নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। ইহা ক্ষুধা উদ্রেক করে!

হঠাৎ ধুমকেতু

আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!

হঠাৎ ধুমকেতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাবা'র গল্প

২৬ শে মে, ২০১৪ সকাল ১০:৩১

ছোটবেলায় আব্বা একটা কথা বলতেন- আব্বা, পরীক্ষায় ফেল করলে কোন সমস্যা নাই। কিন্তু খবরদার কোনদিন নকল করবি না! খবরদার!!



আমি সুযোগ টা পুরোপুরি ই নিই। আমি পড়াশোনা পুরোপুরি ছেড়ে দিই। বন্ধুরা যখন স্যারের বাসায় বসে বসে নোট করে তখন আমি তিন টাকার ভাড়া সাইকেল চালিয়ে সমুদ্র চরে চলে যাই। বন্ধুরা যখন স্কুলে অঙ্ক ক্লাসে স্যারের ‘ভেরি গুড, ভেরি গুড’ শুনে তখন আমি প্রখর রোদে ঘুড়ি লাটাই নিয়ে ছাদে উঠে যাই। পরীক্ষা শেষ হবার পর তিন সাবজেক্ট ফেল হয়। মার্ক শীটে ক্লাস টিচার লিখে দেন- অঙ্ক এবং ইংরেজিতে ভয়ানক দূর্বল,স্কুল পলাতক!



মেট্রিক পাশ করা পর্যন্ত আমার একাডেমিক পড়ালেখায় কোন আগ্রহ ছিল না। মেট্রিকের টেস্ট পরীক্ষা পর্যন্ত আমি পড়ালেখায় আদৌ সিরিয়াস ছিলাম না। কিন্তু পরীক্ষায় কখনো নকল করি নাই। প্রাইভেট পড়লে প্রশ্ন দিয়ে দেয় এরকম স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ি নাই। ফলে আমি সচরাচর তিন টা সাবজেক্টে ফেল করে করে এক ক্লাস থেকে আরেক ক্লাসে উঠতাম। সাবজেক্ট তিনটা ছিল- ইংরেজি, অঙ্ক এবং আরবি। কারন, এই তিনটা সাবজেক্টে বানিয়ে লিখার সুযোগ ছিল না। অন্য সাবজেক্টে গরুকে ঘাটে নিয়ে গিয়ে ঘাটের রচনা লিখে আমি পাশ করে ফেলতাম। ছোটবেলা থেকে প্রচুর গল্প বই পড়তাম বলে বাংলা লেখাটা আমার সহজাত ভাবেই আসত।



মেট্রিক পরীক্ষা যখন চলে আসল তখন শঙ্কিত হলাম। মেট্রিক পরীক্ষায় নাকি একটা সাবজেক্টে ফেল করলে পুরাই ফেল! ইংরেজি ঠাঠা মুখস্ত করে ফেললাম। ফার্স্ট বয় বন্ধু মনির কে একদিন আশেপাশে কেউ নেই দেখে জিজ্ঞেস করলাম- আচ্ছা মনির, লসাগু কেমনে নিতে হয়,সমীকরণ থেকে বা বা বা বা করে করে এক্স এর মান কেমনে বের করে, কমন কিভাবে নিতে হয় আর চৌবাচ্চার অঙ্ক কেমনে করে তুই কি আমাকে শিখাবি?

আজকে বলতে গিয়ে গর্বে বুক ভরে যাচ্ছে বর্তমানে ইঞ্জিনিয়ার আমার সেদিনের ফার্স্ট বয় বন্ধু মনির আমাকে অঙ্কের অনেক বেসিক নিয়ম কানুন শিখিয়ে দিয়েছিল যার উপর ভর করে আমি মেট্রিকে অঙ্কে উনষাট পেয়েছিলাম।



কলেজে উঠার পর সবে ক্লাস শুরু হয়েছে। আমি ভয়ঙ্কর জিদ ধরে সায়েন্স নিছি। সায়েন্স ফিকশন পড়ে পড়ে আমার ধারনা হয়েছে- গবেট রাই কেবল মাত্র আর্টস বা কমার্স পড়তে পারে!কিন্তু সায়েন্স নিলে কি হবে? ফিজিক্সে দেখি প্রচুর সাইন থিটা কস থিটা। আমি ত মেট্রিকে উচ্চতর গণিত করি নাই!



কিন্তু এই সময়ে আমার মধ্যে একটা অদ্ভুদ পরিবর্তন আসল। একটু ব্যখ্যা না করলে বুঝা কঠিন। প্রাইমারী স্কুল শিশুকাল। কাজেই প্রাইমারী স্কুলের কথা বাদ। বয়েজ স্কুল শুধু ‘বয়েজ’ দের স্কুল! কাজেই বয়েজ স্কুলের কথাও বাদ! কলেজে উঠে ক্লাস রুমে আসে পাশের বেঞ্চিতে ফুটফুটে মেয়েদের দেখে মনে অদ্ভুদ প্রতিক্রিয়া! যেভাবেই হোক, যেকোন দিক দিয়েই হোক, নিজেকে ফুটিয়ে তুলতেই হবে! এরা যেন আমাকেই ‘হিরো’ ভাবে। আর কাউকে নয়!!



গভীর রাতে ছাদে উঠে টাঙ্কির পাশে দাঁড়িয়ে লুকানো সিগারেটে গভীর টান দিলাম। হিরো হবার ক্রাইটেরিয়া কি?



বডি বিল্ডার হতে হবে। বডি বিল্ডারের দাম আছে।

আমি শার্ট খুললে বুকের হাড় গোনা যায়। কাজেই এই লাইনে চেষ্টা করে লাভ নাই।



দামি দামি প্যান্ট শার্ট পরতে হবে। দামি জুতা পরতে হবে।

অসম্ভব ব্যাপার। ভাইবোন আটজন, বিষয় সম্পত্তি নাই এবং বাবা সৎ মানুষ।



বাকী থাকল কি?

পড়ালেখা।



শুরু হল সাধনা। সবাই ঘুমিয়ে গেলে গভীর রাতে পড়তে বসি। অঙ্ক বই, ফিজিক্স বইয়ের উৎসর্গ পত্র থেকে শুরু করে সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ি। একটা অঙ্ক তিন চার দিন ধরে করি। তিন চার দিন পর ‘উত্তর মালা’ দেখে যখন বুঝতে পারি গতি বিদ্যার ‘একটি চোর একটি ভারী বাক্স কাঁধে লাফাইয়া পড়িল...’ অঙ্ক আমি নিজে নিজে করে মিলিয়ে ফেলেছি তখন আমার আনন্দ আর ধরে না! পড়াশুনার সাথে ‘আনন্দ’ যুক্ত হয়ে যাবার পর আমি পড়ার টেবিল থেকে উঠিনা। পড়াশুনার সাথে আমার প্রেম হয়ে যায়!



সেই সততা এবং প্রেমের মূল্য সাঙ্ঘাতিক ভাবে আমি একদিন পেয়ে যাই!



দেশের যে বিশ্ববিদ্যালয়টি তে রীতিমত ভাল ছাত্র ছাত্রীদেরও চান্স না পাওয়াটাকে খুব স্বাভাবিক ভাবে নেয়া হয় সেই বিশ্ববিদ্যালয় টিতে আমি চান্স পেয়ে যাই এবং জীবনের ‘অসম্ভব বহুমাত্রিক বৈচিত্র্যময় বিকাশময় এবং অসাধারণ বন্ধুময়’ একটা অধ্যায় সেখানে কাটাই।



অনেক পথ পেরিয়ে এই মুহুর্তে জীবনের ‘লড়াই সম্ভব’ একটা অধ্যায় পার করছি। নিজেকে ব্যর্থ বলতে একেবারেই রাজী নই। কারন এখনো ‘আশিXআশি=টিসু’ লিখা হাফ হাতা সাদা গেঞ্জি পরা পাকা চুলের ভীষণ রাগী বুড়োটার কথাটা মাথার ভেতরে আছে- ‘আব্বা, পরীক্ষায় ফেল করলে কোন সমস্যা নাই। কিন্তু খবরদার কোনদিন নকল করবি না! খবরদার!!’



জীবনে অনেক পরীক্ষায় ফেল করেছি। ভবিষ্যতে আরো করব। কিন্তু যতদিন এই কথাটা মাথার ভেতর থাকবে ততদিন নকল বা এ জাতীয় কিছু করব না। এবং ততদিন আমি সুখী থাকব।



এবং?



একজন সুখী মানুষ মানেই একজন সফল মানুষ।

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মে, ২০১৪ সকাল ১০:৫৮

মাইরালা বলেছেন: লেখক বলেছেন
''একজন সুখী মানুষ মানেই একজন সফল মানুষ।''

২৬ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৪০

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: আমার কাছে সাফল্যের সংজ্ঞা এটাই। ধন্যবাদ মাইরালা আপনাকে।

২| ২৬ শে মে, ২০১৪ সকাল ১১:০০

হাসানুর বলেছেন: আপনার প্রতি শুভ কামনা রইল...ভাল থাকবেন ।

২৬ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৪১

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

২৬ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৪১

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

২৬ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৪১

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

৩| ২৬ শে মে, ২০১৪ সকাল ১১:৩০

ঢাকাবাসী বলেছেন: শুভকামনা।

২৬ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৩

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: অনেক শুভ কামনা আপনার জন্যে ও।

৪| ২৬ শে মে, ২০১৪ সকাল ১১:৫৪

নািম সাকিব বলেছেন: congratulations to the power n.

২৬ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৩

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ

৫| ২৬ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:১৫

তিক্তভাষী বলেছেন: ভালো লাগলো লেখাটি।

৩০ শে মে, ২০১৪ সকাল ১০:২৭

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ তিক্তভাষী।

৬| ২৭ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৩২

আহমাদ ইবনে আরিফ বলেছেন: পড়ে ফেললাম, ভালও লেগে গেল।
মূল্যবোধ সৃষ্টিতে পরিবারের ভূমিকা নিয়ে গরু টেনে না এনেও আস্ত সাইজের রচনা লিখা যায়। কিন্তু, আপামার দৃশ্যপটে মূল্যবোধ ও নৈতিকতার ব্যাপক বিলুপ্তিহাল দেখে ব্যক্তিসাধারণকে দুষিব, নাকি পরিবারবর্গকে দুষিব বুঝতে পারছিনা। বহুকষ্টে শিক্ষাব্যবস্থা থেকে নকল নামের অভিশাপটাকে দূর-দূর করে বেশ কতকটা হটানোর পর যদি প্রশ্নপত্র ফাঁসের মত ভয়াবহ সমস্যার কৃষ্ণদ্বার হু হু করে খুলে দেয়া হয়, ছোট ভাইবোনদের নিয়ে আর দেশের সার্বিক ভবিষ্যৎ নিয়ে কঠিন দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় বৈকি!!!

৩০ শে মে, ২০১৪ সকাল ১০:২৯

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: সুন্দর সমালোচনার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আহমাদ। আপনার নামটা পড়ে আপনাকে খুব চেনা চেনা লাগছে!

৭| ০১ লা জুন, ২০১৪ রাত ১:০৯

আহমাদ ইবনে আরিফ বলেছেন: আজ্ঞে, বড় চেনা!!!বড় চেনা!!!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.