নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। ইহা ক্ষুধা উদ্রেক করে!

হঠাৎ ধুমকেতু

আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!

হঠাৎ ধুমকেতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৎস্য রাজের জল-কামান

০৮ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:২১

ছেলেটা খুব সূদর্শন। বয়স পঁচিশ। পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। ছেলেটা এতই লাজুক, ফেস বুকে কোন মেয়েকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পর্যন্ত পাঠাতে পারে না!



ছেলেটা এখন পনের বাই বিশ ফুট একটা কালভার্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তার মাথার সামনের লম্বা চুলগুলো রোদ চশমার উপর এসে পড়েছে। ছেলেটার এক হাতে একটা স্মার্ট ফোন। আরেক হাতে একটা এ থ্রি সাইজের কাগজ। কাগজে প্রজেক্টের লে-আউট আঁকা। ছেলেটার স্বপ্ন একটাই- অপরূপ একটা মেয়েকে বিয়ে করে সারারাত তার সাথে গল্প করা এবং পরদিন দেরি করে অফিসে গিয়ে বসের ঝাড়ি খাওয়া! কিন্তু ছেলেটার স্বপ্ন স্বপ্ন ই থেকে যায় কারণ ঐ যে- ছেলেটা বড্ড লাজুক!



ছেলেটা কালভার্টে’র মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে কল্পনা করার চেষ্টা করে। চল্লিশ ফুটি একটা ট্রেলার কে এই কাল ভার্টের উপর দিয়ে উঠিয়ে সাপের মত বাঁক খাইয়ে লোডিং পয়েন্টে নেবার জন্য কতটা চওড়া এবং কোন জায়গায় বাঁক খাওয়ানো রাস্তা করা দরকার। কালভার্টের সামনে কিছু মাপ-ঝোঁকের প্রয়োজন অনুভব করে ছেলেটা। সে কালভার্টের একেবারে কাছাকাছি চলে আসে। ১৬ ফুট মেসারিং টেপ টা জিনসের প্যান্টের লুপের সাথে ঝুলানো ছিল। টেপ নিয়ে মাপ নিতে গেলে দূহাত খালি করা প্রয়োজন। তাই যুবক চকিতে লে আউটের এ-থ্রি সাইজ কাগজ টা কালভার্টের হাতলের উপর রেখে তার উপর স্মার্টফোন টা রাখে! তারপর মেসারিং টেপ নিয়ে মাপ-ঝোঁকে ব্যস্ত হয়ে যায়!



দখিনা হাওয়া বড় বেরসিক। নইলে ইঞ্জিনিয়ারের সাথে সে এমন রসিকতা কেন করবে? লে আউটের কাগজ সহ স্মার্ট ফোন টাকে কালভার্টের নিচের খালে ছুঁড়ে ফেলে দখিন হাওয়া যেন ইঞ্জিনিয়ার কে এই বলে কটাক্ষ করল –‘হে ইঞ্জিনিয়ার! স্মার্ট ফোন নামক জাহাজ কে হাওয়ায় উড়িয়ে নেবার জন্য পাতলা কাগজ টা যে পালের কাজ করবে এটা তোমার শক্ত অংক ঠাঁসা মাথায় কেন আসল না??’



খালে ভেটকি মাছ বাস করত। এখনো পর্যন্ত কোন ভেটকিনী’র সাথে তার প্রনয় হয় নাই। এজন্য তার হৃদয় অত্যন্ত ব্যকুল ছিল! খালের নিচে সেঁধিয়ে যাওয়া একটা হোস পাইপের উপর সে বাসা বেঁধেছিল এবং জোয়ারের সময় সে হোস পাইপের উপর ঘাপটি মেরে বসে থাকত যাতে জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা কুচো চিংড়ি ইত্যাদি ক্যাঁক করে ধরতে পারে!

আজকে ভেটকি’র জীবনে অত্যাশ্চর্য একটা ঘটনা ঘটল! প্রমত্ত জোয়ারে শিকারের আশায় হোস পাইপের উপর বসে থাকা ভেটকি দেখল জোয়ারের পানিতে ‘ফ্ল্যাট ডেকের ছোটখাট একটা জাহাজ’ যেন ভেসে আসছে! ভেটকির হৃৎপিণ্ড তড়াক করে উঠল!! জাহাজ দেখতে দেখতে ছুটে এসে হোস পাইপের ক্লাম্পের সাথে আটকিয়ে গেল! ভেটকি’র মনে হল- ঈশ্বর কোন না কোন ভাবে তার প্রার্থনা শুনেছেন এবং মৎস্য সমাজে তার দাম বাড়ানোর জন্য এই অত্যাশ্চর্য জাহাজ টা কেবল মাত্র তার জন্যই পাঠিয়েছেন! এতদিন ভেটকিনীদের কাছে ছেড়াবেরা হোস পাইপের উপর বাস করা কুঁচো চিংড়ি খাওয়া ভেটকির কোন দাম ছিলনা। এবার নিশ্চয় ‘আস্ত জাহাজের মালিক ভেটকি চন্দ্রে’র উষ্ণ সান্নিধ্য পাবার জন্য ভেটকিনীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হবে! সে পরম উৎসাহে ‘জাহাজের’ দিকে অগ্রসর হয়ে একেবারে জাহাজের বুকে উঠে পড়ল!!



আজব ঘটনা জগতে ঘটে বলেই স্মার্ট ফোন পানিতে পড়ে স্রোতে ভেসে যাবার পর ও নষ্ট হওয়া দূরে থাক বন্ধ পর্যন্ত হয় না! কাজেই স্মার্ট ফোনের জীবন্ত টাচ স্ক্রিনের উপর ভেটকির উল্লসিত লাফালাফির ফল ফলল নিম্নরূপঃ



ইঞ্জিনিয়ার যুবকের ফেসবুকে ‘এড ফ্রেন্ড’ হিসাবে থাকা এক সূদর্শনা উর্বশী’র কাছে যুবকের তরফ থেকে এক খানা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট চলে গেল!

ঘটনা এতদূর ঘটার পর প্রকৃতি’ও যেন বুঝতে পারল সে যুক্তি এবং বিজ্ঞানের বাইরে গিয়ে কিছু কাজ করে ফেলেছে!! কাজেই প্রকৃতি লজ্জা পেল। সে তাড়াতাড়ি পানিতে সাঁতার দেয়া(!) স্মার্ট ফোন নামক ইলেকট্রিক যন্ত্র কে চিরতরে নষ্ট করে দিল!



উর্বশী’র বয়স একুশ। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় উর্বশী’কে দেখলে তার রূপের যথার্থ বর্ননা দিতে পারতেন। আমি শুধু এটুকু বলব- পৃথিবী’র সবচেয়ে সুখী পুরুষ কে যদি কেউ অসুখী করতে চান তাইলে তাকে শুধু একবার উর্বশীর সামনে দাড় করিয়ে দিয়ে বলেন- উর্বশী ছাড়া এই জগতের বাকী সবকিছু তোমার!



উর্বশী দেখল- ফেস বুকে তাকে সূদর্শন এক যুবক ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। বলা বাহুল্য উর্বশী প্রতিদিন শয়ে শয়ে যুবকের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পায় এবং ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার যুবক ও সেখানে একেবারে দূর্লভ নয়। সবগুলো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টের সাথে আবার বিশাল সব মেসেজ। সেসব মেসেজে কখনো বলা থাকেনা- ‘তোমার রূপে মুগ্ধ হয়ে আমি তোমার সঙ্গ কামনা করছি’। বরং বলা থাকে-‘তুমি যে একটা মেয়ে সেটা ত আমার মাথায় ই নাই! করিম যেমন আমার বন্ধু তোমাকেও আমি তেমন বন্ধু বানাতে চাই’! এসব দেখলেই উর্বশী’র গা ঘিন ঘিন করে। সে তাদের কে সাথে সাথে ব্লক করে দেয়!



এই যুবকের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টের সাথে কোন মেসেজ নাই। সেটাই যেন উর্বশী’কে আকৃষ্ট করল! উর্বশী ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে যুবকের প্রোফাইল পিকচারের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসল।



সুদর্শন ইঞ্জিনিয়ার যুবক চাকরির বেতন পাবার পর আরেকটা স্মার্টফোন কিনল এবং ফেসবুকে ‘না চাইতেই পাওয়া অপরূপার বন্ধুত্ব’ কে হারানো স্মার্ট ফোনের বিনিময়ে ঈশ্বর কর্তৃক প্রদত্ত একটা উপহার হিসেবেই গ্রহণ করল! কাজেই সূদর্শন এবং অপরূপার মধ্যে প্রেম টা হল কিছুটা ঐশ্বরিক এবং প্রচণ্ড শীতের এক বিকেলে দুজনে প্রচণ্ড অবিশ্বাসের সাথে আবিষ্কার করল- স্বর্গে নয়, এই মর্ত্যলোকেই তাদের স্বর্গীয় মিলনের ব্যবস্থা মহা-মহিম ঈশ্বর করে দিয়েছেন!মহা-মহিম ঈশ্বর কে ধন্যবাদ।



বাসর রাতের নিবিড় আলিঙ্গনে বধু ফিস ফিস করে বর কে জানাল তার ঐকান্তিক বাসনা- ছোট্ট একটা নৌকা। ছোট একটা স্রোতস্বিনী। পড়ন্ত সোনালী বিকেলে দু’জনের ছোট্ট একটা নৌ বিহার!



রক্তমাংসের জীবন্ত বধুর ‘প্রবল বাস্তব ভালোবাসা’র করাল গ্রাসে বরের কল্পনা শক্তি ততক্ষণে অনেকখানি লোপ পেয়েছে! সে তৎক্ষণাৎ প্রজেক্ট সংলগ্ন খাল কে ভেন্যু এবং খালের কিনারায় অকারণে বেঁধে রাখা মালিক মহাশয়ের টাগ বোট টাকে প্রমোদতরি হিসাবে ঠিক করে নিয়ে ঐ চিন্তার ঐ খানেই ইতি টেনে দিল!



ক্যাপ্টেন ভেটকি চন্দ্র(জাহাজের মালিক হবার পর নিজেই নিজের নামের সাথে ক্যাপ্টেন জুড়ে দিয়েছে!)সেদিন ও তার স্বীকৃত বান্ধবী সমূহ এবং বন্ধুতা প্রার্থিনী’দের(স্বীকৃত বান্ধবী রা জাহাজে উঠার অনুমতি পায়।বন্ধুতা প্রার্থিনী রা হোস পাইপের আশেপাশে ঘুরঘুর করে!)কাছে সগৌরবে সে কিভাবে আস্ত একটা জাহাজের মালিক হল সেই ঘটনা বর্ননা করতেছিল। হঠাৎ মনে হল জলের উপর কিসের যেন ছায়া! একবার এদিক একবার ওদিক হেল দোল করতে থাকা ছায়াটা যেন ঠিক তাদের মাথার উপরের আকাশটাকে ঢেকে দিয়েছে! ভেটকির আচমকা মনে হল এই ছায়ার উপরে বসে আছে কোন স্বর্গীয় দেবদূত। যার মারফৎ ঈশ্বর তার কাছে সৌভাগ্যের প্রতীক এই জাহাজ খানা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন! সে সমস্ত ভেটকিনী কে হুকুম(!) দিল- সবাই ছায়ার আশেপাশে বুদবুদ পাঠাও! সবাই!!



প্রমোদ তরীর উপর নিবিড় রোমান্সরত উর্বশী এবং যুবক অকস্মাৎ খেয়াল করল তাদের ছোট্ট জলতরীর চারদিকে খালি বুদবুদ উঠছে!! বিস্ময়ে তাদের চোখ কপালে উঠে গেল!



অপ্সরী উর্বশী’র প্রশ্নের জবাবে সূদর্শন যুবক বলল- আমরা এখন মৎস্য রাজের দেশের উপর দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সন্মান জানানোর জন্য মৎস্য রাজ তাঁর সেনাবাহিনী কে নির্দেশ দিয়েছেন জলকামান দাগতে!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.