![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!
ভোর ছ’টায় বাসা থেকে বেরিয়েছি। ভোরের প্রথম যে হাওয়াটা আমার গায়ে লাগল সেটাই আমাকে বলে দিল আবহাওয়া এখন সমুদ্রে যাবার উপযুক্ত নয়। কিন্তু যেতে হবে। এটা পেশাগত কাজ।
গাড়িতে একঘণ্টার পথ। যেতে যেতে রাস্তাঘাট অন্ধকার হয়ে বৃষ্টি নামল। হাইওয়েতে দেখলাম একটা ট্রাক একটা প্রাইভেট কারের মাথা চুর্ন করে দিয়েছে। প্রাইভেট কার রং সাইডে ছিল। আরেকটা মাল বোঝাই ট্রাক দেখি স্রেফ রাস্তার উপর শুয়ে আছে! ঢাকা চট্টগ্রাম হাইওয়েতে এগুলো সাধারণ দৃশ্য। এই রাস্তায় যারা নিয়মিত যাতায়াত করে তারা এসব দেখে অভ্যস্ত।
সী বিচে পৌছতেই প্রবল বাতাসের ধাক্কা। যেন উড়িয়ে নিয়ে যাবে। স্থানীয় মানুষের মুখে শুনলাম দুটো জেলে নৌকা সমুদ্রে নিখোঁজ। যে নৌকাটি আমরা সমুদ্রে যাবার জন্য ঠিক করা ছিল সেটা গেছে নিখোঁজ নৌকার সন্ধানে!কাজেই সমুদ্রে যাবার প্রশ্নই আসে না। সবকিছুর উপরে জীবন!
আমার এবারকার সমুদ্রে যাবার উদ্যেশ্য হল একটা নির্দিষ্ট অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশে সমুদ্রের গভীরতা নিজের হাতে মেপে আসা। জোয়ারে পানি কোথায় আসে এবং ভাটায় পানি কোথায় নেমে যায় নিজের চোখে দেখে আসা। স্কুলে বইয়ে পড়া ভুগোল এবং হাল প্রযুক্তির অবদান গুগুল মিলে আমাকে যেটুক ধারনা দিয়েছে তা এই কাজের জন্য যথেষ্ট। কাজেই ক্যামেরা, জিপিএস নিয়ে ‘কাদাভুমি’তে নেমে পড়লাম। আমাদের কক্সবাজার বিচে বালি আছে, কাদা নাই। সেজন্য কক্সবাজারের টা বেলাভূমি। মান্দারিটোলা বিচ কাদা ভর্তি। কাজেই কাদাভুমি। ভেজা কাদাভূমিতে চোখা ঘাস খালি পায়ের তলায় ফুটে যাচ্ছে। হাঁটতে গিয়ে মনে হচ্ছে প্রতি মুহুর্তে পায়ের তলায় ইনজেকশন ফুটাচ্ছে এক কোটি কম্পাউন্ডার! আমি দাঁতে দাঁত খিঁচে সামনে আগাচ্ছি।
‘চোখা ঘাস সাম্রাজ্য’ পার হতে না হতে ‘হাঁটু কাদা সাম্রাজ্য’। হাঁটু কাদা সাম্রাজ্যে প্যান্ট হাঁটুর উপর গুটিয়ে নিতে হয়। আমার থ্রি কোয়াটার প্যান্ট অত্যাধুনিক। হাঁটুর উপর পর্যন্ত মুড়ে বোতাম মেরে দেওয়া যায়। চোরা কাদায় পা না পড়লে এই রকম প্যান্ট পরে হাঁটু কাদা সাম্রাজ্য অনায়াসে পার হওয়া যায়।
ভাটার শেষ সীমানায় পৌঁছতে পৌঁছতে দার্শনিক হয়ে গেলাম! প্রকৃতি তার বিভিন্ন সৃষ্টির মধ্যে কি রকম গতির সমন্বয় করে রেখেছে। আমি এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছি জোয়ারের সময় সেটা অন্তত পনর ফুট পানির নিচে থাকবে। প্রকৃতি আমাকে কাদার মধ্যেও এতটুকু জোরে হাঁটার ক্ষমতা দিয়েছে যাতে ‘ভাটা পরবর্তি জোয়ার’ আমাকে আক্রমণ করার আগেই আমি নিরাপদে পালিয়ে যেতে পারি! ঘাস কে দিয়েছে চোক্ষা কাঁটা। যাতে মনের সুখে কেউ ঘাস কে না মাড়ায়!
বেলা দুপুর হতে হতে চনমনে রোদ উঠল! বাতাসের প্রবাহ ধীরস্থির, সুষম। শৈশবের ঘুড়ি উড়ানোর অভিজ্ঞতা থেকে আমি জানি এই বাতাস বদ না! এই বাতাস ঘুড়িকে মুক্ত আকাশে অবাধ ভাবে উড়তে দেয়। উল্টাপুল্টা গোত্তা খাইয়ে খাইয়ে নারকেল গাছে আটকে দেয়না! আমি আমার সঙ্গী শরিফুল ভাইকে বললাম, আরেকটা নৌকা আনানোর ব্যবস্থা করেন। এখন সমুদ্রে যাওয়া খুবই সম্ভব!
দশবছর আগে আমি আর আমার ফটোগ্রাফার বন্ধু(কাবিল ফটোগ্রাফার, ছবি তোলার জন্য দেশ বিদেশ যায়!) আশরাফ ইঞ্জিনের বোটে সেন্ট মার্টিন যাবার সময় শহুরে কিছু ছেলে পেলেকে লাইফ জ্যাকেট পরতে দেখে নাক সিঁটকেছিলাম! যেন ওরা মহা কাপুরুষ! তখন ভিভ রিচার্ডস আমার প্রিয় ব্যাটসম্যান হবার সবচেয়ে বড় কারন ছিল ভিভ রিচার্ডস ব্যাটিং করার সময় কখনোই হেলমেট পরতেন না! এখন চাকরি, সংসার করে ভেড়া হয়েছি। কাজেই নৌকায় উঠার আগে শরিফুল ভাই লাইফ জ্যাকেট ধরিয়ে দিলে সানন্দে পরতে রাজি হলাম।
শান্ত সমুদ্রে তর তর করে এগিয়ে চলেছে আমাদের ছোট্ট তরী।‘গন্তব্য স্থানাংকে’র কাছাকাছি এসে স্থানীয় ছেলে শ্যামল কে জিজ্ঞেস করলাম
শ্যামল, বলতে পারবা এই এলাকায় সমুদ্রের তলা টা কিরকম?
উপরে বিচে যেরকম, তলায় ও সেরকম। চল্লিশ পঞ্চাশ ফুটের মধ্যে এক দেড় ফুট হয়ত উঁচু নিচু পাবেন।
কিভাবে জানলা?
আমরা মাছ ধরার জাল পাতি। নৌকা নিয়ে যেখানে যাই সেখানে নকল(নোঙ্গর)ফেলি। নকলের দড়ির মাপ সবখানে মুটামুটি এক!
কাজ শেষ করে ফিরতে ফিরতে দেখলাম সুর্যটা ততক্ষণে ‘সোনালী থালা’ হয়ে গেছে! সোনালি সুর্যকে পশ্চাতে রেখে সমুদ্রের বুক চিরে ছোট্ট ডিঙায় চড়ে ডাঙায় ফিরছি একজন ছাপোষা মানুষ! গলায় ঝুলানো ক্যামেরা ক্লিক করে আমি দৃশ্যটাকে বন্দি করলাম।
(৫ এপ্রিল,২০১৪)
২| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:৫৫
হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। পরবর্তি তে এধরনের গল্প লিখলে নিশ্চয় আরো ছবি থাকবে। তবে কিছু ছবি ত কল্পনা করেও নিতে পারেন!
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:২৯
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: ভালো অভিজ্ঞতা। তবে ছবি থাকলে আরো বেশি ভালো লাগত।