![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!
তাঁর যখন ঘুম ভাঙল তখনো সুর্য উঠেনি। উঠি উঠি করছে কেবল। একটা দু’টা পাখির ডাক আর হিমেল বাতাসে হাল্কা পাতা নড়ার শব্দ ঘোষণা করছে নতুন একটা দিনের আগমনী বার্তা। অভ্যাস বসত তিনি তাঁর টিনের দোচালা ঘরের বারান্দায় এসে নির্দিষ্ট কাঠের চেয়ার টায় বসলেন। বারান্দার সামনের ছোট্ট উঠানে ছোট ছোট ফুলের বাগান। আবছা অন্ধকারে ছোট ছোট ফুল গুলো শিশিরে মুখ ঢেকে ঘুমাচ্ছে। তিনি তীক্ষ্ণ চোখে ঘুমন্ত ফুল গুলোর দিকে তাকিয়ে রইলেন। এখন একটু একটু করে সুর্য উঠবে। একটু একটু রোদ ঘুমন্ত ফুল গুলোর মুখ থেকে মুছে দেবে একটু একটু শিশির। ফুল গুলো জেগে উঠবে। ঠিক তখুনি বয়ে যাবে এক পশলা বাতাস। ফুলেদের অনাবিল হাসি দিয়ে প্রকৃতিতে শুরু হবে নতুন একটা দিন।
গত তিন বছর ধরে প্রতিদিন সকালে তিনি এই দৃশ্যটি দেখছেন। একই দৃশ্য। কিন্তু তিনি প্রতিদিন একই রকম বিস্ময় নিয়েই দেখেন। তাঁর মনে হয় এই দৃশ্যের মাধ্যমে প্রকৃতি প্রতিদিন তাঁকে কিছু একটা বলার চেষ্টা করে। তিনি বুঝতে পারেন না। তাঁর মনে হয় প্রকৃতি ঠিক যে মুহুর্তে তাঁর সাথে যোগাযোগ করতে চায় সেই মুহুর্ত টাতে তার মন অন্যদিকে থাকে! ফলে প্রকৃতি তাঁর সাথে যোগাযোগ করতে পারেনা। আজকে তিনি মনে মনে স্থির প্রতিজ্ঞা করলেন মনকে এক মুহুর্তের জন্যও বিক্ষিপ্ত হতে দেবেন টা। স্থির অচঞ্চল ভাবে এই দৃশ্যের উপর মনকে নিবদ্ধ রাখবেন। তিনি বড় নিশ্বাস নিতে নিতে গদিহীন শক্ত চেয়ারে পিঠ এলিয়ে দিলেন। তারপর চোখের দৃষ্টি স্থির করলেন ঘুমন্ত ফুলগুলোর উপর।
একটু একটু করে অন্ধকার মুছে যাচ্ছে। একটু একটু করে সরে যাচ্ছে কুয়াশা। তাঁর চোখ এখন কেবল মাত্র একটা নির্দিষ্ট ফুলের উপর স্থির। তিনি স্থির অচঞ্চল চোখে স্পষ্ট অবলোকন করলেন সুর্যের প্রাণস্পন্দন পেয়ে ছোট্ট ফুল টির প্রথম নড়ে উঠা।হঠাৎ তিনি স্পষ্ট শুনলেন- বাবা!
তাঁর বিস্ময় বাড়ল। কে কথা বলে? তাঁর স্ত্রী এখনো ঘুমে। ছেলেমেয়েরা তাঁর থেকে অনেক দূরে। আশে পাশে কেউ নেই!
তিনি আবার শুনলেন- বাবা বাবা!
ফুল টা নড়ে উঠল। প্রকৃতি তাঁকে বুঝিয়ে দিল ফুলটাই প্রকৃতির হয়ে তাঁর সাথে কথা বলছে! তাঁর শরীরের প্রতিটি কোষে অদ্ভুদ এক স্পন্দন শুরু হয়ে গেল। তিনি প্রথমেই জিজ্ঞেস করলেন,
আমাকে বাবা সম্বোধন করছ কেন?
তুমি আমাকে রক্ষা করতে চেয়েছ।সত্যিকারের সন্তান যেরকম মা কে রক্ষা করতে চায়।
সেটাই ত চাওয়া উচিত তাই না? আমি ত তোমার ই সন্তান!
আমাদের দেয়া সম্পদ কে নির্দিষ্ট জায়গায় স্তূপীকৃত করে যারা পৃথিবীটাকে ভারাক্রান্ত এবং গরীব করতে চায় তুমি তাদের কে বলেছ সুষম সুন্দরের গল্প!
গল্প ত অনেকেই বলে!
অনেকে মুখে বলে। তুমি তোমার জীবন দিয়েও বলেছ। জীবনের কথা মুখের কথার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিমান!
তোমাকে ধন্যবাদ। তোমার জন্য কিছু করতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি মা!
তোমাকেও ধন্যবাদ বাবা। তোমার মত বাবা রা না থাকলে ফুল রা কত আগেই আরো বিষণ্ণ হয়ে যেত!
হিমেল একটা ঠাণ্ডা বাতাস হঠাৎ বয়ে গিয়ে আশি বছরের বৃদ্ধ কে কাঁপিয়ে দিয়ে গেল। প্রকৃতির কণ্ঠস্বর তিনি আর শুনতে পেলেন না। কিন্তু তাঁর মনে হতে লাগল সেই কণ্ঠস্বরের মিষ্টি একটা রেশ তাঁর আশেপাশেই রয়ে গেছে। সেটা মিলিয়ে না গিয়ে নিঃশব্দে ছড়িয়ে পড়ছে সারা পৃথিবীতে।
বৃদ্ধের নাম হোসে মুহিকা। সময় তাঁকে এই মুহুর্তে উরুগুয়ে’র প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই পৃথিবী’র সবার কাছে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।
©somewhere in net ltd.