নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। ইহা ক্ষুধা উদ্রেক করে!

হঠাৎ ধুমকেতু

আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!

হঠাৎ ধুমকেতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইংরেজি চর্চা??

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:৪০

আবুল অফিস থেকে বাসায় ফিরে দেখল একটা বিয়ের কার্ড। অত্যন্ত উচ্চমার্গের ইংরেজিতে লেখা। লাল রঙের কাগজের উপর সোনালী হরফ গুলো জ্বলজ্বল করছে। যেন অভিজাত হরফ গুলোকে লাল গালিচা সম্বর্ধনা দেয়া হচ্ছে! আবুল খুশি হল। এটা সাধারণ কোন বিয়ের কার্ড নয়। এটা আন্তর্জাতিক বিয়ে। এই বিয়েতে সব বিদেশিরা থাকবে। তাদের সাথে ইংরেজিতে কথা বলতে হবে। অনেকদিন ইংরেজিতে কথা বলা হয়না। চর্চা না থাকার দোষে আবুলের ইংরেজিতে মরিচা পড়েছে। দুদিন পরেই বিয়ে। আবুল সিদ্ধান্ত নিল এই দুদিন সে ইংরেজি ছাড়া বাংলায় কথাই বলবে না।



আবুলের বউ রান্না ঘরে বেগুন পোড়াচ্ছিল। বেগুন ভর্তা আবুলের প্রিয়। কাজেই বেগুন পোড়া গন্ধ নাকে আসাতে আবুল উৎফুল্ল হল। কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে গিয়ে আটকে গেল।বেগুন ইংরেজি কিছুতেই মনে আসছে না!ভর্তা ইংরেজি ত আবুল জানেই না! কিন্তু তাতে থেমে গেলে চলবে কেন? ইংরেজি বলার জন্য কি সবসময় ডিকশনারি বগলে নিয়ে ঘুরতে হবে? সেটাত সম্ভব না। তাইলে কি করবে? প্রয়োজনে শব্দ বানিয়ে নিতে হবে। বেগুন মানে বে গুন। ইংরেজিতে কোয়ালিটিলেস। ভর্তা? ভর্তি যদি স্ত্রী লিঙ্গ হয় তাইলে ভর্তির পুং লিঙ্গ হবে ভর্তা। ভর্তি ইংরেজি এডমিশন। তাইলে ভর্তা ইংরেজি মেইল এডমিশন।



আবুল বউয়ের উদ্যেশ্যে বলল- ইজ কোয়ালিটিলেস ফায়ারড ফর মেইল এডমিশন?



কাকতালীয় ভাবে আবুলের বউদের স্কুলে সেদিন একটা ঘটনা ঘটেছিল। জনৈক শিক্ষক দুর্নীতি করে এক ছাত্র কে ভর্তি করানোর জন্য তাকে স্কুল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছিল। সেই ঘটনা নিয়ে পুরা ইশকুল সরগরম ছিল। আবুলের বউয়ের ইংরেজি আবুলের থেকে কিঞ্চিত সরস ছিল। কাজেই আবুলের কথার মর্মার্থ সে সাথে সাথে বুঝল! সেও ইংরেজিতে বলল, দা কোয়ালিটিলেস টিচার ইজ ফুল লাইফ ফায়ার্ড ফ্রম স্কুল!



আবুল মুচকি হাসল। ইংরেজির জবাবে কি সুন্দর ইংরেজি হচ্ছে! একেই বলে চর্চার সুফল। তবে বেগুনের মধ্যে ‘স্কুল’ কোত্থেকে আসল সেটা আবুল বুঝতে পারল না। কিন্তু না বুঝলেও আবুল চেপে গেল। বউয়ের কাছে প্রেস্টিজ খোয়ালে স্বামীত্ব থাকে না!



ঘুমানোর আগে পর্যন্ত স্বামী স্ত্রী তে ব্যাপক ইংরেজি চর্চা করল। রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখল আবুল। বিশাল কমিউনিটি সেন্টারে স্যুট টাই পরে আবুল বিয়ে খেতে গেছে। চারদিকে সব সাদা চামড়া ফরেনার। তাদের সাথে আবুল মন খুশিয়ে ইংরেজিতে কথা বলছে।



নির্দিষ্ট দিনে আবুল স্যুট টাই পরে বিয়ে খেতে গেল। জরিনার একই দিনে স্কুলে প্রোগ্রাম থাকায় আবুলের সাথে যেতে পারল না। বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিথিদের জন্য নির্ধারিত স্থানে গিয়ে আবুল ভ্যাবাচেকা খেল। সব ত বাঙ্গালি! চকিতে আবুলের মনে হল সে আসলে ভুল জায়গায় এসেছে। অরিজিনাল নিমন্ত্রিত বিদেশিদের নিশ্চয় অন্য কোনখানে বসানো হয়েছে। আর এখানে যারা বসে আছে এরা নিশ্চয় বিদেশিদের গাড়ি’র ড্রাইভার! বিদেশি দের নিশ্চয় প্রত্যেকের একটা করে গাড়ি আছে। কাজেই যতজন বিদেশি এসেছে ততজন ড্রাইভারও এসেছে!



আবুল একজনের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল- বিদেশি দের বসার জায়গা কোনটা ড্রাইভার ভাই?



আবুল যাকে ‘ড্রাইভার ভাই’ বলে সম্বোধন করেছে সেই ভদ্রলোক পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। নিজের গাড়ি তিনি নিজেই চালান কিন্তু ‘ড্রাইভার ভাই’ বলতে নিশ্চয় সেটা মিন করেনা! আর বিদেশিদের বসার যায়গা বলতেই বা লোকটা কি মিন করছে? স্যুট টাই পরা লোকটার চেহারায় বোকা ভাব থাকলেও তাকে ত ঠিক উন্মাদ বলে মনে হচ্ছে না! ইঞ্জিনিয়ার ভদ্রলোক সিদ্ধান্ত নিলেন লোকটার কাছে তার প্রশ্নের একেকটা অংশের ব্যাখ্যা চাইবেন। প্রথমে জিজ্ঞেস করলেন,



- এখানে বিদেশিরা আবার কোত্থেকে আসতেছে?



- বাহ! বিয়ের কার্ড ছাপা হয়েছে ইংরেজিতে। আর আপনি বলছেন বিদেশিরা কোত্থেকে আসতেছে!



- বিয়ের কার্ড ইংরেজিতে ছাপা হলেই কি বিদেশিদের আসতে হবে?



- নয় ত কি? বিদেশিদের দাওয়াত দেবার জন্যই ত ইংরেজিতে কার্ড লিখতে হবে। বাঙ্গালী’রা ত বাংলা বোঝে!



ইঞ্জিনিয়ার ভদ্রলোকের কাছে ব্যাপারটা কিছুটা ‘সিলি’ মনে হলেও তিনি বোকাসোকা চেহারার লোকটার অতিসরল অকাট্য যুক্তি অগ্রাহ্য করতে পারলেন না। কিন্তু জবাবে কি বলবেন তাও তাঁর মনে এল না।

কাজেই তিনি পরবর্তি অংশে চলে গেলেন,



-আর আমাকে যে ড্রাইভার ভাই বললেন?



- আমি ত মনে করেছি আপনারা যারা বসে আছেন তারা সবাই বিদেশিদের গাড়ির ড্রাইভার। বিদেশিরা ত আর রিকশায় চড়ে বিয়ে খেতে আসবে না!



ইঞ্জিনিয়ার ভদ্রলোক এবার হো হো করে হেসে উঠলেন!! লোকটার কল্পনা বেশ চমকপ্রদ! তাঁর নিজের কাছেও মনে হল ব্যাপারটা বেশ ফানি। বাঙ্গালিদের বিয়ের কার্ড ইংরেজিতে ছাপানোর কি মানে থাকতে পারে? এটাকে কি অনেকে একধরনের কৌলীন্যের প্রকাশ বলে মনে করছে?? তিনি সামনের বোকা চেহারার লোকটাকে হাত ধরে টেনে একটা চেয়ারে বসালেন। তারপর বললেন,আপনি যে আমাদের বিদেশিদের ড্রাইভার মনে করছেন ঠিক ই মনে করছেন! ‘ব্রিটিশ রাজের গাড়ি’ এদেশ থেকে চলে গেলেও আমরা এখনো মনে মনে তাদের ‘ড্রাইভার’ ই রয়ে গেছি। এখনো আমরা মনে করি দুইটা ইংরেজি বলতে পারলে শিক্ষিত হয়ে গেলাম। দামী কোট পরলে ভদ্রলোক হয়ে গেলাম। স্বাধীনতা জিনিষটা কি সেটাই আমাদের বেশিরভাগই এখনো শিখতে পারিনি।



আবুল ফ্যাল ফ্যাল করে ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে আছে। ভদ্রলোকের জ্ঞানী কথা তাকে মোটেও স্পর্শ করছেনা। সে পরম হতাশ হয়ে ভাবছে, দুদিনের ইংরেজি চর্চাটা পুরা মাঠে মারা গেল!

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:৪৬

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: হাহাহা ! খুব মজা পেলাম।

২| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:৫০

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। :-B

৩| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:৫৮

িনহািরকা বলেছেন: ভালো লাগলো................

৪| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:০৯

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ নিহারিকা

৫| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:১৭

অজানাবন্ধু বলেছেন: হাহাহা ! খুব মজা পেলাম। ধন্যবাদ নিহারিকা ।

৬| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:২৫

সুজাহায়দার বলেছেন: হা হা হা ! খুব মজা পেলাম। =p~ =p~ =p~
একেবারে আমার মনের কথা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.