![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!
শাহানার মৃত্যু সংবাদ পড়লাম। মৃত্যুটার মধ্যেই যেন একটা বার্তা আছে- দায়িত্বজ্ঞানহীনতা’র চরম নিদর্শনের বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারেনা চরম আত্নত্যাগ ও।
সাভারের রানা প্লাজা যারা নির্মান করেছে তাদের চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতা’র কাছে পরাজিত হয়েছে শাহানার উদ্ধার কর্মীদের চরম আত্নত্যাগ। মানবতার জয় হয়েছে। কিন্তু সেই ‘জয় পুষ্প’ মর্ত্যের বাগানে ফুটেনা। তাকে ধরার জন্য কল্পনার রথে চেপে শাহানার মৃত্যুকে ডিঙ্গিয়ে যেতে হয়। কল্পনার রথে আপাতত চাপতে ইচ্ছে করছে না।
প্রিয় পাঠক, আসুন আলোকপাত করি দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জায়গাটায়। স্থাপত্য একটা বিজ্ঞান। আপনি যখন কোন স্থাপনা নির্মান করবেন আপনাকে অবশ্যই সেই বিজ্ঞান মেনে করতে হবে। আপনার নির্মিত স্থাপনা যখন অনুমানের অতীত কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় ছাড়া ধ্বসে পড়বে তখন আপনাকে অবশ্যই স্বীকার করে নিতে হবে যে স্থাপনা নির্মানের সময় যথাযথ বিজ্ঞান মানা হয় নি। এখানে ভুল ছোট না বড় সেটা বিষয় নয়।একটা সরল অঙ্কে আপনি বড় ভুল করলেও রেজাল্ট ভুল আসবে, ছোট ভুল করলেও রেজাল্ট ভুল আসবে। এই ভুলের ভয়ঙ্কর মাশুল দেয়া আমরা পাথরের চোখ এবং পাষাণের মন নিয়ে দেখছি।
সাভার হত্যাকাণ্ড আমরা বেশিদিন মনে রাখার সুযোগ পাব না, যেরকম পাইনি তাজরীন হত্যাকাণ্ড এবং বহদ্দার হাট হত্যাকাণ্ড মনে রাখার সুযোগ। আমরা আবার পাথরের মন এবং পাষাণের চোখ দিয়ে দেখব টাকা এবং পদাধিকারের নেশায় উন্মত্ত হত্যাকারীদের নিরীহ মানুষ হত্যার মহড়া।
প্রিয় পাঠক চলুন, শাহানার বুকের দুধের শিশুর কাছে যাই। আমি তার নাম জানিনা, ভালোবেসে তার নাম দিলাম টুকুন। আমার আবেগগ্রস্ত মন বলছে আজ থেকে চব্বিশ বছর পর টুকুন মস্তবড় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হবে। টুকুন কখনো টাকা খেয়ে সাইন করবেনা ভুল নকশায়। উন্মত্ত মুনাফালোভীদের মত্ততার কাছে নতজানু হয়ে সে কখনো মিস্তিরিদের বানাতে দেবেনা ভুল সিমেন্ট, ভুল বালি, ভুল রডের, ভুল অনুপাতের বিল্ডিং। সে কখনো ঘুসখোর ইঞ্জিনিয়ার সাহেব হবে না। সে হবে সত্যিকারের ইঞ্জিনিয়ার যে তার প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে শিল্পীর সততায় এবং মমতায়।
একদিন বিরাট বড় একটা গার্মেন্টস বিল্ডিং ও নির্মিত হবে টুকুনের করা নকশা অনুযায়ী। সেই গার্মেন্টস এর বয়স হবে একদিন ষাট বছর। ষাট বছর পরেও সেই বিল্ডিং এর যৌবন থাকবে অটুট। টুকুন তখন হবে পঁচানব্বুই বছরের বৃদ্ধ। অবসর জীবন। নিতান্ত খেয়ালের বশে গাড়ি নিয়ে চলে যাবে তার নকশায় নির্মিত সেই গার্মেন্টস বিল্ডিং এর কাছে। তখন সকাল বেলার ঝকমকে রোদ। একগুচ্ছ প্রাণোচ্ছল তরুণী মেয়ে হাসতে হাসতে যাচ্ছে গার্মেন্টসে কাজ করতে। তাদের কাছে এসে টুকুন ড্রাইভার কে বলবে গাড়ি থামাতে। মেয়েদের যেকোন একজনের মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করবে-
মা তোমার নাম কি?
মেয়েটা বৃদ্ধের স্নেহ ছোঁয়ায় বিস্মিত হয়ে তার নাম বলবে,
আমার নাম শাহানা!
বৃদ্ধ টুকুনের চোখ চোখের জলের নদী পেরিয়ে মুহুর্তে চলে যাবে এক শতাব্দী আগে, যখন শাহানা নামের এক তরুণী তার বুকের দুধের শিশুকে বাঁচাবার জন্য একটি টিফিন ক্যারিয়ার হাতে গার্মেন্টস এ যেত এবং ভুল নকশায় বানানো বিল্ডিং এর ধবংস স্তূপ থেকে যাকে দেব দূতের মত কিছু মানুষ আপ্রাণ চেষ্টা করেও ফেরাতে পারেনি।
(এই লেখাটা গত বছর সেই সময় লিখেছিলাম। লেখাটা এই সময়ে প্রাসঙ্গিক মনে হওয়ায় এখানে পোস্ট করলাম)
©somewhere in net ltd.