নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। ইহা ক্ষুধা উদ্রেক করে!

হঠাৎ ধুমকেতু

আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!

হঠাৎ ধুমকেতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার গুণ্ডা বন্ধু কামরান

২৮ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:০৫

তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। আমাদের পাড়ার গুণ্ডা টাইপের একটা ছেলে দেখি আমাদের বাসার সামনের রাস্তায় স্কেটিং করছে। ‘চাক্কার জুতা’ দেখে ত আমার চক্ষু চড়ক গাছ! সাঁতার কাটার ভঙ্গিতে পা দুটাকে সামনের দিকে টানছে আর রাস্তায় ‘ঘর...র...স...স...সি ই ই ই ঙ ঙ ...’ শব্দ তুলে চলছে চাক্কার জুতা! যখন থামার প্রয়োজন পড়ছে তখন পায়ের গোড়ালি খানিকটা উঁচু করলে সাইকেলের মত ব্রেক হয়ে যাচ্ছে! আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম- এই চাক্কার জুতা আমাকে চালাতেই হবে!!



কিন্তু চাক্কার জুতা আমাকে কে কিনে দেবে? প্রতি বছর ব্যাড মিন্টন খেলার ব্যাট কিনার জন্য আমাকে বাজারের টাকা থেকে চুরি করে সেই টাকা জমাতে হয়। আর এই চাক্কার জুতা কোথায় পাওয়া যায় তাও ত জানি না!



তিন চারদিন পর এক বিকেলে দুরু দুরু বুকে গুণ্ডা ছেলের সামনে দাঁড়ালাম।‘ অ্যাই কামরান! তোর চাক্কার জুতা চালাতে দিবি?’



আমার কথা শুনে কামরান ত হাসতে হাসতে বাঁচে না- শা আ আ লা! তোরা আজীবন এরকম ঢিলা থাকবি! চাক্কার জুতা আবার কি? এগুলাকে বলে স্কেইট! ঢাকার ছেলেগুলা কত এস্মাট! বড় রাস্তার উপর গাড়ির সাথে শাঁ শাঁ করে স্কেইট চালায়! আরে ঢাকার ফুটপাত ও ত আমাদের ককশবাজারের বড় রাস্তার চেয়ে বড়!!



ফুটপাত কি রে?



তুই ত দেখি ঢিলাও না। একেবারে ভঁ’তা যাকে বলে! টিভি তে ফুটপাত দেখস নাই?



আমাদের বাসায় টিভি নাই যে!



কামরান আমার দিকে তাকায়। কামরানের চোখে অসম্ভব রাগ। দুই পা থেকে একে একে খুলে নেয় দুইটা স্কেইট! তারপর স্কেইট দুইটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে- তোর যতদিন ইচ্ছা রাখবি। ইচ্ছামত চালাবি। যেদিন তোর মনে হবে পুরাপুরি চালাতে পারছস সেদিন আমাকে ফেরত দিবি। আমি চাই না আমাদের পাড়ার একটা ছেলেও ভঁ’তা থাকুক! আমাদের পাড়ার ছেলেদের ও ঢাকার ছেলেদের মত এস্মাট হতে হবে।



ঘরের মেঝেতে স্কেইট চালাতে গিয়ে উলটে পড়ে শুরুতেই নাক ফাটালাম। পরের বারে মাথার পেছন টা মেঝেতে ঠুকে গেল। এতে করে সম্ভবত দু দিকের দুই এক্সট্রিম সম্পর্কে আমার অবচেতন ব্রেন একটা ধারনা পেয়ে গেল এবং সাতদিন পরে আবিষ্কার করলাম আছাড় না খেয়েই আমি রাস্তা দিয়ে স্কেইট চালিয়ে কানুর দোকান পর্যন্ত যেতে এবং আসতে পারতেছি। পরের সপ্তাহের মধ্যে শুধু কানুর দোকান নয়, খান দের বরফ মিল পার হয়ে চাউল বাজার পর্যন্ত চলে গেলাম স্কেইট চালিয়ে। এর মধ্যে স্কেইট চালানো অবস্থাতেও কামরানের সাথে কয়েকবার দেখা হয়েছে। ও আমার দিকে তাকিয়ে এমন ভাবে ‘কি করস ভঁ’তা’ বলেছে যেন ওগুলো আমার ই স্কেইট!!



আরো এক সপ্তাহ যাবার পর সাহস চরম বেড়ে গেল। সিদ্ধান্ত নিলাম স্কেইট চালিয়ে বিচে যাব! বিচে যাবার জন্য সময় ঠিক করলাম রাত চার টা। পাশের বাসার ইমরুল দের দেয়াল ঘড়িতে যখন ঢং ঢং করে রাত চার টা বাজবে তখন আমি স্কেইট নিয়ে বাসা থেকে বেরোব।রাত চারটায় বেরোনোর পেছনে একটা কারন আছে। আমি খেয়াল করেছিলাম ঠিক ভোর হবার সময়টাতে সমুদ্র কে অন্যরকম সুন্দর লাগে এবং ওই সময় সমুদ্রের কাছে যে ঠাণ্ডা পাতলা নোনা একটা বাতাস গায়ে লাগে সেটা অন্য কোন সময় লাগে না। আমি চারটায় বাসা থেকে বের হলে সার্কিট হাউজ পার হয়ে বীচের কাছে হানিমুন কটেজ পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে মসজিদে ফজরের আজান দেয় এবং মসজিদের দেয়াল ঘড়িতে তখন চারটা পঁয়তাল্লিশ বাজে। আরো একটা ব্যাপার এখানে গুরুত্বপূর্ন। বীচ এলাকার কুকুর গুলো সাঙ্ঘাতিক হিংস্র! রাতের বেলা পথচারী দেখলেই ঘাও করে তেড়ে আসে! কিন্তু ফজরের আজান দেবার পরে কুকুর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। পথচারী দেখলে মাথা উপরের দিকে তুলে নিরীহ গলায় একবার ‘কুঁ ই ই ই...’ করেই চুপ মেরে গিয়ে নিজের কাজে মন দেয়।



ভোর চারটায় বাসা থেকে কিভাবে বের হতাম সেটা বলি।আমাদের পাক ঘরের দরজা দিয়ে বের হয়ে উঠানে আসা যেত এবং পাক ঘরের ছাদ ছিল ঢেউ টিনের। ঢেউ টিনে ঢেউ এর ফাঁক ত আছেই! উঠানের বাঁশের বেড়া থেকে গুনা তার অর্থাৎ জি আই তার দুই এক টুকরা খুলে নিতাম! গুনা তার এর মাথায় একটা লুপ তৈরী করতাম যেটা রান্না ঘরের ছিটকানী’র মাথায় খাপে খাপে লাগবে। গুনা তারের লুপ পকেটে নিয়ে পাক ঘরের ছিটকিনি খুলে বাসা থেকে বের হতাম। তারপর দুহাতে ধারালো ঢেউ টিন ধরে বন্ধ জানালার কাঠের উপর দাঁড়াতাম। টিন ধরার আগে গাছের পাতা দিয়ে টিনের উপর জমা শিশির মুছে নিতাম। তারপর খুব সাবধানে পকেট থেকে গুনা তারের লুপ বের করে ঢেউ টিনের ঢেউ এর ভেতর দিয়ে সেটাকে গলিয়ে দিতাম। তারপর ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বলে বুকে ফুঁ দিয়ে লুপ নামিয়ে দিতাম ছিটকানি’র মাথা বরাবর। ভাগ্য ভাল হলে প্রথম বারেই লুপ ছিটকানি’র মাথায় ঢুকত!



পরিকল্পনা অনুযায়ী ইমরুল দের দেয়াল ঘড়িতে ঢং-এক, ঢং-দুই, ঢং- তিন, ঢং- চার গুনে স্কেইট সহ বাসা থেকে বের হলাম এবং মুটামুটি নির্বিঘ্নেই স্কেইট চালিয়ে বিচের কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম। বিচের কাছাকাছি পৌঁছে বুক হিম হয়ে গেল! চারদিক ঘন অন্ধকার। ভোরের আলোর নাম গন্ধ নাই!



বুদ্ধিমান পাঠক! আপনি ত ধরেই ফেলেছেন হিসেবের মধুর গরমিল!! হেঁটে হেঁটে যে দূরত্ব অতিক্রম করতে পাক্কা পঁয়তাল্লিশ মিনিট লাগত ফাঁকা রাস্তায় স্কেইটের ঝোড়ো গতিতে সেটা হয়ে গেছে পনের মিনিটের কম!!



অন্ধকারের বুক ফুঁড়েই যেন তারা উদয় হল! চারপাশ থেকে। চারপাশে ঘাউ, ঘাউ, ঘাউ উ উ...!, হিংস্র চোখ গুলো যেন ছোট ছোট টর্চ লাইট- জ্বলতে জ্বলতে আমার চারদিকে ঘুরছে!! ঘাউ উ উ...চিৎকারের সাথে সাথে অন্ধকারেও ঝিকিয়ে উঠছে সাদা দাঁত!



মনে আছে আমি স্রেফ হাঁটু ভাজ হয়ে রাস্তার উপর বসে পড়েছিলাম এবং পলক না ফেলে আমার ঠিক সামনের কুকুর টার চোখে চোখে তাকিয়ে ছিলাম। এরকম কেন করেছিলাম আমি জানি না। কিছুক্ষণ পর কুকুর দের গর্জন আস্তে আস্তে স্থিমিত হয়ে গিয়েছিল এবং আমাকে স্পর্শ মাত্র না করে তারা চলে গিয়েছিল।



পরে জিম করবেটের কোন একটা লেখায় যেন পড়েছিলাম- পলক না ফেলে হিংস্র পশুদের চোখে চোখে তাকিয়ে থাকলে তারা নাকি সন্মোহিত হয়ে পড়ে এবং শিকার কে আর আক্রমণ করে না। তবুও এই ঘটনা টা এখনো আমার কাছে কিছুটা অতি প্রাকৃতিক বলেই মনে হয়।



সেদিন ই আমি কামরান কে স্কেট ফেরত দিতে নিয়ে যাই। কামরান জোর গলায় আমাকে প্রত্যাখ্যান করে এবং রেগে গিয়ে বলে- শালা তুই আমার বন্ধু মানুষ! আমার স্কেইট মানে তোর স্কেইট! দুদিন(!) পরেই ফেরত দিতে আসার কি মানে? আগে ভাল করে চালাতে শিখ! যখন স্কেইট চালাই বড় রাস্তায় বাসের আগে যাইতে পারবি তখন ফেরত দিবি। ঢাকার ছেলেরা কত এস্মাট, আমরা ভঁ’তা থাকব কেন?

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:৩৮

সোহানী বলেছেন: ভালো লাগলো...+++++

২৮ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:৫৬

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ধন্যবাদ সোহানী আপনাকে ।

২| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:০৩

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: ঢাকার ছেলেরা কত এস্মাট, আমরা ভঁ’তা থাকব কেন?''----------- দারুন লাগলো পড়তে ----

২৮ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:০৭

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে লাইলী লায়লা।

৩| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:১৫

তূর্য হাসান বলেছেন: স্কেটিং করা আমারও স্বপ্ন ছিল। আমার ছেলেরও দেখি খুব আগ্রহ। দেখি আরেকটু বড় হলে ওকে কিনে দেব।

২৮ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:১৪

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: হুম! আমি ভাবতেছি এক জোড়া কিনব। আপাতত আমিই চালাব। বাচ্চা বড় হবার পর তাকে চালাতে দেব।

৪| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:২৪

আদম_ বলেছেন: ++++

২৮ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৩৪

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: + + + +  মনে হচ্ছে ঢং ঢং ঢং ঢং

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.