| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক সংস্থা লীগ অফ নেশন্স ফি"লিস্তিনের সমস্ত দায়িত্ব দেয় তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি (!) ব্রিটেনের হাতে। এ লক্ষ্যে ১৯২৩ সালে তৈরি করা হয় 'ব্রিটিশ ম্যান্ডেট' (আদেশপত্র)। আর তার পরই শুরু হয় ই"হুদিদের নানা অরাজকতা, আর আরবদের বিদ্রোহ।
১৯৩৬ সালের এপ্রিলে নবগঠিত আরব জাতীয় কমিটি ট্যাক্স প্রদান বন্ধ ও ই"হুদি পণ্য বয়কটের মাধ্যমে একটি সাধারণ ধর্মঘট শুরু করে, যা নির্মমভাবে দমন করে ব্রিটিশরা। ১৯৩৯ সালে ব্রিটেন এই বিদ্রোহ দমন করে ফি"লিস্তিনের গ্রামগুলোয় বোমাবর্ষণ, কারফিউ জারি ও বাড়িঘর ভেঙে দেয়ার মাধ্যমে। বিদ্রোহে পাঁচ হাজার ফি"লিস্তিনি নিহত হয়।
সে সময় ব্রিটিশ নেতৃত্বাধীন ই"হুদি যোদ্ধাদের নিয়ে একটি সশস্ত্র বাহিনী গঠন করা হয় যার নাম ছিল- স্পেশাল নাইট স্কোয়াড। এতে যোগ দেয় ১৯২০ সালে গঠিত গুপ্ত ইহুদী বাহিনী 'হাগানাহ', যার বেশিরভাগ যোদ্ধাই আবার ছিল নারী! (১৯৪৮ সালে Israel Defense Forces বা IDF গঠিত হলে হাগানাহর সাথে একীভূত হয়)
১৯৪৭ সালে ফি"লিস্তিনে ই"হুদি জনসংখ্যা ছিল ৩৩%, তাদের জমির মালিকানা ছিল ৬%। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর লীগ অফ নেশন্স বিলুপ্ত করে জাতিসংঘ গঠিত হলে তাকে ফি"লিস্তিনের দায়িত্ব দেয়া হয়। দায়িত্ব নিয়েই জাতিসংঘ ফি"লিস্তিন ভাগের প্রস্তাব দেয়, যাতে- ৫০% ই"হুদিদের, ৪৫% আরবদের এবং জেরু"সালেম দুই পক্ষের দেখানো হয়। ই"হুদিরা এতে রাজি হলেও আরবলীগ অস্বীকার করে। কিন্তু এরপরও জাতিসংঘের প্রস্তাব কার্যকর করা হয়, আর জন্ম নেয়- ইসরা"ইল।
১৯৪৮ সালের ১৫ মে ইসরা"ইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রথম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। এর পরই শুরু হয় আরব-ইসরা"ইল যুদ্ধ। ১৯৪৯ সালের জানুয়ারিতে তা শেষ হয় ইসরা"ইল, মিসর, লেবানন, জর্ডান ও সিরিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে, তবে কোনো কার্যকর ফল আদায় ব্যতীতই।
১৯৪৮ সালে ফি"লিস্তিনি শহর ও গ্রাম ধ্বংস করতে একটি সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরা"ইল। জেরু"জালেমের উপকণ্ঠে এক গ্রামে ১০০ জনেরও বেশি ফি"লিস্তিনিকে হত্যা করে। এভাবে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত ৫০০টিরও বেশি গ্রাম ও শহর ধ্বংস করে দেয়, যাকে আরবি ভাষায় 'নাকবা' (বিপর্যয়) বলে। এই গণহত্যায় কমপক্ষে ১৫ হাজার ফি"লিস্তিনি নিহত হয়।
ই"হুদিরা সে সময় ফি"লিস্তিনের ৭৮% দখল করে নেয়। আর অবশিষ্ট ২২% বর্তমানে অধিকৃত পশ্চিম তীর (West Bank) ও অবরুদ্ধ গা"যা উপত্যকা (Gaza strip)। (জেরু"সালেম ও মসজিদুল আ"কসা অবস্থিত পশ্চিম তীরে)
এরপর ১৯৬৭ সালে আরব সেনাবাহিনীর একটি জোটের বিরুদ্ধে ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরা"ইল গাজা, পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরু"জালেম, সিরিয়ার গোলান মালভূমি ও মিশরের সিনাই উপদ্বীপসহ ফি"লিস্তিনের বাকি অংশ দখল করে। এটি 'নাকসা' নামে পরিচিত (কেউ বলে দ্বিতীয় নাকবা)।
ধীরে ধীরে পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায়ও বসতি স্থাপন করে ই"হুদিরা। ১৯৭৩ মিশর ও শাম মিলে আবার হামলা করে কিছু অংশ পুনরুদ্ধার করে। অতঃপর ১৯৭৮ সালে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির অধীনে ইসরা"ইল সিনাই পুরোটা ছেড়ে দেয়, ফি"লিস্তিনের পূর্বাঞ্চল থেকেও বেরিয়ে যায়। কিন্তু বিনিময়ে মিশরের স্বীকৃতি আদায় করে নেয়।
১৯৮৭ সালে গাজায় ইসরা"ইলের একটি ট্রাক ফি"লিস্তিনি শ্রমিক বহনকারী দুটি ভ্যানের সঙ্গে সংঘর্ষে চার ফি"লিস্তিনি নিহত হয়। দ্রুত পশ্চিম তীরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় প্রথম 'ইন্তিফাদা' (অর্থ- ঝাঁকুনি)। এসময় ইসরা"ইলের বাহিনীর হাতে এক হাজার ফি"লিস্তিনি নিহত হয়, গ্রেফতার হয় লক্ষাধিক।
১৯৮৮ সালে আরব লীগ প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনকে (পিএলও) ফি"লিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধি হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। আর এ বছরেরই নভেম্বরে স্বাধীন ফি"লিস্তিন রাষ্ট্রের ঘোষণা দেয়া হয়। ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তি স্বাক্ষর ও প্যালেস্টাইন অথরিটি (পিএ) গঠনের মাধ্যমে শেষ হয় ইন্তিফাদা। এর মাধ্যমে ফি"লিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলেও ইসরা"ইলকে দিয়ে দেয়া হয় পশ্চিম তীরের ৬০% ও সিংহভাগ ভূসম্পদের নিয়ন্ত্রণ।
এরপর দ্বিতীয় ইন্তিফাদা শুরু হয় ২০০০ সালে। বহু ফি"লিস্তিনি নিহত হয়। সেই সাথে ইসরা"ইল ফি"লিস্তিনি অর্থনীতি ও অবকাঠামোর নজিরবিহীন ক্ষতি করে। ২০০৪ সালে পিএলও নেতা ইয়াসির আরাফাত মারা যান আর তার এক বছর পর দ্বিতীয় ইন্তিফাদা শেষ হয়। ফি"লিস্তিনিরা প্রথমবারের মতো সাধারণ নির্বাচনে ভোট দেয় সে সময়। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় হা"মাস। কিন্তু কয় বছরের মাথায় তাদের ওপর ‘সন্ত্রাসবাদের’ অভিযোগ এনে গা"যা অবরোধ করে ইসরা"ইল।
এরপর ফি"লিস্তিনে ২০০৮, ২০১২, ২০১৪ ও ২০২১ সালে চারটি বড় সামরিক অভিযান চালায় ইসরা"ইল। এতে নিহত হয় হাজার হাজার ফি"লিস্তিনি; ধ্বংস হয় শত শত বাড়ি, শস্যক্ষেত, হসপিটাল, স্কুল ও অফিস। বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে ঠাই নেয় লক্ষাধিক। যারা কোনো মতে বেঁচে আছে তাদের ওপর প্রতিনিয়ত নানান নির্যাতন চলে বিশ্বের বৃহত্তম উন্মুক্ত এই কারাগারে।
এভাবে দখলের নেশায় মত্ত ইসরা"ইল নানা সময়ে ছোট বড় মিলিয়ে নির্মম গণহত্যা চালিয়েছে ৫০ এরও অধিক, সর্বশেষটি তো প্রত্যক্ষই করছি আমরা বর্তমানে। এই পাশবিকতার কি শেষ হবে না? অবশ্যই হবে। জালিমরা বেশিদিন টিকতে পারে না, ইতিহাসই তার প্রমাণ।
যাদের স্বয়ং আল্লাহ অভিশাপ দিয়েছেন, তাদের দৃষ্টান্তকর সাজা তো হবেই- হয় আজ, নাহয় কাল; কেবলই সময়ের ব্যাপার।
-------- সমাপ্ত ---------
আল্লাহ আমাদের নিয়ত ও চেষ্টা কবুল করে নিন। বিশ্বজুড়ে আমাদের মুসলিম ভাইবোনদের রক্ষা করুন। আমিন।
গ্রন্থপঞ্জি:
১. শিকড়ের সন্ধানে -হামিদা মুবাশ্বেরাহ
২. ইতিহাসের আয়নায় বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা -হেদায়াতুল্লাহ মেহমান্দ
৩. ফিলিস্তিন: সাম্রাজ্যবাদ ও মুসলিমবিশ্ব -ওয়াজেহ রশিদ হাসানি নদবি
৪. তাফসীর আহসানুল বায়ান
আল্লাহ এসকল লেখককে উত্তম প্রতিদান দিন, তাদের জন্য আমাদের কাজ সহজ হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।
আমরা চেষ্টা করেছি সংক্ষেপে মাগদুব জাতির ঘটনা গুলো তুলে ধরার জন্য। মূল ইতিহাস তো আরো অনেক বিস্তৃত। আশা করি পাঠক এই সম্পর্কিত বই পড়বেন এবং ইতিহাস সম্পর্কে আরও জানবেন, জানাবেন।
collected
©somewhere in net ltd.