নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। ইহা ক্ষুধা উদ্রেক করে!

হঠাৎ ধুমকেতু

আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!

হঠাৎ ধুমকেতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বরফের বোমা

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:১০

পটকা যখন সেখানে পৌঁছাল তখন চারদিকে ঘুরঘুট্টি অন্ধকার। নদীর ধারের সব চায়ের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। কোথাও জনমানুষের চিহ্ন নাই। পটকার প্যান্টের পকেটে চেপ্টে যাওয়া একটা সিগারেট আছে, কিন্তু লাইটার নাই। পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে দৌড় দেবার সময় লাইটার টা পকেট থেকে পড়ে গেছে। পকেটে লাইটার রাখাটা বড় ভুল হয়ে গেছে। এখন সেই লাইটারের সুত্র ধরে হয়ত পুলিশ তাকে খুঁজে বের করে ফেলবে। লেন্দু এই ভুল করে ধরা খাইছিল। লেন্দু ককটেল ছোঁড়ে আসার সময় লেন্দুর পকেট থেকে নোকিয়া মোবাইল পড়ে গেছিল। পুলিশ ২৪ ঘন্টা যাবার আগেই লেন্দুকে এরেস্ট করে ভিত্রে ঢুকাই দিল! পটকা একবার চারদিকে তাকাল। আশপাশে পুলিশের গাড়ির ছায়াও নাই। চেপ্টে যাওয়া সিগারেট টার গায়ে একবার হাত বুলাল পটকা। সিগারেটের কাগজের খোল টা জায়গায় জায়গায় কুঁচকে গেছে।– জামা কাপড়ের যেরাম ইস্তিরি আছে সিগেরেটের অ সেরাম ইস্তিরি থাকলে ভাল অইত অর মাইরে বাপ! মনে মনে খিস্তি করে মনে মনে হেসে মনে মনেই শিওরে উঠে পটকা! কি মনে করে সে হাসতেছে? সে শাহবাগে আজকে সন্ধ্যায় পেট্রোল বোমা মেরে একটা আস্ত বাস জ্বালাই দিছে। শীতকালে বাসের জানালা থাকে বন্ধ। মানুষ বারাইতেই পারবে না। কমসে কম বিশ পঁচিশ জন মরবে। পুলিশ যদি তারে একবার ভিত্রে ঢুকাইতে পারে তাইলে পুটকি’তে আগুন জ্বালাই দিয়ে উলটা করে ঝুলাই রাখবে!



নদীর ধারের দিকে হাটতে হাটতে বোমা ছুঁড়ে মারার দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেসে উঠে পটকার। ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি বেশ জোরেই চলতেছিল। পটকা মুটামুটি পঁচিশ তিরিশ হাত দূর থেকেই চলন্ত গাড়িতে বোমা ছুঁড়ে মেরেছিল। বোমাটা উইড়া গিয়া এক্কারে বরাবর ডাইভারের মাথার উপ্রে পরছে- হাসতে না চাইলেও শরীরের ভেতরে নিঃশব্দ একটা হাসি ফুলেফেঁপে উঠতে চায়! আগুন ধরব সব উপ্রের দিকে। বাসের ছাতের দিকে যেরাম মোটা কাপড়মাপড় দ্যায়, ওখানেই আগুন জ্বলব বেশি! পাব্লিক অ হালায় আবাল আছে! আগুন লাগলে ঠান্ডা মাথায় জানলা-মানলা খুলার চিন্তা না কইরা সব এক জাগায় জইম্মা কেরাবেরা লাগাই দ্যায়! আরে বাল! বাস থামায়া পাব্লিক নামায়া আগুন দেউনের সময় যে চইল্লা যাইতাছে হেইডা তরা বুঝস না! অ নে এরাম করতে গেলে বাস জ্বালান’র আগেই পাব্লিক বা পুলিশ আইয়া আমগো পুটকি জ্বালাই দিব! ভেতরে ভেতরে বেশ খানিকটা রাগ টের পায় এবং মনটা সিগারেট খাবার জন্য আবার উসখুস করে উঠে!



নদীর কিনারায় এসে ঠান্ডা পানিতে মুখ ধোয় পটকা। পানি বেজায় ঠান্ডা! পটকার মাথায় হঠাৎ করে একটা চিন্তা আসে। ঠান্ডা হইল গরমের উল্টা জিনিষ। গরমে যেরাম জ্বইলা যায় ঠান্ডায় সেরাম জইমা যায়! আগুলে জ্বালাই দিলে যেরাম মানুষ মইরা যায় ঠান্ডায় জমাই দিলেও ত সেরাম মইরা যাওনের কথা! পেট্রোল বোমার মত একটা ‘ঠান্ডা বোমা’ বানাইলে কেমন হয়!



নদীর কিনারায় হাঁটু ভাঁজ করে বসে পড়ে পটকা। সে কোথাও যাবেনা এটা ফাইনাল। কিভাবে গা ঢাকা দেবে সেটাও ফাইনাল! এখন প্লানের ‘খুঁতখুতানি’ গুলা বাইর করতে হবে। সিগারেটের জন্য আবার মনটা উসখুস করে উঠে পটকার। ‘কোন একটা ঘুমন্ত বাড়ির দরজায় গিয়ে ধাক্কা দিলে কেমন হয়!’ এরকম অলক্ষুনে চিন্তাও মাথায় খেলে যায় এবং সাথে সাথে নিজের মনকে শাসন করে পটকা। এখন হুট হাট কিছু করা মানেই নিজের মরন নিজে ডেকে আনা! এখন পতিটা মিনিটে প্লান অনুযায়ী চলতে অইব, প্লানের বাইরে কিছু করছ ত মরছ- নিজের মনকে শুনিয়ে নিঃশব্দে বলে পটকা।



হিম একটা বাতাস হঠাৎ এসে অন্ধকার নদীর জল কে ছলকে দেয় এবং পটকা হঠাৎ করে নাকে পেট্রোল পোড়া গন্ধ পায়! আজব ত! এখানে পেট্রোল পোড়া গন্ধ কিসের? পটকা কিছুটা বিস্মিত হয়ে অন্ধকার নদীর দিকে তাকিয়ে থাকে। আকাশে একটা দু’টা নক্ষত্র ফুটায় নদী’র বুকে তখন কিছু কিছু আলো। নক্ষত্রের মৃদু আলোয় নদীর বুকে একটা কাল বিন্দু ফুটে উঠতে দেখা যাচ্ছে! পটকা অপলক চোখে সেইদিকে তাকিয়ে থাকে। বিন্দুটা আস্তে আস্তে বড় হয়ে একটা নৌকার আকার ধারন করছে! পটকার একবার মনে হল পালিয়ে যায়! নৌকায় করে আল্লাহপাক কি বিপদ পাঠাচ্ছেন কে জানে! বসা থেকে উঠতে গিয়ে শরীর ভারি ভারি লাগে পটকার। যেন নদীর কীনারায় তার আচমকা শিকড় গজায় গেছে! পটকা একি সাথে সন্মোহিত এবং আতঙ্কিত বোধ করে! নৌকার আকার ধিরে ধিরে বড় হয় এবং নৌকার পাটাতনে বৈঠা হাতে একজন মাঝি ও দেখা যায়। মাঝির গায়ে খয়েরি রঙ ফতুয়া, গালে বিক্ষিপ্ত কাঁচাপাকা দাড়ি, চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে! পটকার মস্তিষ্কের কোথাও সে বুঝতে পারে সে যা দেখতেছে চোখের ধান্ধায় দেখতেছে কারন নৌকায় কোন হারিকেন-মারিকেন কিছু নাই এবং তারার আলোয় ‘খয়েরি রঙ’ দেখা সম্ভব না! পটকা এটাও বুঝতে পারে আপাতত তাকে ধান্ধা’র কথামতই চলতে অইব! এছাড়া উপায় নাই!



নৌকার মাঝি সীসার মত ভারী গলায় পটকা কে নৌকায় উঠার হুকুম দেয়। পটকা নৌকায় উঠা মাত্র নৌকা নাক ঘুরিয়ে মাঝ নদী বরাবর যেতে থাকে। বৈঠা মারার ছপ ছপ শব্দ হয়।



পটকার মনে হয় সে যেন কোন জাদুর সিনেমা দেখছে। বৈঠা মারার তালে হাপরের মত ঊঠানামা করতেছে মাঝি’র বিশাল বুক। বুকের উপর ঝোলানো একটা তাবিজ ও দেখা যাচ্ছে। আকাশে বিশাল গোল থালা চাঁদ, চাঁদ কে পটকা কখনো এত নিচে নামতে দেখেনি। চাঁদের আলো নদীর পানির উপর পড়ে নদী’র পানি ধারালো ছুরি’র মত চকচক করছে!



নৌকার তলার মাঝামাঝি যায়গায় হঠাৎ একটা শব্দ হয়! তলার আস্ত একটা কাঠ ই যেন খুবলে বেরিয়ে আসে! কাঠের তলায় উঁকি দিচ্ছে সারা গায়ে কাদা মাখা একটা বীভৎস ছায়া মুর্তি! ছায়া মুর্তি ধিরে ধিরে নৌকার পাটাতনের উপর উঠে এল। তার হাত দুটো দেখা যাচ্ছে। এক হাতে কাল পলিথিনে মোড়া প্যাকেট। প্যাকেট টা র ভেতর কিছু একটা নড়াচড়া করায় পলিথিনের খসখস শব্দ উঠছে। আরেক হাতে এক বোতল কেরোসিন আর লাইটার।



‘জ্বালাইয়া দে!’



মাঝির সীসার মত ভারি কন্ঠ অসীম নদী’র বুকে বোমার মত বিস্ফোরিত হয়!



ছায়া মুর্তি ধিরে ধিরে কাল পলিথনের মোড়ক, তারপর মোড়কের ভেতরে থাকা একবছরের শিশু সন্তানটাকে বের করে আনে। শিশু সন্তানটা পটকা’র। জন্মের পর পর ই শিশুর একবার নিউমোনিয়া হয়। পটকা শিশু সন্তান কোলে নিয়ে সারারাত দাঁড়িয়ে ছিল।



ছায়া মুর্তি শিশুর চুলের মুঠি ধরে নৌকার কীনারায় গিয়ে দাঁড়ায়। কেরোসিনের বোতলের মুখ খুলে। শিশু হঠাৎ ‘ বাবা বাবা’ বলে আকুল স্বরে কেঁদে উঠে। ছায়া মুর্তি’র সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নাই। সে নিঃখুঁত ভাবে নিস্পাপ শিশুটির মাথার তালু তে কেরোসিন ঢালছে!



পটকা হঠাৎ হাউমাউ করে কেঁদে উঠে- জ্বালাইস না বাপ! আমার পোলারে জ্বালাইস না, তর কিনা গোলাম হইয়া থাকব। আমার পোলারে ফিরাইয়া দে!ফিরায়া দে!



শিশুটির সারা দেহ কেরোসিনে ভিজে চুপচুপ করছে। ছায়া মুর্তি র হাতে দপ করে জ্বলে উঠে লাইটার!



আমার পোলারে ফিরায়া দে! পটকার গগন বিদারী চিৎকারে গোল থালা চাঁদ টা, অতঃপর পুরা আকাশ টা থর থর করে কেঁপে উঠে।



ছায়া মূর্তি জলন্ত লাইটার এগিয়ে নিতে নিতে হাতের ইশারায় মাঝির দিকে দেখিয়ে দেয়। সে চোখের দিকে তাকিয়ে পটকার নিজেকে পৃথিবীর নিঃস্বতম কীট মনে হয়। সে চোখ ‘ঠান্ডা বোমা’ মেরে কেউ যেন চিরতরে জমিয়ে দিয়েছে। সেখানে দয়ামায়ার কোন অস্তিত্ব নাই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.