নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। ইহা ক্ষুধা উদ্রেক করে!

হঠাৎ ধুমকেতু

আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!

হঠাৎ ধুমকেতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

পদ্মা পাড়ের দীর্ঘশ্বাস

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:১৬

হিম একটা শীত শেষ রাতের দিকে পড়ে গিয়েছিল। দুবছরের পুরানো পাতলা বার্মিজ চাদরটার ভেতর আমি কুঁকড়ে কেঁপে উঠেছিলাম। এমন সময় দরজা ধাক্কানো! আমি অসম্ভব বিরক্ত হয়েছিলাম। ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে আবছায়ার মধ্যে শাহিনের চেহারা দেখে আমি চমকে উঠেছিলাম। নির্ঘুম রাতের জার্নি মানুষের চেহারা কিছুটা ফ্যাকাসে করে দেয়। কিন্তু এই ফ্যাকাসে সেই ফ্যাকাসে নয়। শাহিনের চেহারা পরিষ্কার বলছে-হারিয়ে গেছে! কিছু একটা শাহিনের জীবন থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে!



শাহিনের গায়ের মোটা জ্যাকেট এবং কাঁধে ঝোলানো ভারী ব্যাগ থেকে পোড়া ডিজেলের মিয়ানো গন্ধ আসতেছিল।নন এসি বাসে দীর্ঘ ভ্রমন এই গন্ধটা উপহার দেয়। ব্যাগটা কাঁধ থেকে নামিয়ে রাখতে রাখতে শাহিন তার বিছানায় বসল। তার গলা চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল।



আমি শাহিনের দিকে তাকিয়ে খুব মায়া অনুভব করলাম। শাহিন আমার ক্লাস মেট এবং দুবছর ধরে নজরুল ইসলাম হলে আমার রুমমেট। অসম্ভব ভাল মনের ছেলে শাহিন এবং ওর ডায়েরি তে ওর লিখা কবিতায় চারপাশের অতি সাদামাটা জিনিষের অসাধারণ বর্ণনা দেখে আমি মাঝে মাঝেই বিস্মিত হই।



আমি শাহিন কে বললাম, কি হয়েছে আমাকে খুলে বল। তোর এই দুঃখী চেহারা কিছুতেই সহ্য করতে পারছি না দোস্ত!



শাহিন মাথা নিচু করল। তারপর অত্যন্ত নিচু স্বরে বলল, বেড়ায় খেত খেয়ে ফেলেছে দোস্ত! আমি কি বোকা!!



শাহিনের মুখে পুরা ঘটনা শুনে তাজ্জব হয়ে গেলাম!



শাহিনদের বাড়ি রাজশাহী। বছরখানেক আগে ঈদের ছুটিতে বাড়ি গিয়ে শাহিন স্বাতী কে প্রথম দেখে। উয়োম্যান কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে পড়া আশ্চর্য সুন্দর সরল মুখের একটি মেয়ে।মাথার চুল বেণি করা। চোখের চাহনিতে পাখির চপলতা! রানীর বাজারে প্রাইভেট স্যারের কাছে শাহিনের খালাত ভাই মুনিম ছিল স্বাতী’র সহপাঠী। মুনিম ই শাহিন কে বলে, আপনি কোন চিন্তা করবেন না শাহিন ভাই। স্বাতী খুব ভাল মেয়ে। অনেক ছেলেই ওর জন্য পাগল। কিন্তু ও কাউকে পাত্তা দেয় না।



শাহিন বলেছিল, আমার কথা শুনলে কি পাত্তা দেবে রে?



মুনিম বলেছিল, বলার একটা স্টাইল আছে না! ধরেন সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছি। আমি হঠাৎ করে বলব, যেমন ধর শাহিন ভাই! ওনি আমার খালাত ভাই। ওনি বুয়েটে পড়েন। ইঞ্জিনিয়ার মানুষ, যন্ত্র নিয়ে চিন্তা করবেন। অথচ ওনি লিখেন কবিতা! আমি ত শাহিন ভাইকে প্রায় বলি, আপনার চেহারা রাজপুত্রের মত। পড়েন বুয়েটে। আবার কবিতা লেখেন যে মাথা নষ্ট হয়ে যায়। অথচ! অথচ আজ পর্যন্ত একটা মেয়েকেও ভালবাসলেন না!



শাহিন মুনিম কে ফচকে টাইপ বলে অপছন্দ করত। সেই মুহুর্ত থেকে মুনিম হয়ে যায় শাহিনের জানের জান এবং শাহিন হলের বিছানায় শুয়ে স্বাতীর উদ্যেশ্যে নব উদ্যমে কবিতা লিখে নিশ্চিন্ত মনে মুনিমের ঠিকানায় কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠাতে শুরু করে।

উপযুক্ত পরিবেশ(!) সৃষ্টি করে নিয়ে মুনিমও সেই কবিতা পৌঁছে দিতে থাকে উপযুক্ত ঠিকানায়!



কবিতার পঙক্তি খুবই শক্তিশালী জিনিষ, যদি সেটা কবিতা হয়! কাজেই সতের বছরের উদ্ভিন্ন যৌবনা নিষ্পাপ একটি মেয়ের সকাল গুলো দিনকে দিন আরো সোনালী এবং রাতগুলো আরো স্বপ্নিল হতে শুরু করে। এখন পদ্মার পাড়ে গেলে সে চমকে উঠে! কেউ যেন রয়েছে ঠিক তার পাশে! তার কানে কানে বলছে,



'দুজনের পাপকে সমভাবে ভাগ করে নিয়ে,

তুমি আর আমি এই পৃথিবী’কে করেছি নিষ্পাপ!'



অকস্মাৎ বসন্ত লাগা গোলাপ পাপড়ির মত কেঁপে যায় স্বাতী!



সব ঠিক ছিল। কিন্তু কলেজ ফেরা ক্লান্ত দুপুরের নির্জনতায় কবিতার অক্ষর ছাপিয়ে যে মানুষটার চেহারা জীবন্ত হয়ে উঠে, যার সাথে সমস্ত পাপ ভাগ করে নিয়ে পৃথিবীটাকে নিষ্পাপ করে দিতে ইচ্ছে করে, সেই মানুষ টার যায়গায় শাহিন ছিল না! সেই জায়গায় মুনিম ছিল!!



মুনিম দিনের পর দিন শাহিনের অনবদ্য কবিতা গুলো নিজের নামে চালিয়ে পদ্মার বুকে এঁকে দিয়েছে অনেক কলঙ্ক! স্বাতীর কোমল হৃদয়ের প্রেম কবিতার সিঁড়ি বেয়ে যে হৃদয় পদ্মে নিবেদিত হয় সেই ‘ডামি হৃদয়ে’র মালিক এক হৃদয়হীন বালক! অনবদ্য কবিতার জন্মদাতা ‘দামী হৃদয়ে' কখনোই নিবেদিত হয়নি সেই নৈবেদ্য!



শাহিন মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করত, কিরে মুনিম স্বাতী কি কিছু বলে টলে?



বিনয়ে বিগলিত হয়ে মুনিম বলত, স্বাতী ত এখন কবিতা পাওয়ার পর লজ্জায় পুরা বেগুনি হয়ে যায়! আমি আপনার কাছে চিঠি লিখার কথা বললে বলে, আমার ত লিখতে ভয় করে! যদি বানান ভুল হয়!! ওনি যে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট!!!



এবার বাড়ি গিয়ে দুজনকে পদ্মার পাড়ে ঘনিষ্ট অবস্থায় দেখে শাহিনের মানসিক অবস্থা কি রকম হয়েছিল সেটা বলতে গিয়ে শাহিনের চোখ টলমল করে উঠে!



আমি সম্পুর্ন অসহায় ভাবে শাহিনের দিকে তাকিয়ে আছি। সম্পুর্ন অচেনা একজন খালাত ভাইয়ের প্রতি রাগে বিদ্বেষে আমার সারা শরীর থর থর করে কাঁপছে!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.