![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!
ফারিয়া র কালকে স্কুলে বিংগালি ইক্সাম! পোয়েম মেমরাইজ করতে হবে। ভেরি ভেরি ডিসগাস্টিং! পোয়েম টা আবার অন্নেক বড়। ফারিয়া তার ডুড’স থেকে ফটোকপি করে নেয়া পোয়েম টা খুব বিরক্তির সাথে টেবিলের উপর মেলে ধরে। তারপর কপাল কুঁচকে পড়তে থাকে,
খুমড়ো ফুলে ফুলে নুয়ে পড়েছে লতা ঠা
সজনে ডাঠা’য় ভড়ে গেছে ঘাছ টা!
আড় আমি, ডালের বড়ি শুকিয়ে ড়েখেচি!
ডালের বড়ি? কি ওইয়ার্ড!! বিংগালি পোয়েট রা অ্যাত ওইয়ার্ড স্টাফ যে কোথায় পায়? শিট!!
‘আফা, ছারে আইচে। ছারেরে কি আগে বসার ঘরে চা দিমু, না কি আসতে কমু?’
বুয়াটা আরেক ওইয়ার্ড! এত বিশ্রী ডায়ালেক্টে কথা বলে!! ডেড এর ভিলেজ থেকে এই বুয়া কে আনা হয়েছে। একে বিদায় করে মমে’র ভিলেজ থেকে আরেকটা আনতে হবে!
তুই ঝা ত! স্যার কে বসে বসে টিভি দেখতে বল!আমি এখন বিংগালি পড়ছি!
এই ছারের দেমাগ বেশি আফা! বসতে বললে চইলা যাইব! এ বেদ্দপির ধার ধারে না!!
তুই কাজের বুয়া আমারে আদ্দপ শিখাস? বিচ!!
ইংরাজি গালি দিয়েন না আফা। ইংরাজি গালি শুনলে বেশি রাগ উঠে। গালি দেয়া লাগলে বাংলায় দিয়েন!
ফারিয়া রাগী চোখে গটমট করে চলে যেতে থাকা বুয়ার দিকে তাকায়। বিচ টার অ্যারোগেন্স খুব বেড়ে গেছে। বিচ টাকে সাইজ করতে হবে!
পড়াতে বসে হুমায়ুন দেখল তার স্টুডেন্ট ফারিয়া’র চোখ মুখ বিরিক্তিতে কুঁচকে আছে। মনে হচ্ছে আজকে তার পড়ার ইচ্ছা নাই। স্টুডেন্টের চেহারায় পড়ার ইচ্ছা না দেখলে হুমায়ুনের পড়ানোর ইচ্ছাও চলে যায়। কিন্তু এরা আবার একদিন না পড়ালে বেতন কাটে। ধুন্ধুমার পয়সা ওয়ালা হলেও মন টা ছুচো’র মত চিকন! হুমায়ুন যখন পড়ায় ছাত্রীর মা আরেক রুমে ঘড়ি ধরে বসে থাকে। ঠিক দেড় ঘণ্টা হলে ক্যালেন্ডারের তারিখে মার্কার দিয়ে গোল দাগ দেয়। মেয়ে স্কার্ট টপস পরলেও মহিলা সৌদি বোরখা পরে। কিন্তু মহিলার চোখ দুটার দিকে তাকালে হুমায়ুনের মনে হয় মহিলার ভিতর খাচরামি আছে!
চল আমরা চেপ্টার ফোরের ম্যাথস গুলো একটু রিভিশন করি!, হুমায়ুন খুব ট্যাক্টফুলি বলে। তার ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া ট্যাস্মার্ট (ট্যাস্মার্ট= ট্যাঁস + স্মার্ট,হুমায়ুনের নিজের আবিষ্কার!)ছাত্রী বিচিত্র কারনে চ্যাপ্টার ফোরের সূচকের অঙ্ক গুলো খুব পছন্দ করে। এগুলো দিয়ে বসাই দিলে চুপচাপ বসে অঙ্ক করে। ট্যাঁস ভাষায় কথা বলা থেকে বিরত থাকে!
স্যার আমার না কালকে বিংগালি ইক্সাম!
কি এক্সাম?
বিংগালি!!
দেখ ফারিয়া! বাংলাকে বাংলা যদি নিতান্তই বলতে না পার তাইলে এট লিস্ট বেঙ্গলি বল। বিং গালি নয়!
ওয়াটস রঙ ওইথ দ্যাট স্যার?
বিং গালি বললে মনে হয় গালি দিচ্ছ!
কিন্তু স্যার আমার বিংগালি ভাল লাগে না। খুব ওইয়ার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ!
ভাল না লাগতে পারে। কিন্তু তাই বলে ত তুমি গালি দিতে পার না!
কি ওইয়ার্ড একটা পোয়েম পড়া লাগতেছে স্যার! ইয়ু কান্ট ইম্যাজিন!! , ফারিয়া কাঁধ নাড়াতে নাড়াতে বলে।
কোন পোয়েম?
কিসব! খুমড়ো ফুলে ফুলে নুয়ে পড়েছে লথা টা!
সোজনে ঢাটায়...!
হুমায়ুন কিছুক্ষণ ঝিম ধরে বসে থাকে। এই কবিতা টা তার অসম্ভব প্রিয়। তার ধারনা একুশে ফেব্রুয়ারি’র যত কবিতা আছে তার মধ্যে এটা সেরা। নজরুল ইসলাম হলের ছাদে ইউক্যালিপটাস গাছের ছায়ায় বসে বসে সে কতবার এই কবিতা আবৃত্তি করেছে পরম ভালোবাসায়। এই কবিতার কি ভয়াবহ হাল হয়েছে তার স্টুডেন্টের মুখে! হুমায়ুন তাকে তাড়াতাড়ি থামিয়ে দেয়। জিজ্ঞেস করে,
আচ্ছা ফারিয়া তোমার প্রিয় একটা কবিতার নাম বল।
ফারিয়া একটু চিন্তায় পড়ে যায়। সে বুঝতে পারে স্যার মাইন্ড করেছে। স্যার বিংগালি মিডিয়ামে পড়েছে। কাজেই তার মধ্যে কিছু বিংগালি সেন্টিমেন্টস আছে!
ফারিয়া তাড়াতাড়ি বলে, স্যার এই পোয়েম এর চেয়ে ইংলিশ রাইমস গুলো ত অনেক বেটার। লাইক, টুইঙ্কল টুইঙ্কল লিটল স্টার!
কেন বেটার ফারিয়া? বুঝিয়ে বল!
আপনি একটু এক্সাইটেড মনে হচ্ছে স্যার! আপনি কি মাইন্ড করেছেন?, ফারিয়া মুখ টিপে হাসতে হাসতে বলে।
না মাইন্ড করি নি। বুঝতে চাচ্ছি।, হুমায়ুন শান্ত স্বরে বলে।
এটা ত আমি ভিজুয়ালাইজ করতে পারি স্যার!
কুমড়ো ফুলে ফুলে ভিজুয়ালাইজ করতে পার না?
ক্যাম্নে স্যার? এইসব ত কখনো দেখি নাই!!
হুমায়ুন চুপচাপ বসে থাকে! তার প্রচণ্ড ইচ্ছা করে একটা সিগারেট ধরাতে। পকেটে সিগারেট আছে। কিন্তু এখানে সিগারেট ধরালে চাকরি(!) চলে যাবে। হুমায়ুনের ইচ্ছা করে এখুনি উঠে চলে যায়। টাকা কাটা যায় যাক!
ইচ্ছে টাকে প্রাণপণে দমন করে হুমায়ুন তার সামনে বসে থাকা মাত্র যৌবনে পা দেয়া অসম্ভব সুন্দর তরুণী’ র উদ্যেশ্যে বলতে থাকে,
তোমাদের কোন দোষ নেই ফারিয়া। মানুষের ব্রেন ত আদিম যুগ থেকেই ভিজুয়াল ফ্রেম নিয়ে কাজ করে। সে যতক্ষণ পর্যন্ত একটা জিনিষের ভিজুয়াল রূপ না পায় ততক্ষণ পর্যন্ত সেই জিনিষটা কে একসেপ্ট করতে পারে না। আর আমরা একটা জিনিষ পড়ে আনন্দ পাই তখুনি যখন ব্রেন সেটাকে একসেপ্ট করে।
তোমাদের কে আমরা ‘কুমড়ো ফুলে ফুলে’র সৌন্দর্য্য দেখাতে পারিনি। শুধু মিনিংলেস(!) কিছু ওয়ার্ডস তোমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছি। ঘরের সৌন্দর্য্য তোমাদের দেখা হল না!
ফারিয়া অবাক চোখে স্যারের দিকে তাকিয়ে আছে। স্যারের মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। চোখে অশ্রুবিন্দু চিকচিক করছে। ফারিয়ার হঠাৎ করে মনে হল এই মানুষ টাকে সে চিনে না! পরমুহুর্তেই মনে হল, নিজেকেও সে চিনে না!!
©somewhere in net ltd.