নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। ইহা ক্ষুধা উদ্রেক করে!

হঠাৎ ধুমকেতু

আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!

হঠাৎ ধুমকেতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি

১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:২৮

নাটোর সরকারী কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তপন সান্যাল আজকে কলেজে যান নি। গতকাল বিকেলে টেনিস খেলার সময় ব্যাক স্ট্রোকে অ্যাস্মেশ করতে গিয়ে পিঠের মাসলে টান পড়েছিল। সকাল থেকে হাত নাড়াতে গেলেই মেরুদন্ডের কাছটিতে তীক্ষ্ণ জ্বলুনি অনুভব করছেন । তপন সান্যাল ঠিক করে রেখেছিলেন আজকের দিনটি বিছানায় শুয়ে বই পড়ে কাটিয়ে দেবেন। পাবলিক লাইব্রেরী থেকে শার্লক হোমস সিরিজের ‘স্টাডি ইন স্কারলেট’ গত সপ্তাহে নিয়ে এসেছিলেন। কলেজের পরীক্ষা, স্থানীয় রানী ভবানী সাহিত্য সঙ্ঘের বার্ষিক অনুষ্ঠানের দায়িত্ব, সব মিলিয়ে পাতা উলটে দেখার ও সময় পান নি।



তপন সান্যাল স্ত্রী কে নাম ধরে ডাকলেন। আশেপাশের সবাই স্ত্রীকে সরাসরি নাম ধরে না ডেকে ‘হ্যাঁগো ওগো’ ইত্যাদি অথবা ‘ছেলেমেয়ে’র মা’ বলে সম্বোধন করে। তিনি স্ত্রী শোভাকে সরাসরি নাম ধরেই ডাকেন।



শোভা রান্না ঘরে রান্না নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। আজকে তাঁর মেঝো ছেলে দীপনের আইএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দেবে। দীপন এবার রাজশাহী কলেজে থেকে আইএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। সকাল থেকে ছেলে রাজশাহী যাবার জন্য ঘ্যানর ঘ্যানর করছিল। কলেজে গিয়ে রেজাল্ট নিয়ে আসবে। দীপনের বাবা যেতে দিচ্ছে না। দীপনের বাবার সেই একই কথা- যে রেজাল্ট কলেজে গিয়ে নিয়ে আসতে হয় সেই রেজাল্টের জন্য এত তাড়াহুড়া করার কি আছে!



শোভা স্বামী’র কথার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছেন না। আশ্চর্য! রেজাল্ট দেবে কলেজে। রেজাল্ট কলেজে গিয়েই ত নিয়ে আসতে হবে! অবাক ব্যাপার হচ্ছে দীপন ও বিষয়টা নিয়ে আর তেমন একটা বাড়াবাড়ি করছে না। সে তার বড় দা’র বিছানায় চিংড়ি মাছের ভঙ্গিতে শুয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়ছে। দীপন অভিমান করেছে কিনা টেস্ট করার জন্য শোভা চা নিয়ে ঢুকেছিলেন। দীপন আরাম করে চায়ে ফুঁ দিয়ে দিয়ে সশব্দ চুমুকে চা খেয়েছে। তার মানে অভিমান করেনি! দীপনের বাবার চরিত্রের রহস্যময়তার সাথে শোভা অভ্যস্ত। এখন দেখা যাচ্ছে ছেলের চরিত্রেও বাবার রহস্যময়তা চলে আসতেছে!



স্বামী’র কাছে এসে শোভা প্রথমেই জানতে চাইলেন, ওগো তোমার পিঠের ব্যাথার কি অবস্থা?



যে মাসল গুলোতে টান পড়েছে তাদের কে কিছু সময় আরামে থাকতে দিলেই ব্যাথা চলে যাবার কথা! তারপরেও যদি না যায় বিকালে একবার হোমিওপ্যাথ জনার্দন বাবুর কাছে যাব।



বাসায় ইসমাইলের হাড় ভাঙ্গা তেল আছে। পিঠে মালিশ করে দেব?



আশ্চর্য! আমার কি হাড় ভেঙ্গেছে নাকি যে হাড়ভাঙ্গা তেল মালিশ করবে!



হাড় যে ভাঙ্গে নাই সেটা কিভাবে নিশ্চিত হচ্ছ? তুমি ত আর পিঠের এক্স রে করাও নি!



আমাদের নাটোরে এক্স রে করানোর ব্যবস্থা থাকলে অবশ্যই করাতাম। রন্টজেন সাহেবের আবিস্কার! তুমি কি রন্টজেন সাহেবের নাম শুনেছ শোভা?



হুহ! তুমি যেরকম বয়েজ স্কুলের ফার্স্ট বয় ছিলে আমিও কিন্তু সেরকম গার্লজ স্কুলের ফার্স্ট গার্ল ছিলাম!



তপন সান্যাল অপলক চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলেন, শোভার নাকের উপরের অংশ টুকু তির তির করে কাঁপছে। লাবন্যভরা গাল টা ভারী হয়ে যাচ্ছে হঠাৎ আসা গোলাপী রক্তের জোয়ারে! একচল্লিশ বছর বয়সের শোভা মুহুর্তের মধ্যেই পরিনত হচ্ছে সেই পনের বছরের ভীষন অভিমানী জেদি তরুণীতে!



তপন সান্যাল তাকিয়েই থাকলেন! চোখের পলক না ফেলেই অতিক্রম করলেন সুদীর্ঘ উনিশ বছর সময়ের ব্যবধান। উনিশ বছর আগের সেই অভিমানী,জেদী এবং অসাধারন রূপবতী তরুনী’র সাঙ্ঘাতিক জেদ কি ভীষন ভাবে তাঁর পক্ষে এসেছিল সেদিন! ছোটবেলা থেকে বিলাস ব্যসনে বড় হওয়া সচ্ছল পরিবারের কন্যা বাবা মা’র তীব্র আপত্তি অগ্রাহ্য করে তপন দের নিতান্ত নড়বড়ে অসচ্ছল পরিবারের বউ হয়ে এসেছিল! বউ হয়ে আসার পরে তপনদের সেমি যৌথ পরিবারের সদস্য দের বড়লোকি আঁচে দগ্ধ করা দূরে থাক, সহজাত বুদ্ধিমত্তা এবং নারীত্বের মহিমা দিয়ে সবার মন এমন ভাবে জয় করেছিলেন যে সংসারে মা লক্ষীকে ভগবান নিজ হাতে উপহার হিসেবে পাঠিয়েছেন, এই বিষয়ে তপন দের পরিবারের সবাই একমত হয়েছিলেন!



বাসায় সর্ষের তেল আছে?



কেন? সর্ষের তেল পিঠে মালিশ করবা?



তুমি আছ পিঠ মালিশ নিয়ে! সর্ষের তেল আর কাঁচা মরিচ দিয়ে ভাল করে মুড়িমাখা করে আন ত! মুড়ি মাখা খেতে খেতে গল্পের বই পড়ব!



তোমার তিনটার ব্যাচের স্টুডেন্ট রা পড়তে আসলে কি না করে দেব?



হ্যা, না করে দিও। বোলো যে আজকে স্যারের শরীর খারাপ। পড়াতে পারবে না!



তুমি কি আমার স্যার?



তাইলে বোল যে আজকে স্বামী’র শরীর খারাপ। পড়াতে পারবে না!



তুমি কি তোমার স্টুডেন্ট দের কারো স্বামী ?



তুমার ফার্স্ট গার্লত্ব স্বীকার করে নিলাম! এইবার কি তুমি মুড়ি মাখা আনতে যাবা?



শোভা স্বামী’র দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে এক ছুটে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। ও কি! আপনা থেকেই মনের মধ্যে গুন গুন করে রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজছে! ‘আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রান, সুরের বাঁধনে।‘



দুপুরে ভাত খাবার পর স্টাডি ইন স্কারলেট আরো একুশ পাতা পড়ে ফেললেন তপন সান্যাল। তারপর অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রাইভেট স্টুডেন্ট সাব্বির কে পড়ানো’র জন্য পড়ানোর ঘরে এসে বসলেন। সাব্বিরের দু’দিন পরে একাউন্টিং টেস্ট পরীক্ষা। দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি কিছুতেই বুঝতে পারছে না সাব্বির। অথচ একাউন্টিং এর মুল কনসেপ্ট ই হচ্ছে লুকা প্যাসিউলি সাহেবের ডাবল এন্ট্রি মেথড অর্থাৎ দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি। পিঠের পেশিতে যাতে টান না পড়ে সেভাবে রোবট স্টাইলে ঘাঁড় লক করে রেখে তপন সান্যাল সাব্বিরের চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন,



তোর নামে নাম একটা ছেলে ত ইদানিং খুব ভাল ফুটবল খেলছে। তুই ফুটবল খেলা দেখিস?



জ্বী স্যার, দেখি।



খেলায় সাধারনত একদল জিতে, আরেকদল হারে তাই না?



গোল না হলে খেলা ড্র হয় স্যার!



গোল সমান সমান হলেও খেলা ড্র হয়। আর ড্র না হলে যেকোন একদলের খাতায় জয় লেখা হয়, তাই না?



জ্বী স্যার। তাই স্যার।



একদলের খাতায় জয় লেখা হলে অটোমেটিক আরেক দলের খাতায় হার লেখা হয়, নাকি?



তাই স্যার। ঠিক তাই!



এর ব্যতিক্রম কি হওয়া সম্ভব?



সম্ভব না স্যার। এরকম ই ঘটবে!



তুই কি আমার কথা পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিস?



না বুঝার কি আছে স্যার? আপনি পানির মত সহজ করে বুঝিয়ে দিয়েছেন!



তপন স্যান্যাল সাব্বিরের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে সাব্বিরের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। সাব্বিরের দু’চোখের পাতা তির তির করে কাঁপছে। সাব্বিরের ব্রেনের ফ্রিকোয়েন্সি’র সাথে তাঁর পড়ানোর ফ্রিকোয়েন্সি ম্যাচ করে গেছে! সাব্বিরের ব্রেনের মধ্যে এখন রেসোনেন্স হচ্ছে! দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি’র জ্ঞান এখন সাব্বির নামক কিশোরের মস্তিষ্কের স্থায়ী সম্পত্তি হয়ে গেছে। রেসোনেন্স পদ্ধতি’তে যে স্মৃতি তৈরি হয় সেটার নাম জ্ঞান এবং প্রকৃতি তাকে স্থায়ী স্মৃতি রূপে সংরক্ষন করার ব্যাবস্থা করে! তপন সান্যাল দিব্য চোখে দেখতে পেলেন, মাঝারি মানের ছাত্র হিসেবে তাঁর কাছে কিছুদিন আগে পড়তে আসা কিশোর টি সেরা ছাত্রে পরিনত হওয়াটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র!



পড়ার ঘরের দরজা ধরে ছেলে দীপন দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটা ছোটবেলায় নাদুশ নুদুশ ছিল। বয়স বাড়ার সাথে সাথে গায়ে মাংস কমে যাচ্ছে। দুধ নিশ্চয় ঠিকমত খাচ্ছে না। দীপন কিছু বলতে যাচ্ছিল। তপন সান্যাল দীপনের কথায় পাত্তা না দিয়ে বললেন, দীপন! তোর মা’কে বল এক্ষুনি দুই গ্লাস দুধ গরম করে দিতে। আমার সামনে বসে তুই আর সাব্বির গ্লাসে করে দুধ খাবি!



তপন সান্যালের দৃষ্টি পড়ার টেবিল ছাড়িয়ে সামনের ছোট্ট জানালার লোহার গরাদে নিবদ্ধ হল। লোহার গরাদে একটা চড়ুই পাখি তেরছা ভাবে বসেছে। বার বার পড়ে যেতে চাচ্ছে আর ডানার প্রবল কম্পাঙ্কে শরীরের ব্যালেন্স ঠিক করার চেষ্টা করছে। আজ থেকে প্রায় পনের বছর আগে উনিশ শ একাত্তর সালের এক সকালে এরকম ঘটনা ঘটেছিল। তপন সান্যাল তখন টগবগে যুবক। বড় ছেলে স্বপনের বয়স চার। দীপনের বয়স দুই বছর আর সুষমা কে পেটে নিয়ে শোভা ছ’মাসের অন্ত সত্ত্বা। তপন সান্যাল প্রতিদিন ভোরে উঠে যোগ ব্যায়াম করতেন। সেদিন মৎস্যাসন করার পর শবাসন করছেন। তাঁর অর্ধনমিত চোখের সামনে গরাদ দেয়া জানালা গলে ঘরে ঢুকছে নিস্পাপ প্রকৃতি’র গা ছুঁয়ে আসা ভোরের প্রথম হাওয়া। নিশ্বাসের সাথে তিনি সেই হাওয়া বুক ভরে নিচ্ছেন। হঠাৎ অবিকল একই ভঙ্গিতে একটা চড়ুই পাখি লোহার গরাদের উপর এসে তেরছা ভাবে বসল। বারবার পা পিছলে পড়ে যাচ্ছে আর ডানার প্রবল কম্পাঙ্কে শরীরের ব্যালেন্স ঠিক করার চেষ্টা করছে! সেদিন ই তিনি গ্রামে পাক হানাদার বাহিনী আসার খবর পেয়েছিলেন। স্থানীয় রাজাকারদের আন্তরিকতায় কোন ঘাটতি না থাকায় পাক বাহিনী মুটামুটি নির্বিঘ্ন ভাবেই ছোট্ট শহরটিতে তাদের বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালাতে পেরেছিল।



অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী এবং দুই নিস্পাপ শিশুর হাত ধরে তুখোড় অধ্যাপক, চৌকস খেলোয়াড় এবং শহরের সাহিত্য আসরের মধ্যমনি তপন সান্যাল একটা শরনার্থী দলের সাথে মিশে গেলেন। শরনার্থী দলের লক্ষ্য ইন্ডিয়া বর্ডার!



শোভার পায়ে পানি চলে এসেছে। পা ফুলে ঢোল। দীপন বাবার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে মাঝে মাঝেই করুন দৃষ্টিতে তাকায়। সে চোখে স্পষ্ট আকুতি- বাবা কোলে নাও! তপন ক্লান্ত শরীরে হাঁটু মুড়ে বসে ছেলে কে বুকের সাথে চেপে ধরেন। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে দুই ক্লান্ত শিশুর হাত ধরে টানতে টানতে বড় বড় নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেও হাঁটতে থাকেন। মুখে বিড় বিড় করে বলেন, তুমি আমাদের এ কোন দুঃখের খাতায় এন্ট্রি করলা ভগবান!



কঠিন অগ্নি পরীক্ষার মধ্য দিয়েই দিন গুলো পার হয়ে যাচ্ছিল। অগ্নিপরিক্ষার প্রশ্নপত্রের সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নটির মুখোমুখি তপন সান্যাল কে একদিন দাঁড় করিয়ে দিল তাঁর দু’বছর বয়সী ছোট্ট ছেলে দীপন। পাক আর্মি তখন আহত হায়েনার মত মরিয়া হয়ে উঠেছে। নারী-শিশু- বৃদ্ধ সম্বলিত শরনার্থী মিছিলেও ব্রাশ ফায়ার করতে দ্বিধা করছে না। ইন্ডিয়া বর্ডারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে তখন তপন সান্যাল দের দল।দিনের বেলা লুকিয়ে থাকে। রাতের বেলা নিঃশব্দ বেড়ালের মত পথ চলে। যাতে আশে পাশে উঁৎপেতে থাকা পাক হানাদার বাহিনী অথবা রাজাকারদের কেউ টের না পায়!একরাতের কথা। দলের সবাই বেড়ালের নিঃশব্দ পায়ে পথ চলছে। কাউকে কিছু বলার প্রয়োজন হলে কানের কাছে গিয়ে ফিস ফিস করে বলছে। হঠাৎ শান্তশিষ্ঠ দীপন তাঁরস্বরে চেঁচানো শুরু করল। দলের সবাই প্রথমে বিরক্ত। তারপর শঙ্কিত! তারপর আতঙ্কিত! এই ছেলে ত সবার জন্য মৃত্যু নিয়ে আসবে! প্রথমে একজন বলল। তারপর দু’জন। তারপর তিন জন। তারপর জনতা! ‘ছেলে ফেলে দিন মশায়! এই ছেলে সবার মরণ ডেকে আনবে!’

তুখোড় অধ্যাপক ‘মব সাইকোলজী’ বোঝেন। বোঝেন বলেই বুঝলেন ছেলে কে বাঁচাতে চাইলে যা করার এখুনি করতে হবে! প্রলয়ের মাঠ ক্ষমাহীন নিষ্ঠূর মাঠ। এখানে সময়ের মুল্য অত্যাধিক!



তপন সান্যাল চোখমুখ শক্ত করে কর্কশ ভঙ্গিতে ছেলেকে কাঁধে ফেললেন! যেন এখুনি ছেলেকে দূরে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলবেন! তারপর পলকে ভীড় গলে ছেলেকে বুকের সাথে চেপে ধরলেন। তারপর ভোঁ দৌড় দিয়ে ছেলেকে নিয়ে ভীড়ের মধ্য থেকে উধাও হয়ে গেলেন চৌকস খেলোয়াড় তপন সান্যাল!



জীবনে সেই প্রথম এবং শেষ বার তপন সান্যালের মনে হয়েছিল লুকা প্যাসিউলি’র সুত্র ভুল! এক সন্তান এবং অন্তঃ সত্ত্বা স্ত্রী কে দলের মধ্যে রেখে, আরেক সন্তান সহ তাকে দল থেকে বের করে দিয়ে ভগবান কোন খাতায় কিভাবে কি এন্ট্রি করছিলেন তিনি কিছুই বুঝতে পারছিলেন না!



ঠক ঠক শব্দ হচ্ছে। পিরিচের সাথে গ্লাস ঠুকা’র শব্দ। সেই শব্দে তপন সান্যালের ঘোর ভাংল। দীপনের চেহারা কাগজের মত ফ্যাকাশে। দু’হাতে ধরা পিরিচ সহ গরম দুধের গেলাশ ঠক ঠক করে কাঁপছে। দীপন কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, বাবা টিভিতে স্থানীয় সংবাদ দেখাচ্ছে!



তপন সান্যাল বসা থেকে সহজ ভঙ্গিতেই উঠে দাঁড়ালেন। পিঠের পেশি ব্যাথা করে উঠলেও টের পেলেন না। তাকে পথ দেখিয়ে হাঁটছে সতের বছরের বালক। মাত্র দু’বছর বয়সে ভগবানের খাতার নির্মম পাতায় যার জীবনের একটা অধ্যায় এন্ট্রি হয়েছিল। লুকা প্যাসিউলি’র সুত্র অনুযায়ী একই সময়ে ভগবানের খাতার মমতার পাতায় তার জীবনের আরেকটা অধ্যায়ও নিশ্চয় এন্ট্রি হয়েছিল! আজ ভগবানের পাতা উল্টানোর দিন!



দীপনের দু’হাতে এখনো পিরিচ সহ দুধের গ্লাস ধরা। তপন সান্যাল টিভি স্ক্রিনে চোখ রেখে খামাকাই চশমা পরে নিলেন!



সাদাকালো টিভি’র এক সুদর্শন উপস্থাপকের মুখের বাক্য দিয়ে দীর্ঘ পনের বছর পর ভগবান তাঁর খাতার মমতার পাতা উল্টালেন!



নাটোর থেকে রাজশাহী বোর্ডে সন্মিলিত মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছে রাজশাহী কলেজের মেধাবী ছাত্র দীপন সান্যাল!



শোভা ঠাকুরঘরে ছিলেন। গ্লাস ভাঙ্গার ঝন ঝন আওয়াজ শোনে বসার ঘরে এসে এক অদ্ভুদ দৃশ্য দেখলেন-



সাদা দুধের ফেনায় ঘরের মেঝে ভেসে যাচ্ছে। তার মাঝে বাবা আর ছেলে একজন আরেকজন কে বুকে জড়িয়ে ধরে আছে পরম মমতায়। তাদের ভালোবাসার পবিত্রতার কাছে দুধের সাদা রঙের পবিত্রতাও যেন ম্লান!

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৩৪

কে এম খান বলেছেন: গল্পটা পড়ে ভালো লেগেছে........

২| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৩৬

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।

৩| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৪২

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: কে এম খান এবং বঙ্গভুমির রঙ্গমেলায়। আপনাদের দুজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

৪| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:১৯

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: খুবই সাবলীল আপনার লেখার ধরন! পড়তে খুব ভালো লেগেছে।
আশা করি আপনি নিয়মিত লিখবেন। আপনার কাছ থেকে আরো লেখা পাবার ইচ্ছা পোষন করি।

শুভ কামনা :)

৫| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:৪৪

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে কাল্পনিক ভালোবাসা। উৎসাহে বুক ভরে গেল :D

৬| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:৩৫

অলওয়েজ এ্যান্টি গর্ভণমেন্ট বলেছেন: সাবলীল।

নিটোল।

ফ্লাশ ব্যাক আর রির্টাণ ভালো।

নিয়মিত লিখবেন আশা করি।

অভিনন্দন।

৭| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:১৪

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। গল্পের নিঃশব্দ নির্মানের জায়গায় এসে যখন কেউ মন্তব্য করেন তখন মনে অন্যরকম ভালোলাগার অনুভূতি হয়!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.