![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!
শো কেসে তুলে রাখা পুরানো বুট জোড়া অনেক দিন পর শো কেস থেকে বের করে আনল পাউলো মালদিনি!তারপর সোফায় হেলান দিয়ে বসে বাঁ পায়ের বুটের অগ্রভাগের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইল।বুটের অগ্রভাগ টা যেন পাউলো’র সাথে কথা বলছে!
বুটের অগ্রভাগ দিয়ে শূন্য থেকে একশ আশি পর্যন্ত প্রত্যেক ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে বল কে লাথি মারা যায়। খেলার মাঠে প্রবল দৌড়ের সময় কেউ যদি কখন বল কে কোন অ্যাঙ্গেলে লাথি মারতে হবে, খোঁচা মারতে হবে বুঝতে পারে তাইলে সে একজন ডিয়েগো বা জিদান হতে পারে!
নব্বুই বিশ্বকাপের কথা মনে পড়ে পাউলো’র। নিজেদের দেশে কি চমৎকার ফুটবল খেলেই না সেমি ফাইনালে উঠে গেল ইতালি!সাইড লাইনার থেকে দলের গোল-মেশিন বনে যাওয়া সালভাতর শিলাচি সেমি ফাইনালে প্রথম গোল করে দল কে এগিয়েও দিল। কিন্তু পাল্টা গোল করে প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা কে সমতায় ফেরাল উজ্জীবিত ক্যানিজিয়া। আগের বিশ্বকাপে ফুটবলের জাদুকর বনে যাওয়া ডিয়েগোই সেই বিশ্বকাপে দারুণ উজ্জীবিত করে রেখেছিল ক্যানিজিয়া কে। বিশেষ করে দ্বিতীয় রাউন্ডে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার মুখোমুখি ম্যাচেই ডিয়েগো এবং ক্যানিজিয়ার দারুণ ‘যোগাযোগ’ টা বুঝা গিয়েছিল। খেলার শুরু থেকে ব্রাজিল প্রায় এক তরফা ভাবেই আর্জেন্টিনা’র গোল মুখে আক্রমণ করে যাচ্ছিল। কিন্তু গোল করতে পারছিল না। গোল মুখে ‘অমানবিক’ হয়ে উঠা আর্জেন্টিনার গোলকিপার গয়কোচেয়া আর ভাগ্য আর্জেন্টিনা কে বাঁচিয়ে দিচ্ছিল বার বার। ব্রাজিলের সেরা স্ট্রাইকার কারেকা’র বুলেট শট বুলেটের বেগেই ফিরে এসেছিল ক্রস বারে লেগে!
মাঝ মাঠে ডিয়েগো একবার বল পেয়েই ‘ম্যাজিক এঙ্গেল’ এর খেলা খেলল! ব্রাঙ্কো সহ ব্রাজিলের তিন চার জন কে লাটিমের মত ঘুরিয়ে বল বাড়িয়ে দিল সামনে। বাড়িয়ে দেয়া বল ছুটে গেল এগিয়ে আসতে থাকা ক্যানিজিয়ার পায়ের দিকে। ক্যানিজিয়া বল রিসিভ করে অগ্রসরমান গোলকিপার কে কাটিয়ে বল ঢুকিয়ে দিল জালে। সেই একটি মাত্র গোলে ভর করে দ্বিতীয় রাউন্ডের ‘অনতিক্রম্য ব্রাজিল-বাঁধা’ পেরোনোর পর সেমি ফাইনালেও সেই ক্যানিজিয়াই ইতালির গোল মুখে কিংবদন্তী হয়ে উঠা ওয়াল্টার জেঙ্গা’র কুমারী’ত্ব ছিঁড়ে খুড়ে ফেলল! নির্ধারিত সময়ে অমীমাংসিত খেলায় টাই ব্রেকারে হেরে বিদায় নিল ইটালি।
দলের বাইশ বছর বয়সী সদস্য পাউলোর সেদিন মনে হয়েছিল আকাশ টা অনেক বেশি কাল এবং আকাশের ওপারের ঈশ্বর টা অনেক বেশি নিষ্ঠুর!
‘পপ পপ!’
পাউলোর সামনে পাউলোর সতের বছর বয়সী ছেলে ক্রিস্টিয়ান। ছেলে সিসিলিয়ান দের স্টাইলে বাপ কে ‘পপ’ ডাকে! পাউলো অবাক হয়ে ক্রিস্টিয়ানের দিকে তাকাল। ক্রিস্টিয়ানের চোখ বেয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। ক্রিস্টিয়ানের আবেগ পাউলো কে স্পর্শ করল। পাউলো জড়ানো ভারী গলায় ছেলে কে জিজ্ঞেস করল-
কি হয়েছে পপ?
সিজার মালদিনি, পাউলো মালদিনি’ র দেশ ইতালি পর পর দুই বিশ্বকাপে কিভাবে ফার্স্ট রাউন্ডেই বাদ পড়ে পপ? কিভাবে?
পাউলোর বাদামি চোখ দুটা হঠাৎ জ্বালা করে উঠে! ক্রিস্টিয়ানের কথার ই যেন পুনরাবৃত্তি করে পাউলো-
রবার্টো ব্যাজ্জিও, জিয়ান লুইজি বুফন, ফ্যাবিও ক্যানাভারো’র দেশ ইটালি কিভাবে পর পর দুই বিশ্বকাপে ফার্স্ট রাউন্ডে বাদ পড়ে?
মাথা নিচু করে আবার হাতে ধরা বুটের দিকে তাকিয়ে থাকে পাউলো। বাম হাতের বুট টা ডান হাতে নেয়। ডান হাতের টা বাম হাতে। বাবা সিজার মালদিনির কথা মনে পড়ে। ইটালি উরুগুয়ের কাছে হেরে যাবার পর দুবার বাবা সিজারের কাছে গিয়ে তাঁর সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে পাউলো। কোন বার ই পাউলো’র কোন প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেন নি সিজার। দুবার ই গভীর হতাশাচ্ছন্ন থমথমে মুখ ঘুরিয়ে নিতে নিতে খাঁটি আঞ্চলিক ভাষায় যেটা বলেছেন সেটার মর্মার্থ হল- ‘যে দল টা জানেই না বিশ্বকাপে কেন এসেছে সেই দলটার থেকে তুমি এর চেয়ে বেশি কি আশা করেছিলে আমার বোকা ছেলে?’
নখের কোনা দিয়ে বুটের মাথায় আঁচড় কাটে পাউলো। পাউলোর প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বাবা সিজার তাঁর হতাশা ব্যক্ত করেছেন। ছেলে ক্রিস্টিয়ানের কথার জবাব দিতে গিয়ে কি ব্যক্ত করবে পাউলো? ‘এত বড় ছেলে! অথচ দেশের পরাজয়ে বাচ্চা ছেলের মত কাঁদছে!’ ভাবতে ভাবতে পাউলোর নিজের চোখ থেকে দু’ ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে পাউলো’র হাতে থাকা বুটের ফিতা টাকে ভিজিয়ে দেয়!
ছেলে ক্রিস্টিয়ান বাবার পাশে এসে বসে। বাবার কাঁধে হাত রাখে। তারপর সামনের দিকে তাকিয়ে দৃঢ় কণ্ঠে বলে,
পপ, পরের বিশ্বকাপ নিয়ে এখন থেকেই আমাদের সিরিয়াসলি ভাবতে হবে। পরের বারে আমরাই বিশ্বকাপ টা মাথার উপর উঁচিয়ে ধরব পপ!
ছেলের মুখ টা ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দেয় মালদিনি। তারপর চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে,
কিভাবে?
ইতালিয়া’র প্লেয়ার দের বুট ঠিক করতে হবে বাবা!
বুট ঠিক করতে হবে মানে?
ইতালিয়ার প্লেয়ার দের বুট ঠিক নাই বাবা!
বুট ঠিক নাই মানে??
বুট ঠিক নাই মানে ওদের বুট জানে না কখন বলের কোথায় লাগতে হবে! বুট ঠিক না থাকলে ত বল পায়ে থাকবে না বাবা! বল কেড়েও নিতে পারবে না। পাস ভুল হবে, গোলে শট নিলে শট বারের বাইরে দিয়ে যাবে বাবা!
পাউলোর হাত থেকে বুট জোড়া মেঝেতে পড়ে গিয়ে ‘খ খট’ শব্দ হয়! পাউলো এক দৃষ্টে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। ইতালিয়ান দেবদূতীয় সৌন্দর্য্য ছেলে পুরাটাই পেয়েছে। কিন্তু সেটা পাউলোর চিন্তার বিষয় নয়। পাউলোর চিন্তার বিষয় হচ্ছে জেনেটিক্স এর খেলা!বংশ পরস্পরায় ওদের রক্তে লোহিত কণিকা, শ্বেত কণিকা, অণুচক্রিকার সাথে ফুটবল কণিকা ত অবশ্যই আছে। তাই বলে পুঁচকে ছেলে বাবার ঠিক এই মুহুর্তের মনের কথা হুবহু বলে দেবে?
হঠাৎ বসা থেকে উঠে দাঁড়াল পাউলো! ছেলেকেও কাঁধ ধরে দাঁড় করিয়ে দিল। ছেলের গায়ে পালার্মো বন্দরের ছবি ওয়ালা একটা টি শার্ট। বিচিত্র কারনে এই ছেলে সিসিলি’র মহা ভক্ত। সিসিলিতে বেড়াতেও গেছে পাঁচ ছবার! ছেলের দিকে তাকিয়ে হুকুম দিল পাউলো,
যা নীল জার্সি আর সাদা শর্ট পরে আয়। যা!
বাবার দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হেসে দৌড় দিল ক্রিস্টিয়ান!
পাউলো নিজেও নীল জার্সি পরল। সাদা শর্ট পরল। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে র পর তুলে রাখা বুট জোড়াও পরে নিল! তারপর ছেলে ক্রিস্টিয়ান কে নিয়ে স্পোর্টস কারে চড়ল। স্পোর্টস কারের রঙ টাও ইতালি’র আকাশের মতই বিমর্ষ নীল!
হাইওয়ে দিয়ে স্পোর্টস কার যেন উড়ে যাচ্ছে! পাশে বসা ক্রিস্টিয়ান ফিস ফিস করে জিজ্ঞেস করল- আমরা কোথায় যাচ্ছি বাবা?
আমরা ক্যানাভারো’র বাসায় যাব। প্রানদেল্লি’র পর সম্ভবত সেই ইতালি’র কোচ হবে। আমরা বাবা ছেলে মিলে ক্যানাভারো কে ইতালিয়ান বুটের সমস্যা টা বুঝিয়ে বলব-গাড়ি’র গতি আরো বাড়াতে বাড়াতে আনমনে জবাব দিল পৃথিবী নামক গ্রহের সেরা সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার পাউলো মালদিনি।
( দ্বিতীয় ফুটবল ফিকশন! আমার বদ খেয়ালের দেখি শেষ নাই।)
২৮ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৯
হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: Click This Link ধন্যবাদ আপনাকে। প্রথম টা ‘সেইন্ট ইকার’।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:০৫
মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: দ্বিতীয় ফুটবল ফিকশন!?
প্রথমটা কি ছিলো???
ভালো লিখেছেন...