in net ltd.