![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!
ছোট্ট খুকি দেখতে দেখতে বড় হয়ে যায়। ফ্রক ছেড়ে কামিজ উড়না ধরে। মেট্রিক পাশ করে এপ্রন পরে কলেজে যায়। কলেজে খুকি কে কে বা কারা যেন দেখে! তারা নিজেদের মধ্যে ফিস ফিস করে কথা বলে!! সেই কথায় ইয়াকুব চেয়ার ম্যানের ছেলে যে গত বছর বিএ ফেল করে দুবাই গিয়ে মেলা পয়সা কামাচ্ছে তার কথাও আসে। খুকি এসব কিছু বুঝে না। হৈমন্তী গল্পের ‘আমি পাইলাম, ইহাকে পাইলাম’ পড়ে খুকির বুক টা হু হু হয়ে আছে। এই হু হু কার জন্য, কিসের জন্য এসব কিছুই বুঝে না খুকি। সে শুধু বুঝে তার হৃদয় টা এখন আরেক রকম হয়ে গিয়েছে। সেই ‘আরেক রকম হৃদয়’ কোন কারন ছাড়াই হঠাৎ হঠাৎ তীব্র কষ্টে নীল হয়ে উঠে!
অফিস ফেরত মধ্যবিত্ত বাবা একদিন বিকেলে দীর্ঘঃশ্বাস উগরে দিতে দিতে বলেন- সবি বুঝি খুকির মা। কিন্তু আমরা যে বড় গরিব!!
হঠাৎ করেই সব কিছু পালটে যায়। যে মেয়েটা এতদিন ছিল ঘরের উড়ন্ত প্রজাপতি সে হঠাৎ করেই যেন হয়ে যায় অতিথি! সমস্ত কথায় যে এতদিন ফটাং ফটাং করে জবাব দিত সে যেন আর কোন কথার জবাব ই দেয় না। মেয়ের মাথায় উকুন হইছে দেখে মা এখন আর মেয়ে কে ধমক দেন না! মেয়ের হাত থেকে ‘চিকন চিরুনি’ কেড়ে নিয়ে নিজেই মেয়ের মাথায় আঁচড় দেন। মারার জন্য উকুন টাকে হাতের তালু থেকে বুড়ো আঙ্গুলের নখের উপর নিয়ে মায়ের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। উকুন আর মারতে পারেন না! মেয়ে না দেখে মত করে উকুন টা নিজের মাথার ভেতর ঢুকিয়ে দেন!
বাবা একদিন সকালে অফিসে যাবার আগে চা খেতে খেতে খামাকাই অবান্তর কথাবার্তা শুরু করে দেন।
- আচ্ছা খুকির মা, খুকির বিয়ে ত বাইশ তারিখ। পরের মাসের সাত তারিখ থেকে খুকির পরীক্ষা শুরু। খুকি না হয় বিয়ের পরে এক মাস আমাদের সাথে থাকল! পরীক্ষা শেষ করে শ্বশুরবাড়ী যাবে!
- আপনি(!) পাগল হইছেন? বিয়ের পরে বাপের বাড়ি থাকলে মানুষে কি বলবে?
- পরিক্ষা আছে না?
- বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, পরিক্ষা দেবার আর কি দরকার?
বাবা নিজের ‘বোকামী’ বুঝতে পারেন। তাই ত! বিয়ে হয়ে যাচ্ছে-কি দরকার আর পড়াশুনার! মেয়ে তাঁর লক্ষ্মী। ঘর কন্নার কাজ সব জানে!
খুকি কে দামী বেনারশি শাড়ি পরিয়ে দেয়া হয়।হাতে সোনার মোটা বালা। গলায় সোনার হার। কানে ভারী ঝুমকা।
ইয়াকুব চেয়ারম্যান ‘বড় দিলওয়ালা’ মানুষ বলেই পনের ভরি সোনা দিয়ে ছেলেকে লম্বা ফর্সা রঙের মেয়ে বিয়ে করাচ্ছেন। তার হেরে যাওয়া প্রতিদ্বন্দ্বী ছুলু মাতবরের মত ‘ছোট দিলওয়ালা’ হলে চার ভরি সোনা দিয়ে ছেলে কে বেঁটে কাল মেয়ে বিয়ে করাতেন! সোনা দেয়া ছাড়াও মেয়ে পক্ষ থেকে দেয়া সতের ইঞ্চি সাদা কাল টিভি টার দাম ইয়াকুব চেয়ারম্যান নিজের পকেট থেকেই দিয়েছেন। তাঁর বেয়াই অর্থাৎ মেয়ের বাপ গরিব হলেও শিক্ষিত মানী মানুষ!
খুকি শ্বশুর বাড়ি যায়। তার মা ও গিয়েছিল। খালা রা গেছে। বড় আপা ত মেট্রিক পাশের আগে গেল। বড় আপা নাকি দেখতে খুকির চেয়েও বেশি সুন্দর!
খুকি বুঝতে পারে যা ঘটছে সেটা শুধুই মেনে নেবার! এটা কোন ভাবেই ‘আমি পাইলাম, ইহাকে পাইলাম’ ধরনের কিছু নয়। আশেপাশের সবাই ভাল মানুষ। অথচ অদেখা এক দৈত্যের কাছে এ যেন এক অসহায় আত্ন সমর্পণ!
খুকি কে নিয়ে ছোট্ট সাদা ভাড়া কার টি ছুটে চলেছে। খুকির পাশে খুকির বর, যে অনেক টাকা খরচ করে একটা লম্বা ফর্শা মেয়ের শারিরীক এবং মানসিক হাকিম হবার যোগ্যতা লাভ করেছে। খুকি জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। তাকিয়েই থাকে। নীল আকাশে এক টুকরা কাল মেঘ থমকে আছে। কিন্তু মেঘ টাই যে আকাশ নয়!
খুকির মনে হয় এই মেঘ ছিঁড়ে একদিন আকাশের পথে বেরিয়ে যাওয়া সম্ভব! খুকি হঠাৎ গাড়িতে বসেই একটা ঝাঁকি দেয়! জানালার পাশে সরে আসে!!
খুকির জামাই জ্ঞানী ভঙ্গিতে বলে- আগেই জানতাম বমি করবা! মেয়েমানুষ নিয়ে গাড়িতে চড়ার এটাই সমস্যা। বাসা থেকে তোমাকে একটা এভোমিন টেব্লেট ও খাওয়াই দিল না!
খুকি হাসছে! তার মনে অসম্ভব আনন্দ এই মুহুর্তে। তার মনে হচ্ছে সে এমন একটা ‘এভোমিন টেব্লেট’ আবিস্কার করেছে যেটা আকাশ কে বমি করিয়ে আকাশের পেটে যুগ যুগ ধরে সঞ্চিত কাল মেঘ গুলো কে বের করে দিতে পারে!!
উনিশ বছর পর ‘খুকি’র খুকি’ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়।
১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৪৭
হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও দৃষ্টি সীমানা। আপনিও ভাল থাকুন সব সময়।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৪১
দৃষ্টিসীমানা বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন । ভাল থাকুন সব সময় ।