![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!
ছেকলু বেশ সকাল সকাল কাজে বেরিয়েছে। শিশিরের ভারে নুয়ে আছে জনপদ। ছেকলু’র কানের গোড়ালি’তে শীত লাগছে। ‘ব্যাটাছেলের শীত লাগে কানে। মাইয়া মানুষের শীত লাগে রানে!’- ছেকলু নেতার মুখে এসব কথা শুনেছে! কাকে জবাই করতে হবে, কাকে কোপাতে হবে, কাকে বোমাতে হবে এসব ডাইরেকশন দেবার পাশাপাশি নেতা এরকম হাসির কথাবার্তা বলে। এতে পোলাপান একদিকে মজা পায় আবার এই কারনে নেতার প্রতি তাদের আলাদা একটা টান তৈরি হয়! পোলাপান যে শুধু টাকার জন্য নেতার পেছনে ছোটে সেটা ভুল কথা। নেতার চরিত্রে এমন সুপার গ্লু থাকতে হবে যেন নেতা পাছায় লাথি দিলেও পোলাপান আটকে থাকে! ছেকলু’র নেতার সেই সুপার গ্লু হচ্ছে রসিক কথাবার্তা!
-কেরে চাপাতি উস্তাগর! সক্কাল সক্কাল ঘরেত্তে বাইরালি?, পটকা যেন কুয়াশা ফুঁড়ে ছেকলু’র সামনে উদয় হয়। ছেকলু চাপাতি দিয়ে মানুষ কোপাতে উস্তাদ।সেই কারনে এলাকায় ছেকলু’র নাম চাপাতি উস্তাগর।
-কামেই বারাইছি! তগো কি অবস্থা? অ’ নে শুন্তাছি বাস পোড়ানোতে নাকি টেকা পয়সা ক’ইম্মা যাইতাছে! ঠিক রে?, ছেকলু উদ্বিগ্ন স্বরে পটকা কে জিজ্ঞেস করে। পটকা পেট্রোল বোমা’র উস্তাদ!
-ঠিকই শুনছস! এই কামডা সোজা দেইক্কা আবাল পোলাপান সব এই কামে আয়া পরতাছে। তর কথা হুনন ই বালা আছিল!
-হেইডা পুটকি মারা খাওনের পরে বুঝলি! এত্ত বাআর কইলাম, পটকা চাপাতির কাম টা শিখ! এই কাম সবাই পারেনা। কইলজা লাগে! হেই কইলজা তর আছে!হুনলি না! অ’ নে যা! আবাল পোলাপানের লগে লেন্দায়া পুটকি মারা খা!
-তগো ত নাকি নতুন বড় কাম আসতাছে! আমারে দলে নিবি নি?
-কে? তর নেতা তরে ছারব? তুই না বলে ‘পেট্টল ওস্তাদ’ অর মাইরে বাপ!
-হের ছারানি’র গুষ্টি কিলাই! আমার টেকা নিয়া কথা! যে’ন টেকা বেশি এ’ন ই যামু! তুই খালি একবার তর ওস্তাদ রে যাইয়া ক, ‘পেট্টল ওস্তাদ’ দলে আইতে চায়!
পটকার কথার ভিতরের ‘সূক্ষ্ম অহংবোধ’টা টের পায় ছেকলু। আর তা থেকেই বুঝতে পারে পটকার অবস্থা এখন খারাপ! অবস্থা খারাপ হলে মানুষের কথার গরম বাইরা যায়! পটকার জন্য মায়া হয় ছেকলু’র। কিন্তু নেতা কে বলে আসলে লাভ নাই। নেতা সবসময় বলে- ‘হগল সময় মনে রাখবি এক কাম কইরা যে হাত পাকাইছে, হেরে অন্য কামে নিলে রিক্স! হে নিজেও মরব, আমগোরেও মারব!’ সেই হিসাবে পেট্টল ওস্তাদ পটকা’র ছেকলুর নেতা’র কাছে কোন দাম নাই।
-হ কমু নি! তয় আমগো নেতার কাছে এক ভাই আহে, হের চাইনিজ হটেল আছে। আমার লগে হের বালা ই সম্পর্ক! হেরে কইয়া তরে আমি বিয়ারারের চাকরি দিতে পারি! তুই না অয় দারিউরি কাইট্টা লাইবি!, পটকাকে কিছুটা তাচ্ছিল্যের স্বরেই বলে ছেকলু।
ছেকলু’র কথা পটকার গায়ে জ্বালা ধরায়। তার কামাই কিছুটা কমছে তা ঠিক। কিন্তু বাজারে তার একটা নাম আছে। আগামী ‘অব্রুদ-হর্তালে’র বাস পোড়া’র অডার এখন থেকেই আসা শুরু করেছে। আর হে করব হোটেলের বিয়ারারের কাম! এক বমা’য় যে বিশ পঁচিশ জন মানুষ পুড়াই মারছে হে মাইনসের টেবিলে টেবিলে গিয়া সালাম দিয়া কইব, ভাইজান কি খাইবেন! সশব্দে থু থু ফেলে ছেকলুর উদ্দ্যেশ্যে নিজের ঘৃণা জানান দেয় পটকা! হারামজাদা চাপাতি কি মানুষ কোপাইয়া নিজেরে আকবর বাদশা ভাবতাআছে! ভিত্রে ঢুকার আগে লেন্দু ত গুল্লি কইরা কমসে কম পঞ্চাশটা মানুষ মারছে! হেরেও ত পটকা ছেকলু’র মত এমন দেমাগ দেখাইতে দেখে নাই!
- কাম দিতার বি না হেইডা এক কথা। অপমান করলি, এইডা কাম বালা করলি না ওস্তাগর!
- তুই আমারে ভয় দেখাস বান্দি’র পুত!
পটকা শিউরে উঠতে উঠতে দেখে ভোজবাজি’র মত ছেকলু’র হাতে উঠে এসেছে চাপাতি। চাপাতির ধারালো অংশটা কুয়াশার মধ্যেও চকচক করছে!
পটকার পেন্টের পকেটে পেট্রোল বোমা আছে। পটকা বিস্ময়ের সাথে উপলব্ধি করল যে অস্ত্রটা একসাথে বিশ পঁচিশ জন মানুষ মারতে পারে সে অস্ত্র পরিস্থিতি’র কারনে এই মুহুর্তে একসাথে বড় জোর একজন মানুষ মারতে পারে এরকম একটা অস্ত্রের কাছে সম্পুর্ন অসহায়। পরিস্থিতি পটকা’কে ক্রুদ্ধ থেকে ধুর্ত করে তুলে!
- কিয়ের কি উস্তাদ! তর লগে মশকরা করলাম! তুই অ হালায়! শুনছি তুই একেকটা কন্টাকে বিশ পঁচিশ হাজার টেকা পাস। আমারে মাইরা ত বাআল টাও পাইতি না!
চাপাতি কোমরে গুঁজতে গুঁজতে ছেকলু পটকা’র অবস্থা পুরাই বুঝে নেয়। পটকা ছেকলু’কে জমের মত ভয় পেয়েছে। এই ভয় কে কাজে লাগাতে হবে! টেকা দেওন লাগত না! খালি ভয় দেখায়া, ব্লাক মেইল কইরা এখন পটকা রে দিয়া অনেক কাম করাই লউন যাইব!
দু’জন হাঁটতে হাঁটতে এলাকার প্রাইমারি স্কুলের কাছে এসে পড়ে। হেড স্যারের ক্লাস ফাইভে পড়া ছেলে সুমন খোলা বারান্দায় বসে সমাপনী পরিক্ষা’র গাইড পড়তেছিল । সে ছেকলু আর পটকাকে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে দেখে। সে জানে এরা পড়ালেখা করে নাই কিন্তু অনেক পয়সা কামায়। আর এলাকায় এদের সবাই সমীহ করে। হেড স্যার হিসাবে তার বাপরে সবাই সালাম দিলেও ছেকলু বা পটকার এলাকায় যে ইজ্জত সেটা তার বাপের নাই এটা বুঝে সুমন। তার বাপ এতদিন মাস্টারি করেও একটা রঙিন টিভি কিনতে পারে নাই। অথচ ছেকলু নাকি সেদিন কারে রঙিন টিভি গিফট করছে!
সুমন সমাপনী পরীক্ষার গাইড গাইড নামাই রেখে ছেকলু আর পটকার দিকে তাকায় থাকে। তাকায় থাকে!
বইটা হঠাৎ ধপ করে মাটিতে পড়ে যায়!
কোথাও একটা আর্তনাদ শোনা যায়! কেউ কি শুনতে পায়?
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই মে, ২০১৪ রাত ১:২১
হিমচরি বলেছেন: darun likecho....go ahead!!