নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। ইহা ক্ষুধা উদ্রেক করে!

হঠাৎ ধুমকেতু

আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!

হঠাৎ ধুমকেতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন যন্ত্র প্রকৌশলী, একজন সুন্দরী এবং একটি অসহায় টুকির মাছ!

২৮ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৭

আমাদের চিটাগাং এর কাজির দেউড়ি বাজার টা খুব সুন্দর। ঢাকার আর্মি শাসিত কচুক্ষেত বাজারে যেমন পঁচা গন্ধ নাই, সেরকম কাজির দেউড়ি বাজারেও পঁচা গন্ধ নাই। তরকারীওয়ালাদের বুদ্ধি জেমস ওয়াটের চেয়ে বেশি। তরকারীর ওপর ঝুলতে থাকা বাল্ব কে সবুজ রাংতা কাগজ দিয়ে মুড়ে দেয়! তাতে তরকারী অনেক বেশি সবুজ দেখায়।



মাছের বাজারে হালুম সাইজের রুই মাছের সাথে কর্নফুলি’র ইলিশ মাছ, পাঙ্গাশ মাছ, তেলাপিয়া মাছ, লইট্টা মাছ, হুন্দুরা মাছ, টুকির মাছ সব পাবেন। মাছের মধ্যে সবচেয়ে বদ হচ্ছে টুকির মাছ গুলা। এগুলা থাকে জ্যান্ত এবং এগুলার পিঠে ধারালো কাঁটা থাকে। এরা বিক্রেতার সামনে রাখা থালার উপর সাঁতার কাটতে থাকে এবং চট করে মানুষের গায়ের উপর লাফ দেয়! আজকে বিকালে ঘটে যাওয়া সেরকম সাঙ্ঘাতিক লাফাঙ্গা একটা ঘটনার বর্ননাই এখন দিতে যাচ্ছি।



আমি আর আমার ছোট ভাইয়ের ভাবী( আমার বৌ!) বাজারে গেছি। মাছ তরকারি পছন্দ করা, দরদাম করা সব বৌয়ের দায়িত্ব। আমার দায়িত্ব শুধু টাকা দেয়া আর ব্যাগ বওয়া। তরকারির বাজার থেকে সবুজ রঙের পটল কিনলাম( দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখের সামনে বৌ কে পটল তুলতে দেখলাম!)।তারপর মাছের বাজারে গিয়েই ‘জন-জটে’ পড়ে গেলাম! মাঝখানের হাঁটার জায়গায় হাতি সাইজের দুই লোক দু’দিক থেকে ‘ তিন শ টিঁয়া ফাইল্লে দ, ফঁচা মাছ নইদ্দ অওবা’ ইত্যাদি ডায়লগ ঝাড়ছে। ওদিকে পেছন থেকে এক মহিলা ক্রমাগত হর্ন দিচ্ছে- ভাই সরেন, সরেএএন!



আমি হাতি সাইজের একজনের ঘাড়ে পাতলা খামচি দিয়ে ‘বদ্দা এক্কানা ঈক্কা যন’ ত’ বলে বৌ সমেত কোনমতে রুইমাছ পর্যন্ত এগিয়ে গেলাম! কেজি তিনশ টাকা দাম চাওয়া লাল কানকো’র রুই মাছ বৌ আড়াইশ টাকায় ম্যানেজ করে ফেলল! আস্ত মাছের দাম তিনশ চুরান্নবুই টাকা গুনে দিয়ে মাছ নিয়ে কুটনেওয়ালা’র কাছে ছুটলাম। কুটনেওয়ালারা বসে বাজারের একেবারে কোনায় এবং এসব ‘মৎস্য-কসাই’ দের কাজ তুলনামূলক ভাবে সহজ হলেও এদের ইনকাম অনেক বেশি!



কুটনেওয়ালার কাছে মাছ কুটার সিরিয়াল দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। বৌ গেছে চিংড়ি মাছ সস্তায় পাওয়া যায় কিনা দেখতে। দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে ‘সেইদিন’ আর ‘এইদিন’ এর মধ্যে অর্থহীন তুলনা করছি। ছোটবেলায় আব্বার সাথে যখন বাজারে যেতাম তখন যেই টাকায় আস্ত একটা মাছ পাওয়া যেত এখন মাছ কাটাইতেও তার চেয়ে বেশি টাকা লাগে- এইসব হাবিজাবি ভাবছি। হটাৎ নারী কণ্ঠের চিৎকার কানে এলো-সেই হর্ণের আওয়াজ!

বিদ্যুৎ বেগে ঘুরে তাকিয়ে দেখি আমার ঠিক সামনে টুকির মাছের থালার সামনে বছর পঁচিশ বয়েসি লম্বা চওড়া এক মেয়ে কামিজ ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে টুকির মাছওয়ালা কে শাপ শাপান্ত করছে আর চোখের পর্দা হীন নির্লজ্জ একটি টুকির মাছ তার কামিজের মধ্যাঞ্চলে ঝুলে আছে! কেউ নিকটবর্তী হতে চাইলেই টুকির মাছ ঘাই দিচ্ছে আর সেই নিকটবর্তী দুঃসাহসী এমন ভাবে পেছনে ছিটকে যাচ্ছে যেন মাত্রই সাতশ ভোল্টের ইলেকট্রিক শক খেয়েছে!



আমার হঠাৎ মনে পড়ে গেল আমি একজন প্রকৌশলী।সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক ডিপার্টমেন্ট(মেকানিক্যাল) থেকে পাশ করা যন্ত্র প্রকৌশলী! কাজেই সুন্দরী মৎস্যাক্রান্তা(!) কে এই বিপদ থেকে রক্ষা করা আমার পবিত্র দায়িত্ব। আমি এগিয়ে গেলাম। বাজারের ব্যাগ থেকে আমার হাতে উঠে এসেছে বেশ বড় সড় একটা পটল!



পটলের মাথাটা শক্ত করে ধরে রেখে বাকী অংশটা সন্তর্পনে টুকির মাছের পেটের নিচে ঢুকিয়ে দিলাম। টুকির যথারীতি ঘাই দিল। কিন্তু টুকিরের ঘাই বরাবর পটল নড়াচড়া করিয়ে আমিও টুকির মাছ কে বুঝিয়ে দিলাম সে মেসি হলে আমি মুসা!তারপর বিদ্ধ টুকির মাছের কাঁটার সমান্তরালে পটল সহ টুকির মাছ কে উপরের দিকে হ্যাঁচকা টান দিলাম। চোখের পলকে টুকির শূন্যে উঠে গেল! তারপর অভিকর্ষের টানে ধপ করে সুন্দরীর পায়ের কাছে পড়ল। সুন্দরী ইয়াঁক শব্দ করে লাফ দিয়ে সরে গেল!



লোকজন জড়ো হয়ে গেছে। সুন্দরী বড় বড় শ্বাস টানছে আর আমাকে ক্রমাগত ধন্যবাদ দিচ্ছে। সুন্দরী’র পায়ের অদূরে আসামীর ভঙ্গিতে শুয়ে আছে একটি অসহায় নিষ্পাপ টুকির মাছ!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৩:৪০

আজমান আন্দালিব বলেছেন: দারুণ লিখেন তো আপনি।

২৯ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:০৬

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। অনেক ধন্যবাদ।

২| ২৬ শে জুলাই, ২০১৪ ভোর ৫:৩৯

শান্তির দেবদূত বলেছেন: মজা করে লিখেছেন, পড়ে বেশ আনন্দ পেলাম। এত সুন্দর সাবলিল একটা রম্যে পাঠক সারা এত কম কেন সেটা বুঝতে পারছি না! যাই হোন, পানি অনেক ভালো রম্য লিখেন, সামনে এমন আরও লেখা পাব আশা করছি। শুভ কামনা রইল অনেক।

২৯ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:১৯

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। সত্যি ই যদি ভাল লিখি তাইলে সময়ের সাথে পাঠক বাড়বে। পাঠক কম থাকাও অবশ্য খারাপ না। ছোট সংসারে ঝামেলা কম!


আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.