নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। ইহা ক্ষুধা উদ্রেক করে!

হঠাৎ ধুমকেতু

আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!

হঠাৎ ধুমকেতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেইন্ট ইকার!

২১ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৩

রাত তিন টা। ব্রাজিলের কোপাকাবানা বিচের অদূরে হোটেল উইন্ডসর প্লাজা। হোটেলের ব্যালকনিতে একা দাঁড়িয়ে আছে ইকার ক্যাসিয়াস। আকাশে চাঁদ নেই। তারার অস্পষ্ট আলোয় তীরে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের সাদা ফেনা গুলোই মাঝে মাঝে দেখা যাচ্ছে শুধু। কিন্তু স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে সমুদ্রের গর্জন। সে গর্জন একজন মানুষের সমস্ত আত্ন নিয়ন্ত্রণ কে অতিক্রম করে বুকের ভেতর গুমরে উঠা আর্তনাদের মত। সমুদ্র থেকে অকস্মাৎ দুই ফোঁটা লোনাজল ছুটে এসে ইকার ক্যাসিয়াসের দুই চোখের কোনায় বসে যায়! তারপর নামতে শুরু করে গাল বেয়ে।



এই কান্নাটার দরকার ছিল। এই কান্নাটাই পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ট একজন ফুটবল শিল্পী’র মনের উপর চেপে বসা আশি টনের ভার টা কে নামিয়ে দেবে। তাকে কানে কানে বলবে- ইকার! সুন্দরের মান কে অসীম করার জন্যই প্রকৃতি সুন্দরের পরিমাণ কে সবসময় সসীম করে দেয়! যে সুন্দর ফুল টা প্রকৃতি তোমার মাধ্যমে এই পৃথিবী তে ফোটাতে চেয়েছিল সেটা ইতোমধ্যে ফোটানো হয়ে গেছে ইকার!!



ইকারের বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এসে সেটা সামনে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘশ্বাস টা বেরিয়ে যাবার কারনেই সম্ভবত বুকটা একটু হাল্কা হয়। ২০১০ বিশ্বকাপ ফাইনালের এক টুকরো দৃশ্য মনে পড়ে যায় ইকারের।



বল ধরে বিদ্যুৎ গতিতে টার্ন নিয়ে বিদ্যুৎ গতিতেই এগিয়ে আসছে হল্যান্ডের উইঙ্গার আরিয়েন রোবেন। গোল এবং রোবেনের মাঝখানের দূরত্ব অবিশ্বাস্য রকম কম। মাঝখানে একমাত্র বাঁধা ইকার। অথচ ইকারের মাথা বরফের মত শান্ত! তার স্নায়ু একটুও বিচলিত নয়। বিচলিত কেন হবে? ফুটবলারের তিন উপাদান- ইন্সটিঙ্কট, ইন্টেলিজেন্স, রিফ্লেক্স এক বিন্দুতে মিশে তার সমস্ত মনোযোগ কে এগিয়ে আসা ফুটবল টার উপর স্থির করে দিয়েছে। সেটা বুলেটের গতিতে আসুক আর কাগজের উড়োজাহাজের মত বাঁক খাক, তাকে ত ফিরতেই হবে!



রোবেনের সেই মুহুর্তের পায়ের পেশির প্রতিটা ঝিলিক চোখের সামনে ভাসছে ইকারের। ইকার ঠিক মুহুর্তে সম্পুর্ন দ্বিধাহীন মন নিয়ে সামনে আগিয়ে আসল। রোবেন বাম পায়ে বুলেট গতিতে শট নিয়েছে। বিদ্যুৎ খেলে গেল ইকারের শরীরে! ডান পাটা ছড়িয়ে গিয়ে মাটিতে আছড়ে পড়ে থামিয়ে দিল স্বপ্ন সংহারী বুলেটের গতি!



স্পেন চ্যাম্পিয়ন হবার পর বারে হেলান দিয়ে বসে নিঃশব্দে কাঁদছে ইকার। তার অসামান্য প্রতিভার সাথে মিশে যাওয়া অসামান্য সাধনা, যে সাধনা ফুটবলের ক্ষেত্র ছাড়িয়ে সমগ্র জীবনাচরণে ব্যাপৃত, যার জন্য তাকে সবাই ডাকে সেইন্ট ইকার, সেই সেইন্ট ইকারের জাদুকরী ক্ষমতা টা আজ দেশের জন্য কাজে লেগে গেল! ইকার কেঁদেই যাচ্ছে। এই কান্নার অণু পরমাণু যদি কোন ক্যামেরা ধরতে পারত তাইলে দেখা যেত- এই কান্নার পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে সেই কাল্পনিক ফুলের বাস্তব পাপড়ি সমূহ, যেই কাল্পনিক ফুল নির্বাচিত কিছু মানুষের চোখের সামনে ঝুলিয়ে দেয় বিশ্ব ব্রক্ষান্ড নামক এই সশব্দ আয়োজনের নিঃশব্দ কারিগর। অসম্ভব কে সম্ভব করানোর জন্য!



যে সময়টা অতিক্রান্ত তার পুরোটাই যেন আস্ত একটা মুহুর্ত মাত্র। কাজেই ইকারের চোখের সামনে মুহুর্তেই ভেসে উঠে দূ’দিন আগের ২০১৪ বিশ্বকাপ ম্যাচের দৃশ্য। প্রতিপক্ষ সেই একই হল্যান্ড। বিদ্যুৎ গতি সেই একই রোবেনের পায়ে। কিন্তু কোথায় সেই পয়েন্ট অফ ইন্টার সেকশন?? ইন্সটিঙ্কট, ইন্টেলিজেন্স, রিফ্লেক্স সবই আছে কিন্তু তারা একবিন্দুতে মিলছে কই?সামনে এঁকে বেঁকে ছুটে আসছে ফুটবল নামক ভয়ঙ্কর ধোঁকা বাজ! অথচ ক্যাসিয়াসের চোখের সামনে একবার চট করে ভেসে গেল হোসে মরিন হো’র চেহারা! আরেকবার চোখের সামনে ভাসল কীট ব্যাগের ঈষৎ বেঁকে যাওয়া চেন! এসব কার নিয়ন্ত্রণে? মুহুর্তের অমনোযোগিতায় নষ্ট হয়ে যাওয়া একটা মুহুর্ত যে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের সোনার মুকুট কে মুহুর্তে গলিয়ে বাষ্প করে দিল এর দায়ভার কার?



সমদ্রের লোনা জল ইকার ক্যাসিয়াস কে আবার গ্রাস করতে চায়। কপালের চুল সরিয়ে আকাশের দিকে তাকায় ইকার। সব গুলো তারার মধ্যে একেবারে আলাদা একটা তারা যেন শুধু তার ই দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। ইকারের বুক টা কেঁপে উঠে। হঠাৎ করে মনে হয় এই বিশাল বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে সে একা এবং এই তারাটাই তার একমাত্র আপন জন।



নিঃশব্দ তারাটার দিকে তাকিয়ে আবার নিঃশব্দে কাঁদতে থাকে ইকার- তারা তুমি ই বল, আমার কি ডেডিকেশনে কোন ঘাটতি ছিল? আমি কি আমার সবটুকু দিয়ে চাইনি আমার ক্ষমতাটুকু সর্বাগ্রে দেশের জন্যই কাজে লাগুক?



তারা মিটিমিটি হাসে। তারপর জবাব দেয়-তোমার কোন দায় নেই ইকার। প্রকৃতি যেটুক সুন্দর তোমার মধ্য দিয়ে এই পৃথিবীর আলোয় ফোটাবে বলে ঠিক করেছিল তার পুরোটাই ফোটানো হয়ে গেছে। প্রকৃতি তোমাকে পৃথিবীর জন্য যে দায়িত্ব দিয়েছিল সেটা তুমি পালন করেছ। তুমি দেশ কে ভালোবাস বলে সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পৃথিবীর বুকে তুমি তোমার দেশের মাথাকে উঁচিয়ে ধরতে পেরেছ। তোমাকে সালাম ইকার। সেইন্ট ইকার!



আকাশের মিটিমিটি তারা টা হঠাৎ আকাশেই মিলিয়ে যায়। সেখানে তৈরি হওয়া শূন্য আয়তনের দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেইন্ট ইকার।



একসময় তির তির করে কাঁপতে থাকে সেইন্ট ইকারের দৃষ্টি। কারণ শূন্য স্থান বেশিক্ষণ শূন্য থাকে না!



( আমার মাথায় একটা ভয়ঙ্কর বদ খেয়াল চেপেছে এই বিশ্বকাপের মৌসুমে। গ্রেট ফুটবলার দের চরিত্র বানিয়ে ‘ফুটবল ফিকশন’ লিখা। প্রথমেই ইকার ক্যাসিয়াস কে ধরলাম! এর পরে কা কে ধরব জানি না!)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:০৩

আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেছেন: অসাধারন ........একটানে পড়লাম...
ভয়ঙ্কর বদ খেয়ালটা অামাদের অারো ফাটাফাটি লেখা উপহার দিক সেই প্রত্যাশায়....

২১ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৭

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: আপনকে অনেক ধন্যবাদ নোমান ভাই।

২| ২১ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:১৮

চলনবিল বলেছেন: দারুন , অসামান্য :) অনেক অনেক ভালোলাগা লেখায় ।।

২১ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৭

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: আপনকে অনেক ধন্যবাদ চলন বিল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.